بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
https://ifatwa.info/52128/?show=52128#q52128
নং ফাতওয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে যে,
হাদীস শরীফে বর্ণিত রয়েছে।
ﻟَﺎ ﻃَﺎﻋَﺔَ ﻟِﻤَﺨْﻠُﻮﻕٍ ﻓِﻲ ﻣَﻌْﺼِﻴَﺔِ ﺍﻟﻠَّﻪِ
ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ
আল্লাহর অবাধ্যতায় কোনো মাখলুকের
অনুসরণ করা যাবে না। (মুসনাদে আহমদ-১০৯৮)
ইমাম বোখারী রহঃ হাসান বসরী
রহঃ থেকে বর্ণনা করেন,
" إن منعتْه أمُّه عن العشاء في
الجماعة شفقة:لم يطعها "
যদি মা তার সন্তানের কল্যাণ
কামনায় তাকে অন্ধকারে এশার জামাতে যেতে বাধা প্রদান করে,তাহলে এক্ষেত্রে মায়ের আদেশকে মানা যাবে না। (সহীহ বোখারী-১/২৩০)
★প্রিয়
প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!
নফল এবং মুস্তাহাব ইবাদত সম্পর্কে
কোনো সন্দেহ নেই যে,ইহা
কামিল ঈমানের পরিচায়ক এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের অন্যতম একটি মাধ্যম।এর বিপরীতে আল্লাহ
তা'আলা সওয়াব প্রদান
করবেন।ঐ সমস্ত নফল ইবাদত যা ফরয ইবাদতের জিনস থেকে হয়,যদি ফরয ইবাদতে কোনো প্রকার ত্রুটি থাকে,তাহলে ঐ নফল গুলো সেই ফরযের ত্রুটিকে পুরণ করে দেয়।যেমন
নফল হজ্ব ফরয হজ্বের ঘাটতিকে পুরণ করে দেয়।ঠিকতেমনি নফল নামায ফরয নামযের ঘাটতিকে পূর্ণ
করে দেয়।নফল সদকাহ ফরয যাকাতের ঘাটতিকে পূর্ণ করে দেয়,ইত্যাদি ইত্যাদি।সুতরাং কোনো মুসলমানের জন্য নফল এবং মুস্তাহাব
ইবাদতকে পরিত্যাগ করা কখনো উচিৎ হবে না।
এখন প্রশ্ন জাগে যে,মাতাপিতা নফল ইবাদতে বাধা প্রদান করলে,সন্তানের জন্য সেই নফল ইবাদত করার বিধান কি?
★শরীয়তের বিধান
হলো,মাতাপিতা যদি সন্তানের
খেদমতের মুহতাজ থাকে,এবং
সন্তানের কাছে সহযোগিতার আবেদন করে,অন্যদিকে যদি সন্তান এমন কোনো নফল ইবাদতে ব্যস্ত হয়ে যায় যা
মাতাপিতার খেদমতের অন্তরায় থাকে,তাহলে এমতাবস্থায় মাতাপিতার খেদমতই অগ্রগণ্য হবে।সন্তানের জন্য
নফল ইবাদতে লিপ্ত হওয়া জায়েয হবে না।কেননা এক্ষেত্রে মাতাপিতার খেদমতে নিজেকে ব্যস্ত
রাখা ওয়াজিব।সুতরাং নফলের উপর ওয়াজিবকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
তবে যদি মাতাপিতা সন্তানের
খেদমতের মুহতাজ না থাকে,বা
নফল ইবাদতে বাধা প্রদানের কোনো হাজত না থাকে কিংবা এতে মাতাপিতার কোনো ফায়দা না থাকে,এবং এ ব্যাপারে শরীয়তের কোনো আকার ইঙ্গিত না থাকে,তাহলে এমতাবস্থায় মাতাপিতার উক্ত বিধিনিষেধের উপর নফল
ইবাদতকে তারজিহ দেয়াই উত্তম হবে।সুতরাং মাতাপিতার আদেশকে না মেনে তখন নফল ইবাদতই উত্তম
হবে।হ্যা অবশ্যই মাতাপিতার সাথে উত্তম শব্দ ব্যবহার করতে হবে। তাদেরকে হেকমতের সাথে
নরম ভাষায় নফল ইবাদতের গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য বুঝাতে হবে।
★প্রিয় প্রশ্নকারী
দ্বীনি ভাই/বোন,
সুতরাং আপনি মাতাপিতার নিষেধ
সত্ত্বেও তাহাজ্জুদ, নফল
রোযা ইত্যাদি ইবাদত করতে পারবেন। এবং নফল ইবাদতই আপনার জন্য উত্তম হবে। তবে এক্ষেত্রে তাদের আদেশ
মানতে নফল ইবাদত না করা বা কম করাতে কোনো গুনাহ হবেনা।
বিস্তারিত জানুনঃ- https://ifatwa.info/1707/
