আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
89 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (1 point)
আসসালামুআসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ
আমার এক বোন জেনারেল লাইন থেকে পড়ালেখা শিখেছেন৷ আল্লাহর অশেষ রহমতে ঈমানের মত দৌলত আলহামদুলিল্লাহ পেয়েছিলেন।  টুকটাক দ্বীনি ইলম অর্জন ও খেদমতে জড়িত ছিলো আলহামদুলিল্লাহ। এরপর বিবাহ, সন্তান জন্মদান, আর্থিক অনটনসহ সাংসারিক নানান জটিলতায় পড়ে যায়।
একারণে ব্যক্তিগতভাবে ইলম-আমল কমে যায় অনেকখানি। খেদমতেও সময় দিতে পারতেন না। নানান কারণে শারীরিক-মানসিকভাবে অসুস্থতা-অস্থিরতা কাজ করত। সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেতেন ইলম-আমলে ঘাটতির কারণে৷
ইতোমধ্যে নিজে কিছু করতে না পারলেও সব সময় চেষ্টা করতেন একটা সহবতে থাকার জন্য৷ এটা তাকে অনেকটা প্রশান্তি দিতো। আর আল্লাহর ওপর ভরসা করে বলতেন ইনশাআল্লাহ একদিন কাটিয়ে উঠবেন।
কোন একটা ঘটনার প্রেক্ষিতে সেই দ্বীনি মহলে তাকে নিয়ে একটা ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। একটা চাপা দূরত্ব তৈরি হয়ে যায় তাদের মধ্যে। এই বিষয়টা সেই বোন কোনভাবেই মানতে পারছেন না এবং খোলামেলা কথা বলতে গেলে সেটা নিয়েও সমস্যা তৈরি হয়ে যায়। দ্বীনি মহল থেকে এমন আচরণ মেনে নেওয়া সেই বোনের জন্য অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে।

ঈমানের যে স্বাদ তিনি পেয়েছিলেন সেটার কমতি তিনি অনুভব করেন। খুব করে চান সেই আগের ইলম-আমলের মিষ্টতা ফিরে পেতে। কিন্তু বুঝতে পারছেন না কি করবেন। আফসোস করে বলেন ছেলেদের যেমন মারকাজ আছে। সেখানে তারা দুনিয়ার সব ছেড়ে একান্ত মনে আল্লাহকে স্মরণ করতে পারে, পরহেজগার মানুষদের সহবত অর্জন করতে পারে এমন একটা সুযোগ/ ব্যবস্থা যদি মেয়েদের থাকত।

(বি.দ্র. আমি আমার সাধ্যমত তাকে চেষ্টা করেছি যেকোনভাবে তাকে একটু সাহায্য করার। অন্য মজলিসে নিয়ে গিয়েছি। কিন্তু কোনভাবেই ঈমানের সেই স্বাদ তিনি পাচ্ছেন না। ব্যক্তিগত আমল বাড়াতেও পারছেন না। সন্তান ছোট আর অনেক দুষ্টু মাশাআল্লাহ। রুটিন মেনে চলা তার জন্য কঠিন। টাইম মত ৫ ওয়াক্ত সালাত আদায় করতেই যেখানে কষ্ট হয়ে যায়।

আপাতদৃষ্টিতে কঠিন কোন হারামে যে লিপ্ত আছে সেটাও না। তবে ইবাদত আমল ঠিকভাবে করতে না পারার দরুণ হয়ত হেলায় তার সময়গুলো কাটে এবং প্রোডাকটিভ কিছু করার জন্য শারীরিক বা মানসিক কোন পরিস্থিতি তার থাকে না।

তার বিষয়ে আমি যেটা ফিল করি তা হল এভাবে চলতে থাকলে আল্লাহ না করুন হয়ত তিনি পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে, হয়ত আল্লাহ না করুন ঈমান হারা হয়ে যাবেন। তিনি নিজেও এই আশঙ্কা করেন।

সেজন্য তার অনুমতি সাপেক্ষে এই ম্যাসেজটি লেখা।

এই বোনের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নসীহত দেওয়ার বিনীত অনুরোধ করছি। যেকোন হালকা বা গুরুতর কোন গুনাহের আশঙ্কা থাকলে সে বিষয়টিও জানাবেন দয়া করে।

কেননা, তার নিজের মতে এবং আমি নিজেও যতটুকু তাকে পর্যবেক্ষণ করেছি তাতে করে খুব গুরুতর কিছু চোখে পড়ছে না। এখন একজন আল্লাহভীরু আলেমই ভালো বলতে পারবেন এসব বিষয়ে। তাই আপনাদের শরণাপন্ন হওয়া।)

1 Answer

0 votes
by (561,180 points)
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ-


প্রশ্নে উল্লেখিত দ্বীনি বোনের প্রতি পরামর্শ,
হে দ্বীনি বোন!

