আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
156 views
in সালাত(Prayer) by (30 points)
১. আমি নামাজ পড়ার সময় বিভিন্ন দুনিয়াবি দোয়া করে ফেলি যা প্রায়ই আমার নিয়ন্ত্রনের বাইরে থাকে। আমি মনে মনে নামাজ পড়ি, আবার একই সাথে এইসব দোয়া করে ফেলি। আর এইসব দোয়া করলে পুরো বাংলা উচ্চারন আসে। (আমার নামাজ এবং এইসব দুনিয়াবি দেয়া সবই হয় মনে মনে)

২.এই সমস্যা আরও খারাপ। বিগত এক বছরের উপরে হবে, আমি প্রায়ই নিজের মনের অজান্তেই হুট করে আল্লাহ পাক ও ইসলাম কে নিয়ে, নবি সাঃ কে নিয়ে বাজে কথা বলতে শুরু করি। পরে মাফ চেয়ে নিই। আবার, নিজ ইচ্ছায় ও এমনটা করি, কিন্তু খুব কম।
নামাজ পড়ার সময় যখন সুরা পড়ি, কিংবা বসে আত্তাহিয়াতু, এর পরে যে আরও দুটা পড়ি, তখন হঠাত করে এমন হয়, রুকু সিজাদাহ, সালাম ফেরানো যে কোন অবস্থায় এমন হয়। তখন মনে মনে নামাজ পড়ার সময় নাউজুবিল্লাহ পড়ে ফেলি। এভাবে নামাজ পড়লে কি নামাজ হবে??

1 Answer

0 votes
by (61,230 points)
edited by

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

হযরত আবু হুরায়রা রাযি থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,

ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﺃﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠّﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠّﻢ ﻗﺎﻝ : ( ﻳَﺄْﺗِﻲ ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥُ ﺃَﺣَﺪَﻛُﻢْ ﻓَﻴَﻘُﻮﻝُ ﻣَﻦْ ﺧَﻠَﻖَ ﻛَﺬَﺍ ﻣَﻦْ ﺧَﻠَﻖَ ﻛَﺬَﺍ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﻘُﻮﻝَ ﻣَﻦْ ﺧَﻠَﻖَ ﺭَﺑَّﻚَ ﻓَﺈِﺫَﺍ ﺑَﻠَﻐَﻪُ ﻓَﻠْﻴَﺴْﺘَﻌِﺬْ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ ﻭَﻟْﻴَﻨْﺘَﻪِ ﻭﻓﻲ ﺭﻭﺍﻳﺔ ﻣﺴﻠﻢ : ( ﺁﻣﻨﺖ ﺑﺎﻟﻠﻪ ﻭﺭﺳﻠﻪ)

রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন,শয়তান তোমাদের কারো নিকট উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞেস করে, এটা কে বানিয়েছে?ওটা কে বানিয়েছে?শেষ পর্যন্ত জিজ্ঞেস করে, খোদা-কে বানিয়েছে? যখন এমন অবস্থায় কেউ পতিত হবে,সে যেন আল্লাহর নিকট পানাহ চায়।এবং সাথে সাথে সে যেন উক্ত বিষয়ে চিন্তা করা থেকে বিরত থাকে।এক বর্ণনায় এসেছে সে যেন আ'মানতু বিল্লাহি ওয়া রুসুলিহি পড়ে নেয়।(সহীহ বোখারী-৩১০২,সহীহ মুসলিম-১৩৪)

হযরত আবু হুরায়রা রাযি থেকে অন্য এক বর্ণনায় এসেছে,

ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﻗَﺎﻝَ ( ﺟَﺎﺀَ ﻧَﺎﺱٌ ﻣِﻦْ ﺃَﺻْﺤَﺎﺏِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓَﺴَﺄَﻟُﻮﻩُ ﺇِﻧَّﺎ ﻧَﺠِﺪُ ﻓِﻲ ﺃَﻧْﻔُﺴِﻨَﺎ ﻣَﺎ ﻳَﺘَﻌَﺎﻇَﻢُ ﺃَﺣَﺪُﻧَﺎ ﺃَﻥْ ﻳَﺘَﻜَﻠَّﻢَ ﺑِﻪِ ، ﻗَﺎﻝَ : ﻭَﻗَﺪْ ﻭَﺟَﺪْﺗُﻤُﻮﻩُ ؟ ﻗَﺎﻟُﻮﺍ : ﻧَﻌَﻢْ ، ﻗَﺎﻝَ : ﺫَﺍﻙَ ﺻَﺮِﻳﺢُ ﺍﻟْﺈِﻳﻤَﺎﻥِ )

