সিজদায় হাত মাটিতে রাখা, মেয়েরা পেটে হাত বাঁধা, বিড়ালকে স্বপ্ন দেখা, দাদী স্বপ্নে হজ্ব করতে চায়, সূরা নির্দিষ্ট করে রাখা, নিজের প্যাশন খুঁজে বের করা, ভদ্রভাবে নিজের সম্মান আদায় করে নেওয়া

Question

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
১। আমি সবসময় সিজদায় হাত শরীরের সাথে লাগিয়ে রাখি। কিন্তু ইদানীং হাত এভাবে রাখলে টান লেগে ব্যথা করে। এজন্য আমি চাচ্ছি হাতটা মেঝেতে ছড়িয়ে রাখতে। এরকম করাটা কি মেয়েদের জন্য জায়েজ হবে?
২। এক অ্যান্টি একবার বলেছিলেন ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে সালাতে পার্থক্য নেই। ছেলেদের বুকে হাত বাঁধার নিয়ম কিন্তু বাংলাদেশের লোক বেশি বুঝে তাই পেটে হাত রাখে। আজকাল অনেকেই এরকম কথা বলেন (অ্যান্টিও হয়ত না বুঝে বলেছেন)। এই কথাটা কি ঠিক? আজকাল হাত ব্যথা করায় পেটে হাত বাঁধতে ইচ্ছা করে, এতে হাতে ব্যথা কম লাগে। আমার এরকম করা কি উচিত হবে মেয়ে হিসেবে?
৩। আমি একটি বিড়ালকে খেতে দিতাম। একদিন স্বপ্ন দেখি আমি একটা সুন্দর জায়গায়, আমার ভ্রম হল এটা জান্নাত। সেখানে গিয়ে দেখি বিড়ালটাকে দেখতে পাই। আমি কিছুটা বিরক্ত হয়ে ওকে জিজ্ঞাসা করলাম তুই এখানে কি করিস? বিড়াল মুচকি হেসে বলল যে আপু আমি তো তোমাকে ছেড়ে কখনো যাব না। এই স্বপ্নের ব্যাখ্যা কি যে আমি জান্নাতে যাব আর বিড়ালটাকে পাব? দুয়া করবেন আমার জন্য।
৪। আমার মৃত দাদীকে একদিন স্বপ্নে দেখলাম। দাদীর কাছে ক্ষমা চাইলাম কোন অন্যায় করে থাকলে। দাদি বললেন যে সে ঠিক আছে, এখন এই দিকে তাকাও। দেখলাম দাদী যেই বাথরুম ব্যবহার করতেন সেই বাথরুমে একটা মই। দাদী বললেন যে কেউ যদি তার হজ্বটা করে দিত তাহলে উনি এই সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে পারতেন। আমার চাচাকে এই স্বপ্নটার কথা বললে তিনিও মনস্থির করেছেন দাদীর বদলি হজ্ব করার। যদিও বিভিন্ন কারণে পারছেন না। আমার এই বলাটা কি ঠিক আছে? দাদীর জন্য দুয়া করবেন।
৫। আমি ফজর, জোহর, আসর, মাগরিব, ইশার সব ফরজ, সুন্নত, বিতর এসব সালাতের জন্য কিছু সূরা নির্দিষ্ট করে রেখেছি। গত ১০ বছর ধরে এই সুরাগুলো দিয়েই পড়ে আসছি। যেমন জোহরের ফরজ সালাতে সূরা ফীল, সূরা কুরাইশ আসরে সূরা লাহাব, সূরা আসর ইত্যাদি। কিছু সময় ব্যতিক্রম হয় অবশ্য। এরকম করাটা কি ঠিক?
৬। নিজের যেই কাজ করতে ভালো লাগে(অবশ্যই হালাল) সেটা নিয়ে লেগে থাকলে একটা সময় সেই কাজে বিশেষজ্ঞ হওয়া যায়। 10000 hour rule বলে একটা টার্ম আছে। কেউ কোন কিছু ১০০০০ ঘণ্টা মন দিয়ে প্র্যাকটিস করলে সেটায় এক্সপার্ট হওয়া যায়। এখন নিজের কোন কাজ ভালো লাগে এটা কীভাবে বুঝব? আমার যদি পরে আর কাজটা ভালো না লাগে? ইস্তিখারা কি এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে?
৭। কিছু মানুষ আছে যারা দেখবেন তারা নিজের ভদ্র স্বভাব বজায় রেখেই নিজের সম্মান আদায় করে নিতে জানে। আবার অনেকে আছে যে তারা এত ভালো মানুষ যে অন্যরা তার ভালোমানুষির সুযোগ নেয়। প্রথম প্রকৃতির মানুষকে  assertive বলা হয়। প্রথম প্রকৃতির মানুষের মত কীভাবে হওয়া যায় ইসলামের নিয়মের মধ্যে থেকেই? After all একজন শক্তিশালী মুমিন তো একজন দুর্বল মুমিনের থেকে আল্লাহর কাছে অনেক প্রিয় তাই না? আর শক্তি ছাড়া দয়া অর্থহীন।

Answer 1

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ-

আলহামদুলিল্লাহ!

