بسم الله
الرحمن الرحيم
জবাব,
আল্লাহ তা'আলা বলেন,
وَاللَّاتِي
يَأْتِينَ الْفَاحِشَةَ مِن نِّسَائِكُمْ فَاسْتَشْهِدُوا عَلَيْهِنَّ أَرْبَعَةً
مِّنكُمْ ۖ فَإِن شَهِدُوا فَأَمْسِكُوهُنَّ فِي الْبُيُوتِ حَتَّىٰ
يَتَوَفَّاهُنَّ الْمَوْتُ أَوْ يَجْعَلَ اللَّهُ لَهُنَّ سَبِيلًا-
আর তোমাদের নারীদের
মধ্যে যারা ব্যভিচারিণী তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের মধ্য থেকে চার জন পুরুষকে সাক্ষী হিসেবে
তলব কর। অতঃপর যদি তারা সাক্ষ্য প্রদান করে তবে সংশ্লিষ্টদেরকে গৃহে আবদ্ধ রাখ,
যে পর্যন্ত মৃত্যু তাদেরকে তুলে না নেয়
অথবা আল্লাহ তাদের জন্য অন্য কোন পথ নির্দেশ না করেন।(সূরা নিসা-১৫)
الْأَرْبَعَةُ
إذَا شَهِدُوا عَلَيْهِ بِالزِّنَا فَسُئِلُوا عَنْ كَيْفِيَّتِهِ وَمَاهِيَّتِهِ
قَالُوا: لَا نَزِيدُ لَك عَلَى هَذَا. لَمْ تُقْبَلْ شَهَادَتُهُمْ وَلَكِنْ لَا
حَدَّ عَلَيْهِمْ لِتَكَامُلِ عَدَدِهِمْ فَإِنَّ تَكَامُلَ عَدَدِ الشُّهُودِ
مَانِعٌ مِنْ وُجُوبِ الْحَدِّ -
যদি চারজন সাক্ষী
কারো উপর যিনা ব্যভিচারের সাক্ষ্য প্রদান করে, কাযী বা শরয়ী কোর্ট কর্তৃক তাদেরকে যিনার পদ্ধতি ও আনুষাঙ্গিক
দিক নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে, তারা
বলে যে, এ
সম্পর্কে আমরা অতিরিক্ত কিছুই বলছি না, তাহলে তাদের সাক্ষ্যকে গ্রহণ করা হবে না।তবে যেহেতু তাদের
নেসাব তথা তারা চারজন রয়েছেন, তাই তাদের উপর হদ কায়েম করা হবে না।কেননা সাক্ষ্যর নেসাব পরিপূর্ণ
থাকলে, তা
হদের জন প্রতিবন্ধক হয়ে দাড়ায়।(ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া-২/১৪৩)
وَإِنْ
شَهِدَ أَرْبَعَةٌ عَلَى رَجُلٍ بِالزِّنَا وَأَحَدُهُمْ عَبْدٌ أَوْ مَحْدُودٌ
فِي قَذْفٍ فَإِنَّهُمْ يُحَدُّونَ وَلَا يُحَدُّ الْمَشْهُودُ عَلَيْهِ هَكَذَا
فِي الْهِدَايَةِ.
চারজন সাক্ষীর
কোনো একজন গোলাম বা মিথ্যা সাক্ষ্যর অভিযোগে দন্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি হয়,
তাহলে বাদবাকী তিন সাক্ষীর উপর হদ কায়েম
করা হবে। এবং যার উপর যিনার অভিযোগ করা হয়েছে, তাকে দন্ড দেয়া হবে না। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া-২/১৫৩)
إنْ شَهِدَ
أَرْبَعَةٌ عَلَى امْرَأَةٍ بِالزِّنَا فَنَظَرَ إلَيْهَا النِّسَاءُ فَقُلْنَ
هِيَ بِكْرٌ لَا حَدَّ عَلَيْهِمَا وَلَا عَلَى الشُّهُودِ كَذَا فِي الْكَافِي.
وَكَذَا إذَا قُلْنَ هِيَ رَتْقَاءُ أَوْ قَرْنَاءُ كَذَا فِي فَتْحِ الْقَدِيرِ.
