বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
পেশাব বা পায়খানা করার পর পবিত্রতা অর্জন করা ওয়াজিব। কেননা পবিত্রতা অর্জিত না হলে পরবর্তী নামায এবং কোরআন তেলাওয়াত ইত্যাদি অনেক ইবাদত করা যাবে না। যেহেতু তা ঐ পবিত্রতা অর্জনের উপরই নির্ভরশীল।
পবিত্রতা অর্জন না করা সম্পর্কে হাদীসে কঠোর শাস্তির কথা বর্ণিত রয়েছে।
যেমন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি থেকে বর্ণিত,
ﻋَﻦِ ﺍﺑْﻦِ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ، ﻗَﺎﻝَ : ﻣَﺮَّ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺑِﻘَﺒْﺮَﻳْﻦِ، ﻓَﻘَﺎﻝَ : ” ﺇِﻧَّﻬُﻤَﺎ ﻟَﻴُﻌَﺬَّﺑَﺎﻥِ، ﻭَﻣَﺎ ﻳُﻌَﺬَّﺑَﺎﻥِ ﻓِﻲ ﻛَﺒِﻴﺮٍ، ﺃَﻣَّﺎ ﺃَﺣَﺪُﻫُﻤَﺎ : ﻓَﻜَﺎﻥَ ﻟَﺎ ﻳَﺴْﺘَﻨْﺰِﻩُ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺒَﻮْﻝِ – ﻗَﺎﻝَ ﻭَﻛِﻴﻊٌ : ﻣِﻦْ ﺑَﻮْﻟِﻪِ – ﻭَﺃَﻣَّﺎ ﺍﻟْﺂﺧَﺮُ : ﻓَﻜَﺎﻥَ ﻳَﻤْﺸِﻲ ﺑِﺎﻟﻨَّﻤِﻴﻤَﺔِ “.
তিনি বলেন, একদা রাসূল সাঃ দু’টি কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম হচ্ছিলেন। বললেন, এ দু’টি কবরে আযাব হচ্ছে। কোন বড় কারণে আজাব হচ্ছে না। একজনের কবরে আজাব হচ্ছে সে পেশাব থেকে ভাল করে ইস্তিঞ্জা করতো না। আরেকজন চোগোলখুরী করতো। {মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৯৮০, বুখারী, হাদীস নং-১৩৬১}
পবিত্রতা অর্জনের পদ্ধতি সম্পর্কে এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেনঃ
ﻋَﻦْ ﻋِﻴﺴَﻰ ﺑْﻦِ ﻳَﺰْﺩَﺍﺩَ ﺍﻟْﻴَﻤَﺎﻧِﻲِّ، ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻴﻪِ، ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : « ﺇِﺫَﺍ ﺑَﺎﻝَ ﺃَﺣَﺪُﻛُﻢْ ﻓَﻠْﻴَﻨْﺘُﺮْ ﺫَﻛَﺮَﻩُ ﺛَﻠَﺎﺙَ ﻣَﺮَّﺍﺕٍ »
হযরত ঈসাব বিন ইয়াযদাদ আলইয়ামানী তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, যখন তোমাদের কেউ পেশাব করে, তখন সে যেন তার লজ্জাস্থানকে তিনবার ঝেড়ে নেয় বা পবিত্র করে নেয়।
{সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৩২৬}
অন্য এক হাদীসে বলেনঃ
ﻭَﻣَﻦْ ﺍﺳْﺘَﺠْﻤَﺮَ ﻓَﻠْﻴُﻮﺗِﺮْ، ﻣَﻦْ ﻓَﻌَﻞَ ﻓَﻘَﺪْ ﺃَﺣْﺴَﻦَ، ﻭَﻣَﻦْ ﻟَﺎ ﻓَﻠَﺎ ﺣَﺮَﺝَ ،
যে ব্যক্তি ঢিলা ব্যবহার করে সে যেন বেজোড় ব্যবহার করে। যে তা করবে সে উত্তম কাজ করল, আর যে করেনি তাতে কোন সমস্যা নেই। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৩৫}