নফল নামাজে থাকা অবস্থায় মা-বাবা
ডাকলে নামাজ ছেড়ে তাদের ডাকে সাড়া দেওয়া যাবে। তবে তাদের ডাকে সাড়া দেওয়ার জন্য ফরজ
নামাজ ছেড়ে দেওয়া যাবে না। (আল ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু : ২/২২০;
হাশিয়াতুত-তাহতাভি আলা মারাকিল ফালাহ
: ১/২৪৯)
মা-বাবার সেবা নফল ইবাদতের
চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ কীভাবে—এ বিষয়ে আবু হুরায়রা
(রা.) থেকে একটি চমৎকার হাদিস রয়েছে। তিনি বলেন, ‘জুরাইজ (বনি ইসরাঈলের একজন ওলি) তার ইবাদতখানায় ইবাদতে
ব্যস্ত থাকতেন। (একবার) তার মা তার কাছে এলেন। হুমাইদ (রহ.) বলেন,
‘আমাদের কাছে আবু রাফি এমনভাবে
বিষয়টি ব্যক্ত করেন, যেমনভাবে
রাসুলুল্লাহ (সা.) তার মায়ের ডাকের আকার আবু হুরায়রা (রা.)-এর কাছে ব্যক্ত করেছেন।
কিভাবে তিনি তার হাত তার ভ্রুর ওপর রাখছিলেন। এরপর তার দিকে মাথা উঁচু করে তাকে ডাকছিলেন।
বলেন, হে
জুরাইজ! আমি তোমার মা, আমার
সঙ্গে কথা বলো। এই কথা এমন অবস্থায় বলছিলেন, যখন জুরাইজ নামাজে মশগুল ছিলেন।
তখন তিনি মনে মনে বলতে লাগলেন,
হে আল্লাহ! (একদিকে) আমার মা,
আর (অন্যদিকে) আমার নামাজ,
(আমি কী করি?)। বর্ণনাকারী বলেন, অবশেষে তিনি তার নামাজকে অগ্রাধিকার দিলেন। এবং তার মা
ফিরে গেলেন। পরে তিনি দ্বিতীয়বার এলেন এবং বলেন, হে জুরাইজ! আমি তোমার মা,
তুমি আমার সঙ্গে কথা বলো। তিনি বলেন,
হে আল্লাহ! আমার মা,
আমার নামাজ। তখন তিনি তার নামাজে মশগুল
রইলেন। তখন তার মা বলেন, হে
আল্লাহ! এই জুরাইজ আমারই ছেলে। আমি তার সঙ্গে কথা বলতে চাইছিলাম। সে আমার সঙ্গে কথা
বলতে অস্বীকার করল। হে আল্লাহ! তার মৃত্যু দিয়ো না, যে পর্যন্ত না তাকে ব্যভিচারিণীর অপবাদ দেখাও।
তখন মহানবী (সা.) বলেন,
যদি তার মা তার বিরুদ্ধে অন্য কোনো বিপদের
জন্য বদদোয়া করতেন, তাহলে
অবশ্যই সেই বিপদে পতিত হতো। নবী করিম (সা.) বলেন, এক মেষ রাখাল জুরাইজের ইবাদতখানায় (মাঝেমধ্যে) আশ্রয় নিত।
তিনি বলেন, এরপর
গ্রাম থেকে এক নারী বের হয়েছিল। ওই রাখাল তার সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়। এতে ওই নারী
গর্ভবতী হয়ে পড়ে এবং একটি পুত্রসন্তান জন্ম দেয়। তখন লোকেরা তাকে জিজ্ঞাসা করল,
এই (সন্তান) কোথা থেকে?
সে উত্তর দিল,
এই ইবাদতখানায় যে বাস করে,
তার থেকে।
তিনি বলেন,
এরপর তারা শাবল-কোদাল ইত্যাদি নিয়ে এলো
এবং চিৎকার করে ডাক দিল। তখন জুরাইজ নামাজে মশগুল ছিলেন। কাজেই তিনি তাদের সঙ্গে কথা
বললেন না। তিনি বলেন, এরপর
তারা তার ইবাদতখানা ধ্বংস করতে লাগল। তিনি এ অবস্থা দেখে নিচে নেমে এলেন। এরপর তারা
বলল, এই
নারীকে জিজ্ঞাসা করো (সে কী বলছে)। তিনি বলেন, তখন জুরাইজ মুচকি হেসে শিশুটির মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,
তোমার পিতা কে?
তখন শিশুটি বলল,
আমার পিতা সেই মেষ রাখাল।
যখন তারা ওই শিশুর মুখে এ
কথা শুনতে পেল, তখন
বলল, আমরা
তোমার ইবাদতখানার যেটুকু ভেঙে ফেলেছি তা সোনা-রুপা দিয়ে পুনর্নির্মাণ করে দেব। তিনি
বলেন—না, বরং
তোমরা মাটি দ্বারাই আগের মতো নির্মাণ করে দাও। এরপর তিনি তার ইবাদতকক্ষে উঠে গেলেন।
(মুসলিম, হাদিস
নং: ৬২৭৭)