আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
841 views
in ঈমান ও বিশ্বাস (Faith and Belief) by (17 points)
edited by
আসসালামু 'আলাইকুম। একটি বইয়ে পেয়েছি নিচের লেখাটি।এটা কি সঠিক?আমি জানতাম এতদিন যে রাসুল সাঃ এর কথা,কাজ,মৌ্নসম্মতিকে হাদিস বলে।

হাদীস বলতে বুঝান হয়ঃরাসূলুল্লাহ ﷺ এর নামে বর্ণিত বা তাঁর নামে কথিত কথা, কাজ, অনুমােদন ও আকৃতি-
প্রকৃতিগত বর্ণনা।( জালালুদ্দীন সুয়ূতী, তাদরীবুর রাবী ১/২৯৫, মােল্লা আলী কারী, শারহু শারহি নুখবাতিল
ফিকর, পৃ. ১৫৩-১৫৬, মাহমুদ তাহহান, তাইসীরু মুসতালাহিল হাদীস, পৃ. ১৫)

1 Answer

0 votes
by (672,120 points)
edited by
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 


সুরা হাশরের ০৭ নং আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ 

مَاۤ اٰتٰىکُمُ الرَّسُوۡلُ فَخُذُوۡهُ ٭ وَ مَا نَهٰىکُمۡ عَنۡهُ فَانۡتَهُوۡا ۚ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ ؕ اِنَّ اللّٰهَ شَدِیۡدُ الۡعِقَابِ ۘ﴿۷﴾

রাসূল তোমাদেরকে যা দেয়, তা তোমরা গ্ৰহণ কর এবং যা থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করে তা থেকে বিরত থাক, এবং তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর; নিশ্চয় আল্লাহ্ শাস্তি দানে কঠোর।
,
 এ আয়াত দ্বারা সাহাবায়ে কিরাম সবসময়ই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাত যে অবশ্য পালনীয় তা বর্ণনা করতেন। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহুর নিকট এক মহিলা এসে বলল, শুনেছি আপনি উল্কি আঁকা ও পরচুলা ব্যবহার করা থেকে নিষেধ করেন? এটা কি আপনি আল্লাহর কিতাবে পেয়েছেন? নাকি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীসে পেয়েছেন? তিনি বললেন, অবশ্যই হ্যাঁ, আমি সেটা আল্লাহর কিতাব এবং রাসূলের সুন্নাত সব জায়গায়ই পেয়েছি। 

মহিলা বলল, আমি তো আল্লাহর কিতাব ঘেটে শেষ করেছি কিন্তু কোথাও পাইনি। তিনি বললেন, তবে কি তুমি তাতে 
(وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا) 
“রাসূল তোমাদেরকে যা দেয় তা তোমরা গ্ৰহণ কর এবং যা থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করে তা থেকে বিরত থাক” এটা পাওনি? সে বললঃ হ্যাঁ, তারপর ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, পরচুলা ব্যবহারকারিনী, উল্কি অংকনকারীনী, ভ্ৰু ব্লাককারীনীর প্রতি আল্লাহ লা'নত করেছেন। [দেখুন: বুখারী: ৪৮৮৬, ৪৮৮৭, মুসলিম: ২১২৫, আবু দাউদ: ৪১৬৯, তিরমিযী: ২৭৮২, নাসায়ী: ৫০৯৯, ইবনে মাজহ: ১৯৮৯, মুসনাদে আহমাদ: ১/৪৩২]
,
অনুরূপভাবে ইবনে উমর ও ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম বলেন যে, “তারা সাক্ষ্য দিচ্ছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুব্বা, হানতাম, নাকীর ও মুযাফফাত, (এগুলো জাহেলী যুগের বিভিন্নপ্রকার মদ তৈরী করার পাত্ৰ বিশেষ) এ কয়েক প্রকার পাত্ৰ ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই তিলাওয়াত করলেন, 
(وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا) 
[মুসলিম: ১৯৯৭, আবু দাউদ: ৩৬৯০, নাসায়ী: ৫৬৪৩]

★★হাদীস (حَدِيْث) এর শাব্দিক অর্থ: নতুন, প্রাচীন ও পুরাতন এর বিপরীত বিষয়। এ অর্থে যে সব কথা, কাজ ও বস্ত্ত পূর্বে ছিল না, এখন অস্তিত্ব লাভ করেছে  তাই হাদীস। এর আরেক অর্থ হলো: কথা। 

