আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
250 views
in ঈমান ও বিশ্বাস (Faith and Belief) by (26 points)
edited by
আসসালামু আলাইকুম।
শায়েখ,

আমি আমার জীবন নিয়ে দিন দিন আশা হারিয়ে ফেলছি শায়েখ।খাওয়া দাওয়া ঠিকমত করতে পারছি না। এখন বেলা 4:40 pm সকাল থেকে এখন পর্যন্ত সেমন কিছুই খাইনি। খেতে মন বলে না। অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি দিন দিন। সারাটাদিন বিভিন্ন প্রকার আজে বাজে চিন্তা আসতে থাকে। যা আমাকে ভিতর থেকে শেষ করে দিচ্ছে। মানসিক ডাক্তার দেখাইছি তিনি আমাকে ওসিডি আক্রান্ত বলেছেন। বাট কিছুদিন ঔষধ খেয়ে সেরকম কোন ফল পায়নি বিধায় আর ডাক্তারের কাছে যাওয়া হয়নি।

মনে বিভিন্ন রকম শিরিকি চিন্তা চলে আসছে। কম্পিউটার এর সামনে ক্লান্ত হয়ে মাথা টেবিলের সাথে লাগালে মনে হচ্ছে আমি কম্পিটারকে সিজদা করছি। সিজদায় গেলে মনে হচ্ছে আমি কোন মানুষকে বা মূর্তিকে সেজদা করছি। আবার কোন কোন সময় মনে হচ্ছে আল্লাহর পা মানুষের মত এবং আমি সেই পায়ে সেজদা করছি। আমাদের গ্রামে এক ভন্ড পীর আছে। হঠাৎ করে কিছুদিন থেকে মনে হচ্ছে আমি নামাজে তাকে সিজদা করছি। এসব কথা মনে এলে আমার নামাজের প্রতি আর কোন মনযোগ থাকে না। মন বলে যে নামাজ ছেড়ে উঠে বাড়ি চলে আসি। মাঝে মাঝে দেয়ালে মাথা ঠুকি। আমার কি ঈমান আছে শায়েখ? যদি আত্তহত্যা করা পাপ না হত তাহলে আমার জন্য মনে হয় এটি ঠিক ছিল।
আমার এক বন্ধু আছে কিছুদিন যাবত মনে হচ্ছে ও আল্লাহ। এটা আামার বিশ্বাস নয়। তবুও ওর কথা মনে হলে বা ওকে দেখলে আমার এরকম চিন্তা মাথায় চলে আসছে। যা আমার স্বাভাবিক চিন্তাধারার বিপরিত।মাঝে মাঝে আমার এমন বাজে চিন্তা আসলে আমি আমার কপালে বাড়ি মারি এবং আসমানের দিকে তাকিয়ে আল্লাহকে বলি, ও আল্লাহ আমি তোমাকেই আল্লাহ বলে মানি। আমি সেই আল্লাহকে মানি যিনি সপ্তম আসমানের উপরে থাকেন। মহানবি(সাঃ) ও ইবরাহিম (আঃ) যেই আল্লাহকে মানতেন। আমি সেই আল্লাহকেই আল্লাহ বলে মানি। এভাবে আমি আমি আমার মনকে বুঝ দিই।
আশা করি আপনি বুঝেছেন আমি কতটা অসহায় শায়েখ।
আমার ছোট মেয়ের সামনে মজা করার ছলে মাথা নিচু করলে মনে হচ্ছে আমি আমার মেয়েকে সিজদা করছি।তখনি ভয়ে আবার মাথা উঠিয়ে  ফেলছি।
তালাকের ওয়াসওয়াসা আমাকে প্রায় শেষ করে ফেলেছে। সবসময় মনে তালাক, তালাক চলতেই থাকে। মাঝে মাঝে মনে হয় মাথা বাড়ি মেরে ভেঙ্গে ফেলি।  অনেক সময় আমি আনমনা হয়ে হাতের আঙ্গুল দিয়ে ঘসে কিছু লিখতে গেলে মনে হচ্ছে আমি তালাক লিখছিলাম মনে হয়।
কিছু খেতে গেলে,গোছল করার সময়, হাচি আসলে,বা মুখ দিয়ে কোন প্রকার শব্দ হলেই আমার মনে হচ্ছে তালাক শব্দ মুখ দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। শুধুমাএ ঘুম ছাড়া বাকিটা সময় এই তালাক দিলাম, তালাক দিলাম শব্দ আমার জীবনটা অতিষ্ট করে রেখেছে। তার ভিতর ওয়াইফের সাথে ছোটখাটো কোন বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি হলে মনে হচ্ছে তালাক মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল বোধহয়। সবসময় মনে হয় তালাক শব্দ আমার মুখ দিয়ে বের করার জন্য কেউ ফোর্স করছে।  আল্লাহকে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের নোংরা চিন্তা মাথায় আসে। এতটায় নোংরা যা আমি লিখতেও লজ্জা বোধ করছি, আশা করি আপনি বুঝেছেন। যতটা নোংরা চিন্তা আল্লাহকে নিয়ে করা যায় ঠিক ততটায় বা মানুষ যতটা করতে পারে। এগুলা আমাকে খুবই কষ্ট দেই। মনে হয় আমি আল্লাহর সামনে কিভাবে দাড়াবো। কোন খারাপ কিছু দেখলেই আমি সেটার সাথে আল্লাহকে তুলনা করে ফেলি।

