আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَمَا تَشَاءُونَ إِلَّا أَن يَشَاءَ اللَّهُ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا
‘‘তোমরা আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছার বাইরে কিছুই ইচ্ছা করতে পারো না। আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও সুবিজ্ঞ’’। (সূরা দাহার: ৩১)
আল্লাহ তা‘আলা সূরা তাকবীরের ২৯ নং আয়াতে বলেন,
وَمَا تَشَاءُونَ إِلَّا أَنْ يَشَاءَ اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ
‘‘তোমরা আল্লাহ রাববুল আলামীনের ইচ্ছার বাইরে কোনোই ইচ্ছা করতে পারো না’’।
আল্লাহ তা‘আলা সূরা আন‘আমের ১১১ নং আয়াতে বলেন,
وَلَوْ أَنَّنَا نَزَّلْنَا إِلَيْهِمُ الْمَلَائِكَةَ وَكَلَّمَهُمُ الْمَوْتَىٰ وَحَشَرْنَا عَلَيْهِمْ كُلَّ شَيْءٍ قُبُلًا مَّا كَانُوا لِيُؤْمِنُوا إِلَّا أَن يَشَاءَ اللَّهُ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَهُمْ يَجْهَلُونَ
‘‘আমি যদি তাদের কাছে ফেরেশতাও নাযিল করতাম, মৃতরাও তাদের সাথে কথা বলতো এবং সারা দুনিয়ার সমস্ত জিনিসও তাদের চোখের সামনে একসাথে তুলে ধরতাম, তাহলেও তারা ঈমান আনয়ন করতো না। তবে যদি আল্লাহর ইচ্ছা হয়, তাহলে অন্য কথা। কিন্তু বেশীর ভাগ লোকই অজ্ঞ’’।
আল্লাহ তা‘আলা পরের আয়াতে বলেন,
وَكَذَٰلِكَ جَعَلْنَا لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوًّا شَيَاطِينَ الْإِنسِ وَالْجِنِّ يُوحِي بَعْضُهُمْ إِلَىٰ بَعْضٍ زُخْرُفَ الْقَوْلِ غُرُورًا وَلَوْ شَاءَ رَبُّكَ مَا فَعَلُوهُ فَذَرْهُمْ وَمَا يَفْتَرُونَ
‘‘আর এভাবে আমি মানুষ শয়তান ও জিন শয়তানদেরকে প্রত্যেক নাবীর দুশমনে পরিণত করেছি, তারা ধোঁকা ও প্রতারণার ছলে পরস্পরকে চমকপ্রদ কথা বলতো। তোমার রব ইচ্ছা করলে তারা এমনটি কখনো করতে পারতো না। কাজেই তাদের অবস্থার উপর ছেড়ে দাও, তারা মিথ্যা রচনা করতে থাকুক’’ (সূরা আন‘আম ১১২)।
আল্লাহ তা‘আলা সূরা ইউনুসের ৯৯ নং আয়াতে বলেন,
وَلَوْ شَاءَ رَبُّكَ لَآمَنَ مَن فِي الْأَرْضِ كُلُّهُمْ جَمِيعًا أَفَأَنتَ تُكْرِهُ النَّاسَ حَتَّىٰ يَكُونُوا مُؤْمِنِينَ
‘‘যদি তোমার রব ইচ্ছা করতেন, তাহলে যমীনের সবাই ঈমান আনয়ন করতো। তবে কি তুমি মুমিন হবার জন্য লোকদের উপর জবরদস্তি করবে?