কিছু সংখ্যক সাহাবায়ে কেরাম রাসূলুল্লাহ সাঃ এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করলেন,আমাদের অন্তরে অনেক সময় মন্দ চিন্তাভাবনা চলে আসে।রাসূলুল্লাহ সাঃ বললেন, এটা কি সম্ভব? তারা বলল, জ্বী হ্যা। রাসূলুল্লাহ সাঃ বললেন, মাঝেমধ্যে এমন সন্দেহ মনে উঁকি দেয়াই হল, কামিল ঈমানের পরিচায়ক। (সহীহ মুসলিম-১৩২)

ইমাম নববী রাহ উক্ত হাদীসের ব্যখ্যায় লিখেন,

ﻣﻌﻨﺎﻩ ﺃﻥ ﺍﻟﺸﻴﻄﺎﻥ ﺇﻧﻤﺎ ﻳﻮﺳﻮﺱ ﻟﻤﻦ ﺃﻳﺲ ﻣﻦ ﺇﻏﻮﺍﺋﻪ ، ﻓﻴﻨﻜﺪ ﻋﻠﻴﻪ ﺑﺎﻟﻮﺳﻮﺳﺔ ؛ ﻟﻌﺠﺰﻩ ﻋﻦ ﺇﻏﻮﺍﺋﻪ ، ﻭﺃﻣﺎ ﺍﻟﻜﺎﻓﺮ : ﻓﺈﻧﻪ ﻳﺄﺗﻴﻪ ﻣﻦ ﺣﻴﺚ ﺷﺎﺀ ، ﻭﻻ ﻳﻘﺘﺼﺮ ﻓﻲ ﺣﻘﻪ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻮﺳﻮﺳﺔ ، ﺑﻞ ﻳﺘﻼﻋﺐ ﺑﻪ ﻛﻴﻒ ﺃﺭﺍﺩ ، ﻓﻌﻠﻰ ﻫﺬﺍ ﻣﻌﻨﻰ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ : ﺳﺒﺐ ﺍﻟﻮﺳﻮﺳﺔ : ﻣﺤﺾ ﺍﻹﻳﻤﺎﻥ ، ﺃﻭ ﺍﻟﻮﺳﻮﺳﺔ ﻋﻼﻣﺔ ﻣﺤﺾ ﺍﻹﻳﻤﺎﻥ ، ﻭﻫﺬﺍ ﺍﻟﻘﻮﻝ ﺍﺧﺘﻴﺎﺭ ﺍﻟﻘﺎﺿﻲ ﻋﻴﺎﺽ ...

অর্থাৎ শয়তান সে ব্যক্তিকেই প্ররোচনা দেয়, যাকে গোমরাহ করতে সে নিরাশ হয়ে যায়। সে কাউকে গোমরাহ করতে নিরাশ হয়ে গেলে সর্বশেষে সে মনে সন্দেহ ঢুকিয়ে দিতে চায়।

আর কাফিরের নিকট শয়তান যেকোনো থেকে যেহেতু আসতে পারে,তাই কাফিরকে প্ররোচনা দেয়ার কোনো প্রয়োজন তার থাকে না।কেননা সে যেকোনো সময় তার ইচ্ছামত কাফিরকে ব্যবহার করতে পারে।সুতরাং হাদীসের অর্থ হলো এই যে,ঈন্তরে ঈমানের দানা থাকার দরুণই শয়তান ঈমানদারদেরকে প্ররোচনা দিয়ে থাকে। এ বিষয়ে এটাই কাযী ঈয়ায রাহ এর পছন্দনীয় ব্যাখ্যা। (আল-মিনহাজ্ব-২/১৫৪)

এরকম শয়তানি প্ররোচনা থেকে বাচতে হলে, রাসূলুল্লাহ সাঃ এর বিধিনিষেধকে আন্তরিকতার সাথে গ্রহণ করতে হবে।সাথে সাথে ঐ চিন্তা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে হবে।এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা ভিক্ষা চাওয়া সহ আল্লাহর যিকিরে নিজেকে ব্যস্ত করে রাখতে পারলেই তবে এরকম শয়তানী ওয়াসওয়াসা থেকে নিজেবে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব।(আল-মিনহাজ-২/১৫৫-১৫৬)

ওয়াসওয়াসা থেকে বাঁচার আমলঃ

ইবনে হাজার আল-হাইছামি তাঁর ‘আল-ফাতাওয়া আল-ফিকহিয়্যা আল-কুবরা’ গ্রন্থে (১/১৪৯) এসেছে, তাঁকে এর প্রতিকার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন,

