আস্সালামু আলাইকুম।
নিম্নের লেখাটুকু পরে উত্তর দেয়ার জন্য অনুরধ করছি। লেখা নেয়া হয়েছেঃ বইঃ ইসলামিক সাইন্সের আলোকে পারেন্টিং।
লেখকঃ আমির জামান,নাজমা জামান
পেজঃ ১০৯-১১০
অনলাইন বই এর লিঙ্কঃ http://www.themessagecanada.com/english/publications/for-parents/
সন্তানদের সঠিক শব্দ শিক্ষা দেয়া।
আমাদের দেশে কুরআন হাদীসের অনেক সঠিক শব্দ পরিবর্তন হয়ে ফার্সি বা উর্দু হয়ে গেছে। যার মাধ্যমে আসলে আল্লাহ বা তার রসুল (সাঃ) যা বলেছেন তা সঠিকভাবে প্রকাশ পায় না। তাই আমাদের সন্তানদের ছোট বয়স থেকেই এই ইসলামী শব্দগুলোর সঠিক শিক্ষা দেয়া উচিত। যাদের সন্তান বড় হয়ে গেছে তাদেরও এই শব্দগুলো সংশোধন করে নেয়া উচিত। যেমন ঃ নামায = সলাত, রোযা = সিয়াম, রমজান = রমাদান, বন্দেগী = ইবাদত, বেহেশত = জান্নাত, দোযখ = জাহান্নাম ইত্যাদি। এছাড়া আরো কিছু শব্দ আমাদের মধ্যে খুব প্রচলিত যার পরিবর্তন প্রয়োজন এবং এই শব্দগুলো ইসলামী পরিভাষা হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়। যেমন, নাবী মুহাম্মাদ (সাঃ) এবং অন্যান্য নাবী ও সাহাবাদের নামের আগে হযরত বলা ঠিক নয়। হযরত শব্দটি আরবী নয় এটি ফার্সি, এর অর্থ মিষ্টার। আল্লাহ তার কুরআনে কোথাও কোন নাবীর নামের আগে এই হযরত শব্দটি ব্যবহার করেননি এবং হাদীসেও কোথাও কোন নাবীর নামের আগে এই হযরত শব্দটি নেই। আসলে হযরত শব্দটি সাধারণত আমাদের এই উপমহাদেশেই ব্যবহার হয়। আবার নাবী মুহাম্মাদ (সাঃ) তার কোন সাহাবীকে হযরত উপাধী দেননি এবং কোন সাহাবী অন্য কোন সাহাবীকেও এই উপাধী দেননি, এছাড়া হাদীসের কোথাও এই শব্দটি নেই। তাই আমাদের কথা-বার্তা ও লেখা-লেখি থেকে এই শব্দটি বাদ দেয়া উচিত। মহান আল্লাহ তার নাবীদের ও সাহাবাদের যে মর্যাদা দিয়েছেন সেটুকুই যথেষ্ট, আমরা আবার তাদের নামের আগে অতিরিক্ত কোন কিছু লাগিয়ে তার মর্যাদা বাড়াতে পারবো না বরং মর্যাদা ক্ষুন্ন হতে পারে। আরো একটি শব্দ আমাদের মধ্যে খুব প্রচলিত যা জানার সাথে সাথে পরিহার করা উচিত আর তা হচ্ছে নাবী মুহাম্মাদ (সাঃ) এর নামের সাথে হুজুর বা হুজুর পাক শব্দ ব্যবহার করা। এই দু’টি শব্দও কুরআন ও হাদীসের পরিভাষা নয়। হুজুর মানে হাজির, অর্থাৎ তিনি বেঁচে আছেন বা আমাদের সামনে উপস্থিত আছেন (নাউযুবিল্লাহ) এই শব্দটি মারাত্মক আপক্তিজনক যার মধ্যে শিরকের গন্ধ রয়েছে। তাই এই শব্দটি আমাদের নিজেদের এবং সন্তানদের ব্যবহার করা ঠিক নয়। এরপর পাক শব্দটি মূলতঃ এসেছে খৃষ্টানদের থেকে, তারা তাদের নাবীর নামের আগে এবং তাদের ধর্ম গ্রন্থের আগে হলি (পাক) শব্দটি ব্যবহার করে থাকে যেমন, হলি প্রফেট, হলি জেসাস, হলি বাইবেল, হলি বুক ইত্যাদি। তাই এই শব্দটিও আমাদের নাবী মুহাম্মাদ (সাঃ) -এর নামের আগে এবং আমাদের আল-কুরআনের আগে ব্যবহার করা ঠিক নয়। এছাড়া আরো একটি শব্দ আমাদের মধ্যে খুব প্রচলিত যেমন মক্কা শরীফ, মদীনা শরীফ, কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ ইত্যাদি। এই শরিফ শব্দটিও হাদীস বা কুরআনের পরিভাষা নয়। তাই এই নামগুলোর আগের শরিফ শব্দটি ব্যবহার করা ঠিক নয়। যেমন সঠিক শব্দগুলো হচ্ছে ঃ আল কুরআন বা কুরআন মাজিদ, মক্কা মুর্কারমা, মদীনা মুনাওয়ারা। আবার কবরকে মাযার বলা বা রসূল (সাঃ) এর কবরকে রওজা বলা ঠিক নয়। মাযারও ফার্সি শব্দ। সঠিক ইসলামী পরিভাষা হচ্ছে যে কোন কবরকে কবর বলা সে নবী হোক বা কোন আউলিয়া হোক বা অন্য কোন বিশিষ্ট ব্যক্তি হোক। হাদীসে আল্লাহর রসূল (সাঃ) যেভাবে যার নামকরণ করে গেছেন সেই শব্দ ব্যবহার করাই উচিত এতেই প্রকৃত সম্মান বজায় থাকবে। আমরা আমাদের নিজেদের থেকে নাম পরিবর্তন করে বা আরো অতিরিক্ত কিছু লাগিয়ে তার সম্মান বাড়াতে পারবো না।