আসসালামু আলাইকুম হুজুর। আমি একজন ওয়াসওয়াসাগ্রস্থ ব্যক্তি। গত কয়েক মাস থেকে তালাক, হুরমত, যিহার ইত্যাদির ওয়াসওয়াসায় ভুগছি। আমার ওয়াসওয়াসা এমন যে, স্বাভাবিক কথা বলতেও নিয়ত, ওয়াসওয়াসা চলে আসে। আমার এসব বিষয় গত কয়েক মাস থেকে গাইবান্ধা বড় মসজিদের ইমাম মুফতি মাহমুদুল হাসান হুজুরের সাথে শেয়ার করছি। উনি আমাকে বলেছেন, আমার কোনো নিয়তই নাকি এখন গ্রহণযোগ্য নয়। আমার তালাকও নাকি গ্রহণযোগ্য নয়। ওনার সাথে কথা বললাম। আমি বললাম, হুজুর আপনি যেহেতু এখন আমাকে সময় দিতে পারছেন না। তাহলে আমি যদি অন্য কারো থেকে মাসয়ালা গ্রহণ করি সেটা জায়েজ হবে? হুজুর বললেন, বিজ্ঞ মুফতি সাহেবের থেকে ফতোয়া নিলে তা গ্রহণযোগ্য হবে। আর আমি যেন আমার মানসিক বিষয়গুলো খুলে বলি। তাই উপরে সংক্ষেপে বললাম।
হুজুর দয়া করে প্রতিটি প্রশ্নবোধক চিহ্নের উত্তর দিয়েন কুরআন এবং হাদিসের আলোকে। নয়তো আবার পেরেশানিতে পড়ে যাবো।
১. কোনো বিষয়ে কখনো মনে হচ্ছে কসম করেছি, আবার কখনো মনে হচ্ছে কসম করিনি। কখনো মনে হয় করার সম্ভাবনা বেশি, কখনো মনে হয় করার সম্ভাবনা কম। করণীয় কি?
২. ধরেন কেউ ২০২০ সালে কসম ভঙ্গ করল এবং চিন্তা করল যে, ২০২৫ সালে কাফফারা দিবে ইনশাআল্লাহ। তাহলে কি তার ২০২০ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত করা সকল ইবাদত কবুল হবে? আর যদি সে কখনোই কাফফারা না দেয় তবে কি তার সকল ইবাদত কবুল হবে?
৩. যদি কোনো স্ত্রীর মাসিক কোনো মাসে ৩ দিন, কোনো মাসে ৪ দিন আবার কোনো মাসে ৫ দিন হয়, তাহলে কি মাসিক শেষ হওয়ার সাথে সাথেই সহবাস করা যাবে? নাকি নির্দিষ্ট কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে? অপেক্ষা করতে হলে সেটি কতদিন?
৪. কেউ যদি তালাকের পরেও নিজ স্ত্রীর সাথে সংসার করে তবে কি তার নামাজসহ অন্যান্য সকল ইবাদত কবুল হবে? সে কি আল্লাহর দয়া ভালোবাসা পাবে? সে কি জান্নাতে যেতে পারবে? এই অবস্থায় সহবাস করার ফলে যদি সন্তান জন্ম হয়, তাহলে কি তারা আল্লাহর প্রিয় বান্দা হতে পারবে নাকি ইমানহারা এবং খারাপ হবে?
৫. স্বামী-স্ত্রী বেনামাজি হলে নাকি বিচ্ছেদ হয়ে যায়? বিষয়টি আসলে কি? দুজনকে বেনামাজি হতে হয় নাকি একজন হলেই হয়?
