আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
273 views
in সালাত(Prayer) by (4 points)
আস সালামু আলাইকুম। আমার ৬ বছর ২ মাসের ছেলে আছে। তাকে নিয়ে প্রায়ই মসজিদে যাই। সে মোটামুটি বুঝতে পারে। মসজিদে সাধারণত দুষ্টুমি করে না, তবে মাঝে মাঝে দুষ্টুমি করে। আর এই দুষ্টুমি বিশেষত মসজিদের মুরুব্বিরা পছন্দ করেন না। কয়েকদিন বাচ্চাদের আনা নিয়ে মসজিদে ঝামেলাও সৃষ্টি হয়েছে।
মসজিদের বাচ্চাদের নিয়ে আসা প্রসঙ্গে জানতে চাই। ইসলাম কি মসজিদে বাচ্চাদের নিয়ে আসাকে পছন্দ করে? কত বছরের বাচ্চাকে মসজিদে আনা যাবে?

1 Answer

0 votes
by (65,250 points)
edited by

 

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

ছালাতে শিশুদের সাথে করে নিয়ে যাওয়া উত্তম। এতে শিশুকাল থেকেই মসজিদে ছালাত আদায়ের অভ্যাস গড়ে ওঠে। সেকারণ নববী যুগে শিশুদের মসজিদে নিয়ে যাওয়ার প্রচলন ছিল।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) শিশুর ক্রন্দন শ্রবণের কারণে ছালাত সংক্ষিপ্ত করেছেন (বুখারী হা/৭০৯; মুসলিম হা/৪৭০)। 

তিনি তাঁর দুই নাতি হাসান ও হোসাইন-কে কোলে নিয়ে জুম‘আর খুৎবাও দিয়েছেন (আবুদাঊদ হা/১১০৯; ইবনু মাজাহ হা/২৯২৬)।

উপরন্তু তিনি নাতনীকে নিয়ে জামা‘আতে ছালাত আদায় করেছেন।

আবু ক্বাতাদাহ (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে ইমামতি করতে দেখেছি, এমতাবস্থায় নাতনী উমামা বিনতে যয়নব তার কাঁধে ছিল। যখন তিনি রুকূতে যেতেন, তখন তাকে রেখে দিতেন এবং যখন সিজদা হ’তে উঠতেন, তখন তাকে (পুনরায় কাঁধে) ফিরিয়ে নিতেন (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/৯৮৪ ‘ছালাত’ অধ্যায়)। 

একদিন রাসূল (ছাঃ) এশার ছালাতে আসতে দেরী করলে মসজিদে আগত নারী ও শিশুরা ঘুমিয়ে পড়েছিল (বুখারী হা/৫৬৬; মুসলিম হা/৬৩৮)। 

অতএব এটা প্রমাণিত যে, সেসময় শিশুরা নিয়মিত মসজিদে যেত।

তবে কোন শিশুর অনিয়ন্ত্রিত আচরণ যদি মুছল্লীদের জন্য কষ্টদায়ক হয়ে যায়, তবে ঐসব শিশুদের মসজিদে আনা থেকে বিরত থাকাই উত্তম। কেননা এতে মুছল্লীদের খুশু-খুযূ বিনষ্ট হয়। 

যেমনভাবে কাঁচা-পিয়াজ ও রসুন মুছল্লীদের জন্য কষ্টদায়ক হওয়ায় তা খেয়ে মসজিদে আসতে নিষেধ করা হয়েছে (উছায়মীন, লিকাউল বাবিল মাফতূহ ৩৭)।

حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ يُوسُفَ السُّلَمِيُّ، حَدَّثَنَا مُسْلِمُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، حَدَّثَنَا الْحَارِثُ بْنُ نَبْهَانَ، حَدَّثَنَا عُتْبَةُ بْنُ يَقْظَانَ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، عَنْ مَكْحُولٍ، عَنْ وَاثِلَةَ بْنِ الأَسْقَعِ، أَنَّ النَّبِيَّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ قَالَ " جَنِّبُوا مَسَاجِدَكُمْ صِبْيَانَكُمْ وَمَجَانِينَكُمْ وَشِرَارَكُمْ وَبَيْعَكُمْ وَخُصُومَاتِكُمْ وَرَفْعَ أَصْوَاتِكُمْ وَإِقَامَةَ حُدُودِكُمْ وَسَلَّ سُيُوفِكُمْ وَاتَّخِذُوا عَلَى أَبْوَابِهَا الْمَطَاهِرَ وَجَمِّرُوهَا فِي الْجُمَعِ " .

