আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
130 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (7 points)
আস্সালামুআলাইকুম।

কুরআনে বলা হয়েছে, সূরা নূর এর ৩নম্বর আয়াতের যে "ব্যভিচারী কেবল ব্যভিচারিণী অথবা মুশরিক নারীকে ছাড়া বিয়ে করবে না এবং ব্যভিচারিণীকে কেবল ব্যভিচারী অথবা মুশরিক ছাড়া বিয়ে করবে না। আর মুমিনদের উপর এটা হারাম করা হয়েছে।"
২৬নং আয়াতে: দুশ্চরিত্র নারী দুশ্চরিত্র পুরুষের জন্য; দুশ্চরিত্র পুরুষ দুশ্চরিত্র নারীর জন্য; সচ্চরিত্র নারী সচ্চরিত্র পুরুষের জন্য এবং সচ্চরিত্র পুরুষ সচ্চরিত্র নারীর জন্য (উপযুক্ত)।[১] এ (সচ্চরিত্র)দের সম্বন্ধে লোকে যা বলে এরা তা হতে পবিত্র। এদের জন্য আছে ক্ষমা এবং সম্মানজনক জীবিকা। [২]

এই ২টা আয়াত দ্বারা কি বুঝায়। যদি কেউ তাদের জীবনে কখনো যিনাহ করে থাকে, তাহলে কি তারা যিনাহ করেছে এমন কাউকেই বিয়ে করবে বা যার সাথে যিনাহ করেছে তাকেই বিয়ে করতে হবে? তাছাড়া ব্যাপারটা কি এমন যে যদি কেউ যিনাহ করে তাহলে আল্লাহ তার সাথে এমন কাউকেই বিয়ে করাবেন যে নিজেও আগে এই খারাপ কাজটি করেছে?

এমনও তো হতে পারে, যে অনেক ভালো লোক কিন্তু তার wife/husband যিনাহ করেছিল আবার তওবা করে ফিরে এসেছে (আল্লাহ মাফ করেছেন কিনা সেটা তো আল্লাহই ভালো জানেন)। তাহলেও কি আল্লাহ তাদের কপালে এমন কেউ রাখবেন যে কিনা ব্যাভিচার এ লিপ্ত ছিল?

1 Answer

0 votes
by (675,600 points)
edited by
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ- 


মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ- 

اَلزَّانِیۡ لَا یَنۡکِحُ اِلَّا زَانِیَۃً اَوۡ مُشۡرِکَۃً ۫ وَّ الزَّانِیَۃُ لَا یَنۡکِحُہَاۤ اِلَّا زَانٍ اَوۡ مُشۡرِکٌ ۚ وَ حُرِّمَ ذٰلِکَ عَلَی الۡمُؤۡمِنِیۡنَ ﴿۳﴾ 

ব্যভিচারী পুরুষ-ব্যভিচারিণীকে অথবা মুশরিক নারীকে ছাড়া বিয়ে করে না এবং ব্যভিচারিণী নারী, তাকে ব্যভিচারী অথবা মুশরিক ছাড়া কেউ বিয়ে করে না, আর মুমিনদের জন্য এটা হারাম করা হয়েছে।
(সুরা নুর ০৩)

আলোচ্য আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে তাফসীরবিদদের বিভিন্ন উক্তি রয়েছে। 

★কোন কোন তাফসীরকারক আয়াতটিকে মনসূখ তথা রহিত বলেন। 
তাদের মতে আয়াতের ভাষ্য হলো, ব্যভিচারী মহিলাকে বিয়ে করার ব্যাপারে ইসলামের শুরুর যুগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। পরবর্তী অন্য আয়াত নাযিলের মাধ্যমে এই আয়াতের বিধান নসখ রহিত হয়েছে।

★কোন কোন মুফাস্সির এ হুকুমকে সুনির্দিষ্ট ঘটনার সাথে সম্পর্কযুক্ত মনে করেন। [ইবন কাসীর, কুরতুবী, বাগভী, ফাতহুল কাদীর] 

আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেনঃ সে যুগে এক মহিলার নাম ছিল উম্মে মাহযুল। সে যিনা করত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক সাহাবী তাকে বিয়ে করতে চাইলে আল্লাহ তা'আলা এ আয়াত নাযিল করেন। [মুসনাদে আহমাদ ২/১৫৯, ২/২২৫, নাসায়ী, কিতাবুত্-তাফসীর, হাদীস নং ৩৭৯, মুস্তাদরাকে হাকেমঃ ২/১৯৩-১৯৪, বায়হাকী ৭/১৫৩] 

অনুরূপ অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, সে যুগে ‘আনাক’ নাম্নী এক যেনাকারী ছিল, মারসাদ নামীয় এক সাহাবী তাকে বিয়ে করতে চাইলে এ আয়াত নাযিল হয়। [তিরমিযীঃ ৩১৭৭, আবু দাউদঃ ২০৫১, মুস্তাদরাকে হাকিমঃ ২/১৬৬]

মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ- 

اَلۡخَبِیۡثٰتُ لِلۡخَبِیۡثِیۡنَ وَ الۡخَبِیۡثُوۡنَ لِلۡخَبِیۡثٰتِ ۚ وَ الطَّیِّبٰتُ لِلطَّیِّبِیۡنَ وَ الطَّیِّبُوۡنَ لِلطَّیِّبٰتِ ۚ اُولٰٓئِکَ مُبَرَّءُوۡنَ مِمَّا یَقُوۡلُوۡنَ ؕ لَہُمۡ مَّغۡفِرَۃٌ وَّ رِزۡقٌ کَرِیۡمٌ ﴿۲۶﴾ 

দুশ্চরিত্রা নারী দুশ্চরিত্র পুরুষের জন্য; দুশ্চরিত্র পুরুষ দুশ্চরিত্র নারীর জন্য; সচ্চরিত্রা নারী সচ্চরিত্র পুরুষের জন্য এবং সচ্চরিত্র পুরুষ সচ্চরিত্রা নারীর জন্য। লোকেরা যা বলে তার সাথে তারা সম্পর্কহীন; তাদের জন্য আছে ক্ষমা এবং সম্মানজনক জীবিকা।
(সুরা নুর ২৬)

অর্থাৎ দুশ্চরিত্রা নারীকুল দুশ্চরিত্র পুরুষকুলের জন্য এবং দুশ্চরিত্র পুরুষকুল দুশ্চরিত্রা নারীকুলের জন্য উপযুক্ত। 

সচ্চরিত্রা নারীকুল সচ্চরিত্র পুরুষকুলের জন্য এবং সচ্চরিত্র পুরুষকুল সচ্চরিত্রা নারীকুলের জন্য উপযুক্ত।
এদের সম্পর্কে লোকে যা বলে, এরা তা থেকে পবিত্র। এদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা। 

এ আয়াতে একটি নীতিগত কথা বুঝানো হয়েছে। আল্লাহ্ তা'আলা মানবচরিত্রে স্বাভাবিকভাবে যোগসূত্র রেখেছেন। দুশ্চরিত্রা, ব্যভিচারিণী নারী ব্যভিচারী পুরুষের প্রতি এবং দুশ্চরিত্র ও ব্যভিচারী পুরুষ দুশ্চরিত্রা নারীদের প্রতি আকৃষ্ট হয়। 

এমনিভাবে সচ্চরিত্রা নারীদের আগ্রহ সচ্চরিত্র পুরুষদের প্রতি এবং সচ্চরিত্র পুরুষদের আগ্রহ সচ্চরিত্রা নারীদের প্রতি হয়ে থাকে। প্রত্যেকেই নিজ নিজ আগ্রহ অনুযায়ী জীবনসঙ্গী খোঁজ করে নেয় এবং আল্লাহর বিধান অনুযায়ী সে সেরূপই পায়।

কোন কোন মুফাসসির এ আয়াতের এ অর্থও করেছেন যে, খারাপ কথা খারাপ লোকদের জন্য (অর্থাৎ তারা এর হকদার) এবং ভালো কথা ভালো লোকদের জন্য, আর ভালো লোকদের সম্পর্কে দুর্মুখেরা যেসব কথা বলে তা তাদের প্রতি প্ৰযুক্ত হওয়া থেকে তারা মুক্ত ও পবিত্র। 

অন্য কিছু মুফাসসির এর অর্থ করেছেন এভাবে, খারাপ কাজ খারাপ লোকদের পক্ষেই সাজে এবং ভালো কাজ ভালো লোকদের জন্যই শোভনীয়, ভালো লোকেরা খারাপ কাজের অপবাদ বহন থেকে পবিত্র।

