আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
108 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (11 points)
edited by
আসসালামু আলাইকুম,
কাউকে এভাবে শর্ত করানো যাবে সত্যি কথা বলার জন্য যে, "যদি আমি মিথ্যা কথা বলি তাহলে যেন আমি কোনদিন জান্নাতে না যাই" বা "যদি আমি মিথ্যা বলি তাহলে যেন আপনার মৃত্যু হয়" (*আপনি = যে শর্ত করাচ্ছেন) ?

২ য় প্রশ্নঃ

ফরয সলাত একা একা পড়ার সময় কখনো কখনো ভুলে দ্বিতীয় বা তৃতীয় রাকাতে সুরা ফাতিহার পরে ভুল করে "বিসমিল্লাহ বা বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম" পড়ে ফেললে কি সিজদাহ্ সাহু দিতে হবে?

1 Answer

0 votes
by (58,470 points)
edited by

 

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রিয় বান্দাদের পরকালে চিরস্থায়ী বসবাসের জন্য যে পরম সুখের জায়গা নির্ধারণ করে রেখেছেন তার নামই হলো জান্নাত। যে জান্নাত সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘সেখানে তোমাদের মন যা চাইবে তার সব কিছুরই ব্যবস্থা রয়েছে। আর তোমরা যা দাবি করবে তা-ও তোমাদের দেয়া হবে।’ (সূরা হামিম, আয়াত-৩১)

এই জান্নাত সম্পর্কে হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত এক হাদিসে মহানবী সা: বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমি আমার পুণ্যবান বান্দাদের জন্য জান্নাতে এমন সব নিয়ামত তৈরি করে রেখেছি- যা কোনো চোখ দেখেনি, কোনো কান শোনেনি, আর মানুষের অন্তর যা কোনো দিন কল্পনাও করতে পারেনি। (বুখারি ও মুসলিম) এই হলো জান্নাত। যে জান্নাতের ওয়াদা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মুমিন-মুত্তাকি ও তার পরহেজগার বান্দাদের দিয়েছেন। পবিত্র কুরআনে তিনি বলেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালার বন্ধুদের জন্য কিয়ামতের দিন কোনো ভয় নেই, আর সেদিন তারা চিন্তিতও হবে না।... তাদের জন্য দুনিয়ার জীবনে যেমন সুসংবাদ রয়েছে তেমনি পরকালের জীবনেও সুসংবাদ থাকবে। আর আল্লাহ তায়ালার কথার কোনো রদবদল হয় না।’ (সূরা ইউনুস, আয়াত : ৬২-৬৪)

পবিত্র কুরআনুল কারিম ও রাসূল সা:-এর হাদিস থেকে ওই সব মানুষের পরিচয় জানা যায়, যারা ঈমান আনার পরও জান্নাতে যেতে পারবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত না তাদের পাপের শাস্তি ভোগ করা হবে। জাহান্নামের ন্যূনতম শাস্তি কতটা ভয়ঙ্কর! রাসূল সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তিকে জাহান্নামিদের মধ্যে সব থেকে কম শাস্তি দেয়া হবে তার পায়ের তালুর নিচে দু’টি জ্বলন্ত অঙ্গার রাখা হবে। এতে তার মগজ পর্যন্ত টগবগ করে ফুটতে থাকবে।’ (তিরমিজি-২৬০৪)

মুসলমান ও ঈমানের দাবিদার হওয়া সত্ত্বেও অনেক মানুষ প্রথম সারির প্রবেশকারী হিসেবে জান্নাতে যেতে পারবে না। নিজের পাপের দায়ভার নিয়ে লাখো কোটি বছর জাহান্নামে জ্বলার পর সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেন আল্লাহ চাইলে।

হারাম ভক্ষণকারী : মহানবী সা: বলেছেন, ‘হারাম ভক্ষণকারী জান্নাতে যাবে না’। (সুনানে বায়হাকি-৫৫২০) অন্যত্র তিনি আরো বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তি যদি হারাম ভক্ষণ করে সারা রাত-দিন নামাজ পড়ে তার পরও তার এক রাকাত নামাজও কবুল হবে না।’

আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী : পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘... আত্মীয়তার সম্পর্কের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করো।’ (সূরা নিসা-০১) মহানবী সা: বলেন, ‘আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না’। (বুখারি ও মুসলিম)

মাতাপিতার অবাধ্য সন্তান, দাইয়ুস ও পুরুষের বেশধারী : রাসূল সা: বলেন, ‘তিন শ্রেণীর লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে না- মাতাপিতার অবাধ্য সন্তান, দাইয়ুস (আর দাইয়ুস হলো এমন ব্যক্তি যে তার স্ত্রী-বোন প্রমুখ অধীনস্থ নারীদের বেপর্দা চলাফেরায় বাধা দেয় না), আর পুরুষের বেশ ধারণকারী মহিলা।’ (মুসতাদরাকে হাকেম)

