আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
280 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (9 points)
আসসালামু'আলাইকুম।
১.সূরা নুরের পর্দার আয়াতে "আপন নারীগণকে" দ্বারা আল্লাহ তা'আলা কাদেরকে বুঝিয়েছেন? অর্থাৎ নারীদের জন্য কি পুরুষদের মধ্যে মাহরাম-গাইরে মাহরামের মতো, নারীদের ক্ষেত্রেও কোনো কোনো  বিশেষ নারী ব্যতীত বাকি সব নারীর সামনে "গাইরে মাহরাম এর সামনে যেমন" পর্দা করতে হয় বা "সৌন্দর্য প্রদর্শন করা যায় না" তেমনই পর্দা করতে হবে বা সৌন্দর্য প্রদর্শন থেকে বিরত থাকতে হবে?

২. আমি এখন হোস্টেলে থাকি, আর এক মাসের মতো থাকতে হবে এখানে। হোস্টেলের মেয়েদের সামনে আমার পর্দা কেমন হবে? আমি যদি উল্লেখ করে বলি,
 ক) আমার ফ্লোরে যাদেরকে আমি চিনি, খ)আমার বা অন্য ফ্লোরে যাদেরকে আমি চিনি না,  গ) অমুসলিম -- এদের প্রত্যেকের সাথে আমার সতর বা পর্দার সীমা কেমন হবে? ঘ) আমার ফ্লোরে একজন হিন্দু মেয়ে আছে (বেসিন/ওয়াশরুমের কাজের জন্য সবসময় ওর সাথে দেখা হয়), ওর সাথে আমার পর্দা কতটুকু করতে হবে?

৩.বাসায় আমার বোন,মা এদের সামনে আমার পায়ের হাঁটুর নিচের অংশ প্রকাশ পেলে কি সমস্যা হয়? ওদের সামনে ওড়না সবসময় পরা কি আবশ্যক? ওদের সাথেও আমার সতর কতটুকু হবে বললে ভালো হতো।

৪.এছাড়া মা ছাড়া অন্য মেয়ে আত্মীয়ের সাথে এক বিছানায় শোয়া যাবে? শোয়া গেলে এক্ষেত্রে ভিন্ন কাঁথা ব্যবহার কি আবশ্যক? ভিন্ন কাঁথা ব্যবহার করলেও অনেক সময় পা মিলে যায় বা হাঁটুর নিচের অংশ বের হয় এক্ষেত্রে করণীয় কী?

৫.মাহরাম বিশেষত বাবার সামনে কি পায়ের টাকনুর ওপর পর্যন্ত সতর নাকি হাঁটু পর্যন্ত? টাকনুর ওপরের অংশ অনেক সময়ই বের হয়েই যায় চলাফেরা করতে,এতে সমস্যা হবে? আর হাতের কতটুকু অংশ সতর? হাতাকাটা না কিন্তু ছোট হাতা এমন জামা কি পরা যাবে? গলা যদি বড় হয় যে গলার পাশের হাড় দেখা যায় তাহলে সমস্যা হবে? কাঁধ কি সতরের অন্তর্ভুক্ত?

৬.বাবা মেয়ে কি একে অপরকে জড়িয়ে ধরতে পারবে?

1 Answer

0 votes
by (574,260 points)
edited by
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ- 


(০১)
অমুসলিম মেয়েদের সামনে মুসলিম নারীদের পর্দা করতে হবে কিনা,সেই ব্যপারে উলামায়ে কেরামদের মাঝে মতবিরোধ পাওয়া যায়।
কেহ কেহ বলেছেন যে যদিও তাদের সামনে মুসলিম নারীদের পর্দা করা ফরজ নয়,তবে  কম আয কম মুসতাহাব অবশ্যই।
তাই তাদের সামনে পর্দা করাই উচিত।  
কিতাবুন নাওয়াজেল ৬/৩৫
      
