আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
124 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (12 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ্,
আমার কিছু প্রশ্ন:
১. করজে হাসানাহ কী?
২. গাজওয়াতুল হিন্দ কী ইমাম মাহদী আসার আগে হবে নাকি পরে হবে?
৩. বাংলাদেশে কী পুনরায় ইসলামী খিলাফাহ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব? করতে হলে কী কী করতে হবে?
৪. দাজ্জাল কোথা থেকে বের হবে? জেরুজালেম থেকে, নাকি খোরাসান থেকে, নাকি কোনো এক দ্বীপ থেকে?
৫. ইমান সম্পর্কিত জ্ঞান লাভের জন্য কোন বই অধ্যায়ন করবো?
৬. আকিদাহ সম্পর্কিত জ্ঞান লাভের জন্য কোন বই অধ্যায়ন করবো?
৭. সুন্নি ও আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের মধ্যে পার্থক্য কী?
৮. আজানের জবাবের পর যে দোয়া পাঠ করতে হয়, তা আরবী ও বাংলা উচ্চারণসহ দেওয়ার অনুরোধ রইল।

1 Answer

0 votes
by (713,000 points)
edited by
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
আলহামদুলিল্লাহ!

করজ’ অর্থ ঋণ বা ধার; আর হাসানা অর্থ উত্তম। সুতরাং করজে হাসানাহ অর্থ হল, ‘উত্তম ঋণ’। আল্লাহ রাব্বে কারীমে সন্তুষ্টি লাভের আশায়, সওয়াবের নিয়তে বিনা শর্তে কাউকে কোনো কিছু ঋণ দিলে সেটাকে ‘কর্জে হাসানা’ বা উত্তম ঋণ বলে। 

আল্লাহ ততা'আলার বাণী,
إِنَّ الْمُصَّدِّقِينَ وَالْمُصَّدِّقَاتِ وَأَقْرَضُوا اللَّهَ قَرْضًا حَسَنًا يُضَاعَفُ لَهُمْ وَلَهُمْ أَجْرٌ كَرِيمٌ
নিশ্চয় দানশীল ব্যক্তি ও দানশীলা নারী, যারা আল্লাহকে উত্তমরূপে ধার দেয়, তাদেরকে দেয়া হবে বহুগুণ এবং তাদের জন্যে রয়েছে সম্মানজনক পুরস্কার।(সূরা আল হাদীদ-১৮)


করজে হাসানার অন্যতম শর্ত হল, ঋণ ফিরিয়ে দেয়ার  ব্যাপারে ঋণদাতা গ্রহীতাকে বেশ তাগাদা না দেয়া। যেমন, আল্লাহ তা'আলা বলেন,
وَإِن كَانَ ذُو عُسْرَةٍ فَنَظِرَةٌ إِلَىٰ مَيْسَرَةٍ ۚ وَأَن تَصَدَّقُوا خَيْرٌ لَّكُمْ ۖ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ
যদি খাতক অভাবগ্রস্থ হয়, তবে তাকে সচ্ছলতা আসা পর্যন্ত সময় দেয়া উচিত। আর যদি ক্ষমা করে দাও, তবে তা খুবই উত্তম যদি তোমরা উপলব্ধি কর।(সূরা বাকারা-২৮০)


(২)
হজরত আবু হুরাইরা রা. বলেন, 
حَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ إِسْمَعِيلَ بْنِ إِبْرَاهِيمَ، قَالَ: حَدَّثَنَا يَزِيدُ، قَالَ: أَنْبَأَنَا هُشَيْمٌ، قَالَ: حَدَّثَنَا سَيَّارٌ أَبُو الْحَكَمِ، عَنْ جَبْرِ بْنِ عَبِيدَةَ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: وَعَدَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ غَزْوَةَ الْهِنْدِ، فَإِنْ أَدْرَكْتُهَا أُنْفِقْ فِيهَا نَفْسِي وَمَالِي، وَإِنْ قُتِلْتُ كُنْتُ أَفْضَلَ الشُّهَدَاءِ، وَإِنْ رَجَعْتُ فَأَنَا أَبُو هُرَيْرَةَ الْمُحَرَّرُ.
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে হিন্দুস্তানের জিহাদ সম্পর্কে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। যদি আমি সে জিহাদ পেয়ে যাই তাহলে আমি আমার জান-মাল সব কিছু তাতে ব্যয় করব। এতে যদি আমি শাহাদত বরণ করি তাহলে আমি হব সর্বশ্রেষ্ঠ শহিদ। আর যদি গাজি হয়ে ফিরে আসি তাহলে আমি হব (জাহান্নামের আগুন থেকে) মুক্তিপ্রাপ্ত আবু হুরাইরা।
সূত্র :সুনানুন নাসায়ি : ৬/৪২, হা. নং ৩১৭৪, প্র. মাকতাবুল মাতবুআতিল ইসলামিয়্যা, হালব-