অশ্লীলভাষী ও উগ্র মেজাজি : হারেছা ইবনে ওহাব রা: থেকে বর্ণিত এক হাদিসে রাসূল সা: বলেন, ‘অশ্লীলভাষী ও উগ্র মেজাজি লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে না’। (আবু দাউদ-৪১৬৮)

অন্যের সম্পদ আত্মসাৎকারী : পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করো না...।’ (সূরা আল বাকারা-১৮৮)। হাদিস শরিফে এসেছে ‘অন্যের সম্পদ আত্মসাৎকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না। যদিও তা পিপুল গাছের একটি ছোট ডালের সমপরিমাণও হয়ে থাকে।’ (মুসলিম-১৯৬)

গর্ব ও অহঙ্কার প্রদর্শনকারী : রাসূল সা: বলেছেন, ‘গর্ব-অহঙ্কারকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না। যার অন্তরে অণু পরিমাণও অহঙ্কার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (মুসলিম-১৩১)

ওয়ারিসকে বঞ্চিতকারী : রাসূল সা: বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো ওয়ারিসকে তার প্রাপ্য অংশ থেকে বঞ্চিত করবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতের অংশ থেকে বঞ্চিত করবেন।’ (ইবনে মাজাহ-২৬৯৪)

প্রতারণাকারী শাসক : মাকাল বিন ইয়াসার রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, আমি রাসূল সা:-কে বলতে শুনেছি, মুসলমানদের ওপর প্রতিনিধিত্বকারী শাসক যদি এ অবস্থায় মারা যায়, সে তার অধীনস্থদের ধোঁকা দিয়েছে, তাহলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন।’ (বুখারি- ৬৬১৮)

খোটাদানকারী ও মদ্যপায়ী : মহানবী সা: বলেন, ‘তিন শ্রেণীর লোক জান্নাতে যেতে পারবে না। তারা হলো- পিতামাতার অবাধ্য সন্তান, মাদকসেবী, উপকার করে খোটা দানকারী।’ (নাসায়ি)

লৌকিকতা প্রদর্শনকারী : হজরত আবু হুরাইরা রা: থেকে বর্ণিত এক হাদিসে মহানবী সা: বলেন, ‘কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম একজন শহীদকে ডাকা হবে। এরপর একজন কারিকে। তারপর একজন দানশীলকে। প্রত্যেককে তার কৃতকর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। অতঃপর শহীদকে বীর-বাহাদুর উপাধি লাভের জন্য জিহাদ করার অপরাধে, কারি সাহেবকে বড় কারির উপাধি ও সুখ্যাতি লাভের জন্য কিরাত শেখার অপরাধে এবং দানশীলকে বড় দাতা উপাধি লাভের নিয়তে দান-সদকা করার অপরাধে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।’ (মুসলিম)

আত্মহত্যাকারী : মহানবী সা: বলেন, ‘যে ব্যক্তি নিজেকে পাহাড়ের ওপর থেকে নিক্ষেপ করে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামে যাবে। সেখানে সে সর্বদা ওইভাবে নিজেকে নিক্ষেপ করতে থাকবে। আর তা হবে অনন্তকাল ধরে। যে ব্যক্তি বিষপান করে আত্মহত্যা করবে, সেই বিষ তার হাতে থাকবে। জাহান্নামে সর্বদা সে ওইভাবে নিজেকে বিষ খাইয়ে মারতে থাকবে। তা চলতে থাকবে অনন্তকাল ধরে। যে ব্যক্তি কোনো ধারাল অস্ত্র দিয়ে আত্মহত্যা করেছে, তার কাছে জাহান্নামে সেই ধরনের ধারাল অস্ত্র থাকবে, যা দিয়ে সে সর্বদাই নিজের পেটকে ফুঁড়তে থাকবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)

উলঙ্গ-অর্ধউলঙ্গ নারী : ওই সব উলঙ্গ-অর্ধউলঙ্গ নারী যারা নিজেদের চলাফেরা ও বেশভূষায় মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করতে চাইবে। আর নিজেরাও অন্য মানুষের প্রতি আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথায় উটের মতো উঁচু আর এক পাশে ঝুঁকে থাকা চূড়ার মতো চুলের খোপ শোভা পাবে। এসব নারী জান্নাতে তো যাবেই না, বরং জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না। অথচ জান্নাতের সুঘ্রাণ বহু দূর থেকেও পাওয়া যাবে। (মুসলিম)

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

 ১. প্রশ্নেল্লিখিত ছুরতে কাউকে এভাবে শর্ত দেওয়া মোটেও উচিত নয়। কারণ, কোন মুসলমান ব্যক্তি কাবীরা গুনাহ করার পর তা থেকে তওবা না করে মারা গেলে সে তার কৃতকর্মের শাস্তি ভোগ করে জান্নাতে যাবে। মুমিন চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে না। এই মর্মে উপরে কিছু গুনাহের বিষয় আলোচনা করা হয়েছে।

 ২. জ্বী না এ জন্য সাহু সিজদা আসবে না। বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন- https://ifatwa.info/17557/?show=17557#q17557


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...