بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
আল্লাহ্ তাআলা বলেন,
إِنَّ
الصَّلاَةَ كَانَتْ عَلَى المُؤْمِنِيْنَ كِتَابًا مَوْقُوْ تَا۔
নিশ্চয় নামায মুসলমানদের উপর
ফরয নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে। সূরা নিসা, আয়াত,১০৩
وَارْكَعُوْا
مَعَ الرَّاكِعِيْنْ۔
আর রুকূ আদায়কারীদের সাথে
রুকূ করো। (সূরা বাক্বারাহ্, আয়াত, ৪৩)
পাঁচ ওয়াক্ত নামায নির্দিষ্ট
সময়ে আদায় করা ফরয এবং ফরয নামাযে জামাআতে শরীক হওয়া ওয়াজিব।
নামায ইসলামের পাঁচ রোকনের
দ্বিতীয় রোকন এবং শ্রেষ্ঠ ইবাদত। কেননা তা আল্লাহ্র সঙ্গে বান্দার সম্পর্ক ও বন্ধন
সৃষ্টি করে। নামায সম্পর্কে জোর তাকীদ ও ফযীলত এসেছে। সুতরাং নামাযের প্রতি আমাদের
খুব যত্নবান হওয়া উচিত এবং নামাযের মাসায়েল জেনে পূর্ণ হক আদায় করে নামায পড়া উচিত।
আর মা-বাবারও কর্তব্য ৭ বছর বয়স থেকে সন্তানকে নামাযের আদেশ করা এবং ১০ বছর বয়স থেকে
নামাযে অবহেলার জন্য প্রহার দ্বারা শাসন করা, যাতে নামায ফরয হওয়ার আগেই
তারা ওয়াক্তমত নামায পড়তে অভ্যস্ত হয়ে যায়।
নবী সা. সারা জীবন জামাআতের
পাবন্দী করেছেন। তদ্রূপ সাহাবা কিরামের যামানা থেকে বর্তমান যুগ পর্যন্ত উম্মত জামাআতের
পাবন্দী করে এসেছে। সাহাবা কিরামের যুগে জামাআতের এতো গুরুত্ব ছিলো যে, মাযূর
(একান্ত অপারগ) ও প্রকাশ্য মুনাফিক ছাড়া কেউ জামাআত ত্যাগ করতেন না। জামাআত ত্যাগে
অভ্যস্ত ব্যক্তি ফাসিক এবং ইসলামী বিচার ব্যবস্থায় তার সাক্ষী গ্রহণযোগ্য নয়। হাদীস
শরীফে নামাযের বহু ফযীলত বর্ণিত হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লাম
বলেন,
صَلَاةُ
الْجَمَاعَةِ أَفْضَلُ مِنْ صَلَاةِ الْفَذِّ بِسَبْعٍ وَعِشْرِينَ دَرَجَةً۔
জামাআতের নামায একা নামাযের
চেয়ে সাতাশ গুণ উত্তম। (সহীহ্ মুসলিম, ৬৫০)
জামাআতে নামায পড়ার গুরুত্ব
বুঝাতে গিয়ে আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রা. বলেন, আমাদের যুগে গুরুতর অসুস্থ
অথবা একমাত্র প্রকাশ্য মুনাফিক ছাড়া কেউ জামাআত ত্যাগ করতো না। আর যদি অসুস্থ ব্যক্তি দুই ব্যক্তির কাঁধে ভর দিয়ে হাঁটতে সক্ষম হলে সেও
জামাআতে এসে শরীক হতো। এবং বলেন, রাসূল সা. আমাদেরকে হেদায়াতের
সুন্নাতগুলি শিক্ষা দিয়েছেন । আর আযান হয় এমন মসজিদে নামায পড়া (অর্থাৎ, জামাআতে
নামায পড়া) হেদায়াতের সুন্নাতগুলির অন্তর্ভুক্ত।
(মিরক্বাতুল মাফাতীহ্ শর্হে মিশকাতুল মাসাবীহ্, ১০৭২)
জামাআত
কাদের উপর ওয়াজিব?
