আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
127 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (5 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।

১. স্বপ্নটা এমন ছিলো, আমি সাথে আরও কয়েকজন মেয়ে মিলে আল্লাহর সাথে দেখা করতে যাচ্ছি। কিছু পথ যাওয়ার পর আমি বলি এতো দূরের পথ যেহেতু তাহলে প্রস্রাব করে নেই।এই কাজ শেষে আবার রওনা হলাম,,আবার বললাম আমি কি আমার আল্লাহর সাথে এইভাবে দেখা করবো?পরে আবার বোরকা পড়ে রওনা হলাম।এখন আমার সাথের মেয়েদের থেকে একজন বলতেছে তুই আগে জাহান্নামে গিয়ে দুনিয়ার মানুষের সাথে দেখা করিছ।তাহলে বুঝতে পারবি তারা কেন জাহান্নামে গেছে আর সেই অনুযায়ী নিজেকে সংশোধন করতে পারবি।তখন আমি বললাম নাহ আমি আগে আমার আল্লাহর সাথে দেখা করবো।এটা বলে আমরা হাঁটা শুরু করছি যখন জঙ্গলের মধ্যে একটা সরু রাস্তায় দিয়ে হাঁটতেছিলাম তখন আমার সাথে আর কেউ ছিল না, আমি সম্পূর্ণ একা ছিলাম।তারপর প্রথম আকাশে যখন পৌঁছালাম তখন আমার বাম সাইড থেকে একজন বলতেছে সামনে জাহান্নাম ঐখানে দুনিয়ার মানুষের সাথে দেখা করতে পারবেন।আমি তখনও বললাম না আমি তাদের সাথে দেখা করবো না।আমার আল্লাহ কোথায়!আমি আমার আল্লাহর সাথে দেখা করবো তখন উনি বলে আল্লাহ ওনার আরশে আছেন।তখন আমি আল্লাহর সাথে দেখা করার জন্য আল্লাহর আরশের দিকে রওনা হলাম।
স্বপ্নটা এইটুকুই ছিলো। স্বপ্নটা গত ২০/২১রমজানের দিকে দেখছিলাম সেহরির আগে।

২. ২দিন আগে স্বপ্নে দেখি আমি যমযম কূপের পানি খাচ্ছি।কিন্তু যমযম কূপের পানির সাথে নরমাল পানি মিশানো ছিলো।
৩. আজকে সকালে ফযরের নামাজের পর দেখি।আমি আমার খালাকে বলতেছি আমার যে বিয়ে হচ্ছে না,এটা আল্লাহ আমার পরীক্ষা নিচ্ছেন।এটা বলে তখন আকাশের দিকে তাকালাম দেখি ২টা পাখি একটা সাদা মুকুটের (মুকুটের মত দেখতে) উপর বসে কি যেনো খাচ্ছে।আর পাখিগুলো এতোই সুন্দর ছিলো যে, পাখিগুলোর সাথে  পুরো আকাশও আলোকিত হয়ে ছিলো।আর সাথে পাখিগুলো বিশাল আকৃতির ছিলো। পরে ডান দিকে তাকায় দেখি একটা পাতা একটা টিলার উপর আল্লাহকে সেজদাহ দিচ্ছে (পাতাটাও স্বাভাবিক পাতার তুলনায় অনেক বড় ছিলো)।পরে আবার ঐ পাতা জমিনে নেমে আল্লাহকে সেজদাহ দিচ্ছে।

1 Answer

0 votes
by (565,890 points)
edited by
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ- 


জাগ্রত অবস্থায় এ পৃথিবীতে আল্লাহ তাআলার দর্শন সম্ভব নয়। অবশ্য আল্লাহ পাক অনেক সময় স্বপ্নে দর্শন করিয়ে দেন। কীভাবে করান এটা আল্লাহ তাআলাই ভাল জানেন।

তবে এ কথা মনে রাখতে হবে, স্বপ্নের মাঝে কেউ যদি আল্লাহর কোনো আকৃতি দেখে তাহলে সেটি প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর আকৃতি নয়। 

কারণ, কুরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে,

لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ البَصِيرُ

‘কোনো কিছুই তাঁর সদৃশ নয়, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।’ [সূরা শুরা, আয়াত: ১১]

তাই কেউ স্বপ্নে দেখলেও স্বপ্নে দেখা আকৃতিই যে আল্লাহ তাআলার আকৃতি, এই বিশ্বাস পোষণ করা যাবে না।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 

عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ قَالَ: احْتَبَسَ عَنَّا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتَ غَدَاة عَن صَلَاة الصُّبْح حَتَّى كدنا نتراءى عين الشَّمْس فَخرج سَرِيعا فثوب بِالصَّلَاةِ فَصَلَّى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَتَجَوَّزَ فِي صَلَاتِهِ فَلَمَّا سَلَّمَ دَعَا بِصَوْتِهِ فَقَالَ لَنَا عَلَى مَصَافِّكُمْ كَمَا أَنْتُمْ ثُمَّ انْفَتَلَ إِلَيْنَا ثُمَّ قَالَ أَمَا إِنِّي سَأُحَدِّثُكُمْ مَا حَبَسَنِي عَنْكُمُ الْغَدَاةَ إِنِّي قُمْتُ مِنَ اللَّيْلِ فَتَوَضَّأْتُ وَصَلَّيْتُ مَا قُدِّرَ لِي فَنَعَسْتُ فِي صَلَاتِي حَتَّى اسْتَثْقَلْتُ فَإِذَا أَنَا بِرَبِّي تَبَارَكَ وَتَعَالَى فِي أَحْسَنِ صُورَةٍ فَقَالَ يَا مُحَمَّدُ قُلْتُ لَبَّيْكَ رَبِّ قَالَ فِيمَ يخْتَصم الْمَلأ الْأَعْلَى قلت لَا أَدْرِي رب قَالَهَا ثَلَاثًا قَالَ فَرَأَيْتُهُ وَضَعَ كَفَّهُ بَيْنَ كَتِفَيَّ حَتَّى وَجَدْتُ بَرْدَ أَنَامِلِهِ بَيْنَ ثَدْيَيَّ فَتَجَلَّى لِي كُلُّ شَيْءٍ وَعَرَفْتُ فَقَالَ يَا مُحَمَّدُ قُلْتُ لَبَّيْكَ رَبِّ قَالَ فِيمَ يَخْتَصِمُ الْمَلأ الْأَعْلَى قلت فِي الْكَفَّارَات قَالَ مَا هُنَّ قُلْتُ مَشْيُ الْأَقْدَامِ إِلَى الْجَمَاعَاتِ وَالْجُلُوسُ فِي الْمَسَاجِد بَعْدَ الصَّلَوَاتِ وَإِسْبَاغُ الْوَضُوءِ حِينَ الْكَرِيهَاتِ قَالَ ثُمَّ فِيمَ؟ قُلْتُ: فِي الدَّرَجَاتِ. قَالَ: وَمَا هن؟ إطْعَام الطَّعَام ولين الْكَلَام وَالصَّلَاة وَالنَّاس نيام. ثمَّ قَالَ: سل قل اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ فِعْلَ الْخَيْرَاتِ وَتَرْكَ الْمُنْكَرَاتِ وَحُبَّ الْمَسَاكِينِ وَأَنْ تَغْفِرَ لِي وَتَرْحَمَنِي وَإِذَا أَرَدْتَ فِتْنَةً قوم فتوفني غير مفتون أَسأَلك حَبَّكَ وَحُبَّ مَنْ يَحْبُكُ وَحُبَّ عَمَلٍ يُقَرِّبُنِي إِلَى حبك . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّهَا حَقٌّ فَادْرُسُوهَا ثُمَّ تَعَلَّمُوهَا»

মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (নিত্য দিনের অভ্যাসের বিপরীত) ফজরের (ফজরের) সালাতে আসতে এতটা দেরী করলেন যে, সূর্য প্রায় উঠে উঠে। এর মধ্যে তাড়াহুড়া করে তিনি আসলেন। সাথে সাথে সালাতের ইক্বামাত(ইকামত/একামত) দেয়া হলো। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সংক্ষিপ্ত করে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন। সালাম দেবার পর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উচ্চকণ্ঠে আমাদের উদ্দেশ্য করে বললেন, তোমরা সালাতের কাতারে যে যেভাবে আছো সেভাবে থাকো। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের দিকে ফিরলেন ও বললেন, শুন! আজ ভোরে তোমাদের কাছে আসতে যে কারণ আমার কাছে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল তা হলো, আমি রাতে ঘুম থেকে উঠলাম। উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করলাম। পরে আমার পক্ষে যা সম্ভব হলো সালাত আদায় করলাম। সালাতে আমার তন্দ্রা ধরল, ঘুমে অসাড় হয়ে পড়লাম। এ সময় দেখি, আমি আমার ‘প্রতিপালক’ তাবারাকা ওয়া তা‘আলার কাছে উপস্থিত। তিনি খুবই উত্তম অবস্থায় আছেন। তিনি আমাকে ডাকলেন, হে মুহাম্মাদ! আমি উত্তর দিলাম, হে আমার ‘রব’, আমি উপস্থিত। তিনি বললেন, ‘‘মালা-উল আ‘লা-’’ অর্থাৎ- শীর্ষস্থানীয় মালায়িকাহ্ কী নিয়ে বিতর্ক করছে? আমি উত্তরে বললাম, আমি তো কিছু জানি না, হে আমার ‘রব’! এভাবে তিনি আমাকে তিনবার জিজ্ঞেস করলেন।

