আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
508 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (19 points)
আমি ঢাবি ফার্মেসির ছাত্র। আমাদের ছাত্রদের একটা অংশ ফার্মাসিউটিক্যাল কম্পানির মার্কেটিং সেক্টরে  জব করে। আমরা এখানে মার্কেটিং রিপ্রেজেন্ন্টেটিভদেরকে  ডাক্তারদের কাছে পাঠাই নানা উপহার সামগ্রী দিয়ে। এগুলার খরচ কোম্পানি বহন করে। আমরা শুধু এমপ্লয়ী হিসেবে ডিস্ট্রিবিউশন করে থাকি। এক্ষেত্রে কি এই জব করা আমার জন্য জায়েজ হবে?

1 Answer

0 votes
by (590,550 points)
বিসমিহি তা'আলা

জবাবঃ-

(১)

রোগী ডাক্তারের নিকট গেলে ডাক্তার  প্রেসক্রিপশনে যে ঔষধগুলোর নাম লিখে দেয়।সাধারণত ঐ ঔষধ কিন্তু পরামর্শক ডাক্তারের নিজ হাতের তৈরী নয় ।(যদিও অতীতে হাকিমদের ব্যাপারটা এমনই ছিলো)বরং এটা কোনো ঔষধ কম্পানি কর্তৃক বিশেষজ্ঞ দ্বারা তৈরী হয়ে থাকে।

ঔষধ বানানো, বাজারজাত করণ ইত্যাদির জন্য বিশাল বিশাল আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ঔষধ কম্পানি রয়েছে। যারা সময়োপযোগী বিভিন্ন ঔষধ তৈরী করে বাজারজাত করে।দেশে-বিদেশে সেল দিয়ে থাকে।

যখন কোনো কম্পানি নতুন কোনো ঔষধ তৈরী করে,তখন সে  ঐ ঔষধের গুণাগুণ, কার্যকারিতা,পার্শ-প্রতিক্রিয়া  ইত্যাদি সম্ভলিত একটি লিফ্রেট বা এ জাতীয় কিছু বের করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে জানায় তথা ডাক্তারদেরকে জানায়।

এই জানানো কখনো ডাক্তারদেরকে একত্রিত করে হয়,আবার কখনো ব্যক্তিগত ভাবে প্রাইভেট ভিজিটের মাধ্যমে হয়।

ডাক্তারগণ কম্পানির যাবতীয় কার্যক্রম ও তাদের তৈরীকৃত ঔষধের এপাশ-ওপাশ সবকিছু পর্যবেক্ষণ শেষে, তারা সেটা রোগীকে সেবনের পরামর্শ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন।অতঃপর ডাক্তারগণ তাদের প্রেসক্রিপশনে উক্ত ঔষধের নাম লিখে দেন। রোগীরা সেই ঔষধকে সেবন করে আল্লাহ চাহে তো হয়তো তারা পূর্ণ সুস্থ হয় বা তাদের অবস্থার কিছুটা উন্নতি ঘটে।

(২)

ঔষধ কম্পানি কর্তৃক ঔষধ তৈরী হয়। অতঃপর ডাক্তারের পরামর্শের মাধ্যমে রোগীর নিকট উক্ত ঔষধ পৌছিয়ে দেয়া হয়। তারপর আল্লাহ চাহে তো কাঙ্ক্ষিত ফালাফল পাওয়া। এই সাধারণ নিয়মটাই মূলত কাঙ্ক্ষিত ছিলো।

কিন্তু সমস্যা হয়ে যায়,যখন কোনো ঔষধ কম্পানি চায় যে, বাজারে শুধুমাত্র তার ঔষধ-ই চলুক।যেজন্য সে বিভিন্ন কৌশলের আশ্রয় নিয়ে থাকে।

ডাক্তারকে বিভিন্ন উপহার-উপটোকন দিয়ে নিজের ঔষধ কে লিখানোর চেষ্টা করে।

এই প্রকারের কৌশলের আশ্রয় নেয়া,ঘোষের হুকুমের আওতাধীন।ঘোষ যেভাবে হারাম,ঠিক সেভাবে উপহার উপটোকন দিয়ে নিজের ঔষধ লিখানোর চেষ্টা করাটাও হারাম।এবং সেই উপহার উপটোকন গ্রহণ করাও ডাক্তারের জন্য হারাম।

কেননা ঘোষ বলা হয় অন্যায়ভাবে কারো হক্ব কে নিজের জন্য নিয়ে আসতে প্রদত্ত হাদিয়্যা।

যেমন ঘোষ সম্পর্কে চার মাযহাব সম্বলীত সর্ব বৃহৎ ফেক্বহী গ্রন্থ "আল-মাওসু'আতুল ফেক্বহিয়্যায় " বর্ণিত রয়েছে,

قَال الْفَيُّومِيُّ: الرِّشْوَةُ - بِالْكَسْرِ -: مَا يُعْطِيهِ الشَّخْصُ لِلْحَاكِمِ أَوْ غَيْرِهِ لِيَحْكُمَ لَهُ، أَوْ يَحْمِلَهُ عَلَى مَا يُرِيدُ

ঘোষ ঐ জিনিষকে বলা হয়, যা বিচারক-কে নিজের পক্ষে রায় প্রদাণের জন্য দেয়া হয়।বা বিচারক-কে নিজ ইচ্ছায় পরিচালনার জন্য প্রদাণ করা হয়।

ঘোষের বিধি-বিধান সম্পর্কে হাদীসে বর্ণিত রয়েছে,

হযরত আবু-হুরায়রা রাযি থেকে বর্ণিত,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: لَعَنَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الرَّاشِيَ وَالمُرْتَشِيَ فِي الحُكْمِ

তিনি বলেন,রাসূলুল্লাহ সাঃ ঘোষদাতা ও ঘোষ গ্রহিতা উভয়ের উপর লা'নত করেছেন।

সুনানে তিরমিযি-১৩৩৬

হযরত সাওবান রাযি থেকে বর্ণিত,

( ﻭﻋﻦ ﺛﻮﺑﺎﻥ ﻗﺎﻝ : } ﻟﻌﻦ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺍﻟﺮﺍﺷﻲ ﻭﺍﻟﻤﺮﺗﺸﻲ ﻭﺍﻟﺮﺍﺋﺶ ، ﻳﻌﻨﻲ ﺍﻟﺬﻱ ﻳﻤﺸﻲ ﺑﻴﻨﻬﻤﺎ

রাসূলুল্লাহ সাঃ ঘোষদাতা ও ঘোষ গ্রহিতা এবং ঘোষ নিয়ে উভয়ের উপর মধ্যকার চলমান ব্যক্তি  ত্রয়ের উপর লা'নত করেছেন।

মুসনাদে আহমদ;৫/২৭৯

আহমদ ইবনে হাম্বল(তাফসীর)সূরা মায়েদা;৬২-৬৪

সুপ্রিয় পাঠকবর্গ!

নিজ কম্পানির ঔষধ বেশী করে বিক্রি হওয়ার জন্য ডাক্তারকে বিভিন্ন কৌশলে হাতিয়ে নেওয়া অন্যায় ও হারাম। হ্যা ট্রেডমার্ক হিসেবে ছোটমোটো উপহার-উপটোকন ডাক্তাদেরকে হাদিয়্যা হিসেবে দেয়া যাবে।ডাক্তররাও তা গ্রহণ করতে পারবে।

আল্লাহ-ই ভালো জানেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...