হযরত ওয়াসিলা ইবনুল আসকা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা তোমাদের মসজিদসমূহকে শিশু, পাগল, ক্রয়-বিক্রয়, ঝগড়া-বিবাদ, হৈ-চৈ, হদ্দ কার্যকরকরণ ও উন্মুক্ত অস্ত্র বহন থেকে হেফাযত করো। তোমরা তার দরজাসমূহের কাছে শৌচকর্মের জন্য ঢিলা রাখো এবং জুমুআহর দিন তাকে সুগন্ধময় করো।

(সুনানে ইবনে মাজাহ ৭৫০)

★সমাজের অধিকাংশ বয়োবৃদ্ধ মুসল্লিদের মাঝে প্রচলিত একটি ভুল ধারণা হলোছোট ছোট শিশুকে মসজিদে নেওয়া যাবে না কিংবা গেলেও তাদের সবার পেছনে দাঁড় করাতে হবে। এই কোমলমতি শিশুদের সাথে এমন রুক্ষ-রুঢ় আচরণ করা হয়। যার ফলে মসজিদের প্রতি তাদের আগ্রহ কমে যায়। আর অভিভাবকরা বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে যান। অথচ আমরা জানিরাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মসজিদে নববীতে সালাত আদায় করতেনতখন তাঁর নাতিদ্বয় হাসান ও হুসাইন (রা.) তাঁর ঘাড়ে চড়ে বসতেন। এমনকী তাদের এ খেলায় যেন ব্যাঘাত না ঘটেসে কারণে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সিজদায় বিশেষ সময় অতিবাহিত করতেন। সাহাবিরাও তা প্রত্যক্ষ করতেন।

তবে শিশুদের মসজিদে নেওয়ার ক্ষেত্রে শরীয়ত নির্ধারিত কিছু নিয়ম-নীতি রয়েছে।

 ১. শিশু একেবারে অবুঝ হলে মসজিদে আনা নিষেধ। যেমন: তিন-চার বছরের বাচ্চা। এসব বাচ্চারা লাফালাফি, দৌড়াদৌড়ি, নামাজির সামনে দিয়ে অতিক্রম, পেশাব-পায়খানা ইত্যাদি করে মসজিদের আদবের খেলাফ করে। একারণেই তাদের ব্যাপারে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সতর্ক করেছেন। হাদিস শরিফে এসেছে, হজরত ওয়াসিলা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘তোমরা তোমাদের মসজিদকে অবুঝ শিশু ও পাগলদের থেকে দূরে রাখো, তদ্রূপ ক্রয়-বিক্রয়, বিচার-আচার, উচ্চস্বর, দণ্ডদান ও তরবারি কোষমুক্ত করা থেকে বিরত থাকো।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং-৭৫০)

২. নামাজের কাতারে বুঝমান নাবালেগ শিশুর অবস্থান। বুঝ হয়েছে, এমন নাবালেগ শিশুদের ব্যাপারে বিধান হলো, যদি শিশু একজন হয়, তাহলে তাকে বড়দের কাতারেই সমানভাবে দাঁড় করাবে। এ ক্ষেত্রে বড়দের নামাজের কোনো অসুবিধা হবে না। একাধিক শিশু হলে সাবালকদের পেছনে পৃথক কাতারে দাঁড় করানো সুন্নত। তবে হারিয়ে যাওয়া বা দুষ্টুমি করার আশঙ্কা হলে, বড়দের কাতারেও মুসল্লিদের মাঝে মাঝে দাঁড়াতে পারবে। (আলবাহরুর রায়েক-১/৬১৮, আদ্দুররুল মুখতার-১/৫৭১) মসজিদে ছোটরা এলে দুষ্টুমি করবে-এটাই স্বাভাবিক। তাই ছোটরা নামাজে এলে তাদেরকে পাশে নিয়ে নামাজে দাঁড়ান, তাদের আলাদাভাবে দাঁড়াতে দেবেন না। ছোটরা আলাদাভাবে দাঁড়ালে দুষ্টুমি করবে, বড়দের সঙ্গে একত্রে দাঁড়ালে দুষ্টুমি করার সুযোগ পাবে না। সেই সঙ্গে তাদের আদর-স্নেহ দিয়ে বুঝিয়ে বলুন, মসজিদে হাসাহাসি-দুষ্টুমি করলে মসজিদের পবিত্রতা এবং মুসল্লিদের মনোযোগ নষ্ট করে। দেখবেন তারা চুপ থাকবে। হাদিসে আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ছোটদের দয়া আর বড়দের শ্রদ্ধা করেনা সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত না! (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং- ১/৬)

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

হাদীসের মাঝে যেমন নাবালেগ শিশুদের মসজিদে নিয়ে আসার কথা এসেছে, তেমনি কুরআন ও হাদীসের বিশুদ্ধ ব্যাখ্যা ও সুবিন্যস্ত রূপ ইসলামী ফিক্বহের কিতাবেও তা এসেছে। হাদীসের আলোকে ফুক্বাহায়ে কেরাম বলেছেন, নামাযের কাতারে প্রথমে প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষরা থাকবে। আর পিছনে থাকবে শিশুরা। কিন্তু তারা একসাথে থেকে দুষ্টুমি করার সম্ভাবনা থাকলে তাদের বড়দের কাতারের মাঝখানে মাঝখানে দাঁড় করাবে। শিশুদের নামাযের প্রশিক্ষণের জন্য মসজিদে নিয়ে আসা উচিত। তবে খেয়াল রাখা উচিত দুষ্টুমি করে যেন অন্যদের নামাযের বিঘ্ন না ঘটায়।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 163 views
0 votes
1 answer 153 views
...