ডেলা কুলুপ নিয়ে হাটাহাটি করার বিষয়টা রাসূলুল্লাহ সাঃ করেছেন বা নির্দেশ দিয়েছেন বলে কোনো হাদীসের স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়নি।
তবে একতা সত্য যে উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন একজন মু'মিনের ঈমানী দায়িত্ব।নতুবা কবরে শাস্তি হবে।নামায তেলাওয়াত ইত্যাদি পবিত্রতার উপরই নির্ভরশীল তাই পবিত্রতা ব্যতীত কোনো ইবাদতই গ্রহণযোগ্য হবে না।
পেশাবের পর ফোটা ফোটা করে যাদের পেশাব আসার সম্ভাবনা নেই,তাদের জন্য ডেলা কুলুপ ব্যবহার করে হাটাহাটি করার কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই।তবে পেশাবের পর যাদের ফোটা আসার সম্ভাবনা রয়েছে যেমন বয়স্ক, অসুস্থ তাদের জন্য অবশ্যই ডেলা-কুলুপ ব্যবহার করতে হবে।
লক্ষণীয় যে,ডেলা কুলুপ নিয়ে প্রয়োজন হলে একাকি কোনো গোপন স্থানে হাটাহাটি করাই শ্রেয়।কেননা তা দৃষ্টি কটু।এজন্য যাদের পেশাবের পর ফোটা আসার সম্ভাবনা রয়েছে,তারা যেন পেশাবের জন্য একাকী স্থানকেই বেছে নেয়।
পেশাবের পর ফোটাফোটা আসছে কি না?
সেটা পেশাবের কিছুক্ষণ পর গোপনাঙ্গে টিসু রেখে পরীক্ষা করে দেখা যেতে পারে।
যদি কোনো ফোটা না আসে তাহলে তো আপনি স্বাভাবিক ভাবেই পবিত্র হয়ে গেছেন।হাটাহাটি র অদ্য কোনো প্রয়োজন এক্ষেত্রে নেই।
তাই বলব হাটাহাটি করাটা একটি জরুরত পর্যায়ের বিষয়।পবিত্রিতা অর্জন করার একটি সুক্ষ্ম পদ্ধতি।
যা ওয়াজিব বা জরুরী কিছু নয়।তবে ভালভাবে পবিত্রতা অর্জন করা কিন্তু ওয়াজিব।তা যেভাবেই হোক না কেন।
অনেকে হাটাহাটি করাকে সর্বক্ষেত্রে ওয়াজিব বা জরুরী মনে করে ফেলেন যা অদৌ সমিচিন নয়।ঠিকতদ্রুপ কেউ কেউ প্রস্রাব পরবর্তী হাটাহাটিকে বেদআত ও আখ্যা দেন।তাও কিন্তু উচিৎ না।কেননা হাটাহাটিকে কেউ দ্বীনের অংশ বা জরুরী বিধান মনে করে করছে না।
বরং শুধুমাত্র পবিত্রতা অর্জনের একটি সুক্ষ্ম সফল পদ্ধতি রূপে ব্যবহার করছে।
ভালভাবে পবিত্রতা অর্জনের সমস্ত পথ-পদ্ধতি আমাদেরকে অনুসরণ করতে হবে, জানতে হবে,মানতে হবে।
প্রয়োজনে ডেলা-কুলুপ ব্যবহার করে হাটাহাটি করে বা ডেলা-কুলুপ ব্যবহারের পর পানি ব্যবহার করে হলেও উত্তম পবিত্রতা অর্জন করতে।
উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন সম্পর্কে একটি হাদীসে মাওকুফে এসেছে
ﺍﻟﻜﺘﺐ » ﺍﻟﺴﻨﻦ ﺍﻟﻜﺒﺮﻯ ﻟﻠﺒﻴﻬﻘﻲ » ﺟُﻤَّﺎﻉُ ﺃَﺑْﻮَﺍﺏِ ﺍﻻﺳْﺘِﻄَﺎﺑَﺔِ » ﺑَﺎﺏُ ﺍﻟﻨَّﻬْﻲِ ﻋَﻦِ ﺍﺳْﺘِﻘْﺒَﺎﻝِ ﺍﻟْﻘِﺒْﻠَﺔِ ﻭَﺍﺳْﺘِﺪْﺑَﺎﺭِ ...