(১)

সিজদায় হাত শরীরের সাথে লাগিয়ে রাখাই মেয়েদের জন্য সুন্নাহ। এভাবে রাখলে যদি ব্যথা করে তাহলে সাময়িক সময়ের জন্য হাতকে মেঝেতে ছড়িয়ে রাখতে পারেন। সাময়িক সময়ের জন্য করা যাবে।তবে স্থায়ীভাবে করা উচিৎ হবে না।

(২)

 ﺃﺧﺒﺮﻧﺎﻩ ﺃﺑﻮ ﺑﻜﺮ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﻣﺤﻤﺪ ﺃﻧﺒﺄ ﺃﺑﻮ ﺍﻟﺤﺴﻴﻦ ﺍﻟﻔﺴﻮﻱ ﺛﻨﺎ ﺃﺑﻮ ﻋﻠﻲ ﺍﻟﻠﺆﻟﺆﻱ ﺛﻨﺎ ﺃﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ ﺛﻨﺎ ﺳﻠﻴﻤﺎﻥ ﺑﻦ ﺩﺍﻭﺩ ﺃﻧﺒﺄ ﺑﻦ ﻭﻫﺐ ﺃﻧﺒﺄ ﺣﻴﻮﺓ ﺑﻦ ﺷﺮﻳﺢ ﻋﻦ ﺳﺎﻟﻢ ﺑﻦ ﻏﻴﻼﻥ ﻋﻦ ﻳﺰﻳﺪ ﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﺣﺒﻴﺐ : ﺃﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻣﺮ ﻋﻠﻰ ﺍﻣﺮﺃﺗﻴﻦ ﺗﺼﻠﻴﺎﻥ ﻓﻘﺎﻝ ﺇﺫﺍ ﺳﺠﺪﺗﻤﺎ ﻓﻀﻤﺎ ﺑﻌﺾ ﺍﻟﻠﺤﻢ ﺇﻟﻰ ﺍﻷﺭﺽ ﻓﺈﻥ ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﻟﻴﺴﺖ ﻓﻲ ﺫﻟﻚ ﻛﺎﻟﺮﺟﻞ ( ﺳﻨﻦ ﺍﻟﻜﺒﺮﻯ ﻟﻠﺒﻴﻬﻘﻰ، ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺤﻴﺾ،ﺑﺎﺏ ﻣﺎ ﻳﺴﺘﺤﺐ ﻟﻠﻤﺮﺃﺓ ﻣﻦ ﺗﺮﻙ ﺍﻟﺘﺠﺎﻓﻲ ﻓﻲ ﺍﻟﺮﻛﻮﻉ ﻭﺍﻟﺴﺠﻮﺩ، ﺭﻗﻢ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ 3016- )

তাবেয়ী ইয়াযীদ বিন আবী হাবীব রহ. বলেন-একবার রাসূল সা. দুই মহিলার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তাদেরকে (সংশোধনের উদ্দেশ্য) বললেন-“যখন সেজদা করবে তখন শরীর যমীনের সাথে মিলিয়ে দিবে। কেননা মহিলারা এ ক্ষেত্রে পুরুষদের মত নয়। (সুনানুল বায়হাকী, হাদিস নং-৩০১৬, কিতাবুল মারাসিল লি ইমাম আবু দাউদ-৫৫, হাদিস নং-৮০)

প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস আলেম নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ “আওনুল বারী” (১/৫২০) তে লিখেছেন-“উল্লেখিত হাদিসটি সকল ইমামদের উসুল অনুযায়ী দলীল হিসেবে পেশ করায় যোগ্য”।

মুহাদ্দিস মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল আমীর ইয়ামানী “সুবুলুস সালাম” শরহু বুলুগিল মারাম” গ্রন্থে (১/৩৫১-৩৫২) এই হাদিসকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করে পুরুষ ও মহিলার সেজদার পার্থক্য করেছেন।

নারী পুরুষের নামাযের পার্থক্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন-https://www.ifatwa.info/498

(৩)

আপনার স্বপ্নটি বাস্তব হোক। হয়তো আপনি জান্নাতে যেতে পারেন।

(৪)

জ্বী, দাদীর উপর হজ্ব ফরয থাকলে বদলি হজ্ব করিয়ে নিন। নতুবা নফল হজ্ব উনার জন্য করিয়ে নিন।

(৫)

মাঝেমধ্যে বদলিয়ে বদলিয়ে পড়বেন।নির্দিষ্ট করা মাকরুহ।

(৬)

জ্বী, ইস্তেখারা ভূমিকা রাখবে।

(৭)

নবীর সকল সুন্নতকে পালন করলেই প্রথম শ্রেণীর লোকদের মধ্যে আপনি গণ্য হতে পারবেন।এজন্য নবীর সুন্নত জানতে হাদীসের কিতাবগুলো অধ্যায়ন করতে হবে।

Comments

সংযোজন ও সংশোধন করা হয়েছে।

---

Jazakallahu Khair. Keep me in your prayers.