له دواء نافع وهو الإعراض عنها جملة كافية ، وإن كان في النفس من التردد ما كان – فإنه متى لم يلتفت لذلك لم يثبت بل يذهب بعد زمن قليل كما جرب ذلك الموفقون , وأما من أصغى إليها وعمل بقضيتها فإنها لا تزال تزداد به حتى تُخرجه إلى حيز المجانين بل وأقبح منهم

অর্থাৎ, এর ঔষধ একটাই সেটা হচ্ছে ওয়াসওয়াসাকে সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে যাওয়া; এমনকি মনের মধ্যে কোন দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকা সত্ত্বেও। কেননা কেউ যদি সেটাকে ভ্রুক্ষেপ না করে তাহলে সেটা স্থির হবে না। কিছু সময় পর চলে যাবে; যেমনটি তাওফিকপ্রাপ্ত লোকেরা যাচাই করে পেয়েছেন। আর যে ব্যক্তি ওয়াসওয়াসাকে পাত্তা দিবে এবং সে অনুযায়ী কাজ করবে সে ব্যক্তির ওয়াসওয়াসা বাড়তেই থাকবে; এক পর্যায়ে তাকে পাগলের কাতারে নিয়ে পৌঁছাবে কিংবা পাগলের চেয়েও নিকৃষ্ট পর্যায়ে পৌঁছাবে।

এর সর্বোত্তম প্রতিকার হচ্ছে বেশি বেশি আল্লাহর যিকির করা, لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللهِ পড়া, আউযুবিল্লাহ্ পড়া তথা বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা।

রাসূলুল্লাহ বলেছেন,

اَلْحَمْدُ لِلهِ الَّذِىْ رَدَّ اَمْرَهُ عَلَى الْوَسْوَسَة

‘সমস্ত প্রশংসা ওই আল্লাহর যিনি শয়তানের বিষয়টি কুমন্ত্রণা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রেখেছেন।’ (নাসাঈ)

ইবনে হাজার আল-হাইতামি রহ. বলেন,

له دواء نافع وهو الإعراض عنها جملة كافية ، وإن كان في النفس من التردد ما كان

‘ওয়াসওয়াসার কার্যকরী চিকিৎসা হল, একে সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে যাওয়া; এমনকি মনের মধ্যে কোন দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকা সত্ত্বেও।’ (আল-ফাতাওয়া আল-ফিকহিয়্যা আল-কুবরা ১/১৪৯)

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

১. মুখে উচ্চারণ করে নামাজে বাংলায় কিছু বললে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে। পরবর্তীতে পুনরায় উক্ত নামাজ আদায় করতে হবে যদি তা ওয়াক্তের মধ্যে হয় অন্যথায় কাযা আদায় করতে হবে।

আর মুখে উচ্চারণ না করে মনে মনে বললে নামাজ ফাসেদ হবে না। তবে নামাজরত অবস্থায় ইচ্ছাকৃত দুনিয়াবি চিন্তা করা মোটেও উচিত নয়।

২. প্রশ্নেল্লিখিত সমস্যাগুলি হওয়ার মূল কারণ হলো ওয়াসওয়াসা । প্রশ্নেল্লিখিত ছুরতে তালাক হবে না। ওয়াসওয়াসা আসে শয়তানের পক্ষ থেকে। সে চায় মানুষকে পেরেশান ও অস্থির করে রাখতে যাতে সে আল্লাহ তায়ার ইবাদতে মাশগুল থাকতে না পারে। বিধায় এমন পরিস্থিতিতে আপনি হতাশ হবেন না। বরং ওয়াসওয়াসা থেকে বাঁচতে উপরে উল্লেখিত আমলগুলি করুন এবং মানসিক রোগের কোন ভালো চিকিৎসকের নিকট চিকিৎসা করুন।

কারণ, ওয়াসওয়াসাকে মেডিক্যালের ভাষায় অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসওর্ডার (OCD) বলে, যা সাধারণত ব্রেইনের সেরোটোনিন নামক একটা নিউরোকেমিক্যালের হ্রাস-বৃদ্ধির জন্য হয়ে থাকে। অনেক দিনের শয়তানি ওয়াসওয়াসা এ রোগে পরিনত হয় এবং আক্রান্ত রোগীকে মানসিকভাবে অনেক কষ্ট দিতে থাকে। ইনশাআল্লাহ এ রোগ ৩/৪ মাস মেডিসিন ও কাউন্সিলিং এ ভাল হয়, সাথে আল্লাহর কাছে এ রোগ মুক্তির দোয়া করতে 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 137 views
...