পরিভাষিক অর্থে হাদীস কাকে বলা হয়,সেই সম্পর্কে ইসলামী স্কলারদের মাঝে মতবিরোধ রয়েছে।
কেহ কেহ বলেনঃ হাদীস বলা হয় নবী কারীম (ﷺ) আল্লাহ্র রাসূল হিসেবে যা কিছু বলেছেন, যা কিছু করেছেন এবং যা কিছু বলার বা করার অনুমতি দিয়েছেন অথবা সমর্থন জানিয়েছেন তাকে হাদীস বলা হয়।

হাদীসকে প্রাথমিক পর্যায়ে তিন শ্রেণীতে ভাগ করা যায়:
১। ক্বওলী হাদীস: কোন বিষয়ে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) যা বলেছেন, অর্থাৎ যে হাদীসে তাঁর কোন কথা বিবৃত হয়েছে তাকে ক্বওলী (বাণী সম্পর্কিত) হাদীস বলা হয়।

২। ফে’লী হাদীস: মহানাবী (ﷺ)-এর কাজকর্ম, চরিত্র ও আচার-আচরণের ভেতর দিয়েই ইসলামের যাবতীয় বিধি-বিধান ও রীতিনীতি পরিস্ফুট হয়েছে। অতএব যে হাদীসে তাঁর কোন কাজের বিবরণ উল্লেখিত হয়েছে তাকে ফে’লী (কর্ম সম্পর্কিত) হাদীস বলা হয়।

৩। তাকরীরী হাদীস: সাহাবীগণের যে সব কথা বা কাজ নাবী কারীম (ﷺ)-এর অনুমোদন ও সমর্থন প্রাপ্ত হয়েছে, সে ধরনের কোন কথা বা কাজের বিবরণ হতেও শরীয়াতের দৃষ্টিভঙ্গি জানা যায়। অতএব যে হাদীসে এ ধরনের কোন ঘটনার বা কাজের উল্লেখ পাওয়া যায় তাকে তাকরীরী (সমর্থন মূলক) হাদীস বলে।
,
কেহ কেহ বলেছেনঃ 'হাদীস (حديث) এমন একটি বিষয় যা রাসূলুাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী, কর্ম ও নীরবতা এবং সাহাবায়ে কেরাম, তাবিঈনদের কথা, কর্ম ও মৌন সম্মতিকে বুঝায়।'
,
আল্লামা হাফেজ সাখাবী (রহ) বলেন-
والحديث لغة ضد القد يم واصطلا حامااضيف الى النبى ﷺ قولا له اوفعلا له اوتقرير اوصفة حتى الحركات والسكنات فى اليقظة والمنام -
অর্থ : আভিধানিক অর্থে হাদীস শব্দটি কাদীম তথা অবিনশ্বরের বিপরীত আর পরিভাষায় বলা হয় রাসূলুাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দিকে সম্বন্ধযুক্ত। চাই তার বক্তব্য হোক বা কর্ম বা অনুমোদন অথবা গুণ এমন কি ঘুমন্ত অবস্থায় বা জাগ্রত অবস্থায় তাঁর গতি ও স্থির সবই হাদীস।

বুখারী শরীফের বিশিষ্ট ব্যাখ্যাগ্রন্থ عمدة القارى এর মধ্যে হাদীস সম্বন্ধে রয়েছে:
علم الحديث هو علم يعرف به اقوال النبى ﷺ وافعاله واخواله –
অর্থ : ইলমে হাদীস এমন বিশেষ জ্ঞান যার সাহায্যে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথা, কাজ ও অবস্থা জানতে পারা যায়।

হাদীসের প্রসিদ্ধতম সংজ্ঞা হল,
اقوال النبى صلى الله عليه وسلم وأفعاله وأحواله (فتح الملهم-1/6
রাসূল সাঃ এর কথা,কর্ম এবং অবস্থাকে বলা হয় হাদীস। {ফাতহুল মুলহিম-১/৬}

আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহঃ লিখেন-
وَقَالَ الطِّيبِيُّ: الْحَدِيثُ أَعَمُّ مِنْ أَنْ يَكُونَ قَوْلَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَالصَّحَابِيِّ وَالتَّابِعِيِّ وَفِعْلَهُمْ وَتَقْرِيرَهُمْ.

আল্লামা তীবী রহঃ বলেন- হাদীস এটি আম শব্দ। এর মাঝে রাসূল সাঃ এর কথা এবং সাহাবী এবং তাবেয়ীদের কথা এবং তাদের কর্ম ও তাকরীর তথা কোন কিছু দেখে চুপ থাকা বিষয়ও শামিল। {তাদরীবুর রাবী-৬}