হযরত সওবান রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন-
 عِصَابَتَانِ مِنْ أُمَّتِي أَحْرَزَهُمَا اللَّهُ مِنَ النَّارِ: عِصَابَةٌ تَغْزُو الْهِنْدَ، وَعِصَابَةٌ تَكُونُ مَعَ عِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ عَلَيْهِمَا السَّلَام. روى النسائي فى سننه: ٣١٧٥ ، و أحمد فى المسند:١٨/٣٧ رقم ٢٢٣٩٦, وهو حديث صحيح، صححه الإمام السيوطي في الجامع الصغير، والألباني في صحيح الجامع: ٤٠١٢ والصحيحة: ١٩٣٤ –
‘আমার উম্মতের মধ্যে দুটি দল রয়েছে, আল্লাহ তাদের উভয়কে দোযখ থেকে মুক্তি দিবেন। (১) হিন্দ (ভারত)-এর সাথে গাজওয়া (জিহাদ) করনেওয়ালা দল এবং (২) ঈসা ইবনে মানইয়াম আ.-এর সঙ্গী দল।’। [সুনানে নাসায়ী, হাদিস ৩১৭৫; মুসনাদে আহমদ, হাদিস ২২৩৯৬]

নাহিক বিন সুরাইম আস-সাকুনী থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেছেন-
 لتقاتلن المشركين حتى تقاتل بقيتكم الدجال ، على نهر بالأردن ، أنتم شرقيه ، و هم غربيه ، و ما أدري أين الأردن يؤمئذ من الأرض . اخرجه البزار في كشف الأستار: ٤/١٣٨ رقم ٣٣٨٧ ; و و الطبراني في مسند الشاميين: رقم . قال الهيثمي في في ” مجمع الزوائد : ٧/٣٤٩ : رواه الطبراني والبزار ورجال البزار ثقات ; و اخرجه ايضا ابن سعد في الطبقات: ٧/٤٢٢ ; والديلمي في مسند الفردوس: ٤/١٨٦ ; وابن أبي عاصم في الآحاد والمثاني برقم ٧٧٣ ; و قال الألباني في ” السلسلة الضعيفة و الموضوعة: ٣/٤٦٠ رقم ١٢٩٧  –
 ‘অবশ্যই মুশরেকদের সাথে তোমাদের যুদ্ধ হবে। এমনকি তোমাদের (মুসলমানদের) বাকি অংশ দাজ্জালের সাথে যুদ্ধ করবে -উরদুনে অবস্থিত (একটি) নহরের ধারে, যার পূর্ব পার্শ্বে থাকবে তোমরা, আর তার পশ্চিম পার্শ্বে থাকবে ওরা। (রাবী বলেন:) আমি জানি না, সেদিন উরদুন (অঞ্চলটি) পৃথিবীর কোথায় হবে’। [মুসনাদে বাযযার -৪/১৩৭ হাদিস ৩৩৮৭; মুসনাদে শামেঈন, ত্বাবরাণী ; আল-আহাদ ওয়াল মাছানী, ইবনু আবি আসিম, হাদিস ৭৭৩; আত-ত্ববাকাত, ইবনে সা’দ- ৭/৪২২; মুসনাদে ফিরদাউস, দাইলামী- ৪/১৮৬; তারিখে দামেশক, ইবনু আসাকীর -৬২/৩২৩; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৭/৩৪৯]

