আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
94 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (74 points)
edited by
১।আমার বিয়ের আগে এক মেয়ের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক ছিলো আমার বাবা রাজি হবেনা এইজন্য ফ্যামিলির মতে আমি অন্য যায়গায় বিয়ে করে ফেলি বিয়ের পর তার সাথে কথা হত মাঝে মাঝে তাকে বিয়ের কথা বলতাম তারপর তারও বিয়ে হয়ে যায় তার বিয়ের পর কল দিত আমাকে। তার জামাই ও শশুর বাড়ির লোকেরা তাকে অত্যাচার করত গতকালকে সে বিষপান করে আত্নহত্যা করে।

★তার জন্য অনেক কষ্ট লাগে কান্না আসে এই কষ্ট হওয়ার কারনে কি আমার গুনাহ হবে?
★তার জন্য দোয়া ইছালে সোওয়াব করা যাবে কি?

1 Answer

0 votes
by (565,890 points)

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ-


আত্মহত্যা করা হারাম। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন একে স্পষ্ট ভাষায় হারাম ঘোষণা করেছেন।
 ইরশাদ হচ্ছে-
وَلَا تَقْتُلُوا أَنفُسَكُمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيمًا [٤:٢٩

আর তোমরা নিজেদের কাউকে হত্যা করো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা’আলা তোমাদের প্রতি দয়ালু। {সূরা নিসা-২৯}

রাসূল সাঃ আত্মহত্যা করার ভয়াবহ শাস্তির কথা উল্লেখ করে ইরশাদ করেছেন-
عَنْ أبي هريرة , عَن النبي – صلى الله عليه وسلم – قال : من تردى من جبل , فقتل نفسه , فهو في نار جهنم يتردى فيها خالدا مخلدا فيها أبدا , ومن تحسى سما , فقتل نفسه , فسمه في يده يتحساه في نار جهنم خالدا مخلدا فيها أبدا , ومن قتل نفسه بحديدة , ثم انقطع علي شيء , يعني خالدا , كانت حديدته في يده يجأ بها في بطنه في نار جهنم خالدا مخلدا فيها أبدا
হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ যে ব্যক্তি পাহাড়ের উপর থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে, সে জাহান্নামের আগুনে পুড়বে, চিরদিন সে জাহান্নামের মধ্যে অনুরূপভাবে লাফিয়ে পড়তে থাকবে। যে ব্যক্তি বিষপান করে আত্মহত্যা করবে, তার বিষ জাহান্নামের আগুনের মধ্যে তার হাতে থাকবে, চিরকাল সে জাহান্নামের মধ্যে তা পান করতে থাকবে, যে ব্যক্তি লোহার আঘাতে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামের মধ্যে লোহা তার হাতে থাকবে, চিরকাল সে তার দ্বারা নিজের পেটে আঘাত করতে থাকবে। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৪৪২, সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং-১৯৬৪}
,

https://www.ifatwa.info/9211 নং ফাতাওয়ায় উল্লেখ রয়েছে যে,
এ হাদীস দ্বারা যদিও আত্মহত্যাকারী চিরস্থায়ী জাহান্নামী বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু বিষয়টি আসলে এমন নয়। বরং আত্মহত্যাকারী ব্যক্তি যদি ঈমানদার হয়, আর ঈমানের সাথেই যদি মৃত্যুবরণ করে থাকে, তাহলে সে চিরস্থায়ী জাহান্নামী হতে পারে না। চিরস্থায় জাহান্নামী হবে কেবল কাফের-মুশরিকরা। কোন মুসলমান চিরস্থায়ী জাহান্নামী হতে পারে না। তবে দীর্ঘস্থায়ী জাহান্নামী হতে পারে। এ হাদীস দ্বারা উদ্দেশ্যও এটাই। আরবের পরিভাষায় خالدا مخلداশব্দ, যার অনুবাদ করা হয়, “চিরকাল”মূলত এর দ্বারা আরবের লোকেরা কখনো কখনো দীর্ঘস্থায়ী অবস্থাকে বুঝিয়ে থাকেন। উক্ত হাদীসেও উদ্দেশ্যও দীর্ঘস্থায়ী হওয়া। চিরস্থায়ী হওয়া নয়। [দ্রষ্টব্য শরহু সহীহিল বুখারী লিইবনে বাত্তাল, উমদাতুল কারী}