আল্লাহ তা‘আলা সূরা আনআমের ১২৫ নং আয়াতে বলেন,
فَمَن يُرِدِ اللَّهُ أَن يَهْدِيَهُ يَشْرَحْ صَدْرَهُ لِلْإِسْلَامِ وَمَن يُرِدْ أَن يُضِلَّهُ يَجْعَلْ صَدْرَهُ ضَيِّقًا حَرَجًا كَأَنَّمَا يَصَّعَّدُ فِي السَّمَاءِ
‘‘আল্লাহ যাকে সত্যপথ দেখাবার ইচ্ছা করেন তার বক্ষদেশ ইসলামের জন্য উন্মুক্ত করে দেন। আর যাকে তিনি গোমরাহীতে নিক্ষেপ করার ইচ্ছা করেন, তার বক্ষদেশ খুব সংকীর্ণ করে দেন। যাতে মনে হয় সে কষ্ট করে আকাশের দিকে উঠার চেষ্টা করছে’’।
অর্থাৎ জোর খাটিয়ে যেমন আকাশের দিকে উঠা সম্ভব নয়, ঠিক তেমনি আল্লাহ যার বক্ষকে সংকীর্ণ করে দেন তার মধ্যে ঈমান ও তাওহীদের আলো ঢুকানো সম্ভব নয়। আল্লাহ তা‘আলা তার বক্ষকে ইসলামের জন্য খুলে না দেয়া পর্যন্ত তাতে ঈমান ও তাওহীদ প্রবেশ করে না।
আল্লাহ তা‘আলা নূহ আলাইহিস সালামের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে সূরা হুদের ৩৪ নং আয়াতে বলেন,
وَلَا يَنفَعُكُمْ نُصْحِي إِنْ أَرَدتُّ أَنْ أَنصَحَ لَكُمْ إِن كَانَ اللَّهُ يُرِيدُ أَن يُغْوِيَكُمْ هُوَ رَبُّكُمْ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ
‘‘আমি তোমাদেরকে নসীহত করতে চাইলেও আমার নসীহত তোমাদের কোনো কাজে লাগবে না যদি আল্লাহ নিজেই তোমাদের বিভ্রান্ত করার ইচ্ছা করেন। তিনিই তোমাদের রব এবং তারই দিকে তোমাদের ফিরে যেতে হবে’’।
আল্লাহ তা‘আলা সূরা আনআমের ৩৯ নং আয়াতে বলেন,
مَن يَشَإِ اللَّهُ يُضْلِلْهُ وَمَن يَشَأْ يَجْعَلْهُ عَلَىٰ صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ
‘‘আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বিপথগামী করেন আবার যাকে চান সত্য সরল পথে পরিচালিত করেন’’।
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
সব কিছুই আল্লাহর ইচ্ছাতেই হয়।
তবে আমি গুনাহ করবো নাকি নেক কাজ করবো,সবই তাকদীরে লেখা আছে।
এটি নিয়ে বাড়াবাড়ি করা ঈমানের জন্য ক্ষতিকর।
ইমাম ত্বহাবী রহিমাহুল্লাহ বলেন,
"وَأَصْلُ الْقَدَرِ سِرُّ اللَّهِ تَعَالَى فِي خَلْقِهِ، لَمْ يَطَّلِعْ عَلَى ذَلِكَ مَلَكٌ مُقَرَّبٌ، وَلَا نَبِيٌّ مُرْسَلٌ، وَالتَّعَمُّقُ وَالنَّظَرُ فِي ذَلِكَ ذَرِيعَةُ الْخِذْلَانِ، وَسُلَّمُ الْحِرْمَانِ، وَدَرَجَةُ الطُّغْيَانِ، فَالْحَذَرَ كُلَّ الْحَذَرِ مِنْ ذَلِكَ نَظَرًا وَفِكْرًا وَوَسْوَسَةً، فَإِنَّ اللَّهَ تَعَالَى طَوَى عِلْمَ الْقَدَرِ عَنْ أَنَامِهِ، وَنَهَاهُمْ عَنْ مَرَامِهِ، كَمَا قَالَ تَعَالَى فِي كِتَابِهِ: (لَا يُسْأَلُ عَمَّا يَفْعَلُ وَهُمْ يُسْأَلُونَ) [الْأَنْبِيَاءِ: 23]. فَمَنْ سَأَلَ: لِمَ فَعَلَ؟ فَقَدْ رَدَّ حُكْمَ الْكِتَابِ، وَمَنْ رَدَّ حُكْمَ الْكِتَابِ، كَانَ مِنَ الْكَافِرِينَ"
তাকদীর সম্পর্কে আসল কথা হলো, এটি সৃষ্টিকুলের ব্যাপারে আল্লাহর একটি গোপন বিষয়; যা নৈকট্যপ্রাপ্ত কোনো ফেরেশতা কিংবা প্রেরিত কোনো নাবীও অবহিত নন। এ সম্পর্কে গভীর চিন্তা-ভাবনা করা অথবা অনুরূপ আলোচনায় প্রবৃত্ত হওয়া ব্যর্থ হওয়ার কারণ, বঞ্চনার সিঁড়ি এবং সীমালংঘনের স্তর। অতএব সাবধান! এ সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা এবং কুমন্ত্রণা হতে সতর্ক থাকুন। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা তাকদীর সম্পর্কিত জ্ঞান তার সৃষ্টিকুল থেকে গোপন রেখেছেন এবং তাদেরকে এর উদ্দেশ্যে অনুসন্ধান করতে নিষেধ করেছেন। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, لَا يُسْأَلُ عَمَّا يَفْعَلُ وَهُمْ يُسْأَلُونَ ‘‘তিনি যা করেন সে বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করা হবে না; বরং তারা তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। (সূরা আম্বিয়া: ২৩) অতএব, যে ব্যক্তি একথা জিজ্ঞাসা করবে তিনি কেন এ কাজ করলেন? সে আল্লাহর কিতাবের হুকুম অমান্য করল। আর যে ব্যক্তি কিতাবের হুকুম অমান্য করল, সে কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত হলো।