আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
99 views
in ঈমান ও বিশ্বাস (Faith and Belief) by (54 points)
edited by
আসসালামুআলাইকুম। শায়েখ কালকে   আমি আপনাকে একটি প্রশ্ন করেছিলাম। তা হল-

    আমি একদিন মনে মনে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে চিন্তা   করতেছিলাম।   তখন আমার মনে হয় বা আমার মনের মধ্যে চিন্তা হয়। মানুষ তার মনের নিয়ন্ত্রণকারী।     এই কথা আমার মনে হওয়ার পর বা মনে মনে বলার পর     আমার মনে হয় যে, আল্লাহ সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন। তখন আমি ইস্তিগফার  পড়ি।   তারপর আমার মনে হয় যে, আমরা প্রব্রিত্তির অনুসরণ করে   পাপ করি।      আল্লাহ তো মানুষকে বিবেক বুদ্ধি দিয়েছে    সে ভালো মন্দ বোঝে।  আল্লাহ যদি মনের নিয়ন্ত্রণ কারী     হয় তাহলে তো মানুষ পাপ করলে তার কোন দোষ থাকবে না।  (আমি ইউটিউবে একটি ভিডিও তে দেখেছিলাম যে,    আল্লাহর হুকুম ছাড়া গাছের এক্টি পাতাও নড়ে না এই কথা বলা কুফরি। কারন আল্লাহ তো পাপ করতে নিষেধ করেছেন। বলতে হবে আল্লাহর বিনা অনুমতিতে গাছের এক্টি পাতাও নড়ে না)।  তখন উপোরক্ত অই ভিডিওর কথা আমার মনে হয় এবং আমি আবার ইস্তিগফার পড়ি এই কথা মনে করে যে, আমার ওভাবে     মনে মনে বলা বা মনে করা ভুল হয়েছে। আমার এভাবে মনে মনে ভাবার কারনে বা মনে মনে বলার কারনে কি আমার ঈমানের কোন সমস্যা হবে?  আমার বিবাহের কোন সমস্যা হবে?
এর উত্তরে আপনি বলেছিলেন যে ঈমানের কোন সমস্যা হবে না। বিবাহের কোন সমস্যা হবে না।
এখন আমার প্রশ্ন হল-

১.আমি উপরে যে প্রশ্নের বিবরন দিলাম  সেখানে কোন কথাটা সঠিক।

২.এখনও আমার মনে সন্দেহ হচ্ছে যে ঈমানের কোন সমস্যা হল নাকি এই রকম আমার মনে হওয়ার কারনে।

৩.উপরের প্রশ্নের বিবরন মতে কোন কথাটা সঠিক আমি যদি না জানি বা না ঠিক  করতে পারি  তাহলে কি আমার ঈমানের কোন সমস্যা হবে? কারন আমার অই কথা গুলো মনে হওয়ার পর আমি খুব চিন্তিত ছিলাম আমার কথায় কোন ভুল হল নাকি বা কোন কথাটা সঠিক হবে এজন্য।

৪.ছেলেদের কি লাল জুতা বা ঘড়ি পরা যাবে। এটা কি পোশাকের মধ্যে পরে?


৫. নামাজে সুরা ফাতিহা পরার সময় আর রহমান এর ম তে এক আলিফ না টানলে কি লাহনে জলি হবে?
৬. নামাজে বিসমিল্লাহ পরার সময় আর রহমান এর ম তে এক আলিফ না টানলে কি লাহনে জলি হবে?

1 Answer

0 votes
by (561,180 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم


(০১)
সব কিছুই আল্লাহর ইচ্ছাতেই হয়।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَمَا تَشَاءُونَ إِلَّا أَن يَشَاءَ اللَّهُ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا

‘‘তোমরা আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছার বাইরে কিছুই ইচ্ছা করতে পারো না। আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও সুবিজ্ঞ’’। (সূরা দাহার: ৩১) 

আল্লাহ তা‘আলা সূরা তাকবীরের ২৯ নং আয়াতে বলেন,

وَمَا تَشَاءُونَ إِلَّا أَنْ يَشَاءَ اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ

‘‘তোমরা আল্লাহ রাববুল আলামীনের ইচ্ছার বাইরে কোনোই ইচ্ছা করতে পারো না’’।

আল্লাহ তা‘আলা সূরা আন‘আমের ১১১ নং আয়াতে বলেন,

وَلَوْ أَنَّنَا نَزَّلْنَا إِلَيْهِمُ الْمَلَائِكَةَ وَكَلَّمَهُمُ الْمَوْتَىٰ وَحَشَرْنَا عَلَيْهِمْ كُلَّ شَيْءٍ قُبُلًا مَّا كَانُوا لِيُؤْمِنُوا إِلَّا أَن يَشَاءَ اللَّهُ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَهُمْ يَجْهَلُونَ

