ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ-
(০১)
হ্যাঁ, এভাবে উৎপাদন করা জায়েজ হবে।
(০২)
আমরা ছিলাম পথহারা, দিশেহারা। হেদায়াত ও সফলতার পথ সম্পর্কে ছিলাম অজ্ঞ। অতপর মহান রাব্বুল আলামীন হেদায়েতের বার্তা দিয়ে প্রেরণ করলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে। তিনি এসে আমাদেরকে সত্য-মিথ্যা চিনিয়েছেন। আমাদের নিকট সত্য দ্বীন নিয়ে এসেছেন। নাজাতের পথ দেখিয়েছেন। আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের পন্থা শিখিয়েছেন।
সুতরাং রাসুলুল্লাহ সাঃ আমাদের হিদায়াতের মাধ্যম।
তিনি জগতবাসীর জন্য রহমত হয়ে এসেছেন। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِلْعَالَمِينَ.
(হে নবী!) আমি তোমাকে বিশ্ব জগতের জন্য কেবল রহমত করেই পাঠিয়েছি। সূরা আম্বিয়া (২১) : ১০৭
সাহাবী হযরত আবূ হুরাইরা রা. বর্ণনা করেন যে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন
مَا مِنْ مُؤْمِنٍ إِلّا وَأَنَا أَوْلَى النّاسِ بِهِ فِي الدّنْيَا وَالآخِرَةِ، اقْرَءُوا إِنْ شِئْتُمْ: اَلنَّبِیُّ اَوْلٰی بِالْمُؤْمِنِیْنَ مِنْ اَنْفُسِهِمْ فَأَيّمَا مُؤْمِنٍ تَرَكَ مَالًا فَلْيَرِثْهُ عَصَبَتُهُ مَنْ كَانُوا، فَإِنْ تَرَكَ دَيْنًا، أَوْ ضَيَاعًا فَلْيَأْتِنِي فَأَنَا مَوْلاَهُ.
অর্থাৎ, দুনিয়া ও আখেরাতে আমি প্রত্যেক মুমিনেরই সবচেয়ে ঘনিষ্ঠতর। ইচ্ছা হলে তোমরা এ আয়াতটি তিলাওয়াত কর
اَلنَّبِیُّ اَوْلٰی بِالْمُؤْمِنِیْنَ مِنْ اَنْفُسِهِمْ.
(মুমিনদের পক্ষে নবী তাদের প্রাণ অপেক্ষাও বেশি ঘনিষ্ঠ।) তাই সম্পদ রেখে কোনো মুমিন মারা গেলে আত্মীয়-স্বজন তার ওয়ারিস হবে। আর যদি সে ঋণ কিংবা অসহায় পরিজন রেখে যায়, তবে তারা যেন আমার নিকট আসে। আমিই তাদের অভিভাবক। (
সহীহ বুখারী, হাদীস ৪৭৮১)
মুমিনের জীবনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি মহব্বতের গুরুত্ব অপরিসীম। মহব্বতে রাসূল তো ঈমানের রূহ, মুমিনের জীবনের অন্যতম লক্ষ্য। এই ইশ্ক ও মহব্বত ছাড়া না ঈমানের পূর্ণতা আসে, আর না তার স্বাদ অনুভূত হয়। আর নিছক ভালবাসাই যথেষ্ট নয়, বরং পার্থিব সমস্ত কিছুর উপর এই ভালবাসাকে প্রাধান্য দিতে হবে এবং তাঁর আনুগত্যের মাধ্যমে ভালবাসার প্রকাশ ঘটতে হবে। হযরত আনাস রা. বলেছেন
قَالَ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ: لاَ يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ، حَتّى أَكُونَ أَحَبّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ وَوَلَدِهِ وَالنّاسِ أَجْمَعِينَ.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার নিকট তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ও সমস্ত মানুষ থেকে প্রিয় হব।
(সহীহ বুখারী, হাদীস ১৫)
আব্দুল্লাহ ইবনে হিশাম রা. বলেন
كُنّا مَعَ النّبِيِّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ وَهُوَ آخِذٌ بِيَدِ عُمَرَ بْنِ الخَطّابِ، فَقَالَ لَهُ عُمَرُ: يَا رَسُولَ اللهِ، لَأَنْتَ أَحَبّ إِلَيّ مِنْ كُلِّ شَيْءٍ إِلّا مِنْ نَفْسِي، فَقَالَ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ: لاَ، وَالَذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، حَتّى أَكُونَ أَحَبّ إِلَيْكَ مِنْ نَفْسِكَ، فَقَالَ لَهُ عُمَرُ: فَإِنّهُ الآنَ، وَاللهِ، لَأَنْتَ أَحَبّ إِلَيّ مِنْ نَفْسِي، فَقَالَ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ: الآنَ يَا عُمَرُ!
