ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
আলহামদুলিল্লাহ!
(এক) ভূমিকা
তাক্বদীর শব্দটির অর্থ নির্ধারণ করা বা অনুমান করা।
শারঈ পরিভাষায় তাক্বদীর হ’ল, আল্লাহ কর্তৃক বান্দার ভবিষ্যত নির্ধারণ করা।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাযি-থেকে বর্ণিত তিনি বলেন-
ﻋَﻦْ ﻋَﺒْﺪِ اﻟﻠَّﻪِ ﺑْﻦِ ﻋَﻤْﺮٍﻭ ﺭَﺿِﻲَ اﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻬُﻤَﺎ ﻗَﺎﻝَ: ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ اﻟﻠَّﻪِ - ﺻَﻠَّﻰ اﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ -( «ﻛَﺘَﺐَ اﻟﻠَّﻪُ ﻣَﻘَﺎﺩِﻳﺮَ اﻟْﺨَﻼَﺋِﻖِ ﻗَﺒْﻞَ ﺃَﻥْ ﻳَﺨْﻠُﻖَ اﻟﺴَّﻤَﺎﻭَاﺕِ ﻭَاﻷَْﺭْﺽَ ﺑِﺨَﻤْﺴِﻴﻦَ ﺃَﻟْﻒَ ﺳَﻨَﺔٍ)ﺭَﻭَاﻩُ ﻣُﺴْﻠِﻢٌ.
আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক মানুষের তাক্বদীর লিপিবদ্ধ করেছেন আসমান-যমীন সৃষ্টির ৫০ হাজার বছর পূর্বে এবং তিনি যার ভাগ্যে যা লিপিবদ্ধ করেছেন তাই ঘটবে।
(ছহীহ মুসলিম, মিশকাত হাদীস নং/৭৯)।
একদিন ছাহাবায়ে কেরাম তাকে কেবল তাক্বদীরের উপর ভরসা করে সকল আমল ছেড়ে দেওয়ার আবেদন জানালে রাসূল (ছাঃ) বললেন, তোমরা সৎকর্ম করে যাও। কেননা যাকে যেজন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, তার পক্ষে সে কাজ সহজসাধ্য হবে। যারা সৌভাগ্যবানদের অন্তর্ভুক্ত, তাদের জন্য সেরূপ আমল এবং যারা দুর্ভাগাদের অন্তর্ভুক্ত তাদের জন্য সেরূপ আমল সহজ করে দেওয়া হয়েছে।
(বুখারী হা/৪৯৪৯)।
তাক্বদীর সম্পূর্ণ গোপনীয় বিষয়।আল্লাহ তা‘আলা স্বয়ং তাক্বদীরের জ্ঞান তাঁর সৃষ্টিকুল থেকে গোপন রেখেছেন।এজন্য রাসূল (ছাঃ) এ প্রসঙ্গে অহেতুক বিতর্কে জড়িয়ে পড়তে নিষেধ করেছেন।
(তিরমিযী,ইবনে মাজাহ,মিশকাত হা/৯৮)
আল্লাহ তাক্বদীরের মন্দকে পরিবর্তন করে দিতে পারেন।তিনি তাক্বদীরের ভাল-মন্দকে ইচ্ছা করলে মিটিয়ে দিতে পারেন এবং বহালও রাখতে পারেন(রা‘দ ৩৯)।
রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘মানুষ পাপকর্মের কারণে রূযী থেকে বঞ্চিত হয়।দো‘আর মাধ্যমে তাক্বদীর পরিবর্তন হয় এবং নেকীর মাধ্যমে বয়স বৃদ্ধি পায়
(নাসাঈ, ইবনু মাজাহ,হা/৪৯২৪; মিশকাত হা/৪৯২৫)।
তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি স্বীয় জীবিকায় প্রশস্ততা ও মৃত্যুতে বিলম্ব কামনা করে, সে যেন আত্মীয়-স্বজনের সাথে উত্তম ব্যবহার করে’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯১৮)।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
ﻭَﺃَﻥ ﻟَّﻴْﺲَ ﻟِﻠْﺈِﻧﺴَﺎﻥِ ﺇِﻟَّﺎ ﻣَﺎ ﺳَﻌَﻰ
বান্দা কেবল সেটাই পায়, যেটার জন্য সে চেষ্টা করে।(সূরা,আন-নাজম ৫৩/৩৯)
(দুই)
ভাগ্য তথা তাকদীর দুই প্রকার। যথা-
(১) তাকদীরে মুবরাম।
(২)তাকদীরে মুআল্লাক।
তাকদীরে মুবরাম কখনোই পরিবর্তন হয় না।
আর তাকদীরে মুআল্লাক বান্দার আমল, দুআ ইত্যাদির মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়।
বিঃদ্রঃ বাকি বান্দাকে আল্লাহ তাআলা স্বাধীনতা দিয়েছেন। সে যা ইচ্ছে করতে পারে। ভাল কাজও করতে পারে। আবার মন্দ কাজও করতে পারে। কিন্তু আল্লাহ যেহেতু সর্ব বিষয়ে জ্ঞাত। পূর্বাপর সব কিছুই তার জ্ঞানে রয়েছে। তাই তিনি জানেন বান্দা কোন কাজটি করবে।
(তিন)
একটি বিষয় খুব ভালভাবে জেনে রাখতে হবে যে, তাকদীর বিষয়ে আলোচনা করা ঠিক নয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কঠোরভাবে তাকদীর তথা ভাগ্য নিয়ে কথা বলতে নিষেধ করেছেন।
তাই এ বিষয়ে প্রশ্ন করা ও আলোচনা থেকে বিরত থাকা উচিত।
عَنْ سَلْمَانَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لاَ يَرُدُّ القَضَاءَ إِلاَّ الدُّعَاءُ، وَلاَ يَزِيدُ فِي العُمْرِ إِلاَّ البِرُّ.
