আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
180 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (1 point)
السلام عليكم ورحمة الله وبركاته

উস্তায,

১.পুরুষের টাই পরিধান করা কি জায়েজ?

২.কথার ছলে শিঁষ বাজানো, হাই-ফাই দেওয়া, চোখ মারা কি  জায়েজ?

৩.শুনেছি চুলে কালো রংয়ের খেজাব ছাড়া অন্য রংয়ের খেজাব লাগানো জায়েজ।এটার সত্যতা কতটুকু? খেজাব কী?? বর্তমান সময়ে এটা কী পাওয়া যায়? **বাজারে হেয়ার কালার প্যাক পাওয়া যায়। ঐ প্যাক ইউজ করে হেয়ার কালার করা কি জায়েজ হবে??**

৪.মেয়েরা কি পর্দা মেইনটেইন করে পিছনের চুল যথাসম্ভব বড় রেখে সৌন্দর্যের জন্য সামনের চুলের কিছু চুল কাটতে পারবে? বা এমন কাট যা কোনো সংস্কৃতির অনুসরণ করা হয় না।**আমি চুলের অগ্রভাগের চুল কাটা নিয়ে জানতে চাচ্ছি।**

1 Answer

0 votes
by (62,960 points)
edited by

 

 

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

১. টাই র সূচনা শূলের প্রতীক হিসাবে হয়েছে কিনা, এ নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষের বক্তব্য ও তাহকিক-গবেষণা এতটাই দুবোধ্য ও প্রান্তিকতাপুষ্ট যে, একে যেমনিভাবে নিশ্চিতভাবে শূলের প্রতীক বলা মুশকিল,অনুরূপভাবে  ‘শূলের প্রতীক নয়’ এটাও নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। তবে অকাট্য তথ্যপ্রমাণপুষ্ট না হলেও এটি শূলের প্রতীক হিসাবে এতটাই জনশ্রুতি আছে যে,তা সত্য হওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল।  যদি সত্য হয় তাহলে বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুকরণ শরীয়তের দৃষ্টিতে অত্যন্ত ঘৃণিত। হাদীস শরীফে এসেছে-‘যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে সামঞ্জস্য রাখে সে তাদের দলভুক্ত।’ (সুনানে আবু দাউদ ২/৫৫৯)

কিন্তু যেহেতু বিষয়টি অকাট্য তথ্যপ্রমাণপুষ্ট নয় ; উপরন্তু বিধর্মীদের সাদৃশ্যতা গ্রহনের ইচ্ছা ব্যতিরেকেই এর ব্যাপক প্রচলন হয়ে পড়েছে তাই মুফতীগণ বলেন, এটা পরা একেবারে হারাম তো বলা যাবেনা তবে সন্দেহযুক্ত বিধায় মাকরূহ হবে। তাই এর ব্যবহার এড়িয়ে চলা কর্তব্য। (ফাতাওয়া মাহমুদিয়া১২/৪০৮)

২.ক্কার কাফেররা শীষ বাজানো, তালি দেয়া ইত্যাদিকে ইবাদত মনে করতো । মুসলমানদের জন্য বিধর্মীদের ধর্মীয় ঐতিহ্য এবং রীতি-নীতি অনুসরণ, অনুকরণ করা যেহেতু নাজায়িয, তাই হাতে তালি দেয়া এবং শীষ বাজানো কাফেরদের ধর্মীয় ঐতিহ্য হওয়ার কারণে তা অবশ্যই গোনাহের কাজ ।

হাততালি বা করতালি দেওয়া নাজায়েজ হবে, যখন এ করতালি ইবাদতের উদ্দেশ্যে করা হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَمَا كَانَ صَلَاتُهُمْ عِندَ الْبَيْتِ إِلَّا مُكَاءً وَتَصْدِيَةً ۚ فَذُوقُوا الْعَذَابَ بِمَا كُنتُمْ تَكْفُرُونَ