এক কথায় আত্মহত্যা করা কবীরা গোনাহ। আর কবীরা গোনাহ তওবা দ্বারা মাফ হয়ে যায়। কিন্তু আত্মহত্যাকারী ব্যক্তির তওবার কোন সুযোগ নেই। কিন্তু তওবা না করলেও আল্লাহ তাআলা ইচ্ছে করলেই উক্ত ব্যক্তিকে নিজ রহমতে মাফ করে দিতে পারেন। কিংবা তাকে দীর্ঘস্থায়ী শাস্তি দিতে পারেন।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَاءُ ۚ وَمَن يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا بَعِيدًا
নিশ্চয় আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে তাঁর সাথে কাউকে শরীক করে। এছাড়া যাকে ইচ্ছা, ক্ষমা করেন। যে আল্লাহর সাথে শরীক করে সে সুদূর ভ্রান্তিতে পতিত হয়। {সূরা নিসা-১১৬}

কিন্তু ঈমানদার ব্যক্তি কিছুতেই চিরস্থায়ী শাস্তি পেতে পারে না।

হযরত আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত। 
عن أنس عن النبي صلى الله عليه و سلم قال يخرج من النار من قال لا إله إلا الله وفي قلبه وزن شعيرة من خير ويخرج من النار من قال لا إله إلا الله وفي قلبه وزن برة من خير ويخرج من النار من قال لا إله إلا الله وفي قلبه وزن ذرة  من خير
রাসূল সাঃ ইরশাদ করেনঃ যে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”বলবে আর তার অন্তরে একটি যব পরিমাণও নেকী থাকবে, তাকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে এবং যে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”বলবেআর তার অন্তরে একটি অণু পরিমাণও নেকী থাকবে তাকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৪৪, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১২৫, মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৩০৩৮৫ , সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৪৪৩, কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-১২৬,  সুনানে নাসায়ী কুবরা, হাদীস নং-১১২৪৩}

তাছাড়া হাদিস শরিফে এসেছে,

‘যখন রাসূল (সা.) মদীনায় হিজরত করলেন, তখন তুফায়ল ইবনে আমর এবং তার গোত্রের একজন লোকও তাঁর সঙ্গে মদীনায় হিজরত করেন। কিন্তু মদীনার আবহাওয়া তাদের অনুকূল হয়নি। তুফায়ল ইবনে আমর (রা.)-এর সাথে আগত লোকটি অসুস্থ হয়ে পড়ল। রোগযন্ত্রণা বরদাশত করতে না পেরে তীর নিয়ে তার হাতের আঙ্গুলগুলো কেটে ফেলল। এতে উভয় হাত থেকে রক্ত নির্গত হতে থাকে। অবশেষে সে মারা যায়। তুফায়ল ইবনে আমর দাওসী (রা.) স্বপ্নে তাকে ভাল অবস্থায় দেখতে পেলেন, কিন্তু তিনি তার উভয় হাত আবৃত দেখে তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার রব তোমার সাথে কিরূপ ব্যবহার করেছেন? সে বলল, আল্লাহর জন্য তাঁর নবি (সা.)-এর কাছে হিজরত করার কারণে আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। তুফায়ল (রা.) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কি হয়েছে যে, আমি তোমার হাত দুটি আবৃত দেখছি? সে বলল, আমাকে বলা হয়েছে যে, আমি তা দুরস্ত করব না, তুমি স্বেচ্ছায় যা নষ্ট করেছ। তুফায়ল (রা.) রাসূল (সা.)-এর কাছে ঘটনাটি বর্ণনা করলেন। তখন রাসূল (সা.) দোয়া করলেন, ইয়া আল্লাহ! আপনি তার হাত দুটিকেও ক্ষমা করে দিন।’ [সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১১৬]

বিস্তারিত জানুন- https://www.ifatwa.info/7592

https://ifatwa.info/26379/

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই!
শুধুমাত্র কাফির বা অমুসলিমের জন্য দু'আ করা নিষেধ। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন-https://www.ifatwa.info/901

যেহেতু আত্মহত্যাকারী কাফির নয়, তাই আত্মহত্যাকারীর জন্য দু'আ করা নিষেধ হবে না।


★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে তার জন্য দোয়া, ইছালে সওয়াব করা যাবে। 
কোনো সমস্যা নেই।

তার জন্য আপনার যে অনেক কষ্ট লাগে কান্না আসে। এই কষ্ট হওয়ার কারনে আপনার গুনাহ হবেনা।
তবে তাকে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করবেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...