স্বামীর সংসারে খরচ করা সম্পদ স্ত্রী যেকোন সময়ে অধীকার দাবী করতে পারবে কিনা?

Question

আসসালামু আলাইকুম,
একজন বৃদ্ধা মহিলার ৫০ বছর পূর্বে বিয়ে হয়। বিয়ের সময় তার স্বামীর বাড়ির আর্থিক অবস্থা ভালো ছিলনা। ফলে, তিনি তার বাবার বাড়ি থেকে ওয়ারিশ সূত্রে প্রাপ্ত সম্পদ এনে স্বামীর বাড়িতে বাড়ি, জমি ইত্যাদি ক্রয় করেন। মোটকথা স্বামীর সংসারে খরচ করেন। তবে, যেসকল জমি ক্রয় করা হয় এবং বাড়ি যে জমির ওপর তৈরি করা হয়, সেগুলো দলিল করা হয় স্বামীর নামে। এগুলো থেকে বিভিন্ন সময় জমি বিক্রি করে আবার অন্য জায়গায় জমি ক্রয়ও করা হয়। সেগুলোও দলিল করা হয় স্বামীর নামেই। এভাবে স্বামীর সংসারে তার পিতা থেকে পাওয়া সকল সম্পদই খরচ করেন।

৮ বছর পূর্বে তার স্বামী ইন্তিকাল করেন। এখনো উক্ত মৃত ব্যাক্তির মীরাস বা উত্তরাধিকারের মধ্যে সম্পদ বন্টন হয়নি। সব মেয়েদেরই বিয়ে দেয়া হয়েছে। ছেলে মেয়েরা যে যার মতো মৃত বক্তির সম্পদ থেকে জমি জামা বিক্রি করছে এবং টাকা নিচ্ছে। তবে, হিসেব রাখছে যাতে মীরাস বন্টনের সময় কারো ওপর জুলুম না হয়। যদিও কয়েক বারই মীরাস বন্টন করতে বসেও সেই উদ্যোগ সফল হয় নি।

ইদানীং,  উক্ত মহিলার বেশ কজন ছেলে মেয়ে সম্পত্তিসহ  নানা বিষয়ে  ওনার সাথে খারাপ আচরণ করছেন। মানসিক টর্চার দিচ্ছেন। ঠিকভাবে খোঁজখবরও নিচ্ছেন না।

এখন উক্ত মহিলা তার পৈতৃক বাড়ী থেকে আনা সম্পদের দাবী করছেন। তিনি তার বাবার বাড়ী থেকে যা এনেছেন সেই সমমূল্যের সম্পদের অধিকার দাবী তুলছেন।

এখন, প্রশ্ন ১ হলোঃ এমতবস্থায় কুরআন সুন্নাহর আলোকে উক্ত বৃদ্ধা মহিলাকে তার দাবীকৃত সম্পদ দেয়া যাবে কিনা অর্থাৎ, মৃত স্বামীর নামে দলিল কৃত সম্পদ থেকে তার দাবীকৃত সম্পদ দেয়া যাবে কিনা?

প্রশ্ন ২ হলোঃ নানাপ্রেক্ষাপটে ততকালীন সময়ে এক খন্ড জমি উক্ত বৃদ্ধার এক ছেলের নামে দলীল করা হয়। তবে, সে দলীল উক্ত ছেলেকে দেয়ার উদ্দেশ্যে নয়, এমনি করা হয়। কিন্তু তখন থেকেই সবাই জানে তা তাদের  পিতারই সম্পদ।  যদিও এ দলিল সম্পর্কে উক্ত ছেলে তখন কিছুই জানতো না। এখন উক্ত ছেলে যদি উক্ত জমিটি শুধুই তার মাকে দলিল করে দিয়ে দেয় তাহলে তা বৈধ হবে কিনা?

Answer 1

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ-

আলহামদুলিল্লাহ!

অন্যর মাল তার অন্তরের সন্তুষ্টি ব্যতীত কারো জন্য হালাল হয় না।বিদায় এসব পরিত্যাজ্য।

কেননা আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍْ ﻻَ ﺗَﺄْﻛُﻠُﻮﺍْ ﺃَﻣْﻮَﺍﻟَﻜُﻢْ ﺑَﻴْﻨَﻜُﻢْ ﺑِﺎﻟْﺒَﺎﻃِﻞِ ﺇِﻻَّ ﺃَﻥ ﺗَﻜُﻮﻥَ ﺗِﺠَﺎﺭَﺓً ﻋَﻦ ﺗَﺮَﺍﺽٍ ﻣِّﻨﻜُﻢْ ﻭَﻻَ ﺗَﻘْﺘُﻠُﻮﺍْ ﺃَﻧﻔُﺴَﻜُﻢْ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠّﻪَ ﻛَﺎﻥَ ﺑِﻜُﻢْ ﺭَﺣِﻴﻤًﺎ

তরজমাঃ-হে ঈমানদারগণ! তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। কেবলমাত্র তোমাদের পরস্পরের সম্মতিক্রমে যে ব্যবসা করা হয় তা বৈধ। আর তোমরা নিজেদের কাউকে হত্যা করো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা’আলা তোমাদের প্রতি দয়ালু। (সূরা নিসা(২৯)

এবং হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত,

عن ابن عباس قال;قال رسول اللّٰه صلى اللّٰه عليه و سلم ﻻ ﻳﺤﻞ ﻣﺎﻝ ﺍﻣﺮﺉ ﻣﺴﻠﻢ ﺇﻻ ﺑﻄﻴﺐ ﻧﻔﺲ ﻣﻨﻪ " 

নবী কারীম সাঃ বলেনঃ"কোন মুসলমানের জন্য  অন্য কোনো মুসলমানের মাল তার অন্তরের সন্তুষ্টি ব্যতীত হালাল হবে না। (তালখিসুল হাবীর-১২৪৯)আরো জানুন- https://www.ifatwa.info/1382

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

কোনো কারণে স্বামীর নামে জমি ক্রয় করার দ্বারা জমির মূল মালিক স্বামী হবে না বরং মূল মালিক উক্ত মহিলাই থাকবে যার টাকা দ্বারা উক্ত সম্পত্তি ক্রয় করা হয়েছে। সুতরাং স্বামীর মৃত্যুর পর উক্ত সম্পত্তি বন্টনের কোনো প্রশ্নই আসে না। কেননা জমির মূল মালিক তথা উক্ত মহিলা এখনও জীবিত রয়েছে। ঠিকতেমনিভাবে কোনো কারণে কোনো এক ছেলের নামে জমির দলীল করা হয়ে গেলে  ঐ ছেলে উক্ত সম্পত্তির মালিক হয়ে যাবে না। বরং যার টাকায় ক্রয় করা হবে, সেই সে জমির পূর্ণ মালিক থাকবে।

Comments

সংযোজন ও সংশোধন করা হয়েছে।