৬. আমার স্ত্রী নামাজ পড়লেও ফজর খুব কম পড়ে। অধিকাংশ সময় কাজা পড়ে। আর আমি ফজর সব সময় কাজা পড়ি এবং বাকি ওয়াক্তগুলোর ফরজ আর বিতের নামাজ পড়ি। এছাড়াও আমরা ইচ্ছায় অনিচ্ছায় নামাজ মিস করি। তবে বিশ্বাস করি যে, এটা অন্যায় করছি। আমার যতোটা মনে পড়ে, এক বা একাধিক আলেমের থেকে জেনেছিলাম যে, মাঝে মাঝে নামাজ পড়লে নাকি বিচ্ছেদ হয় না বা এ বিষয়ে নামাজির কোয়ালিটিও নাকি নির্ভর করে যে সে কেমন নামাজি। এসব জানার পরেও কয়েকদিন থেকে ফজর কাজা পড়ছি। নামাজ না পড়লে বিচ্ছেদ হয়ে যায়, বিষয়টি জানার পরেও মনে করতেছি যে,"আমি তো কিছু ওয়াক্ত হলেও পড়ি। আল্লাহ দয়া করবেন ইনশাআল্লাহ।" আর মনে করেছি, যেহেতু কিছু নামাজ হলেও পড়ি, সেহেতু ফতোয়া আমার দিকে আসবে বা আসতে পারে ইনশাআল্লাহ। মানে বিচ্ছেদ হবে না ইনশাআল্লাহ। এসব ভেবে ফজর নামাজ করতেছি। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের সম্পর্কে সমস্যা হবে? বৈধতা থাকবে?
৭. আমার খারাপ ব্যবহারের কারণে আমার স্ত্রী বলে যে, "আমি খোলা করলাম। আমাকে তালাক দাও। আমার দেনমোহর লাগবে না।" ওর এসব কথা যদি এক বা একাধিক মুরুব্বি মানুষ শোনে তাহলে সমস্যা হবে? কাবিননামায় ওকে তালাক গ্রহণের অধিকার দেওয়া হয় নি। আমি যদি তালাক না দেই তবে কি সম্পর্কে সমস্যা হবে? উল্লেখ্য যে, এসব আমার স্ত্রী রাগের মাথায় বলে৷ মাথা ঠান্ডা হলে এসব চায় না।
জানার জন্য বলছিঃ কোনো স্ত্রীকে যদি তালাক গ্রহণের ক্ষমতা দেওয়া হয় এবং পুরো ঘটনা যদি উপরের ঘটনার অনুরূপ হয় তাহলে মাসয়ালা কি হবে?
৮. ওয়াসওয়াসাগ্রস্ত স্বামী নিজ মুখে "খোলা করলাম" বললে সমস্যা হবে?
৯. সুস্থ পুরুষ মানুষ মনে মনে বা নিজ মুখে খোলা করলাম বললে সমস্যা হয়?
১০. নিজ ছেলেকে বাবা বা দাদা বললে সমস্যা হয়? ছেলে নাবালক
১১. পুরুষ মানুষ যদি বিয়ের আগে কোনো পুরুষের সাথে যিনা করে থাকে তবে কি সে অন্য মেয়ে মানুষকে বিয়ে করতে পারবে?
১২. কিছু কিছু কথা আছে যেগুলো বললে যিহার হবে কিনা সন্দেহ হয়। তারপরেও স্ত্রীকে কথাগুলো বলি। পরে এক বিজ্ঞ মুফতি সাহেবের থেকে শুনেছি যে, ওসব কথা বললে যিহার হয় না। আমার প্রশ্ন হলো, সন্দেহ থাকার পরেও যেহেতু আমি কথাগুলো বলেছি, তাতে কি সমস্যা হবে?
১৩. মাসিকের সময় করা সহবাসের কাফফারা না দিলে তার সকল ইবাদত কবুল হবে? বা তার কি ইমান থাকবে?
১৪. আমি জানি নিজ স্ত্রীকে অন্য কাউকে দেখানো যায় না। আমার এক বন্ধু বলেছিল, তোর বাড়িতে গেলে তোর বউকে দেখাবি না? আমি বলেছিলাম, "আসিস"। আমার এই কথা বলাতে সমস্যা হবে? যদিও কখনো আসলে আমি দেখাব না ইনশাআল্লাহ।
১৫. আমার মুখ গত কয়েক মাস থেকে খুব খারাপ হয়েছে। আমি আগে কখনো এসব ভাষায় কাউকে গালি দেই নি। তবে গত কয়েক মাস থেকে আমার স্ত্রীকে এসব গালি দিচ্ছি। গালিগুলো হলোঃ মাং, মাংগের বেটি, মাংগি, শাউয়া, শাউয়া চুদি, বকরি, মাগি, বৈতালি, চুতমারানি(স্ত্রীকে এই গালিটা না দেওয়ার সম্ভাবনা ৮০-৯০%) ইত্যাদি।
এসব গালি দিলে যিহার বা সম্পর্কে সমস্যা হবে?