ভিন্ন কিছু তাফসীরকারক এর অর্থ নিয়েছেন এভাবে, খারাপ কথা খারাপ লোকদেরই বলার মতো এবং ভালো লোকেরা ভালো কথাই বলে থাকে, অপবাদদাতারা যে ধরনের কথা বলছে ভালো লোকেরা তেমনি ধরনের কথা বলা থেকে পবিত্র। [ ইবন কাসীর, সা’দী, কুরতুবী, বাগভী]
(কিছু তথ্য সংগৃহীত)

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
যদি কেউ তাদের জীবনে কখনো যিনাহ করে থাকে, তাহলে যে যিনা করেছে এমন কাউকেই বিয়ে করবে বা যার সাথে যিনাহ করেছে তাকেই বিয়ে করতে হবে বিষয়টি এমন নহে।

সেও তওবা করে ভালো নেককারকে বিবাহ করতে পারবে।
এতে কোনো সমস্যা নেই।

যেনাকারীর ভালো লোকের সাথে বিবাহ হবেইনা,বা ভালো লোকের যেনা কারীর সাথে বিবাহ হবেইনা,এটি ঠিক নয়।
আয়াতগুলির উপরের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দ্বারা সবই স্পষ্ট হবে। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by
edited
তো কেউ যদি জানে একটা মেয়ে /ছেলে ব্যাভিচার করেছে আবার তওবা করেছে এখন লিপ্ত নাই তাহলে তাকে বিয়ে করা যাবে জানা সত্ত্বেও?বা কেউ যদি এটা বিয়ের পর জানতে পারে তাহলে কি divorce দেয়া যাবে/ যদি দিয়েও দেয় তাহলে এটা ইসলামী শরিয়াহ অনুযায়ী বিধান কি ঠিক না বেঠিক?
আবার যদি এমন হয়, ছেলে/মেয়ে কে মেয়ে/ছেলে যে যার সাথে খারাপ কাজ করা হয়েছে, সেও বিয়ে করতে রাজি কিন্তু opposite person টা দীনদার কেউ চায় (কারণ সে তওবা করে ফিরে এসেছে )। তাহলে এটা কি যুক্তিযুক্ত হবে?  সে ব্যাভিচার করছে আবার দীনদার কেউও চায় তাহলে অন্য কারো সাথে বিয়ে হলে তাকে ঠকানো হবে না?এসব কাজ থেকে তওবা করলেও কি married life happy হবে না কখনো? খারাপ কাজের যেই ৬টা শাস্তির কথা বলা হয়েছে সব পাবেই মাস্ট?
by (675,600 points)
হ্যাঁ, কেউ যদি জানে একটা মেয়ে /ছেলে ব্যাভিচার করেছে আবার তওবা করেছে এখন লিপ্ত নাই তাহলে তাকে বিয়ে করা যাবে জানা সত্ত্বেও।
by (675,600 points)
কেউ যদি এটা বিয়ের পর জানতে পারে তাহলে divorce দেয়া যাবে/ যদি দিয়েও দেয় তাহলে এটা ইসলামী শরিয়াহ অনুযায়ী ঠিক আছে।
কেননা ডিভোর্স দেয়া এটি সম্পূর্ণ স্বামীর ইখতিয়ারধীন।
স্বামী যদি বিষয়টি জেনে স্ত্রীকে রাখতে না চায়,সেক্ষেত্রে শরীয়তে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।
by (675,600 points)
যদি এমন হয়, ছেলে/মেয়ে কে মেয়ে/ছেলে যে যার সাথে খারাপ কাজ করা হয়েছে, সেও বিয়ে করতে রাজি কিন্তু opposite person টা দীনদার কেউ চায় (কারণ সে তওবা করে ফিরে এসেছে )। আর তাদের বিবাহে তাদের উভয়ের অভিভাবকও রাজী,সেক্ষেত্রে এটা ঠিক হবেনা।
কেননা এখানে অপরজনকে অনেকটা ঠোকানো হয়।

হ্যাঁ, যদি তাদের উভয়ের অভিভাবক তাদের বিয়েতে রাজী না হয়,সেক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন।

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...