যদি শরী’আত সম্মত কোন ওযর
না থাকে তাহলে ১.প্রাপ্ত বয়স্ক ও ২.স্বাধীন ৩.ও ৪. মুসলমান পুরুষের জন্য জামাআতের সাথে
নামায পড়া ওয়াজিব।
যে কোন নামায জামাআত ছাড়াও
আদায় হয়ে যায়। তবে জুমুআ ও দুই ঈদের জন্য জামাআত শর্ত। জামাআত ছাড়া জুমুআ ও ঈদের নামায
সহীহ্ নয়। নাবালক, অসুস্থমস্তিস্ক, গোলাম ও
ওযরগ্রস্ত ব্যক্তির উপর জামাআত ওয়াজিব নয়।
তবে তারা জামাআতে নামায পড়লে সওয়াবের অধিকারী হবে। অবশ্য স্ত্রীলোকদের ঘরে নামায পড়াই
উত্তম। (এই ফিতনার যুগে)
জামাআত ওয়াজিব না হওয়ার ওযর
১.প্রচণ্ড বৃষ্টি বা ২.ঠাণ্ডা
বা ৩.অন্ধকার হলে,
৪.পথে ভীষণ কাদা হলে,
৫.রাতে প্রচণ্ড ঝড় হলে,
৬.হেঁটে মসজিদে যেতে না পারার
মতো অসুস্থ বা ৭.বৃদ্ধ হলে
৮.অন্ধের সাহায্যকারী না থাকলে
৯.কেউ যদি এমন রোগীর সেবায়
ব্যস্ত থাকে যে, তার অনুপস্থিতিতে রোগীর ক্ষতি বা কষ্ট
হবে,(তাহলে তার জামাআতে উপস্থিত হওয়া ওয়াজিব নয়)
১০.সফরে কাফেলার যাত্রার সময়
হয়ে গেলে, গাড়ী ও জাহাজ ছেড়ে দেয়ার সময় হয়ে গেলে এবং সামান হারিয়ে যাওয়ার
ভয় থাকলে (জামাআতে উপস্থিত হওয়া ওয়াজিব নয়)
১১.ইস্তিঞ্জার হাজত হলে,
১২.ক্ষুধার সময় খাবার উপস্থিত
হলে এবং খাবার চাহিদা থাকলে (জামাআতে উপস্থিত হওয়া ওয়াজিব নয়)
★প্রিয় প্রশ্নকারী
দ্বীনি ভাই/বোন!
১.প্রাপ্তবয়স্ক
পুরুষের জন্য জামাতের সঙ্গে নামাজ পড়া সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ তথা অনেকটা ওয়াজিবের কাছাকাছি।
বিনাকারণে জামাত ছেড়ে দিলে ব্যক্তি গুনাহগার হবে।
নবীজি (সা.) কখনও জামাত তরক
করতেন না। এমনকি অসুস্থ অবস্থায় যখন তিনি হাঁটতে পারতেন না, তখনও দুই
সাহাবির কাঁধে ভর করে পা টেনে টেনে নামাজের জামাতে হাজির হয়েছেন। জামাতবিহীন একা একা
নামাজ পড়েননি। তবে উপরে উল্লেখিত কোন কারণে যদি জামাতে নামাজ না
পড়তে পারে, তাহলে একাকী নামাজ পড়লেও নামাজ হয়ে যাবে ইনশআল্লাহ।
২. উক্ত বিষয়ে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন: https://ifatwa.info/12009/?show=12009#q12009
https://ifatwa.info/12922/?show=12922#q12922
৩. ইমাম ইবনুল কাইয়্যুম রহিমাহুল্লাহ জামাত গুরুত্ব বুঝাতে উক্ত কথাটি তুলে ধরেছেন।,আল্লাহ তায়ালা যদি ক্ষমা না করেন
তাহলে উপরের উল্লেখিত শাস্তির থেকেও বড় শাস্তি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।