যদি চারজন ব্যক্তি
কোনো পুরুষের উপর যিনার সাক্ষ্য দেয়,অতপর বিজ্ঞ মহিলারা ঐ মহিলার দিকে তাকিয়ে বলে,
মেয়ের তো এখনো সতিচ্ছেদ বা যোনীচ্ছেদ হয়নি,
বা মেয়ের যোনীপথ বন্ধ,জড়ায়ুর মুখ বন্ধ, তাহলে মেয়ের উপর হদ কায়েম হবে না। এবং সাক্ষীদের উপরও
হদ কায়েম করা হবে না। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া-২/১৫৩)
আয়িশাহ্ (রাঃ)
হতে বর্ণিত।
وَعَنْهَا
قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «ادرؤا الْحُدُودَ
عَنِ الْمُسْلِمِينَ مَا اسْتَطَعْتُمْ فَإِنْ كَانَ لَهُ مَخْرَجٌ فَخَلُّوا
سَبِيلَهُ فَإِنَّ الْإِمَامَ أَنْ يُخْطِئَ فِي الْعَفْوِ خَيْرٌ مِنْ أَنْ
يُخْطِئَ فِي الْعُقُوبَةِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: قَدْ رُوِيَ
عَنْهَا وَلم يرفع وَهُوَ أصح
তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ মুসলিমদের যথাসম্ভব দণ্ডযোগ্য শাস্তি থেকে যদি সামান্যতম অব্যাহতির উপায় থাকে,
তাহলে তাকে ছেড়ে দাও। কেননা শাসকের ক্ষমা
করার ক্ষেত্রে ভুল করা শাস্তি দেয়ার ক্ষেত্রে ভুল করার চেয়ে উত্তম। (মিশকাত-৩৫৭০,তিরমিযী ১৪২৪)
যিনা (ব্যভিচার)
একটা চরম অপরাধ। অনেক অপরাধের সমষ্টি। মানবসভ্যতার জন্য মারাত্মক হুমকি। নির্লজ্জতা
ও বেহায়াপনার চূড়ান্ত রূপ। এতে আত্মিক, মানসিক, শারীরিক, চারিত্রিক, সামাজিক বহু রকমের বিপর্যয় ঘটে। এর কুফল কখনো কখনো গোটা
সমাজকে আচ্ছন্ন করে ফেলে।
ইসলাম যিনার কাছে
যেতেও নিষেধ করে-
وَ لَا
تَقْرَبُوا الزِّنٰۤی اِنَّهٗ كَانَ فَاحِشَةً ؕ وَ سَآءَ سَبِیْلًا.
তোমরা ব্যভিচারের
কাছেও যেও না। নিশ্চয় তা অশ্লীলতা ও বিপথগামিতা। (সূরা বনী ইসরাইল ১৭)
যিনা কত নিকৃষ্ট
তা বোঝার জন্য এই একটি আয়াতই যথেষ্ট। এখানে ‘যিনা করো না’ এ কথা বলা হয়নি;
বরং এর কাছে যেতেও নিষেধ করা হয়েছে। এ
থেকে অনুমান করা যায়, এটা
কত জঘন্য অপরাধ।
ইসলামে শুধু অবৈধ
শারীরিক সম্পর্কের চূড়ান্ত রূপটাই যিনা নয়। বরং যেসব কাজ যিনার প্ররোচনা দেয় সেগুলোও
কঠোরভাবে নিষিদ্ধ এবং তাও যিনা বলে গণ্য।
এক হাদীসে আছে-
الْعَيْنَانِ
زِنَاهُمَا النّظَرُ، وَالْأُذُنَانِ زِنَاهُمَا الِاسْتِمَاعُ، وَاللِّسَانُ
زِنَاهُ الْكَلَامُ، وَالْيَدُ زِنَاهَا الْبَطْشُ، وَالرِّجْلُ زِنَاهَا
الْخُطَا، وَالْقَلْبُ يَهْوَى وَيَتَمَنّى، وَيُصَدِّقُ ذَلِكَ الْفَرْجُ
وَيُكَذِّبُهُ.
