আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
194 views
in সুন্নাহ-বিদ'আহ (Sunnah and Bid'ah) by (16 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ,


১. ঘুমানোর উদ্দেশ্যে অযু করে বিছানায় গেলাম এবং কিছুক্ষণ ফোন টিপলাম। তারপর প্রস্রাব করতে হলো তারপর ঘুমিয়ে গেলে, সেক্ষেত্রে অযু করে ঘুমানোর সুন্নত আদায় হবে কি না?


২. মেয়েরা ছেলেদের দিকে তাকালে কি গোনাহ হবে?


৩. স্বামী স্ত্রী একসাথে সম্মিলিত মোনাজাত করতে পারবে কি? সেক্ষেত্রে স্ত্রী মোনাজাত করাতে পারবে কি? নাকি শুধু স্বামীকেই সবসময় মোনাজাত করাতে হবে?

1 Answer

0 votes
by (59,040 points)
edited by

 

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

১.

https://ifatwa.info/5779/ নং ফাতওয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, মৃত্যুর সাথে ঘুমের অনেক মিল রয়েছে। এদিক থেকে ঘুম হচ্ছে জাগরণ ও মৃত্যুর মাঝামাঝি একটা অবস্থা। তাই মুমিনদের কর্তব্য ঘুমাতে যাওয়ার সময় আল্লাহকে স্মরণ করা। গুনাহ থেকে ক্ষমা চাওয়া এবং এসময়ের উপযোগী মাসনূন দুআগুলো পাঠ করা।  হাদীস শরীফে ঘুমানোর আগে অযু করার কথা বলা হয়েছে, অযু করে ঘুমানো সুন্নাত। 

হাদীস শরীফে এসেছেঃ  

হযরত বারা ইবনে আযিব রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন, তুমি যখন ঘুমুতে যাও তখন নামাযের মত ওযু করবে তারপর ডান কাতে শোবে এবং বলবে,

اللّهُمَّ أَسْلَمْتُ وَجْهِي إِلَيْكَ، وَفَوَّضْتُ أَمْرِي إِلَيْكَ، وَأَلْجَأْتُ ظَهْرِي إِلَيْكَ، رَغْبَةً وَرَهْبَةً إِلَيْكَ، لاَ مَلْجَأَ وَلاَ مَنْجَأَ مِنْكَ إِلَّا إِلَيْكَ، اللّهُمَّ آمَنْتُ بِكِتَابِكَ الَّذِي أَنْزَلْتَ، وَبِنَبِيِّكَ الَّذِي أَرْسَلْتَ.

অর্থ : ইয়া আল্লাহ! আমি আমার সত্তাকে তোমার কাছে সমর্পণ করলাম, আমার সকল বিষয় তোমার উপর ন্যস্ত করলাম আর তোমাকেই আমার পৃষ্ঠপোষক বানিয়ে নিলাম। তোমার প্রতাপের ভয় ও রহমতের আশা নিয়ে। তুমি ছাড়া নেই কোনো আশ্রয়স্থল, কোনো আত্মরক্ষার স্থান। তোমার কিতাবের উপর ঈমান এনেছি, যা তুমি নাযিল করেছ এবং তোমার নবীর উপর ঈমান এনেছি, যাঁকে তুমি প্রেরণ করেছ।

এ দুআ শিক্ষা দিয়ে বলেন, তুমি যদি এ দুআ পড়ে মারা যাও তাহলে তোমার মৃত্যু হবে দ্বীনে ফিতরতের উপর তথা ঈমানের উপর। আর এ দুআ যেন হয় তোমার ঘুমের আগের শেষ কথা। (অর্থাৎ এটা পাঠ করার পর আর কোনো কথা যেন না বলা হয়।) -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৩১১; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৭১০

হযরত হুযায়ফা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন রাতে শয্যাগ্রহণ করতেন তখন নিজের হাতটি গালের নীচে রাখতেন। (অর্থাৎ ডান হাত ডান গালের নীচে রেখে ডান কাতে কেবলামুখি হয়ে শুয়ে যেতেন। যেমন অন্যান্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে) তারপর বলতেন,

اَلّلهُمَّ بِاسْمِكَ أَمُوْتُ وَأَحْيَا

অর্থ : ইয়া আল্লাহ! তোমার নামেই আমার মরণ, তোমার নামেই আমার জীবন। আর যখন ঘুম থেকে জাগ্রত হতেন তখন বলতেন,

اَلْحَمْدُ لله الَّذِيْ أَحْيَانَا بَعْدَ مَا أَمَاتَنَا وَإِلَيْهِ النُّشُوْر.

