بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
১. আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআর আকীদা হল, মৃত্যুর পর সকল নবীদের কবরে পুনরায় বিশেষ জীবন দান করা হয়েছে। ইমাম বাইহাকী রাহ. তাঁর ‘আল ই‘তিকাদ’ গ্রন্থে বলেন-
والأنبياء عليهم الصلاة والسلام بعدما قبضوا ردت إليهم أرواحهم، فهم أحياء عند ربهم كالشهداء.
“সকল নবীর রূহ কবজ করার পর তা আবার ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই তাঁরা শহীদদের ন্যায় তাদের রবের কাছে জীবিত”। -(আল ইতিকাদ পৃ.৪১৫ দারুল ফযীলাহ রিয়াদ; আত-তালখীছুল হাবীর ২/২৫৪; আল বাদরুল মুনীর ৫/২৯২)
হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. বলেন,
وقد تمسك به من أنكر الحياة في القبر، وأجيب عن أهل السنة المثبتين لذلك بأن المراد نفي الموت اللازم من الذي أثبته عمر بقوله: "وليبعثه الله في الدنيا ليقطع أيدي القائلين بموته" وليس فيه تعرض لما يقع في البرزخ، وأحسن من هذا الجواب أن يقال: إن حياته صلى الله عليه وسلم في القبر لا يعقبها موت بل يستمر حيا، والأنبياء أحياء في قبورهم، ولعل هذا هو الحكمة في تعريف الموتتين حيث قال :لا يذيقك الله الموتتين أي المعروفتين المشهورتين الواقعتين لكل أحد غير الأنبياء. (فتح الباري، باب لو كنت متخذا خليلا لتخذت أبا بكر خليلا)
“যারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবরে জীবিত থাকাকে অস্বীকার করে তারা হযরত আবু বকর রা.-এর এ বক্তব্য দিয়ে দলিল পেশ করতে চায়-‘আল্লাহ আপনাকে দুইবার মৃত্যু দিবেন না’। আর আহলুস সুন্নাহ- যারা নবীর কবরে জীবিত থাকায় বিশ্বাস রাখেন, এদের পক্ষ থেকে এর জবাব দেয়া হয়েছে যে, হযরত আবু বকর রা.-এর বক্তব্যের উদ্দেশ্য ছিল উমর রা.-এর ভুল ধারণার খণ্ডন করা। উমর রা. বলেছিলেন, ‘আল্লাহ তাআলা নবীজীকে আবার দুনিয়াতে জীবিত করবেন ...’। এ কথার মধ্যে বারযাখে কী হবে এ বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি। অবশ্য হযরত আবু বকর রা.-এর এ কথার সর্বোত্তম ব্যাখ্যা হল, কবরে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে জীবন পেয়েছেন তারপর আর কোনো মৃত্যু আসবে না। বরং তিনি বরাবরই কবরে জীবিত থাকবেন, আর নবীগণ কবরে জীবিত। ...।” -ফাতহুল বারী, আবু বকরের ফযীলত অধ্যায় ৭/৩৩
শাইখুল ইসলাম ইবনে হাজার এ বক্তব্যে স্পষ্টই বলেছেন, আহলুস-সুন্নাহর বিশ্বাস হল, নবীগণ কবরে জীবিত।
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আকীদা:
১. নির্ধারিত মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করার মাধ্যমে সকল নবীগণের দুনিয়ার জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটেছে।
২. মৃত্যুর পর তাঁরা আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে এক বিশেষ জীবন লাভ করেছেন। তাই তাঁরা কবরে জীবিত। তাঁদের কবরের জীবনের ধরণ বিষয়ে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআর বিশ্বাস হল:
ক. আলমে বারযাখে সাধারণ মুমিনের জীবনের চেয়ে শহীদদের জীবন পূর্ণাঙ্গ। আর শহীদের জীবন থেকে নবীদের জীবন আরো পূর্ণাঙ্গ ও উন্নততর।
খ. দুনিয়ার জীবনের সাথে তাঁদের কবরের জীবনের কিছু কিছু বিষয়ে সাদৃশ্য রয়েছে।(১) যেমন কবরে তাঁদের দেহ মোবারক সুসংরক্ষিত রয়েছে। তাঁরা কবরে নামায আদায় করেন। যারা কবরের নিকট গিয়ে ছালাত ও সালাম পেশ করে তাঁরা তা সরাসরি শুনেন এবং যারা দূর থেকে সালাম পাঠান তা ফেরেশতা তাদের কাছে (কবরে) পৌঁছে দেন এবং তাঁরা আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ রিযিক প্রাপ্ত হন।
গ. কবরের জীবনের ধরণ সম্পর্কে যে বিষয়গুলো কুরআন-সুন্নাহয় পাওয়া যায় না সে বিষয়ে নিরবতা অবলম্বন করি।
৩. আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ এ-ও বিশ্বাস করে যে, তাদের কবর-জীবন হুবহু দুনিয়ার জীবনের মত নয়। কবর থেকে স্বাভাবিকভাবে যথা ইচ্ছা গমনাগমন করা, মৃত্যু-পূর্ববর্তী সময়ের মত আদেশ নিষেধ ও পরামর্শ দেওয়া, কারো সাথে সরাসরি সাক্ষাৎ, কথোপকথন ও মুসাফাহা করা ইত্যাদি বিষয়ে শরয়ী কোনো দলিল নেই। তবে যদি স্বপ্ন, কাশফ বা কারামাতের মাধ্যমে এমন কোনো কিছু ঘটা প্রমাণিত হয়, তাহলে সেটি ভিন্ন বিষয়। হায়াতুল আম্বিয়ার আকীদার সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই।
২.
ক. রা., রাযি., রাজি. ও রাদি. এ শব্দগুলোর যে কোনোটি লেখা হয়- সাহাবিদের নামের পরে। ইসলামের পরিভাষায় সাহাবি বলা হয়, যে ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণের পর শেষ নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সান্নিধ্য লাভে ধন্য হয়েছেন এবং মুসলিম অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। এ শব্দ সংক্ষেপগুলোর পূর্ণরূপ একবচন পুরুষের ক্ষেত্রে ‘রাযিয়াল্লাহু আনহু’, বহুবচন পুরুষের ক্ষেত্রে ‘রাযিয়াল্লাহু আনহুম’, একবচন মহিলার ক্ষেত্রে ‘রাযিয়াল্লাহু আনহা’, বহুবচন নারীর ক্ষেত্রে ‘রাযিয়াল্লাহু আনহুন্না’ এবং দ্বি-বচন পুরুষ-মহিলা উভয়ের ক্ষেত্রে ‘রাযিয়াল্লাহু আনহুমা। ’ পূর্ণ বাক্যের অর্থ হলো- আল্লাহ তার অথবা তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন।
খ. র., রহ. শব্দ দু’টো সংক্ষেপ লেখা হয় নবী ও সাহাবি ব্যতীত বিশিষ্ট নেককার, পরহেজগার, মুত্তাকি মুসলিমদের মধ্যে যারা মারা গেছেন- তাদের নামের পর। পূর্ণ রূপ হলো-‘রাহমতুল্লাহি আলাইহি। ’ বাক্যটির অর্থ- তার ওপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক।
সুতরাং তাদের উচিত আব্দুল কাদির জিলানী রহ. বলা। কারণ তিনি সাহাবী ছিলেন না। বরং তিনি একজন নেককার, পরহেজগার, মুত্তাকি বুজুর্গ ছিলেন।