‘‘আমি যদি তাদের কাছে ফেরেশতাও নাযিল করতাম, মৃতরাও তাদের সাথে কথা বলতো এবং সারা দুনিয়ার সমস্ত জিনিসও তাদের চোখের সামনে একসাথে তুলে ধরতাম, তাহলেও তারা ঈমান আনয়ন করতো না। তবে যদি আল্লাহর ইচ্ছা হয়, তাহলে অন্য কথা। কিন্তু বেশীর ভাগ লোকই অজ্ঞ’’। 

আল্লাহ তা‘আলা পরের আয়াতে বলেন,
وَكَذَٰلِكَ جَعَلْنَا لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوًّا شَيَاطِينَ الْإِنسِ وَالْجِنِّ يُوحِي بَعْضُهُمْ إِلَىٰ بَعْضٍ زُخْرُفَ الْقَوْلِ غُرُورًا وَلَوْ شَاءَ رَبُّكَ مَا فَعَلُوهُ فَذَرْهُمْ وَمَا يَفْتَرُونَ

‘‘আর এভাবে আমি মানুষ শয়তান ও জিন শয়তানদেরকে প্রত্যেক নাবীর দুশমনে পরিণত করেছি, তারা ধোঁকা ও প্রতারণার ছলে পরস্পরকে চমকপ্রদ কথা বলতো। তোমার রব ইচ্ছা করলে তারা এমনটি কখনো করতে পারতো না। কাজেই তাদের অবস্থার উপর ছেড়ে দাও, তারা মিথ্যা রচনা করতে থাকুক’’ (সূরা আন‘আম ১১২)। 

আল্লাহ তা‘আলা সূরা ইউনুসের ৯৯ নং আয়াতে বলেন,
وَلَوْ شَاءَ رَبُّكَ لَآمَنَ مَن فِي الْأَرْضِ كُلُّهُمْ جَمِيعًا أَفَأَنتَ تُكْرِهُ النَّاسَ حَتَّىٰ يَكُونُوا مُؤْمِنِينَ

‘‘যদি তোমার রব ইচ্ছা করতেন, তাহলে যমীনের সবাই ঈমান আনয়ন করতো। তবে কি তুমি মুমিন হবার জন্য লোকদের উপর জবরদস্তি করবে? 

আল্লাহ তা‘আলা সূরা আনআমের ১২৫ নং আয়াতে বলেন,

فَمَن يُرِدِ اللَّهُ أَن يَهْدِيَهُ يَشْرَحْ صَدْرَهُ لِلْإِسْلَامِ وَمَن يُرِدْ أَن يُضِلَّهُ يَجْعَلْ صَدْرَهُ ضَيِّقًا حَرَجًا كَأَنَّمَا يَصَّعَّدُ فِي السَّمَاءِ

‘‘আল্লাহ যাকে সত্যপথ দেখাবার ইচ্ছা করেন তার বক্ষদেশ ইসলামের জন্য উন্মুক্ত করে দেন। আর যাকে তিনি গোমরাহীতে নিক্ষেপ করার ইচ্ছা করেন, তার বক্ষদেশ খুব সংকীর্ণ করে দেন। যাতে মনে হয় সে কষ্ট করে আকাশের দিকে উঠার চেষ্টা করছে’’।

অর্থাৎ জোর খাটিয়ে যেমন আকাশের দিকে উঠা সম্ভব নয়, ঠিক তেমনি আল্লাহ যার বক্ষকে সংকীর্ণ করে দেন তার মধ্যে ঈমান ও তাওহীদের আলো ঢুকানো সম্ভব নয়। আল্লাহ তা‘আলা তার বক্ষকে ইসলামের জন্য খুলে না দেয়া পর্যন্ত তাতে ঈমান ও তাওহীদ প্রবেশ করে না। 

আল্লাহ তা‘আলা নূহ আলাইহিস সালামের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে সূরা হুদের ৩৪ নং আয়াতে বলেন,

وَلَا يَنفَعُكُمْ نُصْحِي إِنْ أَرَدتُّ أَنْ أَنصَحَ لَكُمْ إِن كَانَ اللَّهُ يُرِيدُ أَن يُغْوِيَكُمْ هُوَ رَبُّكُمْ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ

‘‘আমি তোমাদেরকে নসীহত করতে চাইলেও আমার নসীহত তোমাদের কোনো কাজে লাগবে না যদি আল্লাহ নিজেই তোমাদের বিভ্রান্ত করার ইচ্ছা করেন। তিনিই তোমাদের রব এবং তারই দিকে তোমাদের ফিরে যেতে হবে’’।

আল্লাহ তা‘আলা সূরা আনআমের ৩৯ নং আয়াতে বলেন,

مَن يَشَإِ اللَّهُ يُضْلِلْهُ وَمَن يَشَأْ يَجْعَلْهُ عَلَىٰ صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ

‘‘আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বিপথগামী করেন আবার যাকে চান সত্য সরল পথে পরিচালিত করেন’’।

প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
সব কিছুই আল্লাহর ইচ্ছাতেই হয়।
তবে আমি গুনাহ করবো নাকি নেক কাজ করবো,সবই তাকদীরে লেখা আছে।

এটি নিয়ে বাড়াবাড়ি করা ঈমানের জন্য ক্ষতিকর। 

ইমাম ত্বহাবী রহিমাহুল্লাহ বলেন,

"وَأَصْلُ الْقَدَرِ سِرُّ اللَّهِ تَعَالَى فِي خَلْقِهِ، لَمْ يَطَّلِعْ عَلَى ذَلِكَ مَلَكٌ مُقَرَّبٌ، وَلَا نَبِيٌّ مُرْسَلٌ، وَالتَّعَمُّقُ وَالنَّظَرُ فِي ذَلِكَ ذَرِيعَةُ الْخِذْلَانِ، وَسُلَّمُ الْحِرْمَانِ، وَدَرَجَةُ الطُّغْيَانِ، فَالْحَذَرَ كُلَّ الْحَذَرِ مِنْ ذَلِكَ نَظَرًا وَفِكْرًا وَوَسْوَسَةً، فَإِنَّ اللَّهَ تَعَالَى طَوَى عِلْمَ الْقَدَرِ عَنْ أَنَامِهِ، وَنَهَاهُمْ عَنْ مَرَامِهِ، كَمَا قَالَ تَعَالَى فِي كِتَابِهِ: (لَا يُسْأَلُ عَمَّا يَفْعَلُ وَهُمْ يُسْأَلُونَ) [الْأَنْبِيَاءِ: 23]. فَمَنْ سَأَلَ: لِمَ فَعَلَ؟ فَقَدْ رَدَّ حُكْمَ الْكِتَابِ، وَمَنْ رَدَّ حُكْمَ الْكِتَابِ، كَانَ مِنَ الْكَافِرِينَ"

তাকদীর সম্পর্কে আসল কথা হলো, এটি সৃষ্টিকুলের ব্যাপারে আল্লাহর একটি গোপন বিষয়; যা নৈকট্যপ্রাপ্ত কোনো ফেরেশতা কিংবা প্রেরিত কোনো নাবীও অবহিত নন। এ সম্পর্কে গভীর চিন্তা-ভাবনা করা অথবা অনুরূপ আলোচনায় প্রবৃত্ত হওয়া ব্যর্থ হওয়ার কারণ, বঞ্চনার সিঁড়ি এবং সীমালংঘনের স্তর। অতএব সাবধান! এ সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা এবং কুমন্ত্রণা হতে সতর্ক থাকুন। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা তাকদীর সম্পর্কিত জ্ঞান তার সৃষ্টিকুল থেকে গোপন রেখেছেন এবং তাদেরকে এর উদ্দেশ্যে অনুসন্ধান করতে নিষেধ করেছেন। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, لَا يُسْأَلُ عَمَّا يَفْعَلُ وَهُمْ يُسْأَلُونَ ‘‘তিনি যা করেন সে বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করা হবে না; বরং তারা তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। (সূরা আম্বিয়া: ২৩) অতএব, যে ব্যক্তি একথা জিজ্ঞাসা করবে তিনি কেন এ কাজ করলেন? সে আল্লাহর কিতাবের হুকুম অমান্য করল। আর যে ব্যক্তি কিতাবের হুকুম অমান্য করল, সে কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত হলো।

(০২)
আপনি যেহেতু ইস্তেগফার পাঠ করেছেন,সুতরাং আর কোনো সমস্যা নেই।

(০৩)
আপনার ঈমানের সমস্যা হবেনা।

(০৪)
লাল জুতা না পড়াই উচিত।
এটিও অনেকটা পোশাকের আওতায় পরে।

তবে ঘড়ির ক্ষেত্রে সমস্যা নেই।
কেননা এটিকে সমাজে পোশাকের আওতায় মনে করা হয়না।
তবুও সতর্কতামূলক নিরেট লাল ঘড়ি পরিধান না করাই কাম্য।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...