আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
800 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (21 points)
আল্লাহ আছেন অব্যশই আছেন।কিন্তু মনে বারে বারে উদয় হচ্ছে আল্লাহ কি আছেন?আল্লাহ অমুসলিমদের কেন সৃষ্টি করেছেন,এইসব,চেষ্টা করেও চিন্তামুক্ত হতে পারি না।আমি সবগুলির ব্যখা জানি কিন্তু বার বার মনে একই চিন্তা আসছে,খুব পেরেশানিতে আছি,মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছি,নামাজে মনযোগ দিতে পারি না।আজকে নামাজের মধ্যে তাশাহুদ পর্যন্ত ভুলে গেছি।আমি কি করতে পারি এখন।

1 Answer

0 votes
by (684,760 points)
জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم 


আপনাকে যদি বলা হয়, মনের মাঝে আসা চিন্তাগুলো আপনি কি বাস্তবেই বিশ্বাস করেন? আপনার মনে যে সকল কুফুরি-ওয়াসওয়াসার উদয় হয়, সেগুলোকে আপনি কি সত্য মনে করেন? উত্তরে আপনি অবশ্যই বলবেন, না, আমি এই চিন্তাগুলোর সঙ্গে মোটেও একমত নই এবং আমি এগুলো বিশ্বাস করি না। 

উপরন্তু আপনি অবশ্যই এই চিন্তাগুলোকে ঘৃণা করবেন এবং জবানের মাধ্যমে প্রতিবাদ করবেন। আর আপনি এ থেকে দূরে থাকবেন। 

সুতরাং বোঝা গেল, এগুলো শুধুমাত্র মনের কল্পনা এবং ওয়াসওয়াসা; যা শয়তানের ফাঁদ। তার অন্যতম চক্রান্ত হল, বান্দার অন্তরে সন্দেহ তৈরি করা, যাতে সে বান্দার ঈমান দুর্বল করে দিতে পারে । 

এজন্য রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদেরকে এ থেকে সতর্ক করেছেন। যেমন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
 يَأْتِي الشَّيْطَانُ أَحَدَكُمْ ، فَيَقُولَ : مَنْ خَلَقَ كَذَا وَكَذَا ؟ حَتَّى يَقُولَ لَهُ : مَنْ خَلَقَ رَبَّكَ ؟ فَإِذَا بَلَغَ ذَلِكَ ، فَلْيَسْتَعِذْ بِاللَّهِ وَلْيَنْتَهِ 
শয়তান তোমাদের কারো নিকট আসে এবং বলে, এটা কে সৃষ্টি করেছে, ওটা কে সৃষ্টি করেছে? পরিশেষে এ প্রশ্নও করে, তোমার রবকে কে সৃষ্টি করেছে? এ পর্যায়ে পৌঁছলে তোমরা আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা কর এবং এ ধরণের ভাবনা থেকে বিরত হও। ( বুখারী ৩২৭ )

উক্ত হাদিসে রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদেরকে দুটি দিকনির্দেশনা দিয়েছেন–
১. আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা কর, তাঁর রজ্জু মজবুতভাবে আঁকড়ে ধর। তিনি অসীম দয়ালু। সুতরাং তিনি তোমাকে ক্ষমা করবেন ও মুক্তি দিবেন। মূলত এই নির্দেশ স্বয়ং আল্লাহরই। তিনি বলেন,
وَإِمَّا يَنزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيْطَانِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللَّهِ ۖ إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
যদি শয়তানের পক্ষ থেকে তুমি কিছু কুমন্ত্রণা অনুভব কর, তবে আল্লাহর শরণাপন্ন হও। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। (সূরা হা-মীম-সিজদাহ ৩৬)

২. কুমন্ত্রণাকে গুরুত্ব না দিয়ে কোনো উপকারী কাজে ব্যস্ত হয়ে যাও। কেননা একজন মুমিনের জীবনে এই সমস্যা প্রথম সমস্যা নয় এবং শেষ সমস্যাও নয়; বরং দুনিয়াতে একজন মুমিন অবশিষ্ট থাকলেও এ সমস্যা বর্তমান থাকবে। সাহাবীগণও এ সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন। 

সুতরাং বুদ্ধিমানের কাজ হল, সমস্যাটিকে স্বাভাবিক মনে করে একে গুরুত্ব না দেয়া। হাদিসে এসেছে, একবার সাহাবায়ে কেরমের একদল রাসূলুল্লাহ ﷺ -এর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, আমরা আমাদের অন্তরে কখনো কখনো এমন বিষয় অনুভব করি, যা মুখ দিয়ে উচ্চারণ করা আমাদের কাছে খুব কঠিন মনে হয়। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, সত্যিই কি তোমরা এরকম পেয়ে থাক? তাঁরা বললেন হ্যাঁ, আমরা এরকম অনুভব করে থাকি। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, ذَاكَ صَرِيحُ الْإِيمَانِ এটি তোমাদের ঈমানের স্পষ্ট প্রমাণ। (মুসলিম, কিতাবুল ঈমান, অনুচ্ছেদ: অন্তরের ওয়াসওয়াসা)

ইবন আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত আরেক হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ -এর কাছে একজন লোক এসে বললেন, আমার মনে কখনো এমন কথার উদয় হয়, যা উচ্চারণ করার চেয়ে আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া আমার কাছে বেশি ভালো মনে হয়। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي رَدَّ أَمْرَهُ إِلَى الْوَسْوَسَةِ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি এ বিষয়টিকে নিছক একটি মনের ওয়াসওয়াসা হিসাবে নির্ধারণ করেছেন। (আবু দাউদ, কিতাবুল আদব, অনুচ্ছেদ: ওয়াসওয়াসা প্রতিরোধ)

শয়তানের উক্ত ওয়াসওয়াসাকে প্রতিহত করার লক্ষে নিমোক্ত কাজ করতে পারেন–
আনাস রাযি. বলেন, রাসুল ﷺ (উম্মতকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য) সব সময় এই দোয়া করতেন, يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوْبِ ثَبِّتْ قَلْبِىْ عَلىٰ دِيْنِكَ হে অন্তর পরিবর্তনকারী! আমার অন্তর আপনার দীনের উপর দৃঢ় করে দিন।
আনাস রাযি. বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা আপনার উপর এবং আপনার আনিত শিক্ষার উপর ঈমান এনেছি। এখন আপনার মনে কি আমাদের সম্পর্কে কোনো সন্দেহ আছে? ( যে বেশি বেশি এই দোয়া করেন!) রাসুল ﷺ উত্তর দিলেন হ্যাঁ! সব অন্তর আল্লাহর দুই আঙ্গুলের মধ্যে পড়ে আছে। আল্লাহ যেভাবে চান, এগুলোকে পরিবর্তন করেন। (তিরমিযি ২১৪০ তাকদির অধ্যায়)

আরো বিস্তারিত পদ্ধতি জানুনঃ


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...