জবাবঃ-
بسم الله الرحمن الرحيم
(ক)
প্রথমেই এই বিষয়ে শরয়ী বিধান জেনে নেই,
শরীয়তের বিধান অনুযায়ী পেট ভরে ভাত/খাবার খাওয়া জায়েয আছে।
,
তবে পেট ভরে যাওয়ার পর আরো বেশি খাওয়া মূলত মাকরুহে তাহরিমি তথা নাজায়েজ ।
হ্যাঁ যদি পেট ভরা থেকে বেশি খাওয়ার উদ্দেশ্য যদি এটা হয় যে পরিপূর্ণ শক্তি অর্জন করে আগামীকাল রোযা রাখবে,বা মেহমান হয়ে কাহারো কাছে দাওয়াত খাওয়ার সময় অবস্থা যদি এমন হয় যে কম খেলে মেজবান রাগ করবে,তাহলে পেট ভরা থেকে আরো বেশি খাওয়া জায়েয আছে।
অন্যথায় এটা মাকরুহে তাহরিমি।
ওলামায়ে কেরাম এটাকে মাকরুহে তাহরিমি এই জন্য বলেছেন যে, যেহেতু আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন যে, আমরা খাই, একেবারে পরিপূর্ণ তৃপ্তি পর্যন্ত আমরা খাই না এবং নবী (সা.) মূলত তাঁর খাবারের পদ্ধতি যখন বলেছেন, মুমিন ব্যক্তি এক ভুঁড়িতেই খায়, একদম সাত ভুঁড়ি পরিপূর্ণ করে খায় না।
রাসূল (সা.) বলেছেন, মুমিন ব্যক্তি যখন খাবে, তখন তিন ভাগের এক ভাগ রাখবে তাঁর খাবারের জন্য, এক ভাগ রাখবে পানীয়র জন্য, এক ভাগ সে খালি রেখে দেবে, যাতে করে পেটের মধ্যে অন্তত জায়গা থাকে। আর এটা অনেক দিক থেকে স্বাস্থ্যকর।
চিকিৎসাবিজ্ঞান কিন্তু অধিক আহার সমর্থন করে না। তাই নবী (সা.) মূলত এভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন এবং বলেছেন, ইমানদার ব্যক্তির জন্য এটাই যথেষ্ট। এর মাধ্যমে নিজের মেরুদণ্ড সোজা রাখতে পারবে। এটাই তাঁর জন্য যথেষ্ট। তাই এর চেয়ে বেশি পরিতৃপ্ত হয়ে একেবারে গলা পর্যন্ত খাওয়া মূলত ইসলামী পদ্ধতি নয়।
,
নবী (সা.) বলেছেন, আল্লাহকে যে অস্বীকার করেছে, আল্লাহর বিধানকে যে অস্বীকার করেছে, সেই কাফের ব্যক্তিই মূলত একেবারে আকণ্ঠ ভর্তি করে খায়। এটা মূলত ইমানদার ব্যক্তিদের কাজ নয়, ইমানদার ব্যক্তিরা খাবারের ক্ষেত্রে কম খাবে এবং আল্লাহর বিধানটুকু অনুসরণ করবে। আল্লাহর সেই বিধানটা হচ্ছে, ‘তোমরা খাও, পান করো। অপচয় করো না।’
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ، عَنْ نَافِعٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " الْكَافِرُ يَأْكُلُ فِي سَبْعَةِ أَمْعَاءٍ وَالْمُؤْمِنُ يَأْكُلُ فِي مِعًى وَاحِدٍ " . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ . قَالَ وَفِي الْبَابِ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ وَأَبِي سَعِيدٍ وَأَبِي بَصْرَةَ الْغِفَارِيِّ وَأَبِي مُوسَى وَجَهْجَاهٍ الْغِفَارِيِّ وَمَيْمُونَةَ وَعَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو .
ইবনু উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাত পাকস্থলী ভর্তি করে কাফির খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ করে, আর একটিমাত্র পাকস্থলী ভর্তি করে মুমিন খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ করে।
(তিরমিজি ১৮১৮)
সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৩২৫৭), নাসা-ঈ
এ হাদীসটিকে আবূ ঈসা হাসান সহীহ বলেছেন। আবূ হুরাইরা, আবূ সাঈদ, আবূ বাসরাহ আল-গিফারী, আবূ মূসা, জাহজাহ আল-গিফারী, মাইমূনা ও আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীসটি বর্ণিত আছে।
حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ مُوسَى الأَنْصَارِيُّ، حَدَّثَنَا مَعْنٌ، حَدَّثَنَا مَالِكٌ، عَنْ سُهَيْلِ بْنِ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ضَافَهُ ضَيْفٌ كَافِرٌ فَأَمَرَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِشَاةٍ فَحُلِبَتْ فَشَرِبَ ثُمَّ أُخْرَى فَشَرِبَهُ ثُمَّ أُخْرَى فَشَرِبَهُ حَتَّى شَرِبَ حِلاَبَ سَبْعِ شِيَاهٍ ثُمَّ أَصْبَحَ مِنَ الْغَدِ فَأَسْلَمَ فَأَمَرَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِشَاةٍ فَحُلِبَتْ فَشَرِبَ حِلاَبَهَا ثُمَّ أَمَرَ لَهُ بِأُخْرَى فَلَمْ يَسْتَتِمَّهَا فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " الْمُؤْمِنُ يَشْرَبُ فِي مِعًى وَاحِدٍ وَالْكَافِرُ يَشْرَبُ فِي سَبْعَةِ أَمْعَاءٍ " . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ غَرِيبٌ مِنْ حَدِيثِ سُهَيْلٍ
আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, একবার একজন কাফির রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাসায় মেহমান হন। তার জন্য একটি ছাগল দোহন করাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুকুম করেন। ছাগল দোহনের পর সে সবটুকু দুধ পান করে। আরেকটি ছাগল দোহন করলে সে তার দুধও পান করে। তৃতীয় ছাগল দোহন করলে সে তার দুধও পান করে। এরকমভাবে সে একটানা সাতটি ছাগলের দুধ পান করে শেষ করে ফেলে।
পরের দিন সকালে সে ইসলাম কুবুল করে। তার জন্য একটি ছাগল দোহন করতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুকুম দেন। ছাগল দোহনের পর সে তা পান করে। তার জন্য তিনি আরো একটি ছাগলের দোহন করতে হুকুম দেন। কিন্তু সে তা পান করে আর শেষ করতে পারল না। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ মু'মিন লোক একটি পাকস্থলী ভর্তি করে খাদ্য গ্রহণ করে, আর কাফির লোক সাতটি পাকস্থলী ভর্তি করে খাদ্য গ্রহণ করে। (তিরমিজি ১৮১৯)
সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৩২৫৬), নাসা-ঈ
,
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
পেট ভরে যাওয়ার পর আরো বেশি খাওয়া মূলত মাকরুহে তাহরিমি।
হ্যাঁ যদি পেট ভরা থেকে বেশি খাওয়ার উদ্দেশ্য যদি এটা হয় যে পরিপূর্ণ শক্তি অর্জন করে আগামীকাল রোযা রাখবে,বা মেহমান হয়ে কাহারো কাছে দাওয়াত খাওয়ার সময় অবস্থা যদি এমন হয় যে কম খেলে মেজবান রাগ করবে,তাহলে পেট ভরা থেকে আরো বেশি খাওয়া জায়েয আছে।
★পেট ভরে খাওয়ার দরুন আমরা শাফায়াত পাবোনা,এধরনের ধারনা সঠিক নয়।
(খ)
এ সংক্রান্ত বিষয় নিকটতম কোনো দারুল ইফতা থেকে জেনে নেয়ার পরামর্শ রইলো।
