আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
71 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (4 points)
আসসালামু আলাইকুম।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা,রাসূল(সঃ) বলেছেন, মেহমান বরকত নিয়ে আসে এবং উত্তমভাবে মেহমানদারী করতে। কিন্তু আমার খুব কাছের আত্মীয়, ওনারা আমাদের বাসায় আসলেই আমরা বাসার সবাই বিরক্ত ও অতিষ্ট হয়ে যাই। ওনারা আসছে দেখলেই বাসার প্রত্যেকটা মানুষ মনে মনে ভয় পাই। আর দোয়া করতে থাকি যেন ঝামেলা ছাড়া, খুব দ্রুত চলে যায় ওনারা। (কিন্তু মেহমানদারিতে আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা করি, কখনো মুখে কিচ্ছু বলি না)
এর পেছনে কারন হচ্ছে, ওনারা আমাদের সাথে কখনোই ভালো আচরণ করেনি। আমার ২৩ বছর বয়সে এমন একটা দিন দেখিনি যে ওনারা আমার বাবা-মাকে ভালো বলছেন। সবসময় ওনাদের মুখে এই বুলি,"আমাদের জন্য কিছু করে নাই,কিছু দেয় নাই,কিছু খাওয়ায় নাই,ভালো চায় না, সবসময় লোকসান করছি..."। এমন একটা বারও হয় নাই যে, ওনারা আসছে কিন্তু আমার মাকে কথা শুনায় নাই।
এছাড়া ওনারা যখনি আসে পুরো বাসা এলোমেলো,নোংরা করে রেখে যায়। সারা ঘর ময়লা আর গন্ধ হয়ে যায়।
এই তো ২/৩ দিন আগে ওনারা এসে ২ দিন ১ রাত থেকে গেছে। এখনও পর্যন্ত আমরা ঘর পরিষ্কার, গোছগাছ শেষ করতে পারিনি(এতটাই এলোমেলো আর নোংরা করছে)।
তারপর যে বারই আসে প্রত্যেকবারই ওনাদের কথা থাকে "কি রানছো?! এতটুক খালি!? খাই নাই। ভাগে পাই নাই।" মানে যত বেশিই রান্না/ আয়োজনই করা হোক না কেন তাদের কাছে সেই পরিমানটা একদমই কম। অথচ ওনারা যথেষ্ট পরিমান খায় এবং যতটুকু খায় তার থেকে বেশি নষ্ট করে, ফেলে দেয়। এরপর যাওয়ার সময় রান্না খাবার নিয়েও যায় যেন বাসায় গিয়ে রান্না না করা লাগে। কিন্তু তারপরও ওনাদের  কথা সেই একই। " এত কম! ভাগে পাই নাই"।

এই সব কারনেই, ওনারা যখনই আসে আমরা সবাই মনে মনে ভয় পাই,বিরক্ত হই আর দোয়া করতে থাকি যেন ওনারা তারাতারি চলে যায়। (কিন্তু বাইরে কিছুই প্রকাশ করি না)

এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে,
১. আমাদের মনে মনে বিরক্ত হওয়াতে কি আমাদের গুনাহ হচ্ছে?
২. আমাদের এমন মনোভাবের জন্য কি আল্লাহ নারাজ হবেন?

৩. ওনাদের সাথে আমাদের আচরণ কেমন হওয়া উচিৎ?
জাঝাকাল্লাহু খইর

1 Answer

0 votes
by (678,880 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم


হাদীস শরীফে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মেহমানদারীর প্রতি তাকিদ করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَاليَوْمِ الآخِرِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ.

আল্লাহ ও পরকালের প্রতি যে ঈমান রাখে সে যেন মেহমানের সমাদর করে। 
(সহীহ বুখারী, হাদীস ৬১৩৬)


অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
لَا خَيْرَ فِيمَنْ لَا يُضِيفُ

যে মেহমানদারি করে না তার মাঝে কোনো কল্যাণ নেই। 
(মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৭৪১৯)

আরেক হাদীসে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা.-কে লক্ষ করে বলেন, ...নিশ্চয়ই তোমার উপর তোমার মেহমানের হক রয়েছে। 
(সহীহ বুখারী, হাদীস ৬১৩৪)

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে কোনো মেহমান আসলে তিনি আগে নিজে তার মেহমানদারির চেষ্টা করতেন অন্যথায় সাহাবীদের তার মেহমানদারির জন্য উৎসাহিত করতেন। হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, একবার নবীজীর কাছে এক মেহমান এল। নবীজী তাঁর স্ত্রীগণের ঘরে খোঁজ নিলেন- মেহমানদারির মত কিছু আছে কি না। কিন্তু জবাব এল- ঘরে পানি ছাড়া আর কোনো খাবার নেই। তখন প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণের উদ্দেশে বললেন, তোমাদের মধ্যে কে আছ তার মেহমানদারি করতে পারো? এক আনসারী সাহাবী  বললেন, আমি আছি ইয়া রাসূলাল্লাহ! তখন তিনি মেহমানকে নিজের বাসায় নিয়ে গেলেন। স্ত্রীকে বললেন, নবীজীর মেহমানের কদর কর। স্ত্রী বললেন, আমাদের কাছে বাচ্চাদের খাওয়ার পরিমাণ খাবার ছাড়া আর কিছুই নেই। সাহাবী বললেন, খাবার প্রস্তুত কর এবং বাচ্চাদের ঘুম পাড়িয়ে দাও। আর আমরা খাবার শুরু করার সময় তুমি বাতি ঠিক করার বাহানা করে বাতি নিভিয়ে দিবে। স্ত্রী তাই করলেন। খাবারের সময় অন্ধকারে তারা এমন ভাব করলেন যেন মেহমানের সাথে তারাও খাচ্ছেন। মেহমান তৃপ্তিভরে খেলেন আর তারা উপোস রাত কাটিয়ে দিলেন। তাদের এ কাজে আল্লাহ খুশি হলেন। সকালে যখন সাহাবী নবীজীর কাছে আসলেন, তিনি বললেন, গত রাতে আল্লাহ তোমাদের প্রতি হেসেছেন এবং তোমাদের উক্ত কাজে খুব খুশি হয়েছেন। আয়াত নাযীল হল-

وَيُؤْثِرُونَ عَلَى أَنْفُسِهِمْ وَلَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةٌ ...

এবং তারা অন্যদেরকে নিজেদের উপর অগ্রাধিকার দেয় নিজেরা অভাবগ্রস্ত হলেও। যাদেরকে অন্তরের কার্পণ্য থেকে মুক্ত রাখা হয়েছে তারাই সফলকাম। [সূরা হাশর (৫৯) : ৯] 
(সহীহ বুখারী, হাদীস ৩৭৯৮)

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
(০১)
তাদের এহেন আচরণের কারনে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে মনে কষ্ট আসাতে গুনাহ হবেনা।

(০২)
এতে আল্লাহ তায়ালা নারাজ হবেননা।
তবে আপনারা মুখ ফুটিয়ে আপনাদের মনোভাব তাদের সামনে প্রকাশ করবেননা।

(০৩)
তাদের এহেন আচরণের কারনে মনে কষ্ট আসলেও আপনারা মুখ ফুটিয়ে আপনাদের মনোভাব তাদের সামনে প্রকাশ করবেননা।

যতটা সম্ভব হয়,তাদেরকে মেনে নেয়ার চেষ্টা করবেন।
তারা যেনো কষ্ট না পায়,সেটির জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...