১৬. গাইবান্ধা সদরের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের মুফতি হুজুর ফতোয়া দিয়েছিলেন যে, এই বিয়েটি হয় নি। তবে তারপরে আরেকটি বিয়ে করা হয়।
যে বিয়েটি হয় নিঃ ছেলে, মেয়ে, একজন স্বাক্ষী, একজন কাজী এই মোট চারজন ছিলো। তবে সে মজলিসে বিয়ে মুখে পড়ানো হয় নি। কাজী সাহেব কাবিন নামায় দেনমোহর উল্লেখ করেন এবং ছেলেমেয়ে কাবিনে স্বাক্ষর করে।
আপনার মতে বিয়েটি হয়েছিল?
১৭. আমি যেহেতু ওয়াসওয়াসার সমস্যায় ভুগছি গত কয়েক মাস থেকে, সেহেতু আমার মুখ খুললেই তালাক বা নিয়তে তালাক চলে আসে, বা কথায় কথায় তালাকের শর্ত চলে আসে, কখনো ওয়াসওয়াসার কারণে নিজে নিজে নিয়ত নিয়ে আসি। তাছাড়াও স্বাভাবিক কথা বলতেও মনে হয়, এই কথাটি বললে তালাক বা শর্ত পতিত হবে না তো? এজন্য স্বাভাবিক কথাও ঠিক মতো বলতে পারি না। কখনো স্বাভাবিক কথা বলার সময়ও যদি মনে হয় যে, এই কথাটি বললে সমস্যা হতে পারে। তখনই মনে মনে তওবা করি। বলি, "আল্লাহ কোনো সমস্যা যেন না হয়"। মানে আমার অবস্থা ভালোই খারাপ বলা যায়। মুফতি সাহেব ফতোয়া দিয়েছেন যে, আমার তালাক গ্রহণযোগ্য নয়।
যাই হোক সংক্ষেপে বললাম, যাতে আপনি বুঝতে পারেন।
আমার মনে হয়, আমার ওয়াইফ ওর বাবার বাড়িতে গেলে ওর বাবা মা আর আমার কাছে আসতে দিবে না এবং আমাদেরকে আলাদা করে দিবে।
একদিন আমার ওয়াইফ ওর বাবার বাড়ি যেতে চায়। তাই আমি বলি, "তুমি ওখানে গেলে, ওরা সমস্যা করবে" বা বলেছি,"তুমি ওখানে গেলে, সমস্যা হবে"। তবে "তুমি ওখানে গেলে, ওরা সমস্যা করবে।" এটি বলার সম্ভাবনা বেশি। তবে বিষয়টি বলার সময় এভাবে বলি-
এতোটুকু বলছি, ❝তুমি ওখানে গেলে❞ এতোটুকু বলার পর চিন্তা করলাম।
চিন্তাঃ পরের অংশে তো সমস্যার কথা আছে। ❝ওরা সমস্যা করবে বা সমস্যা হবে❞। এটা বলা যাবে কিনা বা বললে কোনো সমস্যা বা তালাক জাতীয় কিছু হয় কিনা।
এসব মনে করার পরেও তওবা করি নি বা চুপ করে থাকি নি। মনে করেছি যে, পরের কথাটা বলি। তবে অন্য সময়ে কোনো কথা বলার সময় এমন কিছু মনে হলে সাথে সাথে চুপ করতাম, তওবা করতাম।
মানে বিষয়টি এমন ছিলো, ❝তুমি ওখানে গেলে (চিন্তার অংশটুকু) ওরা সমস্যা করবে (বলার সম্ভাবনা বেশি)/ সমস্যা করবে❞
তবে তালাকের বা শর্ত দেওয়ার নিয়ত ছিল না। আমার খটকা লাগতেছে এই জন্য যে, স্বাভাবিক কথা বলার সময়েও চিন্তা করি যে, তালাক হবে কিনা। আর চিন্তাটা আসলেই আমার কথাটা থামিয়ে দেই, তওবাও করি। তবে এই কথাটা বলার সময় কেন থামলাম না। যেহেতু থামলাম না সেহেতু কি সমস্যা হলো?