(গ)
সব দেশে নাই।
তবে বলা যায় যে উপমহাদেশে অনেক আছে।
জানা মতে আফ্রিকা মহাদেশের কিছু দেশে ও ফিজি সহ আরো কিছু দেশেও আছে।
এক্ষেত্রে হুবহু একই সিলেবাস হতে হবে,বিষয় আবশ্যক নয়,আকীদা,নীতি,আদর্শ ইত্যাদি কতিপয় বিষয়ে অনেক মাদ্রাসাই এক ও অভিন্ন।
(ঘ)
হাদীসটির আরবি ইবারত সহ উল্লেখ করলে জবাব প্রদানে সুবিধা হবে।
জানা মতে এটি কোনো হাদীস নয়।
(ঙ)
আল আজহার ভার্সিটি হক এর উপরে আছে।
তারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের অন্তর্ভুক্ত।
তবে সেখানে বিভিন্ন মাসলাক,বিভিন্ন মাযহাব,ও আহলে হাদীসরা শিক্ষকতা ও পড়াশোনা করে থাকে।
(চ)
এটি তাদের ব্যাক্তিগত বিষয়।
এর দ্বারা রাসুলুল্লাহ সাঃ এর সুন্নাতকে অপ্রোয়জনীয় মনে করার বা দাড়ির আবশ্যকীয়তা সম্পর্কে সন্দেহের অবকাশ নেই।
অনেক সহীহ হাদীস দ্বারা দাড়ির আবশ্যকীয়তা প্রমাণিত হয়।
(ছ)
মিলাদ কিয়ামের বিষয় নয়।
তবে পীর মুরিদির বিষয় বেশি ছিলো,এটি বলা যাবে।
(জ)
কেউ কেউ বলেছেন যে সর্বপ্রথম রাসুলুল্লাহ সাঃ এর নূর সৃষ্টি করা হয়েছে।
,
অনেকেই বলেছেন যে এটি সহীহ নয়।
সর্বপ্রথম সৃষ্টি কি? এই বিষয়ে মতবিরোধ রয়েছে।
যারা রাসুলুল্লাহ সাঃ বা তার নুরকে সর্বপ্রথম সৃষ্টি বলে,তারা হাদিসের নামে নিন্মোক্ত কথাগুলো পেশ করে থাকেন।
أول ما خلق الله تعالى نوري
আল্লাহ্ তাআলা সর্বপ্রথম আমার নূর সৃষ্টি করেছেন।
অন্য শব্দে এসেছে,
أول ما خلق الله نور نبيك يا جابر
হে জাবের! সর্বপ্রথম আল্লাহ তোমার নবীর নূর সৃষ্টি করেছেন।
অথচ মুহাদ্দিসগণ এজাতীয় শব্দমালা দিয়ে গঠিত হাদিসগুলোকে মাওযু বা জাল বলেছেন। যেমন শায়েখ আবুল ফায়েয আহমাদ আলগুমারী বলেন,
هو حديث موضوع، لو ذكره بتمامه لما شك الواقف عليه في وضعه، وبقيته تقع في نحو ورقتين من القطع الكبير مشتملة على ألفاظ ركيكة ومعان منكرة
হাদিসটি জাল। যদি সম্পূর্ণ হাদিসটা উল্লেখ করা হয় তাহলে পাঠক এর জালিয়াতি সম্পর্কে কোনো সন্দেহ করবে না। হাদিসের অবশিষ্ট বক্তব্য দীর্ঘ প্রায় দুই পৃষ্ঠা, যাতে বহু নিস্তেজ শব্দ ও প্রত্যাখ্যাত অর্থ বিদ্যমান। (আল-মুগীর, বৈরুত, দারুর রায়িদ আল-আরাবী, ভূমিকা: পৃষ্ঠা ৬-৭)
জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহ. বলেন,
ليس له إسناد يعتمد عليه
হাদীসটির কোনো সনদ নেই যার উপর নির্ভর করা যায়। (আল হাবী ১/৩২৫)
★আল্লাহ সর্ব প্রথম কী সৃষ্টি করেছেন, এ নিয়ে আলেমদের মাঝে মতপার্থক্য রয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, কলম প্রথম সৃষ্টি। প্রখ্যাত মুফাসসির ইবনে জারীর তাবারী, ইবনুল জাওযী ও ইবনুল আরাবী রাহিমাহুমুল্লাহ এ মতের সমর্থক ছিলেন। আরেক দল আলেমের মতে সর্বপ্রথম সৃষ্টি হচ্ছে আরশ। আল্লামা ইবনে তাইমিয়া, ইবনুল কাইয়্যিম রাহিমাহুমাল্লাহ এবং অন্যান্য আলেম থেকে এধরণের মত পাওয়া যায়। আবার কেউ কেউ পানি সর্বপ্রথম সৃষ্টি বলে মত প্রকাশ করেছেন। এই মতটি আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ রাযি. ও অন্যান্য সালাফ থেকে বর্ণিত আছে। আল্লামা বদরুদ্দীন আলআইনী এ মতকে প্রধান্য দিয়েছেন।
(ঝ)
নবী রাসূল রা দৈহিক ভাবে কবরে জীবিত।
শহীদ রা দৈহিক ভাবে নয়,বরং রূহানী ভাবে জীবিত।
(ঞ)
প্রশ্নে উল্লেখিত বর্ণনাটি নিম্নরূপ:
مَنْ تَكَلَّمَ بِكَلاَمِ الدُّنْيَا فِيْ الْمَسْجِدِ أَحْبَطَ اللهُ أَعْمَالَهُ أَرْبَعِيْنَ سَنَةً
