জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم
দফ-এর এক পাশ খোলা থাকে। বাজালে ঢ্যাব ঢ্যাব আওয়াজ হয়। প্লাস্টিকের গামলা বাজালে যেমন আওয়াজ হবে তেমন। আসলে দফ কোনো বাদ্যযন্ত্রের পর্যায়ে পড়ে না।
আওনুল বারী গ্রন্থে দফ-এর পরিচয় দিতে গিয়ে লেখা হয়েছে যে, এর আওয়াজ স্পষ্ট ও চিকন নয় এবং সুরেলা ও আনন্দদায়কও নয়। কোনো দফ-এর আওয়াজ যদি চিকন ও আকর্ষণীয় হয় তখন তা আর দফ থাকবে না; বাদ্যযন্ত্রে পরিণত হবে।-আওনুল বারী ২/৩৫৭
আর দফ-এর মধ্যে যখন বাদ্যযন্ত্রের বৈশিষ্ট্য এসে যাবে তখন তা সর্বসম্মতিক্রমে নাজায়েয বলে পরিগণিত হবে।-মিরকাত ৬/২১০
দফ বাজানোর বিধান সম্পর্কে উলামায়ে কেরামদের মাঝে মতবিরোধ রয়েছে।
কিছু উলামায়ে কেরামগন পুরোপুরি জায়েজ বলেন,কিছু উলামায়ে কেরাম শুধু মাত্র বিবাহের অনুষ্ঠান উপলক্ষে জায়েজ বলেন।
কিছু উলামায়ে কেরামগন নিষেধ করেন।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
আব্দুল্লাহ ইবন আমর রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
أَنَّ نَبِيَّ اللَّهِ ﷺ نَهَى عَنِ الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ وَالْكُوبَةِ وَالْغُبَيْرَاءِ وَقَالَ كُلُّ مُسْكِرٍ حَرَامٌ
রাসূলুল্লাহ ﷺ শরাব পান করতে, জুয়া খেলতে, ঢোল বা তবলা বাজাতে এবং ঘরের তৈরী শরাব পান করতে নিষেধ করেছেন। আর বলেছেন, প্রত্যেক নেশা সৃষ্টিকারী বস্তুই হারাম। (আবু দাউদ ৩৬৪৪)
সাহল ইবন সা’দ রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
سَيَكُوْنُ فِيْ آخِرِ الزَّمَانِ خَسْفٌ وَقَذْفٌ وَمَسْخٌ ، قِيْلَ: وَمَتَى ذَلِكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ ؟ قَالَ: إِذَا ظَهَرَتِ الْمَعَازِفُ وَالْقَيْنَاتُ
অচিরেই শেষ যুগে দেখা দিবে ভূমি ধস, নিক্ষেপ ও বিকৃতি। রাসূলুল্লাহ ﷺ কে জিজ্ঞাসা করা হলো, হে আল্লাহ্’র রাসূল! তা কখন? তিনি বললেন, যখন বাদ্যযন্ত্র ও গায়ক-গায়িকারা বেশি হারে প্রকাশ পাবে। (ইবনু মাজাহ্ ২/১৩৫০)
বুখারী শরীফের এক হাদীসে এসেছে যে আমার উম্মতের মধ্যে কিছু লোক এমন আসিবে,যারা যেনা,রেশম,মদ,গান বাজনাকে হালাল আখ্যায়িত করবে।
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّهُ قَالَ: «الدُّفُّ حَرَامٌ، وَالْكُوبَةُ حَرَامٌ، وَالْمِزْمَارُ حَرَامٌ
হযরত আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, দফ হারাম। বাদ্যযন্ত্র হারাম। মদের পেয়ালা হারাম। বাঁশী হারাম। [সুনানে সুগরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৩৩৫৯, সুনানে কুরবা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-২১০০০
বাইহাকী ১০/২২২)]
★জী প্রশ্নে উল্লেখিত এই হাদীস তাহকিক কৃত।
,
এসব হাদীসের উপর ভিত্তি করে কিছু উলামায়ে কেরামগন বলেছেন যে সতর্কতামূলক দফ বাজানো সম্পুর্ন নিষেধ।
★ তবে হানাফী অনেক উলামায়ে কেরামগন উলামায়ে কেরামগন বিবাহের ক্ষেত্রে দফ বাজানো জায়েজ বলে থাকেন।