১৮. আমার স্ত্রীর বাবার বাড়ি থেকে একটা লোক আমাদের বাড়িতে আসার কথা। এজন্য আমি স্ত্রীকে বলতে চাইছিলাম যে, "ওই জিনিসটা ওই খানে কেন রাখছ?ওই (লোকটা) আসলে দেখবে।" মানে জিনিসটা সরাইতে বলতেছিলাম।
কিন্তু বলার সময় বলছি, ❝ওই জিনিসটা ওখানে কেন রাখছ? তোমার ওই(লোকটা) আসলে দেখবে।❞
মানে তোমার কথাটা চলে আসছে। মুখে বলছি,"ওই জিনিসটা ওইখানে কেন রাখছ? তোমার - এতটুকু বলার পর মনে হলো, "তোমার" মানে আমার স্ত্রীর যেহেতু বলে ফেললাম, এটা তো ঠিক হলো না। তারপরেও বাক্যটা ইচ্ছা করে শেষ করি। মানে বাক্যটা এমন ছিল, "ওই জিনিসটা ওখানে কেন রাখছ? তোমার ওই আসলে দেখবে"।
কথাটা বলার সময় কোনো নিয়ত ছিল না৷ তবে মনে হচ্ছে বলাটা কি ঠিক হলো? ❝তোমার ওই (লোকটা)❞ বলে ফেললাম যে। মানে লোকটা আমার স্ত্রীর - এটা বুঝানো হলো কি? তবে আমি তো সেটা বুঝাতে চাই নি। তবে হ্যা, "তোমার" শব্দটি মুখে চলে আসে। তারপরেও ইচ্ছা করে বাকি কথাগুলো কেন বললাম? অন্য সময় হলে তো চুপ করে থাকতাম। বাক্য শেষই করতাম না। সমস্যা হয়েছে হুজুর?
১৯. হুজুর, কাবিনের ১৮ নং কলামে যদি কাজি উল্লেখ করে দেয় যে, নারী-পুরুষ সমান অধিকার প্রাপ্ত। তাহলে কি স্ত্রীকে তালাক গ্রহণের অধিকার দেওয়া হয়েছে? (জানার জন্য বললাম)
২০. কথার কথা কাবিননামায় স্ত্রীকে যদি তালাক গ্রহণের অধিকার দেওয়া হয়, তাহলে সে অধিকার ফেরত নিয়ে স্বামী নিজের কাছে রাখতে পারবে?
২১. কেউ যদি হারাম খায় এবং প্রতিদিন ২-৩ ওয়াক্ত নামাজ ইচ্ছা করে না পড়ে এবং জেনাকারি (শারীরিক) হয়, আর এভাবেই যদি তার মৃত্যু হয়, তবে কি সে জান্নাতে যাবে? নাকি জাহান্নামে যাবে? বিস্তারিত জানতে চাই
২২. আমার স্ত্রী একদিন আমাকে বলছিল; কথাগুলো হুবহু মনে নেই। তবে অর্থগুলো ছিলো এমন-"আমি যদি কখনো চলে যাই, আমাকে আটকাবে না?" আসলে "চলে যাই" বলেছিল নাকি "চলে যেতে চাই" বলেছিল নাকি দুইটাই বলেছিল তা মনে করতে পারছি না। তবে আমি বলেছিলাম, "চলে যেতে চাইলে আটকাবো না। কারণ জোর করে কাউকে রাখা যায় না।"
আমার ওয়াইফ এতে কষ্ট পেয়েছিল। কারণ ও চেয়েছিল যে, আমি যেন বলি, "তোমাকে যেতে দিব না, আটকাবো"। পরে আমাকে সে বিষয়টি খুলে বলে।
আমার কথাতে কি সে তালাকের অধিকার পেয়ে গেছে? সে কি তালাক গ্রহণ করতে পারবে?