অর্থ : সকল প্রশংসা আল্লাহরই যিনি আমাদের মৃত্যু দিয়ে আবার জীবনস্ফ দান করেছেন। আর অবশেষে আমাদেরকে তাঁরই কাছে ফিরে যেতে হবে। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৩১৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৭১১)

সুতরাং ঘুমানোর আগে অযু করা সুন্নাতকেহ যদি অযু না করেই ঘুমায়,সেটা নাজায়েজ নয়। তবে সুন্নাতের খেলাফ। কেহ কেহ এটাকে মুস্তাহাবও বলেছেন। তবে প্রশ্নে উল্লেখিত  ওযু করে ঘুমানোর পর যদি হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায়,আর আপনি যদি বিছানাতেই থাকেন, কোনো কাজে উঠে না যান, তবে  পুনরায় ওযু করতে হবেনা, ঐ অবস্থায় ওজু না করেও ঘুমানো যাবে। আর যদি আপনি ঐ মুহুর্তে উঠে গিয়ে বাহিরে কোনো ইস্তেঞ্জা, ইত্যাদি করে আসেন, তাহলে আবার ঘুমাইলে অযু করে ঘুমানো মুস্তাহাব।

২.  ইসলামের দৃষ্টিতে গাইরে মাহরাম তথা এমন পুরুষ যার সঙ্গে নারীর বিয়ে বৈধ, তার প্রতি নারীর দৃষ্টিপাত কয়েক প্রকার হতে পারে এবং তার বিধানও ভিন্ন ভিন্ন। যেমন

১. অপ্রয়োজনীয় দৃষ্টি : গাইরে মাহরাম পুরুষের প্রতি তাকানোর প্রয়োজন না থাকলে নারী তার দৃষ্টি অবনত রাখবে। এটাই তাকওয়া তথা আল্লাহভীতির অনুকূল। মহান আল্লাহর নির্দেশ হলো, ‘আর মুমিন নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত করে ও তাদের লজ্জাস্থান হেফাজত করে। ’ (সুরা : নুর, আয়াত : ৩০-৩১)

উম্মে সালামা (রা.) বলেন, একদা আমি নবী (সা.)-এর কাছে ছিলাম এবং তাঁর কাছে মায়মুনা (রা.)-ও ছিলেন। এ সময় ইবনে উম্মু মাকতুম (রা.) এলেন। ঘটনাটি পর্দার বিধান অবতীর্ণ হওয়ার পরের। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমরা তার থেকে আড়ালে চলে যাও। আমরা বললাম, হে আল্লাহ রাসুল! সে কি অন্ধ নয়? সে তো আমাদের দেখতে ও চিনতে পারছে না। নবী (সা.) বললেন, যদিও সে অন্ধ কিন্তু তোমরা উভয়ে কি তাকে দেখছ না? (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৪১১২)

২. প্রয়োজনীয় দৃষ্টি : ইসলাম অনুমোদিত প্রয়োজনে নারীরা গাইরে মাহরাম পুরুষের প্রতি দৃষ্টিপাত করতে পারবে। শর্ত হলো ফিতনার আশঙ্কা না থাকা। এই ক্ষেত্রে দৃষ্টিপাতের সীমা হলো সাধারণভাবে পুরুষের দেহের যতটুকু প্রকাশ পায় ততটুকু। যেমনচেহারা, মাথা, হাত ও পায়ের তালু ইত্যাদি। এ ক্ষেত্রে ফকিহদের দলিল হলো ফাতিমা বিনতে কায়সের হাদিস। মহানবী (সা.) তাঁকে বলেন, তুমি বরং ইবনে উম্মে মাকতুমের বাড়িতে গিয়ে ইদ্দত পালন করতে থাকো। কেননা সে একজন অন্ধ মানুষ। সেখানে প্রয়োজনবোধে তুমি তোমার পরিধানের (কম প্রয়োজনীয়) পোশাক খুলে রাখতে পারবে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৩৫৮৯)

ফকিহরা বলেন, কারো বাড়িতে অবস্থান করতে হলে কমবেশি তাঁর দিকে তাকানোর প্রয়োজন হয়। যা দ্বারা প্রমাণিত হয়, প্রয়োজনের সময় যতটুকু স্বাভাবিকভাবে প্রকাশ পায়, নারীরা পুরুষের ততটুকু দেখতে পারবে।