তবে কেহ কেহ মতবিরোধও করেছেন।
হাদীস শরীফে এসেছে
وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ : قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ : «أَعْلِنُوا هٰذَا النِّكَاحَ وَاجْعَلُوهُ فِى الْمَسَاجِدِ وَاضْرِبُوا عَلَيْهِ بِالدُّفُوفِ»
আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা বিবাহকার্য প্রকাশ্য ঘোষণার মাধ্যমে মসজিদে সম্পন্ন কর এবং তাতে দফ বাজাও।
তিরমিযী ১০৮৯, ইবনু মাজাহ ১৮৯৫, য‘ঈফাহ্ ৯৭৮, য‘ঈফ আল জামি‘ ৯৬৬।
,
أَخْبَرَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، قَالَ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ جَعْفَرٍ، عَنْ مَعْمَرٍ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ عُرْوَةَ، عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم دَخَلَ عَلَيْهَا وَعِنْدَهَا جَارِيَتَانِ تَضْرِبَانِ بِدُفَّيْنِ فَانْتَهَرَهُمَا أَبُو بَكْرٍ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " دَعْهُنَّ فَإِنَّ لِكُلِّ قَوْمٍ عِيدًا "
কুতায়বা ইবনু সাইদ (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক দিন তার কাছে গেলেন। তখন তাঁর সামনে দুইটি বালিকা দফ বাজাচ্ছিল। আবূ বকর (রাঃ) তাদের নিষেধ করলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাদের নিষেধ করো না। কেননা প্রত্যেক জাতির জন্যই একটি আনন্দ স্ফূর্তির দিন থাকে।
[সহীহ। বুখারী ৯৮৭, ৩৯৩১, মুসলিম (ইসলামিক সেন্টার) হাঃ ১৯৪০]
,
ফুকাহায়ে আহনাফগন শুধু বিবাহের ক্ষেত্রে বিবাহের এলানের জন্য দফ বাজানোকে জায়েজ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
(ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ ৭/১২৫)
তবে দফে স্টিলের পাত থাকলে সেটা বাজানো জায়েজ নেই।
ফাতাওয়ায়ে শামীতে আছেঃ
و یندب اعلانہ ای اظہارہ والضمیر راجع الی النکاح بمعنی العقد لحدیث الترمذی اعلنوا ہذا النکاح واجعلوہ فی المساجد واضربوا علیہ بالدفوف (ردالمحتار کتاب النکاح ص ۳۵۹ ج ۲۔ط۔س۔ج۳ص۸)
বিবাহের ক্ষেত্রে ইলান করা মুস্তাহাব, দফ দ্বারাও সেটি ছহীহ আছে।
''(قَوْلُهُ: وَالْمَلَاهِي) كَالْمَزَامِيرِ وَالطَّبْلِ، وَإِذَا كَانَ الطَّبْلُ لِغَيْرِ اللَّهْوِ فَلَا بَأْسِ بِهِ، كَطَبْلِ الْغُزَاةِ وَالْعُرْسِ، لِمَا فِي الْأَجْنَاسِ: وَلَا بَأْسَ أَنْ يَكُونَ لَيْلَةَ الْعُرْسِ دُفٌّ يُضْرَبُ بِهِ لِيُعْلِنَ بِهِ النِّكَاحَ''۔ (٦/ ٥٥)
যার সারমর্ম হলো বিবাহের ক্ষেত্রে দফ বাজানো জায়েজ আছে।
،
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
শরীয়তের বিধান হলো দফ-এর মধ্যে যখন বাদ্যযন্ত্রের বৈশিষ্ট্য এসে যাবে তখন তা সর্বসম্মতিক্রমে নাজায়েয বলে পরিগণিত হবে।
সুতরাং সতর্কতা মূলক নাসীদ বা গানে দফ বাজানো যাবেনা।
,
উলামায়ে কেরামগন নিষেধ করেছেন।