যেগুলা আমি স্বাভাবিক অবস্থায় চাই না। তারপরেও সেগুলো আমার মনে চলে আসে। যেমন: কোথাও কাফের বা হিন্দু নাম শুনলে আমার মনে হয় আমার কাফের বা হিন্দু হওয়া ভাল ছিল। এক কথায় আমি খারাপ কছু শুনলে বা দেখলে সেটা আমি নিজের সাথে কল্পনা করে ফেলছি। আমি নিরাশ হয়ে পড়েছি। আমার মেয়েকে আমি খুবিই ভালবাসি তারপরেও মনে হয় আমি আমার মেয়েকে যদি নদিতে ফেলে দিয়ে আসি তাহলে কেমন হবে?

এসব চিন্তা আমাকে শেষ করে দিচ্ছে। বেচে থাকা আমার জন্য মুশকিল হয়ে গেছে। দিন দিন এই সমস্যা আরো বাড়ছে।
এগুলা কেন হচ্ছে শায়েখ?
এভাবে চলতে থাকলে তো আমি মারা যাবো???

1 Answer

0 votes
by (589,200 points)

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
আলহামদুলিল্লাহ!
হযরত আবু হুরায়রা রাযি থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,
ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﺃﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠّﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠّﻢ ﻗﺎﻝ : ( ﻳَﺄْﺗِﻲ ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥُ ﺃَﺣَﺪَﻛُﻢْ ﻓَﻴَﻘُﻮﻝُ ﻣَﻦْ ﺧَﻠَﻖَ ﻛَﺬَﺍ ﻣَﻦْ ﺧَﻠَﻖَ ﻛَﺬَﺍ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﻘُﻮﻝَ ﻣَﻦْ ﺧَﻠَﻖَ ﺭَﺑَّﻚَ ﻓَﺈِﺫَﺍ ﺑَﻠَﻐَﻪُ ﻓَﻠْﻴَﺴْﺘَﻌِﺬْ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ ﻭَﻟْﻴَﻨْﺘَﻪِ ﻭﻓﻲ ﺭﻭﺍﻳﺔ ﻣﺴﻠﻢ : ( ﺁﻣﻨﺖ ﺑﺎﻟﻠﻪ ﻭﺭﺳﻠﻪ)
রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন,শয়তান তোমাদের কারো নিকট উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞেস করে, এটা কে বানিয়েছে?ওটা কে বানিয়েছে?শেষ পর্যন্ত জিজ্ঞেস করে, খোদা-কে বানিয়েছে? যখন এমন অবস্থায় কেউ পতিত হবে,সে যেন আল্লাহর নিকট পানাহ চায়।এবং সাথে সাথে সে যেন উক্ত বিষয়ে চিন্তা করা থেকে বিরত থাকে।এক বর্ণনায় এসেছে সে যেন আ'মানতু বিল্লাহি ওয়া রুসুলিহি পড়ে নেয়।(সহীহ বোখারী-৩১০২,সহীহ মুসলিম-১৩৪)

