আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
137 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (14 points)
শাইখ আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লহ।
আমার পিতা শারীরিক শ্রম করে অনেক টাকা উপার্জন করে। বলতে গেলে স্বচ্ছল। কিন্তু তিনি আশা করতেন, আমি মেয়ে হওয়ার স্বত্বেও পড়ালেখা করে টাকা কামিয়ে তাকে দিব। আমার দ্বীনের বুঝ আসার পর যখন বলি, চাকরি করবনা, আমার প্রতি খুব এগ্রেসিভ হয়ে যান। ছোট বেলা থেকে আমি পড়াশুনায় খুব এটেনটিভ ছিলাম। আমার পড়াশুনার পিছনে অনেক টাকা খরচ করেছেন। তার জন্য খোটা দেয়। তিনি বিদেশে থাকেন। বিদেশ থেকে আসার পর কয়েকদিন সম্পর্ক ভাল ছিল। একদিন ফজরে সালাত পড়ার জন্য বেশি জোর করায় আমার গায়ে হাত তুলে। জঘন্য শব্দ ব্যবহার করে। আমাকে বলে, 'তুই জন্মহীনা। আমার ঘর থেকে বের হয়ে যা। আমার ঘরে তোর কোনো জায়গা নাই।' আমি বিবাহযোগ্যা উপযুক্ত একটা মেয়ে। রমজানের সময় খুব তুচ্ছ একটা বিষয় নিয়ে তিনি আমার পিঠে প্রচন্ড জোরে আঘাত করে। সেই থেকেই আমার মনে তার প্রতি প্রচন্ড ঘৃণা।  এছাড়া প্রায় সময় তুচ্ছ ব্যাপার নিয়ে আমাকে খুব কটু কথা শুনায়।

তার কোনো আত্মীয়ের সাথে উত্তম সম্পর্ক নেই। মা বোনকেও খুব তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে কথা বলে। বাইরের মানুষদের সাথেও ভাল ব্যবহার করেননা। পৃথিবীতে আমার এমন কোনো মানুষ জানা নেই, যে ব্যক্তি আমার পিতাকে একজন উত্তম মানুষ হিসেবে চিনে।
আমার আব্বু বিদেশ চলে যাওয়ার পর তার সাথে আর কথা বলিনি। রুচি হয়না। তিনি যখন বাড়িতে ছিলেন, আমি প্রথম প্রথম অনেক চেষ্টা করেছি, দ্বীনের পথে দাওয়াত দেওয়ার। তিনি মাঝে মাঝে নামাজ পড়েন।।সবসময় নয়। আক্বীদা ঠিক আছে নাকি জানা নেই। আমার তার বলা জন্মহীনা, নোংরা গালি গুলো মনে পড়লে কথা বলতে ইচ্ছে হয়না। তবে আমি সালাতে আব্বুসহ পরিবারের সবার জন্য হিদায়াতের আর উত্তম দুয়া করি। আল্লহ তায়ালা যেভাবে দুয়া করতে শিখিয়ে দিয়েছেন।
শাইখ, আমার প্রশ্ন হল, ছোট বেলা থেকে তিনি আমাকে লালন পালন করেছেন, তার জন্য কৃতজ্ঞতাস্বরুপ আল্লহর কাছে উত্তম দুয়া করলে হবে? আমি যদি তার সাথে কথা না বলি, আমার কি গুনাহ হচ্ছে? আল্লহ তায়ালা মা বাবার অবাধ্য হওয়াকে কবিরাহ গুনাহ বলেছেন, আমার কি সেই কবিরা গুনাহ হবে?