কেহ কেহ বলেছেন যে প্রত্যেক গাইরে মাহরাম পুরুষের প্রত্যেক গাইরে মাহরাম স্ত্রীলোকের সামনে যে পরিমাণ পর্দা করা ফরজ, কাফির-ফাসিক মেয়েলোক হতেও মুমিন মেয়েদের সে পরিমাণ পর্দা করা ওয়াজিব।

সুতরাং হিন্দু বা খৃষ্টান মেয়েলোক বা যেকোনো বেদ্বীন বা বেপর্দা মেয়ে হতেও পর্দানশীন নারীর পর্দা করা ওয়াজিব। তাদের সামনে কেবলমাত্র মুখমণ্ডল, হাতের পাতা ও পায়ের পাতা ব্যতীত শরীরের কোনো অংশ খোলা রাখা জায়েজ নয়।

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ- 

وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا ۖ وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّ ۖ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُولِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَىٰ عَوْرَاتِ النِّسَاءِ ۖ وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِنْ زِينَتِهِنَّ ۚ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ [٢٤:٣١] 

ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক তথা নিজেদের (মুসলিম) মহিলাগন, অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। {সূরা নূর-৩১}

لا یحل للمسلمۃ أن تنکشف بین یدي یہودیۃ أو نصرانیۃ أو مشرکۃ إلا أن تکون أمۃ لہا۔ (شامي ۹؍۵۳۴ زکریا)
কোনো মুসলিমা মহিলার জন্য অমুসলিম মহিলার সামনে বেপর্দা হওয়া জায়েয নেই।
  
وقال ابن حجرؒ: الأصح تحریم نظرہا إلی ما لا یبدو في المہنۃ من مسلمۃ غیر سیدتہا ومحرمہا ودخول الذمیات علی أمہات المؤمنین الوارد في الأحادیث الصحیحۃ دلیل لحل نظرہا منہا ما یبدو في المہنۃ، وقال الإمام الرازي: المذہب أنہا کالمسلمۃ والمراد بنسائہن جمیع النساء وقول السلف محمول علی الاستحباب وہٰذا القول أرفق بالناس الیوم فإنہ لا یکاد یمکن احتجاب المسلمات عن الذمیات۔ (روح المعاني ۱۸؍۲۱۱ أشرفیۃ، معارف القرآن ۶؍۴۰۴)
যথা সম্ভব এটাকে আমরা মুসতাহাব বলতে পারি।
তাই তাদের সামনে পর্দা করাই জরুরি।   

বিস্তারিত জানুনঃ- 

(০২)
মহিলার জন্য মহিলার সতর হচ্ছে এক পুরুষের জন্য অন্য পুরুষের সতর যতটুকু।
সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত মেয়েদের সামনে আপনি আপনার সতরের অংশটুকু ছাড়া বাকি অংশটুকু পর্দা না করলেও জায়েজ হবে।
তবে শালীনতা বজায় রেখে পোশাক পরিধান করবেন।
আর অমুসলিম নারীদের সামনে যথাসম্ভব পর্দা করবে, তার সামনে চেহারাও কোনো কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখার চেষ্টা করবেন।

(০৩)
মেয়েদের জন্য মেয়েদের সতর কতটুকু সে সম্পর্কে ফাতাওয়া হিন্দিয়ায় উল্লেখ করা হয়

نظر المرأة إلى المرأة كنظر الرجل إلى الرجل، كذا في الذخيرة. وهو الأصح، هكذا في الكافي. ولا يجوز للمرأة أن تنظر إلى بطن امرأة عن شهوة، كذا في السراجية. ولا ينبغي للمرأة الصالحة أن تنظر إليها المرأة الفاجرة؛ لأنها تصفها عند الرجال فلا تضع جلبابها، ولا خمارها عندها، ولا يحل أيضا لامرأة مؤمنة أن تكشف عورتها عند أمة مشركة أو كتابية إلا أن تكون أمة لها، كذا في السراج الوهاج.