ইমাম নববী রাহ উক্ত হাদীসের ব্যখ্যায় লিখেন,
ﻣﻌﻨﺎﻩ ﺃﻥ ﺍﻟﺸﻴﻄﺎﻥ ﺇﻧﻤﺎ ﻳﻮﺳﻮﺱ ﻟﻤﻦ ﺃﻳﺲ ﻣﻦ ﺇﻏﻮﺍﺋﻪ ، ﻓﻴﻨﻜﺪ ﻋﻠﻴﻪ ﺑﺎﻟﻮﺳﻮﺳﺔ ؛ ﻟﻌﺠﺰﻩ ﻋﻦ ﺇﻏﻮﺍﺋﻪ ، ﻭﺃﻣﺎ ﺍﻟﻜﺎﻓﺮ : ﻓﺈﻧﻪ ﻳﺄﺗﻴﻪ ﻣﻦ ﺣﻴﺚ ﺷﺎﺀ ، ﻭﻻ ﻳﻘﺘﺼﺮ ﻓﻲ ﺣﻘﻪ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻮﺳﻮﺳﺔ ، ﺑﻞ ﻳﺘﻼﻋﺐ ﺑﻪ ﻛﻴﻒ ﺃﺭﺍﺩ ، ﻓﻌﻠﻰ ﻫﺬﺍ ﻣﻌﻨﻰ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ : ﺳﺒﺐ ﺍﻟﻮﺳﻮﺳﺔ : ﻣﺤﺾ ﺍﻹﻳﻤﺎﻥ ، ﺃﻭ ﺍﻟﻮﺳﻮﺳﺔ ﻋﻼﻣﺔ ﻣﺤﺾ ﺍﻹﻳﻤﺎﻥ ، ﻭﻫﺬﺍ ﺍﻟﻘﻮﻝ ﺍﺧﺘﻴﺎﺭ ﺍﻟﻘﺎﺿﻲ ﻋﻴﺎﺽ ...
অর্থাৎ শয়তান সে ব্যক্তিকেই প্ররোচনা দেয়,যাকে গোমরাহ করতে সে নিরাশ হয়ে যায়।সে কাউকে গোমরাহ করতে নিরাশ হয়ে গেলে সর্বশেষে সে মনে সন্দেহ ঢুকিয়ে দিতে চায়।
আর কাফিরের নিকট শয়তান যেকোনো থেকে যেহেতু আসতে পারে,তাই কাফিরকে প্ররোচনা দেয়ার কোনো প্রয়োজন তার থাকে না।কেননা সে যেকোনো সময় তার ইচ্ছামত কাফিরকে ব্যবহার করতে পারে।সুতরাং হাদীসের অর্থ হলো এই যে,ঈন্তরে ঈমানের দানা থাকার দরুণই শয়তান ঈমানদারদেরকে প্ররোচনা দিয়ে থাকে। এ বিষয়ে এটাই কাযী ঈয়ায রাহ এর পছন্দনীয় ব্যাখ্যা।
(আল-মিনহাজ্ব-২/১৫৪)এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন-https://www.ifatwa.info/1379

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
আপনার জন্য একটিই পরামর্শ যে, আপনি একজন আল্লাহ ওয়ালা বুজর্গ তথা আলেম সাহেবের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করবেন। উনাকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে, দিন রাত উনার সংস্পর্শে থাকবেন। উনি মাদরাসার শিক্ষক হতে পারেন বা মসজিদের ইমাম মুওয়াজ্জিন হতে পারেন।
অথবা তাবলীগে সময় লাগাবেন। যদি ঢাকার আশপাশে হন, তাহলে মুফতি যুবায়ের সাহেব দাঃবাঃ এর সাথে যোগাযোগ করবেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...