|
ﺭﻗﻢ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ : 470
( ﺣﺪﻳﺚ ﻣﻮﻗﻮﻑ ) ﺃَﺧْﺒَﺮَﻧَﺎ ﺃَﺧْﺒَﺮَﻧَﺎ ﺃَﺑُﻮ ﺍﻟْﺤَﺴَﻦِ ﻋَﻠِﻲُّ ﺑْﻦُ ﺃَﺣْﻤَﺪَ ﺑْﻦِ ﻋَﺒْﺪَﺍﻥَ
، ﺃَﺧْﺒَﺮَﻧَﺎ ﺃَﺣْﻤَﺪُ ﺑْﻦُ ﻋُﺒَﻴْﺪٍ ﺍﻟﺼَّﻔَّﺎﺭُ ، ﺃَﺧْﺒَﺮَﻧَﺎ ﺳَﻌِﻴﺪُ ﺑْﻦُ ﻋُﺜْﻤَﺎﻥَ ﺍﻷَﻫْﻮَﺍﺯِﻱُّ ، ﺛﻨﺎ ﻋَﻤْﺮُﻭ ﺑْﻦُ ﻣَﺮْﺯُﻭﻕٍ ، ﺛﻨﺎ ﺯَﺍﺋِﺪَﺓُ ، ﻋَﻦْ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟْﻤَﻠِﻚِ ﺑْﻦِ ﻋُﻤَﻴْﺮٍ ، ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝَ ﻋَﻠِﻲُّ ﺑْﻦُ ﺃَﺑِﻲ ﻃَﺎﻟِﺐٍ : " ﺇِﻧَّﻬُﻢْ ﻛَﺎﻧُﻮﺍ ﻳَﺒْﻌَﺮُﻭﻥَ ﺑَﻌْﺮًﺍ ، ﻭَﺃَﻧْﺘُﻢْ ﺗُﺜْﻠِﻄُﻮﻥَ ﺛَﻠْﻄًﺎ ، ﻓَﺎﺗَّﺒِﻌُﻮﺍ ﺍﻟْﺤِﺠَﺎﺭَﺓَ ﺍﻟْﻤَﺎﺀَ "
হযরত আলী রাযি বলেন-
আরব বাসীগণ পশুর শক্ত মলে ন্যায় মলত্যাগ করে,আর তোমরা অনারবীগণ নরম মলত্যাগ করছ।সুতরাং তোমরা ডেলা-কুলুপ ব্যবহারের পর পানি ব্যবহার করো।
সুনানে বায়হাক্বী-হাদিস নং ৪৭০
উত্তরূপে পবিত্রতা অর্জন সম্পর্কে তারিখে মদিনায় এসেছে....
