জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم
মহান আল্লাহ তাআলার কালাম তিলাওয়াতের বিশেষ নিয়ম ও আদব রয়েছে।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
وَرَتِّلِ الْقُرْآنَ تَرْتِيلًا
কুরআন তিলাওয়াত কর ধীরস্থির ভাবে, স্পষ্টরূপে। -সূরা মুযযাম্মিল (৭৩) : ৪
হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে-
زينوا القرآن بأصواتكم
সুন্দর সূরের মাধ্যমে কুরআনকে (এর তিলাওয়াতকে) সৌন্দর্যমণ্ডিত কর। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৪৬৮
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাযি থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লম ইরশাদ করেছেন, (কিয়ামতের দিন) কুরআনের তিলাওয়াতকারী বা হাফেজকে বলা হবে-
اقْرَأْ، وَارْتَقِ، وَرَتِّلْ كَمَا كُنْتَ تُرَتِّلُ فِي الدُّنْيَا، فَإِنَّ مَنْزِلَكَ عِنْدَ آخِرِ آيَةٍ تَقْرَؤُهَا.
তিলাওয়াত করতে থাক এবং উপরে উঠতে থাক। ধীরে ধীরে তিলাওয়াত কর, যেভাবে ধীরে ধীরে দুনিয়াতে তিলাওয়াত করতে। তোমার অবস্থান হবে সর্বশেষ আয়াতের স্থলে যা তুমি তিলাওয়াত করতে। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৪৬৪; জামে তিরমিযী, হাদীস ২৯১৪
এই ধীরস্থির বা তারতীলের সাথে তিলাওয়াত কেমন হবে তা প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেখিয়ে গেছেন, শিখিয়ে গেছেন। হযরত উম্মে সালামাহ রাযি.-কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামায ও তিলাওয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, তাঁর তিলাওয়াত ছিল-
قِرَاءَةً مُفَسَّرَةً حَرْفًا حَرْفًا
প্রতিটি হরফ পৃথক পৃথকভাবে উচ্চারিত। -জামে তিরমিযী, হাদীস ২৯২৩
অর্থাৎ কোনো জড়তা, অস্পষ্টতা ও তাড়াহুড়া ছিল না।
হযরত আনাস রাযি.-কে নবীজীর তিলাওয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, তাঁর তিলাওয়াত ছিল (মদের স্থানে) টেনে পড়া। এর পর তিনি بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ পাঠ করে শোনান এবং اللهِ , الرَّحْمٰنِ ও الرَّحِيمِ এ সব জায়গার মদগুলো টেনে উচ্চারণ করে দেখান। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৫০৪৬
সাহাবায়ে কেরামের তিলাওয়াতের বৈশিষ্ট্যও এমনই ছিল। ধীরস্থিরভাবে তিলাওয়াত করতেন তাঁরা। নিজেরা করতেন, অন্যদেরকেও তাগিদ দিতেন।
قَالَ عَلْقَمَةُ : صَلَّيْتُ مَعَ ابْنِ مَسْعُودٍ مِنْ أَوَّلِ النَّهَارِ إِلَى انْصِرَافِهِ مِنَ الْفَجْرِ فَكَانَ يُرَتِّلُ.