তাহলে আল্লামা তীবী রহঃ এর মতে হাদীস হল ৯টি বস্তুর সমন্বয়। তথা-
১- রাসূল সাঃ এর কথা।
২- রাসূল সাঃ এর কর্ম।
৩- রাসূল সাঃ এর তাকরীর।
৪- সাহাবী রাঃ এর কথা।
৫- সাহাবী রাঃ এর কর্ম।
৬- সাহাবী রাঃ এর তাকরীর।
৭- তাবেয়ীগণ রহঃ এর কথা।
৮- তাবেয়ীগণ রহঃ এর কর্ম।
৯- তাবেয়ীগণ রহঃ এর তাকরীর।
 
আল্লামা তীবী রহঃ এর মত ৯ প্রকারকেই হাদীস বলেছেন হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ। দেখুন-
وَقَالَ شَيْخُ الْإِسْلَامِ فِي شَرْحِ النُّخْبَةِ: الْخَبَرُ عِنْدَ عُلَمَاءِ الْفَنِّ مُرَادِفٌ لِلْحَدِيثِ، فَيُطْلَقَانِ عَلَى الْمَرْفُوعِ وَعَلَى الْمَوْقُوفِ وَالْمَقْطُوعِ.
{তাদরীবুর রাবী-৬}

হাদীসের প্রকারভেদ
আসলে এ বিষয়টি অনেক দীর্ঘ বিষয়। হাদীসের অনেক প্রকার রয়েছে। যেমন কয়েকটি প্রকার নিচে উদ্ধৃত করা হল। বাকি বিস্তারিত দেখতে পড়তে হবে উলুমুল হাদীসের গ্রন্থাবলী।
আমাদের কাছে পৌছা হিসেবে হাদীস তিন প্রকার। যথা-
১-খবরে মুতাওয়াতির।যা বিশাল জনগোষ্ঠি বর্ণনা করেছেন, যা মিথ্যা হওয়া স্বাভাবিকভাবে অসম্ভব।
২- খবরে ওয়াহিদ।যা শুধু একজন বর্ণনা করেন।
খবরে মুতাওয়াতির আবার দুই প্রকার।
১- মুতাওয়াতিরে লফজী তথা শব্দ ও অর্থ হিসেবে মুতাওয়াতির।
২- মুতাওয়াতিরে মানুয়ী তথা যা অর্থ হিসেবে মুতাওয়াতির শব্দ হিসেবে নয়।
খবরে ওয়াহিদ আবার তিন প্রকার। যথা-
১- মাশহুর।প্রতিটি স্তরেই যা তিনজন বা তার চেয়ে বেশি ব্যক্তি করে বর্ণনা করেছেন কিন্তু তাওয়াতুরের পর্যায়ে পৌছেনি।
২- গরীব।যাতে একজন বর্ণনাকারী থাকে।
৩- আজীজ। যার প্রতিটি স্তরে দুইজনের থেকে কম বর্ণনাকারী নেই।
,
খবরে ওয়াহিদের মাশহুর, আজীজ এবং গরীব শক্তিশালী ও দুর্বল হওয়া হিসেবে আবার দুই প্রকার।
যথা-
১- মাকবুল।
২- মারদূদ।
মাকবুল হাদীস স্তর হিসেবে আবার দুই প্রকার। যথা-
১-সহীহ।
২-হাসান।
সহীহ হাদীস আবার দুই প্রকার। যথা-
১-সহীহ লিজাতিহী।
২-সহীহ লিগাইরিহী।
হাসান হাদীসও দুই প্রকার। যথা-
১-হাসান লিজাতিহী।
২-হাসান লিগাইরিহী।
,
মাকবুল হাদীস আবার আমল হিসেবে দুই প্রকার। যথা-
১-মামুলেবিহী তথা যার উপর আমল জারি আছে।
২- গায়রে মামুলিবিহী তথা যার উপর আমল জারি নেই।
এরকম আরো অনেক প্রকার রয়েছে। যা উলুমুল হাদীসের গ্রন্থাবলীতে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
যেমন
১-মুকাদ্দিমায়ে ফাতহুল মুলহিম।
২-মুকাদ্দিমায়ে ইবনুস সালাহ।
৩-তাদরীবুর রাবী।
৪-তাইসীরু মুসতালাহিল হাদীস।
৫-মুকাদ্দিমায়ে মিশকাত।
৬- শরহু নুখবাতিল ফিকার।ইত্যাদি।
 
সাহাবা রাঃ ও তাবেয়ীগণ রাঃ এর বক্তব্যের হুকুম কি?
আমরা ইতোপূর্বের হাদীসের সংজ্ঞা দ্বারাই বুঝে গেছি যে, অনেক বিজ্ঞ মুহাদ্দিসীনদের মতে সাহাবা রাঃ এবং তাবেয়ীগণ রাঃ এর বক্তব্যও হাদীস বলেই ধর্তব্য।
দেখুন, তাদরীবুর রাবী, শরহু নুখবাতিল ফিকার,মুকাদ্দিমায়ে মিশকাত।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...