হযরত সালমান রাঃ থেকে বর্ণিত। কেবল দুআই খোদায়ী ফায়সালা পরিবর্তন করাতে পারে। আর নেক কাজই বয়সের বরকত বৃদ্ধি করাতে পারে। [তিরমিজী, হাদীস নং-২১৩৯]
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي مُلَيْكَةَ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّهُ دَخَلَ عَلَى عَائِشَةَ، فَذَكَرَ لَهَا شَيْئًا مِنَ الْقَدَرِ، فَقَالَتْ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «مَنْ تَكَلَّمَ فِي شَيْءٍ مِنَ الْقَدَرِ سُئِلَ عَنْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، وَمَنْ لَمْ يَتَكَلَّمْ فِيهِ لَمْ يُسْأَلْ عَنْهُ»
হযরত ইয়াহইয়া বনি আব্দুল্লাহ বিন আবী মুলাইকা তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি একদা হযরত আয়শা রাঃ এর নিকট গেলেন। তখন তিনি তাকদীর বিষয়ে তাকে কিছু জিজ্ঞাসা করেন, তখন হযরত আয়শা রাঃ বলেন, আমি রাসুল সাঃ কে বলতে শুনেছি যে, যে ব্যক্তি তাকদীর বিষয়ে কথা বলে, কিয়ামতের ময়দানে এ কারণে সে জিজ্ঞাসিত হবে। আর যে এ বিষয়ে আলোচনা না করবে, তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে না। {সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৮৪}
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: خَرَجَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَنَحْنُ نَتَنَازَعُ فِي القَدَرِ فَغَضِبَ حَتَّى احْمَرَّ وَجْهُهُ، حَتَّى كَأَنَّمَا فُقِئَ فِي وَجْنَتَيْهِ الرُّمَّانُ، فَقَالَ: أَبِهَذَا أُمِرْتُمْ أَمْ بِهَذَا أُرْسِلْتُ إِلَيْكُمْ؟ إِنَّمَا هَلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ حِينَ تَنَازَعُوا فِي هَذَا الأَمْرِ، عَزَمْتُ عَلَيْكُمْ أَلاَّ تَتَنَازَعُوا فِيهِ.
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। একদা রাসূল সাঃ আমাদের কাছে আসলেন এমতাবস্থায় যে, আমরা তাকদীর বিষয়ে আলোচনা করছিলাম। তখন রাসূল সাঃ প্রচন্ড রেগে গেলেন।রাগে চেহারা আনারের মত রক্তিম বর্ণ হয়ে গেল। তিনি বললেন, তোমরা এ এসব করতে আদিষ্ট হয়েছো? নাকি আমি এসবের জন্য আবির্ভূত হয়েছি? ইতোপূর্বের লোকজন এ বিষয়ে আলোচনা করে ধ্বংস হয়েছে, আমি তোমাদের দৃঢ়তার সাথে বলছি, তোমরা এ বিষয়ে বিবাদে লিপ্ত হয়ো না। {তিরমিজী, হাদীস নং-২১৩৩} (মুফতী লুৎফুর রহমান ফরায়েজী)
(চার)
কোনটি পরিবর্তনযোগ্য তাকদীর এবং কেনটি অপরিবর্তনীয় তাকদীর? এটা বলা এবং জানাটা অসম্ভব। তবে এতটুকু বলা যায়, মানুষ জড়পদার্থ নয়, বরং আল্লাহ তাকে বাচাই করার যোগ্যতা দিয়েছেন। মানুষ চেষ্টা করার পর যা অর্জিত হবে, সেটা পরিবর্তনযোগ্য তাকদীর।
وفي مرقاۃ المصابیح شرح مشکاۃ المصابیح:
"(وعن أبي هريرة) : رضي الله عنه (قال: «خرج علينا رسول الله - صلى الله عليه وسلم - ونحن نتنازع» ) أي: حال كوننا نتباحث (في القدر) أي: في شأنه فيقول بعضنا: إذا كان الكل بالقدر فلم الثواب والعقاب كما قالت المعتزلة، والآخر يقول: فما الحكمة في تقدير بعض للجنة، وبعض للنار؟ فيقول الآخر: لأن لهم فيه نوع اختيار كسبي. فيقول الآخر: فمن أوجد ذلك الاختيار والكسب وأقدرهم عليه، وما أشبه ذلك. (فغضب حتى احمر وجهه) أي: نهاية الاحمرار (حتى) أي: حتى صار من شدة حمرته، (كأنما فقئ) : بصيغة المفعول؛ أي: شق، أو عصر (في وجنتيه) أي: خديه (حب الرمان) : فهو كناية عن مزيد حمرة وجهه المنبئة عن مزيد غضبه، وإنما غضب؛ لأن القدر سر من أسرار الله تعالى، وطلب سر الله منهي؛ ولأن من يبحث فيه لا يأمن من أن يصير قدريا، أو جبريا، والعباد مأمورون بقبول ما أمرهم الشرع من غير أن يطلبوا سر ما لا يجوز طلب سره، (فقال) : - عليه الصلاة والسلام - (أبهذا) أي: «أبالتنازع في القدر (أمرتم؟» ) : وهمزة الاستفهام للإنكار، وتقديم المجرور لمزيد الاهتمام (أم بهذا أرسلت إليكم؟) : أم منقطعة؛ بمعنى بل، والهمزة وهي للإنكار أيضا ترقيا من الأهون إلى الأغلظ، وإنكار غب إنكار (إنما هلك من كان قبلكم) أي: من الأمم؛ جملة مستأنفة جوابا عما اتجه لهم أن يقولوا: لم تنكر هذا الإنكار البليغ؟ (حين تنازعوا في هذا الأمر) : وهذا يدل على أن غضب الله، وإهلاكهم كان من غير إمهال، ففيه زيادة وعيد، (عزمت) أي: أقسمت أو أوجبت (عليكم) قيل: أصله عزمت بإلقاء اليمين، وإلزامها عليكم ( «عزمت عليكم أن لا تنازعوا» ) : بحذف إحدى التاءين (فيه) : ولا تبحثوا في القدر بعد هذا. قال ابن الملك: أن هذه يمتنع كونها مصدرية وزائدة؛ لأن جواب القسم لا يكون إلا جملة، وأن تزداد مع لا فهي إذا مفسرة كأقسمت أن لا ضربت، وتنازعوا جزم بلا الناهية، ويجوز أن تكون مخففة من الثقيلة؛ لأنها مع اسمها، وخبرها سدت مسد الجملة كذا قاله زين العرب. (رواه الترمذي)."(کتاب الایمان، باب الایمان والقدر، ج: 1،ص: 175، ط: دار الفکر)
وفي شرح العقائد النسفیة:
"للعباد افعال اختيارية يثابون بها ان كانت طاعة ويعاقبون عليها ان كانت معصية لا كمازعمت الجبرية:انه لافعل للعبد اصلا،وان حركاته بمنزلة حركات الجمادات لاقدتة عليهاولاقصد ولااختيار ،وهذا باطل." (الکلام فی خلق الافعال،ص: 375، ط : بشری)
তাকদীর নিয়ে আলোচনা করা নিষেধ।
والقدر سر من أسرار الله تعالى، لم يطلع عليه ملكا مقربا ولا نبيا مرسلا، ولا يجوز الخوض فيه، والبحث عنه بطريق العقل، (مرقاة المفاتيح، كتاب الإيمان، باب الإيمان بالقدر-1/256
الإيمان بالقدر-1/256)
واصل القدر سر فى خلقه لم يطلع على ذلك ملك مقرب ولا نبى مرسل، والتعمق والنظر فى ذلك ذريعة الخذلان وسلم الحرمان، ودرجة الطغيان، فاحذر كل الحذر من ذلك، نظرا وفكرا ووسوسة، فإن الله تعالى طوى علم القدر عن أنامه، ونهاهم عن مرامه كما قال فى كتابه: لا يسئل عما يفعل وهم يسئلون (الانبياء-23) فمن سأل: لم فعل؟ فقد رد حكم كتاب الله، ومن رد حكم كتاب الله تعالى كان من الكافرين….. وقال على رضى الله عنه “القدر سر الله فلا تكشفه، (العقيدة الطحاوية-180)
মোটকথা, তাকদীর বিষয়ে প্রশ্ন করা, আলোচনা করা, গবেষণা করা সম্পূর্ণ হারাম। আমাদের যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সেটিতেই মগ্ন থাকা উচিত। তাকদীর এটি আল্লাহ তাআলার গোপন রহস্য। এ রহস্য সম্পর্কে কোন ফেরেশতা বা কোন নবীও ওয়াকিফহাল নন। তাই এ বিষয়ে আমাদের চিন্তা ফিকির করা নিজের ঈমানের ক্ষতি করা ছাড়া আর কোন ফায়দা নেই। তাই এ বিষয়ে প্রশ্ন করা ও আলোচনা করা থেকে বিরত থাকা প্রতিটি মুমিনের জন্য আবশ্যক।