ইহ-পরকালীন সকল বিষয়ে ধৈর্য ও ছালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাওয়ার হুকুম প্রদান করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا اسْتَعِينُوْا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ إِنَّ اللهَ مَعَ الصَّابِرِيْنَ، 
‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা ধৈর্য ও ছালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে থাকেন’ (বাক্বারাহ ২/১৫৩)। 

অনুরূপ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ)-কে আদেশ করেন, ‘জেনে রেখো অবশ্যই সাহায্য ধৈর্যের সাথে রয়েছে’।

ইসতিক্বামাত তথা দ্বীনের উপর অটল থাকার ব্যাপারে ধৈর্য বিশেষ গুরুত্ব রাখে। ছাহাবায়ে কেরাম যে ঈমান ও আমলের ক্ষেত্রে দ্বীনের উপর অটল থাকতে সক্ষম হয়েছিলেন, তার বড় কারণ ছিল ধৈর্য।

মহান আল্লাহ বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا اصْبِرُوْا وَصَابِرُوْا وَرَابِطُوْا وَاتَّقُوا اللهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ، 

‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা ধৈর্যধারণ কর। পরস্পরে দৃঢ় থাক এবং সদা প্রস্ত্তত থাক। আর আল্লাহকে ভয় কর, যাতে তোমরা সফলকাম হ’তে পার’ (আলে ইমরান ৩/২০০)।

★প্রিয় দ্বীনি বোন,
আপনি ধৈর্যধারণ করবেন,যাহা চাওয়ার তাহা নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে চাইবেন,ভালো ফলাফলের চেষ্টার পাশাপাশি আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা করবেন,নিয়মিত নামাজ শরীয়তের বিধান মেনে চলবেন, 
হতাশ হবেননা।
ধৈর্যধারণ করবেন,ইনশাআল্লাহ সফলতা আপনার পদচুম্বন করবে।

নিম্নোক্ত দোয়া করতে পারেনঃ-
ক্বাতাদাহ (রহঃ) বলেন, হাসান বাছরী (রহঃ) দো‘আ করতেন,
 اللهم أنت ربنا، فارزقنا الاستقامة
 ‘হে আল্লাহ! তুমি আমাদের রব। তুমি আমাদেরকে তোমার অটল থাকার তাওফীক দাও’।
(ইবনু কাছীর, তাফসীর সূরা হা-মীম সাজদা ৩০ আয়াত।)
,
★আলী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) আমাকে বলেন, তুমি বল,
اللَّهُمَّ اهْدِنِىْ وَسَدِّدْنِىْ  

‘হে আল্লাহ! তুমি আমাকে সুপথ প্রদর্শন কর এবং আমাকে সরল পথে পরিচালিত কর। আর তুমি সুপথের সংকল্প কর এবং সঠিক পথে স্থির থাক, যেভাবে তীর তার লক্ষ্যে স্থির থাকে।
(মুসলিম হা/২৭২৫; মিশকাত হা/২৪৮৫।)

★আপনাকে বেশি পরিমাণে কোরআন তেলাওয়াত করার ও শোনার পরামর্শ দিচ্ছি। এ মর্মে আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَإِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ آيَاتُهُ زَادَتْهُمْ إِيمَانًا

আর যখন তাদের সামনে পাঠ করা হয় কালাম, তখন তাদের ঈমান বেড়ে যায়। (সূরা আনফাল ২)

অনুরূপভাবে আমরা আপনাকে বুঝে বুঝে নবীদের কাহিনী, সাহাবায়ে কেরামের জীবনী পড়ার পরামর্শ দিচ্ছি। কেননা, নবী ﷺ ও তাঁর সাহাবায়ে কেরামের অন্তরকে প্রশান্ত করার জন্য আল্লাহ তাআলা
 
কোরআনে নবীদের কাহিনীগুলো উল্লেখ করেছেন। আর তিনি সাহাবায়ে কেরামের ঈমানকে আমাদের ঈমানের জন্য আদর্শ বানিয়েছেন। এ মর্মে আল্লাহ তাআলা বলেন,

آمِنُواْ كَمَا آمَنَ النَّاسُ

অন্যান্যরা যেভাবে ঈমান এনেছে তোমরাও সেভাবে ঈমান আন…। (সূরা বাকারা ১৩)

অধিকহারে আল্লাহর যিকির করুন। কেননা, দুর্বল ঈমানের সুস্থতার জন্য যিকির খুবই উপকারী। আল্লাহর যিকির অন্তরে ঈমানের বীজ বপন করে। মুমিনের অন্তর যিকিরের মাধ্যমে প্রশান্ত হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন,

الَّذِينَ آمَنُواْ وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُم بِذِكْرِ اللّهِ أَلاَ بِذِكْرِ اللّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ

যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর যিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে; জেনে রাখ, আল্লাহর যিকির দ্বারাই অন্তর সমূহ শান্তি পায়। (সূরা রা’দ ২৮)

আল্লাহ ও তাঁর রাসুল -কে সবচেয়ে বেশি মহব্বত করুন এবং তাঁদের হুকুমগুলোকে সব কিছুর চাইতে বেশি প্রাধান্য দিন। আনাস ইবন মালিক রাযি. বলেন, রাসূল্লাহ ﷺ বলেছেন, 

ثَلَاثٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ وَجَدَ حَلَاوَةَ الْإِيمَانِ مَنْ أَحَبَّ الْمَرْءَ لَا يُحِبُّهُ إِلَّا لِلَّهِ عَزَّ وَجَلَّ وَمَنْ كَانَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ وَرَسُولُهُ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِمَّا سِوَاهُمَا وَمَنْ كَانَ أَنْ يُقْذَفَ فِي النَّارِ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ أَنْ يَرْجِعَ إِلَى الْكُفْرِ بَعْدَ أَنْ أَنْقَذَهُ اللَّهُ مِنْهُ

যার মধ্যে তিনটি গুণ থাকবে সে ঈমানের মিষ্টতা পাবে; ১. যে কাউকে ভালবাসলে কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই তাকে ভালবাসবে; ২. আল্লাহ্ এবং আল্লাহর রাসূল তার কাছে অন্য সবকিছুর চাইতে বেশি প্রিয় হবে এবং ৩. আল্লাহ্ তাকে কুফর হতে পরিত্রাণ করার পর পুনঃ কুফরীতে ফিরে যাওয়ার চেয়ে অগ্নিতে নিক্ষিপ্ত হওয়া তার নিকট পছন্দনীয় হবে। (বুখারী ৪৯৮৭)

আখিরাতের তুলনায় দুনিয়ার সামান্যতার কথা চিন্তা করুন। এর দ্বারা ঈমান বৃদ্ধি পাবে। আল্লাহ তাআলা বলেন,

 إِنَّمَا مَثَلُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا كَمَاءٍ أَنزَلْنَاهُ مِنَ السَّمَاءِ فَاخْتَلَطَ بِهِ نَبَاتُ الْأَرْضِ مِمَّا يَأْكُلُ النَّاسُ وَالْأَنْعَامُ حَتَّىٰ إِذَا أَخَذَتِ الْأَرْضُ زُخْرُفَهَا وَازَّيَّنَتْ وَظَنَّ أَهْلُهَا أَنَّهُمْ قَادِرُونَ عَلَيْهَا أَتَاهَا أَمْرُنَا لَيْلًا أَوْ نَهَارًا فَجَعَلْنَاهَا حَصِيدًا كَأَن لَّمْ تَغْنَ بِالْأَمْسِ ۚ كَذَٰلِكَ نُفَصِّلُ الْآيَاتِ لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ

পার্থিব জীবনের উদাহরণ তেমনি, যেমনি আমি আসমান থেকে পানি বর্ষন করলাম, পরে তা মিলিত সংমিশ্রিত হয়ে তা থেকে যমীনের শ্যামল উদ্ভিদ বেরিয়ে এল যা মানুষ ও জীব-জন্তুরা খেয়ে থাকে। এমনকি যমীন যখন সৌন্দর্য সুষমায় ভরে উঠলো আর যমীনের অধিকর্তারা ভাবতে লাগল, এগুলো আমাদের হাতে আসবে, হঠাৎ করে তার উপর আমার নির্দেশ এল রাত্রে কিংবা দিনে, তখন সেগুলোকে কেটে স্তুপাকার করে দিল যেন কাল ও এখানে কোন আবাদ ছিল না। এমনিভাবে আমি খোলাখুলি বর্ণনা করে থাকি নিদর্শণসমূহ সে সমস্ত লোকদের জন্য যারা লক্ষ্য করে। (সূরা ইউনুস ২৪)
(কিছু তথ্য সংগৃহীত)

★আপনি দ্বীনি মহিলাদের সাথে বেশি উঠাবসা করুন।
এর জন্য মাস্তুরাতে জামাতে গিয়ে তিন দিন বা চিল্লাও লাগাতে পারেন।

আপনার এলাকায় দাওয়াত ও তাবলিগের মেহনতের দ্বীনি বোনেরা যেখানে নিয়মিত প্রতি সপ্তাহে তা'লিম করে,সেখানে অংশগ্রহণ করুন।

★সর্বোপরি আপনাকে বিভিন্ন রকমের নেক আমল করা এবং গুনাহ বর্জনের পরামর্শ দিচ্ছি। কেননা, যেকোনো নেক আমল ঈমানকে বৃদ্ধি করে। এজন্য কোরআন মজিদে যত জায়গায় ঈমানের কথা এসেছে তত জায়গায় পাশাপাশি নেক আমল করার কথাও এসেছে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...