জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم
শরীয়তের পরিভাষায় যিহার’বলা হয় নিজের স্ত্রীর কোনো অঙ্গ কে ‘মা’ অথবা ‘স্থায়ীভাবে বিবাহ হারাম’ এমন কোন মহিলার এমন কোনো অঙ্গ যেটা দেখা হারাম,এমন অঙ্গের সমতুল্য বলে আখ্যায়িত করে (যেমনঃপৃষ্ঠদেশের সমতুল্যবলে আখ্যায়িত করে) তাহাকে আরবীতে ‘যিহার’ বলা হয়।
এতে তার নিয়ত যাই থাকুক না কেনো,
যিহার হয়ে যাবে।
উদাহরণঃ স্বামী স্ত্রীকে বলবে, তুমি আমার নিকট আমার মায়ের পিঠের সমতুল্য। আমার বোন যেমন আমার জন্য হারাম তুমিও তেমনি আমার জন্য হারাম। তোমার শরীরের এক চতুর্থ অংশ আমার জন্য আমার ধাত্রীমায়ের মত হারাম ইত্যাদি।
আর যদি স্থায়ীভাবে বিবাহ হারাম’ এমন মহিলার কোনো অঙ্গের সাথে তুলনা না করে এই ভাবে বলে যে তুমি আমার তার (মা বা অন্য কেউ) মতো,তাহলে তার নিয়ত দেখতে হবে।
যদি সে মায়ের মত বলতে মায়ের মত গুণবতী, যত্নশীল বা মায়ের মত ভালবাসে উদ্দেশ্য নেয়,তাহলে কোনো কিছুই হবেনা।
এক্ষেত্রে যিহার তখনই হবে যখন নিয়ত থাকবে যে মা-বোন যে দিক থেকে হারাম সে দিক থেকে স্ত্রীকে হারাম বানালে।
(নাজমুল ফাতওয়া ৬/৩১৭)
,
আর যিহার করলে কাফফারা আদায় ব্যতীত স্বামীর জন্য স্ত্রীকে স্পর্শ করা বা তার সঙ্গে একত্রে সংসার করা হারাম।
যিহার করলে কাফ্ফারা আদায় করতে বলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
وَالَّذِيْنَ يُظٰهِرُوْنَ مِن نِّسَائِهِمْ ثُمَّ يَعُوْدُوْنَ لِمَا قَالُوْا فَتَحْرِيْرُ رَقَبَةٍ مِّنْ قَبْلِ أَن يَّتَمَاسَّا ذٰلِكُمْ تُوْعَظُوْنَ بِهِ وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ خَبِيْرٌ"(سورۃ المجادلۃ:۲،۳،۴)
“যারা নিজেদের স্ত্রীদের সাথে যিহার করে, তারপর তারা তাদের উক্তি ফিরিয়ে নেয়, তাদের জন্য একে অপরকে স্পর্শ করার পূর্বে একজন দাস মুক্তির বিধান দেয়া হলো। এটা তোমাদের জন্য নির্দেশ। আর তোমরা যা কিছুই করনা কেন,
সে সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা সবই জানেন। এ ছাড়া যে ব্যক্তি গোলাম অর্থাৎ দাস আজাদ করার ক্ষমতা রাখে না তারজন্য একে অপরকে স্পর্শ করার পূর্বে একটানা ২মাস রোযা রাখতে হবে। আর যে ব্যক্তি এটারও সামর্থ্য রাখে না,
তাহ’লে তাকে ৬০জন মিসকিন অর্থাৎ গরীব মানুষকে খানা খাওয়াতে হবে। এই বিধান এ জন্য যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপরে তোমরা ঈমান রাখ।
এটা আল্লাহর সীমারেখা। আর কাফিরদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি” (আল- মুজাদালাহ,৩-৪)।
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
স্বামী যদি স্ত্রীকে বলে তোমার আঙ্গুল আমার মায়ের মতো বা তোমার রান্না আমার মায়ের মতো তাহলে যিহার হয়না।
ক,
উপরে বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে।
খ,
এভাবে যিহার হয়নি।
গ,
যিহার করলে কাফফারা দিতে।
এতে কোনো তালাক বা বিবাহ বিচ্ছেদ হয়না।
কাফফারা আদায় না করে সংসার করা হারাম।
স্বামী যিহার করা অবস্থায় যদি স্ত্রীকে ঝগড়ার সময় কোনো কেনায়া কথা যেমন তুই যা, তুই বাদ, তোর সম্পর্ক শেষ এসব বলে,সেক্ষেত্রে স্বামীর তালাকের নিয়ত থাকলে স্ত্রী তালাক হয়ে যাবে।
স্বামীর তালাকের নিয়ত না থাকলে স্ত্রী তালাক হয়ে যাবেনা।
ঘ,
স্বামী যদি বলে তোমার রান্না আমার বোনের মতো। তাহলে যিহার হবেনা।
বা তোমার উচ্চতা আমার বোনের উচ্চতা সমান তাহলে যিহার হবেনা।
ঙ,
এসব কোনো ছুরতেই যিহার হবেনা।
স্ত্রীর কোনো আত্মীয়ের সাথে তুলবা করলে কোনো সমস্যা নেই।
চ,
একটানা ২মাস রোযা রাখতে হবে। আর এটার সামর্থ্য না রাখলে তাহ’লে ৬০জন মিসকিন অর্থাৎ গরীব মানুষকে খানা খাওয়াতে হবে।
ছ,
প্রশ্নের বিবরণ মতে তালাক হবেনা।
জ,
এক্ষেত্রেও তালাক হবেনা।
ঝ,
মনে মনে বললে তালাক হবেনা।
মুখে স্পষ্ট আকারে আওয়াজ করে বললে তালাক হবে।
ম,
হ্যাঁ, এক্ষেত্রে তালাক হয়ে যাবে।
প,
না,এটি কেনায়া কাজ নয়।
এখানে টিপ দিয়ে ইচ্ছাকৃত কেউ নিজের ওপর তালাক নিলে,সেক্ষেত্রে স্পষ্ট আকারে নিজেকে তালাক দিলাম বা তালাক গ্রহন করলাম বা৷ নিজের উপর তালাক,এই জাতীয় বাক্য মুখ দিয়ে উচ্চারণ করে বললে তালাক হয়ে যাবে।
আর এ জাতীয় বাক্য মুখ দিয়ে উচ্চারণ করে না বললে তালাক হবেনা।