অর্থ: ‘কাবার কাছে তাদের নামাজ বলতে শিস দেওয়া আর তালি বাজানো ছাড়া অন্য কোনো কিছুই ছিল না। অতএব এবার নিজেদের কৃত কুফরির আজাবের স্বাদ গ্রহণ করো।’ (সুরা : আনফাল, আয়াত : ৩৫)

এ আয়াত দ্বারা আমরা জানতে পারি যে তালি দেওয়া হলো মুশরিকদের একটি ইবাদত। শিস দেওয়াও তাদের একটি ইবাদত। সুতরাং এগুলো মুসলিম করতে পারে না। এবং ইবাদত হিসেবে করলে তা বড় গুনাহ হবে।

আর ইবাদত হিসেবে না করে কাউকে উৎসাহ দেওয়ার তালি দেওয়া হারাম না হলেও মাকরুহ তথা অপছন্দনীয়। কেননা করতালি মুশরিকদের একটি ইবাদত এবং অন্য ধর্মের উৎসাহ ও অনুষ্ঠানের একটি সংস্কৃতি। এটি ইহুদি ও খ্রিস্টানদের আনন্দ প্রকাশের পদ্ধতি। (কেফায়াতুল মুফতি : ৯/১১৬)

তা ছাড়া আল্লাহর রাসুল (সা.) তাঁর জীবদ্দশায় বহু অনুষ্ঠান করেছেন এবং বক্তৃতা ও ওয়াজ করেছেন, কোথাও হাতে তালি দেননি। মহানবী (সা.) হাততালির পরিবর্তে মারহাবা, সুবহানাল্লাহ, মাশাআল্লাহ অর্থাৎ তাসবিহ পাঠ করার শিক্ষা দিয়েছেন। অতএব কড়তালি বা হাত তালি না দেওয়াটাই ভালো।

*যদি আপনি চোখ মারা দিয়ে বতর্মান প্রচলিত ছেলে মেয়ে একে অপরকে চোখ টিপাটিপি বুঝিয়ে থাকেন। চোখ মারাতো দূরের কথা ইসলামে মেয়েদের দিকে তাকানোই নিষেধ। চোখ আপনি ছেলে বা মেয়েকে বা কাউকে ঠাট্টা করেও মারতে পারবেন না। ইসলামে এভাবে ঠাট্টা করাও হারাম। আল্লাহু বলেন-

وَلَا تَقْرَبُوا الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ

" অশ্লীল/ খারাপ আচরনের নিকটেও যেয়ো না তা প্রকাশ্যে হোক কিংবা গোপনে। (সূরা আনআম ১৫১)

৩. https://ifatwa.info/7681/ নং ফাতওয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, শরীয়তের বিধান অনুযায়ী চুলে দাড়িতে খেজাব দেয়া মুস্তাহাব। লাল ও হলুদ এবং এমন লাল খেজাব যা কিছুটা কালোর দিকে ধাবিত এমন খেজাব লাগানো জায়েজ পুরুষ মহিলা উভয়ের জন্য। তবে কালো খেজাব লাগানো জায়েজ নয়।

হাদীস শরীফে এসেছে ,

أَخْبَرَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ عُبَيْدِ اللَّهِ الْحَلَبِيُّ عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ وَهُوَ ابْنُ عَمْرٍو عَنْ عَبْدِ الْكَرِيمِ عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَفَعَهُ أَنَّهُ قَالَ قَوْمٌ يَخْضِبُونَ بِهَذَا السَّوَادِ آخِرَ الزَّمَانِ كَحَوَاصِلِ الْحَمَامِ لَا يَرِيحُونَ رَائِحَةَ الْجَنَّةِ

আব্দুর রহমান ইবন আবদুল্লাহ হালাবী (রহঃ) ... ইবন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ শেষ যমানায় এমন কতক লোক হবে, যারা কবুতরের বুকের মত কালো খিজাব লাগাবে, তারা বেহেশতের গন্ধও পাবে না। (নাসায়ী ৫০৭৪ মিশকাত ১৪৫২, গায়াতুল মারাম ১০৭।)