৩. মাহরামের প্রতি দৃষ্টি : নারীরা তাদের মাহরাম তথা এমন পুরুষের প্রতি তাকাতে পারবে যাদের বিয়ে করা হারাম। এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সীমা হলো পুরুষের নাভির ওপরাংশ এবং হাঁটুর নিম্নাংশ। কেননা নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত অংশটি সতর আর মাহরাম ও গাইরে মাহরাম কারো সামনে সতর প্রকাশ করা বৈধ নয়। আমর বিন শোয়াইব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, পুরুষের নাভির নিচ থেকে তার উভয় হাঁটু পর্যন্ত হলো সতর। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৬৭৫৬)

তবে বর্তমানে মাহরাম পুরুষ যদি ফাসিক হয় এবং তার ভেতর আল্লাহভীতি না থাকে, তাহলে তার থেকেও নারীদের দূরে থাকার পরামর্শ দেন প্রাজ্ঞ আলেমরা। কেননা বর্তমানে মাহরাম পুরুষ দ্বারা নারীর আব্রু বিনষ্ট হওয়ার ঘটনা বিরল নয়।

৪. স্বামীর প্রতি দৃষ্টি : একজন নারী তাঁর স্বামীর সমস্ত শরীরই দেখতে পারে। এমনকি তার লজ্জাস্থানও দেখতে পারবে। তবে ইসলাম স্বামী-স্ত্রী উভয়কে পরস্পরের লজ্জাস্থানের দিকে তাকাতে নিরুৎসাহ করে। আয়েশা (রা.) বলেন, আমি কখনো নবীজি (সা.)-এর লজ্জাস্থানের দিকে তাকাইনি। (মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস : ৩১২৩)

৫. যে দৃষ্টিতে ভয় নেই : কখনো নারীর দৃষ্টি গাইরে মাহরামের দিকে হলেও তাতে ভয় থাকে না। যেমন নাবালক ছেলেশিশুর দিকে তাকানো। এমন পরিস্থিতি নারীর দৃষ্টিপাত হারাম বা নিষিদ্ধ হবে না। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, একদিন হাবশিরা (বালক) তাদের বর্শা নিয়ে খেলা করছিল। রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে নিয়ে পর্দা করে তার পেছনে দাঁড় করিয়ে দিলেন এবং আমি সেই খেলা দেখছিলাম। যতক্ষণ আমার ভালো লাগছিল ততক্ষণ আমি দেখছিলাম। এরপর আমি স্বেচ্ছায় সে স্থান ত্যাগ করলাম। সুতরাং তোমরা অনুমান করতে পারো কোন বয়সের মেয়েরা আমোদ-প্রমোদ পছন্দ করে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫১৯০)

৬. যে দৃষ্টিতে ভয় থাকে : যদি পরপুরুষের প্রতি নারীর দৃষ্টিতে জৈবিক কামনা থাকে অথবা কারো প্রতি তাকালে কামনা জেগে ওঠার ভয় থাকে, তবে এমন দৃষ্টি শরিয়তে দৃষ্টি হারাম। এমন পরিস্থিতিতে দৃষ্টি অবনত রাখা আবশ্যক। এ ছাড়া স্বামী ছাড়া অন্য কোনো পুরুষের সতর দেখাও নারীর জন্য হারাম। চাই জৈবিক চাহিদা থাকুক বা না থাকুক। ইমাম নববী (রহ.) বলেন, ‘নারী যদি অপরিচিত পুরুষের দিকে জৈবিক চাহিদা নিয়ে তাকায় তবে তা সর্বসম্মতিক্রমে হারাম। পুরুষ যদি নারীর সতর এবং নারী যদি পুরুষের সতর দেখে তবে তাও সর্বসম্মতিক্রমে হারাম। ’ (আল-মিনহাজ : শরহু সহিহ মুসলিম : ৬/১৮৪)

৩. জ্বী স্বামী স্ত্রী সম্মিলিত মোনাজাত করতে পারবেন। পরিবারের বরকত ও কল্যাণে উভয়ে দোয়া করবে। কিংবা স্বামী দোয়া করবে আর স্ত্রী আমিন বলবেন। তবে স্ত্রী যদি দোয়া করেন আর স্বামী আমিন বলেন তাহলেও কোন সমস্যা। তবে উত্তম হবে স্বামী দোয়া করবেন এবং স্ত্রী তার সাথে থাকবেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...