‘‘যে ব্যক্তি মসজিদের মধ্যে ‘দুনিয়াবী কথা’ বলবে, আল্লাহ তার চল্লিশ বছরের আমল বাতিল বা বরবাদ করে দিবেন।’’
বর্ণিত হাদীছটি মওযু' (তাযকিরাতুল মাওযূ‘আত, আবুল ফযল আল-মাক্বদেসী, ৩৯ পৃঃ, হা/৪০)।
আল্লামা সাগানী, তাহির পাটনী, মোল্লা আলী কারী, আজলূনী প্রমুখ মুহাদ্দিস একবাক্যে হাদীসটিকে জাল বলেছেন। মোল্লা কারী বলেন: ‘‘এ কথাটি যেমন সনদগতভাবে বাতিল, তেমনি এর অর্থও বাতিল।’’
(সাগানী, আল-মাউদূ‘আত, পৃ ৩৯; তাহির পাটনী, তাযকিরাতুল মাউদূ‘আত, পৃ ৩৬; মোল্লা কারী, আল-আসরার পৃ. ২২৭; আল-মাসনূ, পৃ. ১৪৭; শাওকানী, আল-ফাওয়াইদ ১/৪৪।)
অনুরূপ আরেকটি মওযু' ও বানোয়াট কথা:
اَلْحَدِيْثُ فِيْ الْمَسْجِدِ يَأْكُلُ الْحَسَنَاتِ كَمَا تَأْكُلُ الْبَهِيْمَةُ الْحَشِيْشَ
‘‘মসজিদে কথাবার্তা নেক আমল খায়, যেরূপ পশু ঘাস-খড় খায়।’’
اَلْكَلاَمُ فِيْ الْمَسْجِدِ يَأْكُلُ الْحَسَنَاتِ كَمَا تَأْكُلُ النَّارُ الْحَطَبَ
‘‘মসজিদে কথাবার্তা নেক আমল খায়, যেরূপ আগুন কাঠ খায়।’’
আল্লামা ইরাকী, ফাইরোযআবাদী, তাহির পাটনী, মোল্লা আলী কারী ও অন্যান্য সকল মুহাদ্দিস একমত যে, এ বাক্যটি বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও সনদহীন একটি কথা যা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নামে বলা হয়েছে।
(তাহির পাটনী, তাযকিরাতুল মাউদূ‘আত, পৃ. ৩৬; মোল্লা আলী কারী, আল-আসরার, পৃ. ১১৩; আল-মাসনূ, পৃ. ৬৩; শাওকানী, আল-ফাওয়াইদ ১/৪৪।)
★তবে মসজিদে অপ্রয়োজনীয় দুনিয়ারী কথা-বার্তা বলা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।
হযরত আনাস রা.থেকে বর্ণিত এক হাদীসে রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
إِنَّ هَذِهِ الْمَسَاجِدَ لَا تَصْلُحُ لِشَيْءٍ مِنْ هَذَا الْبَوْلِ، وَلَا الْقَذَرِ إِنَّمَا هِيَ لِذِكْرِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ، وَالصَّلَاةِ وَقِرَاءَةِ الْقُرْآنِ
অর্থাৎ মসজিদ প্রসাব,নাপাকী ও আবর্জনার উপযুক্ত নয়। বরং মসজিদ হল আল্লাহ তাআলার যিকির ও কুরআন তেলাওয়াতের জন্য। {মুসলিম শরীফ হাদীস নং-২৮৫}
মসজিদ নামায ও আল্লাহ তাআলার যিকিরের জন্যই প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। মসজিদকে দুনিয়াবী কথাবার্তা ও কাজকর্মের স্থান বানানো অথবা এ উদ্দেশ্যে মসজিদে জমায়েত হওয়া নাজায়েয।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে বেচা-কেনা বা হারানো বস্ত্ত খুঁজে পাওয়ার এলান করতে নিষেধ করেছেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১০৭৯)।
★কোনো দ্বীনী কাজের জন্য মসজিদে যাওয়ার পর প্রসঙ্গক্রমে দুনিয়াবী কোনো বৈধ কথাবার্তা বলা জায়েয। এর বৈধতা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরামের আমল দ্বারা প্রমাণিত।
সাহাবীগণ মসজিদের মধ্যে কবিতা পাঠ করতেন, জাহিলী যুগের গল্প-কাহিনী আলোচনা করতেন। জাবির (রা) বলেন:
كَانَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ إِذَا صَلَّى الْفَجْرَ جَلَسَ فِي مُصَلاَّهُ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ فَيَتَحَدَّثُ أَصْحَابُهُ وَيَذْكُرُونَ حَدِيثَ الْجَاهِلِيَّةِ وَيُنْشِدُونَ الشِّعْرَ وَيَضْحَكُونَ وَيَتَبَسَّمُ ﷺ.