أَخْبَرَنَا يُونُسُ بْنُ عَبْدِ الْأَعْلَى قَالَ حَدَّثَنَا ابْنُ وَهْبٍ قَالَ أَخْبَرَنِي ابْنُ جُرَيْجٍ عَنْ أَبِي الزُّبَيْرِ عَنْ جَابِرٍ قَالَ أُتِيَ بِأَبِي قُحَافَةَ يَوْمَ فَتْحِ مَكَّةَ وَرَأْسُهُ وَلِحْيَتُهُ كَالثَّغَامَةِ بَيَاضًا فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ غَيِّرُوا هَذَا بِشَيْءٍ وَاجْتَنِبُوا السَّوَادَ

ইউনুস ইবন আবদুল আ'লা (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন আবু কুহাফাকে আনা হলে তাঁর মাথা সাগামা (সাদা রঙের ফল বিশেষ)-এর মত সাদা ছিল। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এই রংকে কোন কিছু দ্বারা পরিবর্তিত করে দাও কিন্তু কালো রং দ্বারা নয়। (নাসায়ী ৫০৭৫ সহীহ। ইবন মাজাহ ৩৬২৪, মুখতাসার মুসলিম ১৩৪৭, সহীহাহ ৪৯৬)

বিস্তারিত জানুনঃ  https://ifatwa.info/4159/

ফুকাহায়ে কেরামদের আলোচনা থেকে বুঝা যায় যে,কালো কলপ একদমই দেওয়া যাবে না। (জাওয়াহিরুল ফিকহ, ৭/১৫৯,মাকতাবাতু দরুল উলূম করাচী)

কালো কলপ ব্যতীত চুলে যেকোনো কালার দেয়া যেতে পারে যদি তা কাফিরগণ কে অনুসরণ করে না করা হয়। (যেব ও যি-নত কে শরয়ী আহকাম-৭১)আল্লাহ-ই ভালো জানেন।

আরো জানুন: https://ifatwa.info/6585/?show=6585#q6585

৪. যে মহিলার চুল এত লম্বা যে, কিছু অংশ কাটলে পুরুষের চুলের সাথে সাদৃশ্য হবে না তার জন্য ঐ পরিমাণ কাটা জায়েয হবে। পক্ষান্তরে যার চুল তত লম্বা নয়; বরং অল্প কাটলেই কাঁধ সমান হয়ে যাবে এবং পুরুষের বাবরী চুলের মতো দেখা যাবে তার জন্য অল্প করেও কাটারও অনুমোদন নেই। তবে জটিল অসুস্থতার কারণে চিকিৎসার প্রয়োজনে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শে চুল ছোট করা, এমনকি জরুরতবশতঃ মুন্ডানোরও অনুমোদন রয়েছে। তবে সর্বাবস্থায় ফ্যাশনের অনুকরণ করা থেকে বিরত থাকা জরুরি। উপরোক্ত মূলনীতির আলোকে মহিলারা তাদের চুল কাটতে পারবে।

জ্ঞাতব্য যে, নয় বৎসর বয়স থেকে চুল রাখা জরুরী, কেননা নয় বছর বয়স থেকেই মহিলার মধ্যে পুরুষ আকৃষ্টকারী অবয়ব সৃষ্টি হয়ে যায় এবং তখন থেকেই মূলত পর্দা জরুরী হয়ে যায়।

তবে বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুসরণের নিমিত্তে চুল কাটা কখনো জায়েয হবে না। কেননা হাদীসে এসেছে,

'যে ব্যক্তি যে জাতীর অনুসরণ করবে,সে তাদের-ই অন্তর্ভুক্ত হবে।'

সুতরাং কেউ যদি এমনিতেই সৌন্দর্য গ্রহণের জন্য সামান্য চুল কর্তন করে,তাহলে সেটা হারাম হবে না।

এ সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন-https://www.ifatwa.info/3051

https://www.ifatwa.info/28511/


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

+1 vote
1 answer 921 views
...