তারপর দেখি, তিনি আমার দু’ কাঁধের মাঝখানে তাঁর হাত রেখে দিয়েছেন। এতে আমি আমার সিনায় তাঁর আঙ্গুলের শীতলতা অনুভব করতে লাগলাম। আমার নিকট তখন সব জিনিস প্রকাশ হয়ে পড়ল। আমি সকল ব্যাপার বুঝে গেলাম। তারপর তিনি আবার আমাকে ডাকলেন, হে মুহাম্মাদ! আমি বললাম, আমি উপস্থিত হে পরওয়ারদিগার। এখন বলো দেখি ‘‘মালা-উল আ‘লা-’’ কী নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করছে। আমি বললাম, গুনাহ মিটিয়ে দেবার ব্যাপারসমূহ নিয়ে। আল্লাহ তা‘আলা বললেন, সে সব জিনিস কী? আমি বললাম, সালাতের জন্য মসজিদে যাওয়া, সালাতের পরে দু‘আ ইত্যাদির জন্য মসজিদে বসা এবং শীতের বা অন্য কারণে উযূ করা কষ্টকর হলেও তা উপেক্ষা করে উযূ করা। আবার আল্লাহ তা‘আলা জিজ্ঞেস করলেন, আর কী ব্যাপারে তারা বিতর্ক করছে? আমি বললাম, দারাজাত অর্থাৎ- মর্যাদার ব্যাপারে। তিনি বললেন, সে সব কী? আমি বললাম, গরীব-মিসকীনদের খাবার দেয়া, ভদ্রভাবে কথা বলা, রাতে মানুষ যখন ঘুমায় সে সময় উঠে (তাহাজ্জুদের) সালাত আদায় করা।

তারপর আবার আল্লাহ তা‘আলা বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে। এখন তোমার যা চাওয়ার তা নিবেদন কর। তাই আমি দু‘আ করলামঃ ‘‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে নেক কাজ করার, খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকার, মিসকীনের বন্ধুত্ব, তোমার ক্ষমা ও রহমত চাই। আর যখন তুমি কোন জাতির মধ্যে গুমরাহী ছড়াতে চাও, তার আগে আমাকে গুমরাহী ছাড়া উঠিয়ে নিও। আমি তোমার কাছে তোমার ভালোবাসা আর ঐ ব্যক্তির ভালোবাসা চাই, যে তোমাকে ভালোবাসে, আর আমি এমন ‘আমলকে ভালোবাসতে চাই যে ‘আমল আমাকে তোমার ভালোবাসার নিকটবর্তী করবে’’। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ স্বপ্ন ষোলআনা সত্য। তাই তোমরা এ কথা স্মরণ রাখবে, আর লোকেদেরকে শিখাবে।
(তিরমিযী ৩২৩৫, আহমাদ ২২১০৯,মিশকাত ৭৪৮।)

রাত্রির সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) শেষে কিংবা সালাতরত অবস্থায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর গভীর নিদ্রা চলে আসে। সে অবস্থায় তিনি যা কিছু দেখেন তা’ কোন চর্মচক্ষুর দর্শন ছিল না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্বপ্নও ওয়াহী, তাই এখানে যা কিছু তিনি দেখেছেন এবং তাঁর রবের সাথে তার যা কিছু কথোপকথন হয়েছে তা’ যেভাবে বর্ণনায় এসেছে, আমাদেরকে কোনরূপ পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংযোজন কিংবা বিয়োজন ছাড়া সেভাবেই বিশ্বাস ও গ্রহণ করতে হবে। কেবল হাদীসের শেষদিকে যে দু‘আ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তা‘আলার হুকুমে করেছেন, সেগুলোর অর্থ পরিষ্কার ও স্পষ্ট বিধায় আমরাও এরূপ দু‘আ করতে পারি।

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
উপরোক্ত আপনার সমস্ত স্বপ্নই খুবই ভালো।
এগুলো আপনার আল্লাহর প্রতি মুহাব্বতের পরিচায়ক, খালেস আকীদা ও আমল ওয়ালার বহিঃপ্রকাশ। 

আপনি দ্বীনের উপর অটল অবিচল থেকে আমল চালিয়ে যান,আলহামদুলিল্লাহ আপনার স্বপ্ন গুলি খুবই ভালো,এর জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করুন।
,
আপনার নেক কাজের তওফিক মিলবে,এবং আপনার প্রয়োজন সহজেই পূর্ণ হবে,ইনশাআল্লাহ। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...