ﻗﺎﻝ ﺍﺑﻦ ﺷﺒّﺔ ﻓﻲ ﺗﺎﺭﻳﺦ ﺍﻟﻤﺪﻳﻨﺔ ( 1/48 )
ﺣﺪﺛﻨﺎ ﻣﻌﺎﻭﻳﺔ ﺑﻦ ﻋﻤﺮﻭ ﻗﺎﻝ، ﺣﺪﺛﻨﺎ ﺯﻫﻴﺮ، ﻳﻌﻨﻲ ﺍﺑﻦ ﻣﻌﺎﻭﻳﺔ، ﻋﻦ ﻋﺎﺻﻢ ﺍﻷﺣﻮﻝ، ﻋﻦ ﺭﺟﻞٍ ﻣﻦ ﺍﻷﻧﺼﺎﺭ ﻓﻲ ﻫﺬﻩ ﺍﻵﻳﺔ ( ﻓﻴﻪ ﺭﺟﺎﻝ ﻳﺤﺒﻮﻥ ﺃﻥ ﻳﺘﻄﻬﺮﻭﺍ ﻭﺍﻟﻠﻪ ﻳﺤﺐ ﺍﻟﻤﻄﻬﺮﻳﻦ ) ﻗﺎﻝ : ﻓﺴﺄﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺃﻫﻞ ﻗﺒﺎﺀ ﻋﻦ ﻃﻬﻮﺭﻫﻢ، ﻭﻛﺄﻧﻬﻢ ﻛﺎﻧﻮﺍ ﻳﺴﺘﺤﻴﻮﻥ ﺃﻥ ﻳﺤﺪﺛﻮﻩ، ﻓﻘﺎﻟﻮﺍ : ﻃﻬﻮﺭﻧﺎ ﻃﻬﻮﺭ ﺍﻟﻨﺎﺱ .
ﻓﻘﺎﻝ : ﺇﻥ ﻟﻜﻢ ﻃﻬﻮﺭﺍ .
ﻓﻘﺎﻟﻮﺍ : ﺇﻥ ﻟﻨﺎ ﺧﺒﺮﺍً ﺇﻧﺎ ﻧﺴﺘﻨﺠﻲ ﺑﺎﻟﻤﺎﺀ ﺑﻌﺪ ﺍﻟﺤﺠﺎﺭﺓ،
ﻗﺎﻝ : ﺇﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻗﺪ ﺭﺿﻲ ﻃﻬﻮﺭﻛﻢ ﻳﺎ ﺃﻫﻞ ﻗﺒﺎﺀ
যখন আহলে ক্বুবা' সম্পর্কে সূরা তাওবার ১০৮ নাম্বার আয়াত অবতীর্ণ হয়।
তখন রাসূলুল্লাহ সাঃ ক্বুবাবাসীকে তাদের পবিত্রতা অর্জনের পদ্ধতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন।তারা বর্ণনা করতে লজ্জাভরে বললেন,আসলে আমাদের পবিত্রতা অর্জন প্রায় অন্যান্যদের মতই।
রাসূলুল্লাহ সাঃ বললেনঃ নিশ্চয় তোমাদের ভিন্নরকম পবিত্রতা রয়েছে।তখন তারা বলল, আমাদের পবিত্রতা সম্পর্কে সংবাদ হলো যে,আমরা ডেলা-কুলুপের পর পানি দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করতাম।তখন রাসূলুল্লাহ সাঃ বললেনঃ
নিশ্চয় আল্লাহ তা'আলা তোমাদের পবিত্রতা অর্জনের পদ্ধতি সম্পর্কে সন্তুষ্ট, হে ক্বুবাবাসী!
তারিখে মদিনা-১/৪৮
সু-প্রিয় পাঠকবর্গ!
উপরোক্ত আলোচনার নিমিত্তে আমরা বলতে পারব যে,ডেলা-কুলুপ এবং পানি একসাথে ব্যবহার করা বেদাআত হবে না।তবে জরুরীও না।আসল উদ্দেশ্য হল উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করা।পদ্ধতি যে কোনো ভাবেই হোক না কেন।তবে সর্বোপরি নবীজী সা এবং সাহাবায়ে কেরামগণের পদ্ধতির অনুসরণই ইহকাল ও পরকালের সমস্ত কামিয়াবির চাবিকাঠি।
তাই আমাদের কে ডেলা-কুলুপ ব্যবহারের পর পানি ব্যবহার করে পবিত্রতা অর্জন করতে হবে।
প্রস্রাবের ফোটা আসার সামান্যতম সন্দেহ হলে হাটাহাটি করে হলেও উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করতে হবে।