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
গাজওয়াতুল হিন্দ কখন হবে?  এবং ইমাম মাহদি কবে আসবেন?  কোনোটাই নির্দিষ্ট নয়। তবে এটা মহাসত্য যে , গাজওয়াতুল হিন্দ হয়েছে/হচ্ছে/হবেই।এবং ইমাম মাহদি আলাইহিস সালামও আসবেন। অধিকাংশ উলামায়ে কেরামের ধারণা যখন ইমাম মাহদি আসবেন,তখনই গাজওয়াতুল হিন্দ হবে এবং তখনই দাজ্জাল বের হবে এবং তখনই ঈসা আঃ আসমান থেকে অবতরণ করে দাজ্জালকে হত্যা করবেন। হাদীসের ভাষ্য দ্বারা বুঝা যায় যে ইমাম মাহদির সময়েই গাজওয়াতুল হিন্দ হবে।এবং তিনি মুসলমানদের ইমাম হবেন।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
كَيْفَ أَنْتُمْ إِذَا نَزَلَ ابْنُ مَرْيَمَ فِيكُمْ وَإِمَامُكُمْ مِنْكُمْ
‘‘সেদিন কেমন হবে তোমাদের অবস্থা যেদিন তোমাদের মধ্যে ঈসা ইবনে মারইয়াম নেমে আসবেন এবং তোমাদের মধ্যে হতেই একজন ইমাম হবেন’’। অর্থাৎ তোমাদের সাথে জামা'তে শরীক হয়ে ঈসা (আঃ) তোমাদের ইমামের পিছনে নামায আদায় করবেন।(বুখারী, অধ্যায়ঃ আহাদীছুল আম্বীয়া, মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান)


(৩)
সম্ভব।এজন্য সেটাই করতে হবে যা কুরআন হাদীসে বর্ণিত রয়েছে।

(৪)
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ ‘‘পূর্বের কোন একটি দেশ থেকে দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে যার বর্তমান নাম খোরাসান’’।(তিরমিজী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান, সহীহুল জামে আস্-সাগীর, হাদীছ নং-৩৩৯৮)

(৫) ঈমান সম্পর্কিত বিষয়াবলী জানার জন্য মিশকাত এবং মুসলিম শরীফের ঈমান অধ্যায় মুতালায়া করবেন। এই দুই কিতাবের বাংলা অনুবাদ বাজারে পাবেন।

(৬)
আকিদাতুত তাহাবি,শরহে আকাইদে নাসাফি,এবং ইসলামি আকিদা ও ভ্রান্ত মতবাদ বইখানা অধ্যায়ন করবেন।শেষোক্ত কিতাবখানা সহজ ও বোধগম্য।

(৭)
সুন্নি ও আহলে সুন্নত জামাতের মধ্যে পার্থক্য হল, সুন্নি বলে যারা নিজেদেরকে দাবী করেন, তাদের মধ্যে কিছু জিনিষ রয়েছে যেই সব জিনিষের ব্যাপারে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের অনুসারীরা বিদ'আত বলে আখ্যায়িত করেন।যেমন, মিলাদ কিয়াম ইত্যাদি।এগুলো মূলত বিদ'আতই।

(৮)
আরবি দোয়া :
« ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺭَﺏَّ ﻫَﺬِﻩِ ﺍﻟﺪَّﻋْﻮَﺓِ ﺍﻟﺘَّﺎﻣَّﺔِ، ﻭَﺍﻟﺼَّﻼَﺓِ ﺍﻟْﻘَﺎﺋِﻤَﺔِ، ﺁﺕِ ﻣُﺤَﻤَّﺪﺍً ﺍﻟْﻮَﺳِﻴﻠَﺔَ
ﻭَﺍﻟْﻔَﻀِﻴﻠَﺔَ، ﻭَﺍﺑْﻌَﺜْﻪُ ﻣَﻘَﺎﻣَﺎً ﻣَﺤﻤُﻮﺩﺍً ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻭَﻋَﺪْﺗَﻪُ، [ﺇِﻧَّﻚَ ﻟَﺎ ﺗُﺨْﻠِﻒُ ﺍﻟْﻤِﻴﻌَﺎﺩَ ]».
বাংলা উচ্চারণ : 
আল্লা-হুম্মা রববা হা-যিহিদ্ দা‘ওয়াতিত্ তা-ম্মাতি ওয়াস সালা-তিল ক্বা-’ইমাতি আ-তি মুহাম্মাদানিল ওয়াসীলাতা ওয়াল ফাদীলাতা ওয়াব্‘আছহু মাক্বা-মাম
মাহমূদানিল্লাযী ওয়া‘আদতাহ, ইন্নাকা লা তুখলিফুল মী‘আদ।

বাংলা অর্থ : 
“হে আল্লাহ! এই পরিপূর্ণ আহ্বান এবং প্রতিষ্ঠিত সালাতের রব্ব! মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে ওসীলা তথা জান্নাতের একটি স্তর এবং ফযীলত তথা সকল সৃষ্টির উপর অতিরিক্ত মর্যাদা দান করুন। আর তাঁকে মাকামে মাহমূদে (প্রশংসিত
স্থানে) পৌঁছে দিন, যার প্রতিশ্রুতি আপনি তাঁকে দিয়েছেন। নিশ্চয় আপনি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন না।”
(বুখারী ১/২৫২,নং ৬১৪)


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...