1 Answer

0 votes
by (59,970 points)
edited by

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ

মাতাপিতার বৈধ আদেশ মানা, তাদের সাথে উত্তম আচরণ করা শরীয়ত কর্তৃক আবশ্যক ঘোষনা করা হয়েছে।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَوَصَّيْنَا الْإِنسَانَ بِوَالِدَيْهِ إِحْسَانًا ۖ حَمَلَتْهُ أُمُّهُ كُرْهًا وَوَضَعَتْهُ كُرْهًا ۖ وَحَمْلُهُ وَفِصَالُهُ ثَلَاثُونَ شَهْرًا

“আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের আদেশ দিয়েছি। তার মা তাকে কষ্টসহকারে গর্ভে ধারণ করেছে এবং কষ্টসহকারে প্রসব করেছে। তাকে গর্ভে ধারণ করতে ও তার স্তন্য ছাড়তে লেগেছে ত্রিশ মাস।” (সূরা আহকাফ-১৫)

 

সর্বদা পিতা মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করা ও তাদের কথা মান্য করা সন্তানের দায়িত্ব৷ আল্লাহ তায়ালা বলেন-

وَقَضَىٰ رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا ۚ إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِندَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُل لَّهُمَا أُفٍّ وَلَا تَنْهَرْهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوْلًا كَرِيمًا

তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও এবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব-ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং বল তাদেরকে শিষ্ঠাচারপূর্ণ কথা। (সূরা বনী ইসরাঈল, ২৩)

 

পিতা মাতা অমুসলিম হলেও তাদের সাথে ভালো ব্যবহার ও দেখা সাক্ষাত করা। হাদীস শরীফে এসেছে-

حَدَّثَنَا الْحُمَيْدِيُّ قَالَ: حَدَّثَنَا ابْنُ عُيَيْنَةَ قَالَ: حَدَّثَنَا هِشَامُ بْنُ عُرْوَةَ قَالَ: أَخْبَرَنِي أَبِي قَالَ: أَخْبَرَتْنِي أَسْمَاءُ بِنْتُ أَبِي بَكْرٍ قَالَتْ: أَتَتْنِي أُمِّي رَاغِبَةً، فِي عَهْدِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَسَأَلْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَصِلُهَا؟ قَالَ: «نَعَمْ» . قَالَ ابْنُ عُيَيْنَةَ: فَأَنْزَلَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ فِيهَا: {لَا يَنْهَاكُمُ اللَّهُ عَنِ الَّذِينَ لَمْ يُقَاتِلُوكُمْ فِي الدِّينِ} [الممتحنة: 8]

আসমা বিনতে আবু বাকর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ আমার মা নবী (সাঃ)-এর যুগে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট অবস্থায় আমার কাছে আসেন। আমি নবী (সাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আমি কি তার সাথে আত্মীয় সম্পর্ক বজায় রাখবো? তিনি বলেনঃ হাঁ। ইবনে উয়ায়না (র) বলেন, এই প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ নাযিল করেনঃ “যারা ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি, তাদের সাথে সদ্ব্যবহার ও ইনসাফ করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না” (৬০ : ৮) (বুখারী, মুসলিম, দারিমী) (আদাবুল মুফরাদ, হাদীস নং- ২৫) হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

 

হাদীস শরীফে এসেছে-

حَدَّثَنَا قَبِيصَةُ قَالَ: حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ سُهَيْلِ بْنِ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا يَجْزِي وَلَدٌ وَالِدَهُ، إِلَّا أَنْ يَجِدَهُ مَمْلُوكًا فَيَشْتَرِيَهُ فَيُعْتِقَهُ»

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাঃ) বলেনঃ সন্তানের পক্ষে তার পিতার প্রতিদান শোধ করা সম্ভব নয়। তবে সে তাকে দাসরূপে পেয়ে ক্রয় করে দাসত্বমুক্ত করে দিলে তার প্রতিদান হতে পারে (মুসলিম, দারিমী, ইবনে মাজাহ, তিরমিযী, ইবনে হিব্বান, তাহাবী) (আদাবুল মুফরাদ, হাদীস নং-১০) হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

 