একদিন আমরা নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিলাম। নবীজী ওমর রা.-এর হাত ধরা ছিলেন। ওমর রা. বলে উঠলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি আমার কাছে সবকিছু থেকে প্রিয়, তবে আমার জান ছাড়া। তখন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না ওমর, এতে হবে না। যে সত্তার হাতে আমার জান তাঁর কসম! (ততক্ষণ পর্যন্ত তুমি পূর্ণাঙ্গ মুমিন হতে পারবে না,) যতক্ষণ না আমি তোমার কাছে তোমার জানের চেয়েও প্রিয় না হই। পরক্ষণেই ওমর রা. বললেন, হাঁ এখন তা হয়েছে; আল্লাহর কসম! (এখন থেকে) আপনি আমার কাছে আমার জানের চেয়েও প্রিয়। তখন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হাঁ ওমর! এখন হয়েছে। Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ৬৬৩২
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন
ثَلَاثٌ مَنْ كُنّ فِيهِ وَجَدَ بِهِنّ حَلَاوَةَ الْإِيمَانِ: مَنْ كَانَ اللهُ وَرَسُولُهُ أَحَبّ إِلَيْهِ مِمّا سِوَاهُمَا...
অর্থাৎ, তিনটি গুণের অধিকারী ব্যক্তি ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করবে। তন্মধ্যে প্রথম হল, যার কাছে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সবচেয়ে প্রিয় হবে।
(সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬৭)
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
নাবী সাঃ এর সাথে এভাবেই পরিচয় করিয়ে দিতে হবে যে তিনি আল্লাহর নাবী ও রাসুল,বার্তা বাহক।
আল্লাহর পরেই তার স্থান।
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
মেয়েরা এগুলা ছেলেদের মতোই বলবে।
নিজ বাবাকে মুহাব্বতের বিষয় মেয়েরা তো ছেলেদের মতোই বলে।সুতরাং রাসুলুল্লাহ সাঃ এর ক্ষেত্রেও সেরকমই বলবে।
এইখানে মনের পর্দা বা গায়রত বোধ আসতে পারেনা।
নিজ বাবার প্রতি মুহাব্বতের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে কিছু বললে তো মেয়েদের মনের মধ্যে মনের পর্দা বা গায়রত বোধ আসতে পারেনা।
সেরকম রাসুলুল্লাহ সাঃ কে নিয়ে এভাবে বললে মনের পর্দা বা গায়রত বোধ আসতে পারেনা।
মনের মধ্যে রাসুলুল্লাহ সাঃ এর প্রতি নবি হিসেবে মুহাব্বতের একটি স্থান বানিয়ে নিতে হবে।
,
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন
إِنّمَا أَنَا لَكُمْ مِثْلُ الْوَالِد.
অর্থাৎ, আমি তোমাদের জন্য পিতৃতুল্য।
(সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস ৮০; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ১৪৩১)
মনের মধ্যে রাসুলুল্লাহ সাঃ এর প্রতি মুহাব্বতের স্থান থাকা চাই।
পিতার প্রতি মুহাব্বতের যেমন মনের মধ্যে স্তর রয়েছে,তেমনি নাবীর নাবী হওয়ার প্রতি লক্ষ্য রেখে আলাদা স্থান দিতে হবে।
যেই মুহাব্বত সকলের চাইতে এমনকি নিজ প্রানের চেয়েও বেশি হতে হবে।