হযরত আলকামাহ রাহ. বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর সাথে নামায পড়লাম দিনের শুরু থেকে ফজর পর্যন্ত। তিনি তিলাওয়াত করছিলেন তারতীলের সাথে, ধীরস্থিরভাবে। -মুখতাছারু কিয়ামিল লাইল পৃ. ১৩১
وَقَرَأَ عَلْقَمَةُ عَلَى عَبْدِ اللَّهِ وَكَانَ حَسَنَ الصَّوْتِ. فَقَالَ: رَتِّلْ فِدَاكَ أَبِي وَأُمِّي. فَإِنَّهُ زَيْنُ الْقُرْآنِ
আলকামাহ রাহ. একবার হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি.-কে কুরআন তিলাওয়াত করে শোনাচ্ছিলেন। তিনি সুমধুর কণ্ঠের অধিকারী ছিলেন। (তো তিনি কিছুটা দ্রুত পড়ে যাচ্ছিলেন) তখন ইবনে মাসউদ রাযি. বললেন, আমার বাবা-মা তোমার উপর কুরবান হোক! ধীরস্থিরভাবে তারতীলের সাথে তিলাওয়াত কর। এটা কুরআনের (তিলাওয়াতের) ভূষণ। -মুখতাসারু কিয়ামিল লাইল, পৃ. ১৩১
হযরত ইবনে মাসউদ রা.কে এক ব্যক্তি বলল,
إِنِّي لَأَقْرَأُ الْمُفَصَّلَ فِي رَكْعَةٍ، فَقَالَ عَبْدُ اللهِ: هَذًّا كَهَذِّ الشِّعْرِ، إِنَّ أَقْوَامًا يَقْرَءُونَ الْقُرْآنَ لَا يُجَاوِزُ تَرَاقِيَهُمْ، وَلَكِنْ إِذَا وَقَعَ فِي الْقَلْبِ فَرَسَخَ فِيهِ نَفَعَ
আমি এক রাকাতেই মুফাস্সালের [সূরা ক্বাফ থেকে সূরা নাস পর্যন্ত। (ফাতহুল বারী ২/২৫৮)] সব সূরা পড়ে নিই। হযরত ইবনে মাসউদ রাযি তখন বললেন, সে তো কবিতা আওড়ানোর মত পাঠ করা।
অনেক মানুষ কুরআন তিলাওয়াত করে, কিন্তু তা তাদের কণ্ঠনালির নিচেও যায় না। অথচ কুরআন তিলাওয়াত তখনই (পরিপূর্ণ) উপকারী হয় যখন তা অন্তরে গিয়ে বসে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৮২২
وَعَنِ ابْنِ أَبِي مُلَيْكَةَ: سَافَرْتُ مَعَ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ مِنْ مَكَّةَ إِلَى الْمَدِينَةِ وَهُمْ يَسِيرُونَ إِلَيْهَا وَيَنْزِلُونَ بِاللَّيْلِ، فَكَانَ ابْنُ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ يَقُومُ نِصْفَ اللَّيْلِ فَيَقْرَأُ الْقُرْآنَ حَرْفًا حَرْفًا، ثُمَّ حَكَى قِرَاءَتَهُ: ثُمَّ يَبْكِي حَتَّى تَسْمَعَ لَهُ نَشِيجًا.
হযরত ইবনে আবী মুলাইকা রাহ. বলেন, এক সফরে মক্কা থেকে মদীনায় যাওয়ার পথে আমি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.-এর সাথে ছিলাম। দিনভর আমরা পথ চলতাম আর রাতে কোথাও তাবু ফেলে বিশ্রাম করতাম। হযরত ইবনে আব্বাস রাযি. মাঝরাতে নামাযে দাঁড়িয়ে যেতেন এবং খুব ধীরে ধীরে থেমে থেমে কুরআন তিলাওয়াত করতেন। এক একটি শব্দ স্পষ্ট ও পৃথক পৃথক শোনা যেত। আর নামাযে তিনি ডুকরে ডুকরে কাঁদতেন। এমনকি তাঁর হেঁচকির আওয়ায পর্যন্ত শোনা যেত। -মুখতাসারু কিয়ামিল লাইল পৃ. ১৩১
আরেক বর্ণনায় হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি.তিনি বলেন-
لَا تَهُذُّوا الْقُرْآنَ كَهَذِّ الشِّعْرِ، وَلَا تَنْثُرُوا كَنَثْرِ الدَّقَلِ، وَقِفُوا عِنْدَ عَجَائِبِهِ وَحَرِّكُوا بِهِ الْقُلُوبَ، وَلَا يَكُونُ هَمُّ أَحَدِكُمْ مِنَ السُّورَةِ آخِرَهَا.
তোমরা কবিতা পাঠের মত গড়গড় করে দ্রুত কালামে পাক তিলাওয়াত করো না এবং নষ্ট খেজুর যেমন ছুড়ে ছুড়ে ফেলা হয় তেমন করে পড়ো না বরং এর বিস্ময়কর বাণী ও বক্তব্যগুলোতে এসে থেমে যাও, হৃদয়কে নাড়া দাও। এ ভাবনা যেন না থাকে যে, এ সূরা কখন শেষ হবে! -মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদীস ৮৮২৫
,
★★সুতরাং কুরআন ধিরে ধিরে সুর দিয়ে সুন্দর করে তেলাওয়াত করার চেষ্টা করতে হবে।
,
তবে গানের সুরে তেলাওয়াত করা যাবেনা,এটি নাজায়েজ।
,
প্রশ্নে উল্লেখিত কারীর তেলাওয়াত আমি যাহা শুনেছি,তাতে আমি ভুল পাইনি, মাশাআল্লাহ