মহিলার জন্য মহিলার সতর হচ্ছে এক পুরুষের জন্য অন্য পুরুষের সতর যতটুকু(অর্থাৎ নাভীর নীচ থেকে হাটু পর্যন্ত)(যাখিরাহ)এটাই বিশুদ্ধ।কোনো মহিলার জন্য অপর মহিলার পেটের দিকে কামভাব সহকারে দৃষ্টি দেয়া জায়েয না।(সিরাজিয়্যাহ)নেককার মহিলার জন্য উচিৎ হবে না যে,তাকে কোনো বদকার মহিলা দেখবে,কেননা ঐ মহিলা অন্যান্য পুরুষের কাছে তার সৌন্দর্যর আলোচনা করবে।সুতরাং কখনো সে ঐ রকম বদকার মহিলার সামনে নিজের বোরখা ও উড়না খুলবে না।ঠিকতেমনিভাবে কোনো মুসলিম মহিলা অমুসলিম কোনো বাদীর সামনে বোরখা বা উড়না খোলবে না, তবে ঐ অমুসলিম বাদীটি তার নিজ মালিকানাধীন থাকলে ( এক্ষেত্রে শংকামুক্ত থাকার ধরুণ তার সামনে বোরখা খোলা) বৈধ হবে।(আস-সিরাজুল ওয়াহ্হাজ) (ফাতাওয়া হিন্দিয়া-৫/৩২৭) 

বিস্তারিত জানুনঃ- 

★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে বোন,মা এদের সামনে  পায়ের হাঁটুর নিচের অংশ প্রকাশ পেলে সমস্যা হবেনা।

তাদের সামনে ওড়না সবসময় পরা আবশ্যক নয়। 

(০৪)
অন্য মেয়ে আত্মীয়ের সাথে এক বিছানায় শোয়া যাবে।
এক্ষেত্রে ভিন্ন কাঁথা আবশ্যক। 

ভিন্ন কাঁথা ব্যবহার করলেও যদি অনিচ্ছাকৃত ভাবে কোনো সময় পা মিলে যায় বা হাঁটুর নিচের অংশ বের হয় এক্ষেত্রে গুনাহ হবেনা।

তবে সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে,যাতে পা মিলে না যায়।

(০৫)
মাহরাম মহিলাদের দিকে দৃষ্টি দেয়া কতটুকু জায়েয এ সম্পর্কে ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়াতে বলা হয়,
وأما نظره إلى ذوات محارمه فنقول: يباح له أن ينظر منها إلى موضع زينتها الظاهرة والباطنة وهي الرأس والشعر والعنق والصدر والأذن والعضد والساعد والكف والساق والرجل والوجه،
যৌন উত্তেজিত হওয়ার আশংকা না থাকলে  
পুরুষ তার মাহরামে আবদিয়্যাহ মহিলার প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সৌন্দর্যময় স্থানের দিকে দৃষ্টি দিতে পারবে।সে স্থানগুলো হল,মাথা, চুল,গর্দান,বুকের উপরি অংশ,কান,বাহু,হাতের কবজি,পায়ের গোড়ালি,পা ও চেহারা।

বিস্তারিত জানুনঃ- 

★সুতরাং মাহরাম পুরুষ এর সামনে পায়ের গোড়ালি থেকে উপরের অংশ সতরের অন্তর্ভুক্ত। 
পায়ের গোড়ালি হতে নিচ পর্যন্ত সতরের অন্তর্ভুক্ত নয়।

টাকনুর কিছু উপরের অংশ বের হলে সমস্যা নেই।

★হাতের বাহু পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে। তাই হাতাকাটা না কিন্তু ছোট হাতা এমন জামা পড়া যাবে। 

★গলা যদি বড় হয় যে গলার পাশের হাড় দেখা যায় তাহলে সমস্যা হবেনা।

★কাঁধ সতরের অন্তর্ভুক্ত নয়।
তবে পিঠ সতরের অন্তর্ভুক্ত। 

(০৬)
ফিতনার আশংকা থাকায় অনুমোদন নেই।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...