‘‘রাসূলুল্লাহ ﷺ যে স্থানে ফজরের সালাত আদায় করতেন সেখানে সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে থাকতেন। সূর্যোদয়ের পরে তিনি উঠতেন। তাঁর বসা অবস্থায় সাহাবীগণ কথাবার্তা বলতেন, জাহেলী যুগের কথা আলোচনা করতেন, কবিতা পাঠ করতেন এবং হাসতেন। আর তিনি শুধু মুচকি হাসতেন।’’
(সহীহ মুসলিম ১/৪৬৩, নং ৬৭০, নাসাঈ, আস-সুনানুল কুবরা ১/৪০৪, ৬/৫১।)
মসজিদে অপ্রয়োজনীয় দুনিয়ারী কথা-বার্তা বলা থেকে বিরত থাকাই উচিত।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ-
وَعَن مَالك قَالَ: بَنَى عُمَرُ رَحَبَةً فِي نَاحِيَةِ الْمَسْجِدِ تُسَمَّى الْبُطَيْحَاءَ وَقَالَ مَنْ كَانَ يُرِيدُ أَنَّ يَلْغَطَ أَوْ يُنْشِدَ شِعْرًا أَوْ يَرْفَعَ صَوْتَهُ فَلْيَخْرُجْ إِلَى هَذِهِ الرَّحَبَةِ.
ওমর ফারূক (রাঃ) দুনিয়াবী কথা-বার্তা থেকে বিরত থাকার জন্য মসজিদে নববীর পার্শ্বে বুতাইহা নামক একটি চত্বর তৈরী করেছিলেন এবং বলেছিলেন, ‘যে ব্যক্তি অনর্থক কথা, কবিতা পাঠ কিংবা উচ্চৈঃস্বরে কথা বলতে চায়, সে যেন ঐ স্থানে চলে যায়’ (মুওয়াত্ত্বা মালিক ৪২২, মিশকাত হা/৭৪৫)।
وَعَنِ الْحَسَنِ مُرْسَلًا قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَأْتِي عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ يَكُونُ حَدِيثُهُمْ فِي مَسَاجِدِهِمْ فِي أَمْرِ دُنْيَاهُمْ. فَلَا تُجَالِسُوهُمْ فَلَيْسَ لِلَّهِ فِيهِمْ حَاجَةٌ» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيّ فِي شعب الْإِيمَان
হাসান বছরী বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘এমন এক যুগ আসবে যখন মানুষ মসজিদে দুনিয়াবী বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করবে। তখন তোমরা তাদের সাথে বসবে না। তাদের সাথে আল্লাহ তা‘আলার কোন আবশ্যকতা নেই’
(বায়হাক্বী-এর ‘‘শু‘আবুল ঈমান’’ ২৯৬২, হাকিম ৭৯১৬, সহীহাহ্ ১১৬৩,মিশকাত হা/৭৪৩
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
মসজিদে প্রয়োজনীয় দুনিয়াবি কথা বলা যাবে,তবে শর্ত হলো, এতে যেনো নিজের ও অন্যান্য কাহারো ইবাদতে বিঘ্নতা না ঘটে।
অপ্রয়োজনীয় কথা না বলাই উচিত।