চোখের ব্যভিচার
হল দেখা। কানের ব্যভিচার শোনা। জিহ্বার ব্যভিচার বলা। হাতের ব্যভিচার ধরা। পায়ের ব্যভিচার
হাঁটা। মন কামনা করে আর লজ্জাস্থান তা সত্য
বা মিথ্যায় পরিণত করে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৬৫৭)
অর্থাৎ চোখ-কান-হাত-পা-জিহ্বা
সবই যিনা করে- যিনার প্ররোচনা দেয়, যা পূর্ণতা পায় লজ্জাস্থানের মাধ্যমে। সুতরাং এসব অঙ্গের
ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
ইসলামে ধর্ষণ প্রমাণের
নীতিমালা:
ব্যভিচার প্রমাণের জন্য ইসলামে
দু’টোর যে কোনোটি জরুরি। ক. ৪ জন সাক্ষী, খ. ধর্ষকের স্বীকারোক্তি। তবে সাক্ষী না
পাওয়া গেলে আধুনিক ডিএনএ টেস্ট, সিসি ক্যামেরা, মোবাইল ভিডিও, ধর্ষিতার বক্তব্য ইত্যাদি অনুযায়ী ধর্ষককে দ্রুত গ্রেফতার
করে স্বীকার করার জন্য চাপ দেওয়া হবে। স্বীকারোক্তি পেলে তার ওপর শাস্তি কার্যকর করা
হবে।
ইসলামে ধর্ষণ ও
ব্যভিচার, সম্মতি-অসম্মতি
উভয় ক্ষেত্রেই পুরুষের শাস্তি নির্ধারিত রয়েছে। তবে নারীর ক্ষেত্রে ধর্ষিতা হলে কোনো
শাস্তি নেই, সম্মতিতে
হলে শাস্তি আছে। যৌন অপরাধ নির্ণয়ে ইসলাম নির্ধারিত বিভাজনরেখা (বিবাহিত-অবিবাহিত)
সর্বোৎকৃষ্ট।
ইসলামে ব্যভিচারের
শাস্তি ব্যক্তিভেদে একটু ভিন্ন। ব্যভিচারী যদি বিবাহিত হয়,
তাহলে তাকে প্রকাশ্যে পাথর মেরে মৃত্যুদণ্ড
দেওয়া হবে। আর যদি অবিবাহিত হয়, তাহলে তাকে প্রকাশ্যে একশ’ ছড়ি মারা হবে। নারী-পুরুষ উভয়ের
জন্য একই শাস্তি।
কোরআনে ইরশাদ হয়েছে,
‘ব্যভিচারিণী নারী ব্যভিচারী
পুরুষ, তাদের
প্রত্যেককে একশ’ করে বেত্রাঘাত কর। আল্লাহর বিধান কার্যকর কারণে তাদের প্রতি যেন তোমাদের
মনে দয়ার উদ্রেক না হয়, যদি
তোমরা আল্লাহর প্রতি ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাকো। মুসলমানদের একটি দল যেন তাদের
শাস্তি প্রত্যক্ষ করে। ’ –সূরা নূর: ২
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!
ইসলামে শাস্তির
বিধান তিন ধরনের: ১. যে শাস্তি আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। তবে কার্যকর
করার দায়িত্ব অপরাধীর নিজের ওপর ন্যস্ত করেছেন। যেমন—বিভিন্ন ধরনের কাফফারা। ২. যে শাস্তি কোরআন বা হাদিস দ্বারা
নির্দিষ্ট। তবে তা কার্যকর করার দায়িত্ব সরকারের। এ ক্ষেত্রে বিচারক বা সরকারের নিজস্ব
মতামতের কোনো সুযোগ নেই। যেমন—হদ্দ ও কেসাস।
৩. যেসব অপরাধের শাস্তির কোনো পরিমাণ নির্ধারিত হয়নি;
বরং বিচারকের বিবেচনার ওপর ছেড়ে দেওয়া
হয়েছে। বিচারক স্থান, কাল
ও পরিবেশ বিবেচনা করে অপরাধ দমনের জন্য যেমন ও যতটুকু শাস্তির প্রয়োজন মনে করেন ততটুকুই
দেবেন। শরিয়তের পরিভাষায় তাকে ‘তাজির’ বলা হয়।
জ্বী না ভাই! আপনি
একক ভাবে কারো উপর হদ বা কেসাস গ্রহণ করতে পারবেন না। তবে এ শাস্তি প্রয়োগ করবে ইসলামী
রাষ্ট্রের সরকার ও প্রশাসন। অন্যদিকে কোনো কারণে এ শাস্তি আরোপিত না হলে দুনিয়ায়ই কোনো
না কোনোভাবে এর শাস্তি এসে যেতে পারে। হাদিস শরিফে এসেছে,
‘ব্যভিচারের মন্দ পরিণাম ছয়টি।
তিনটি দুনিয়ায় আর তিনটি আখিরাতে। দুনিয়ার তিনটি হলো—১. চেহারার সৌন্দর্য নষ্ট হওয়া,
২. দরিদ্রতা,
৩. অকালমৃত্যু । আর আখিরাতের তিনটি হলো—১. আল্লাহর অসন্তুষ্টি, ২. হিসাব-নিকাশের কঠোরতা ও ৩. জাহান্নামের কঠিন শাস্তি।
(ইসলামের দৃষ্টিতে অপরাধ, ই.ফা.
পৃ. ১০৯)