এখানে কথা বন্ধ রাখার মাসয়ালা স্পষ্ট করছিঃ

শরীয়তের বিধান হলো কাহারো সাথে শরয়ী ওযর ব্যাতিত  তিন দিনের বেশি কথাবার্তা বন্ধ রাখা, সম্পর্ক ছিন্ন করা জায়েজ নেই।

(কিতাবুল ফাতওয়া ৬/২১৭)

 

এটা যদি তাদের সামনা সামনি না হওয়ার কারনে হয়,যে সামনা সামনি, দেখা সাক্ষাৎ  যেহেতু আমাদের  হচ্ছেনা, তাই কথা বলার সুযোগও হচ্ছেনা। তাহলে তো কোনো সমস্যা নেই।  তবে দেখা সাক্ষাৎ হওয়ার পরেও বিনা কারনে কাহারো সাথে কথা বার্তা বলা বন্ধ করে দেওয়া,সম্পর্ক ছিন্ন করা জায়েজ নেই।

 

হাদীস শরীফে এসেছে 

عن أبي أیوب رضي اللّٰہ عنہ أن رسول اللّٰہ صلی اللّٰہ علیہ وسلم قال: لا یحل لمسلم أن یہجر أخاہ فوق ثلاث لیال یلتقیان فیعرض ہذا و یعرض خذت وخیرہما الذي یبدأ بالسلام۔ (رواہ مالک في الموطا ۲؍۹۰۷، صحیح البخاري رقم: ۶۲۳۷، الترغیب و الترہیب رقم: ۴۱۸۹)

যার সারমর্ম হলো কোনো মুসলমানের জন্য অপর মুসলমানের সাথে ৩ দিনের বেশি কথা বন্ধ রাখা,সম্পর্ক ছিন্ন রাখা জায়েজ নেই।

,

বিদ্বেষ পোষন না করে এমনিতেই দেখা সাক্ষাৎ না হওয়ার কারনে কথা না হলে কোনো সমস্যা নেই।

তবে মাঝে মাঝে ফোন দিয়ে খোজ খবর নেওয়া জরুরি।

,

আত্মীয়তা সম্পর্ক ছিন্ন করা নিয়ে যে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে,তা হলোঃ 

حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ جُبَيْرِ بْنِ مُطْعِمٍ، عَنْ أَبِيهِ، يَبْلُغُ بِهِ النَّبِيَّ صلي الله عليه وسلم قَالَ " لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَاطِعُ رَحِمٍ " . - صحيح

জুবাইর ইবনু মুত্বঈম (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (বুখারী ৫৯৮৪)

এখান থেকে স্পষ্ট হয় যে সম্পর্ক ছিন্ন করাই হলো মূল দোষ। সম্পর্ক ছিন্ন না করে এমনিতেই যদি দেখা সাক্ষাৎ না হওয়ার কারনে কথা না হয়, এটা কোনো সমস্যা নয়।  আরো বিস্তারিত জানুন- https://ifatwa.info/4223/?show=4235#a4235

 

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী বোন!

 

. প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনাকে মেরে, গালি গালাজ করে, অকথ্য কথা বলে ও সবচেয়ে জঘন্যতম বাক্য ব্যবহার করে অবশ্যই অবশ্যই আপনার পিতা অন্যায় ও গোনাহের কাজ করে ফেলেছে এটা করা তার জন্য আদৌ ঠিক হয়নি

. প্রিয় বোন! প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার পিতার সাথে একেবারে কথা বলা বন্ধ করবেন না। বরং মাঝে মধ্যে কথা বলবেন যদিও অল্প হোক। তাই খুবই অল্প হলেও মাঝে মধ্যে কথা বার্তা বলবেন। খোঁজ খবর নিবেন।

উল্লেখ্য যে, তাকে মাফ করে দিবেন। তাহলে দেখবেন আল্লাহ তায়ালাও আপনাকে মাফ করে দিবেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করে দিবেন। 

আরো জানুন- https://ifatwa.info/22770/


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী আব্দুল ওয়াহিদ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...