আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
190 views
in পবিত্রতা (Purity) by (11 points)
reshown by
আসসালামু আলাইকুম।  আমার ওয়াসওয়াসার জটিলতা আপনাদেরকে কিছুটা বলে ধারনা দিতে চাই। দয়া করে লম্বা হবার জন্য খুবই দুঃখিত। আমার ওয়াসওযাসার শুরু ছয় বছর আগ থেকে। প্রথমে ইমান নিয়ে সংশয় হতো।কি যে কষ্ট কেউ বুঝে না। মন হত মরে যাই। এর পর আল্লাহ মুক্তি দিলেন প্রায় এক দেড় বছর পর।  আবার কিছ দিন পর শুরু হলো ওযু গোসল আর ইস্তিন্জার সংশয়। ঘন্টার পর ঘন্টা কাটাতাম ওয়াশরুমেে নামাজ কাজা যেত। পরে এক দেড় বছর পর আল্লাহ কিভাবে মুক্তি দিলেন বুঝতেই পারি নি আলহামদুলিল্লাহ।  মাঝে দু তিন বছর খুব আরামে ইবাদাত বন্দেগি করেছি। আবার গত রমজান থেকে শুরু হলো নামাজের ওয়াসওয়াসা। প্রতি রাকাতে মনে হত ফাতেহা পড়ি নি। কি যে কষ্ট নিয়ে রমজান কাটালাম। আবার প্রতিটা রোজায় মনে হত আমার রোজা ভেঙে গেছে কুলি করতে গোসল করতে গিয়ে।  অনেক মানসিক কষ্টে ছিলাম। হাজার চেষ্টা করেও পারি নি এ থেকে মন ফেরাতে। রমজানের পর থেকে শুরু হল পবিত্রতার ওয়াসওয়াসা।  আমি প্রসাবের সময় ভুলে যাই পানি দিয়ে লজ্জাস্হান ধৌত করেছি কি না! বার বার একই সমস্যা।  আমি তিনবার করে ধোয়ার চেষ্টা করি হাদিস অনুযায়ী।  তারপরো ওয়াসোয়াসার দরুন সাতবার করে ধৌত করি। কিন্তু আমি এই পানি নিয়ে এই ভুলে যাই পানি নিলাম কিনা। মনে হয় একবারো ধুই নি। এমন করে বার বার করতে করতে দেখা যায় প্রসাব পায়খানায় ৩০/৪০ মিনিটও চলে যায় সময়। আমি কি করব? পাগল হয়ে যাচ্ছি। ওয়াল্লাহি আমার আমল এত ভালো ছিল সবাই শুধু আমাকে প্রশংসা করতো। আমি এখন এই ওয়াসওয়াসার দরুন নামাজ কাজা করে দেই নিজের অজান্তে গোসলে টয়লেটে গিয়ে। পরে নামাজে লাগলে মনে হয় নাপাকি থেকে গেলো। কান্না করতে ইচ্ছে করে।  আমি এরকম চলতে থাকলে জিবন কিভাবে কাটাবো। কিভাবে আমল করবো। আমার আমলের তো সর্বনাশ হয়ে গেলো।আমি জানি পবিত্রতার মাসালা। কিন্তু বার বার ভুলে যাই পাক করলাম নাকি করলাম না। এটাই সমস্যা।  মনে থাকলে তো আর সমস্যা ছিলো না। আমার অন্য কিছুতে মানসিক সমস্যা নেই বা এরকম ভুলার অভ্যাস নেই যে ভুলে যাব। শুধু টয়লেটে গেলেই যেন ভুলে যাই পবিত্র করলাম না করলাম না? কিভাবে আমি এই বিষয়টা মনে রাখতে পারবো যে আমি ধৌত করে পবিত্র হয়েছি। আমাকে এর শরয়ি সমাধান দিন কি করলে আমি মুক্তি পাবো। আমি তো কম চেস্টা করি নি ওয়সোয়াসা পাত্তা না দেয়ার। কিন্তু পারছি না।
জাযাকাল্লাহু খইরান।
by (1 point)
বোন পরামর্শ হল, আপনি কোন সাইকিয়াট্রিস্ট  এর শরাণাপন্ন হোন অথবা সম্ভব না হলে সরকারি মেডিক্যালের সাইকিয়াট্রি বিভাগ এর আউটডোর এ দেখান। ওয়াসওয়াসা একটি মানসিক রোগ, যাকে মেডিক্যালের ভাষায় ওবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসওর্ডার(OCD) বলে। এটি সাধারণত মস্তিষ্কে সেরোটোনিন নামক একটি নিউরোকেমিক্যালের বৃদ্ধি বা হ্রাসের কারণে হয় এবং এতে আক্রান্ত রোগীর অনেক মানসিক কষ্ট হয়। অনেক দিনের শয়তানি ওয়াসওয়াসা, এ মানসিক রোগে পরিণত হয়। আপনার নাপাক নিয়ে ওয়াসওয়াসা, এটি মানসিক রোগে পরিনত হয়েছে, যা আপনাকে মানসিকভাবে অনেক কষ্ট দিতে থাকবে। শুধু মাথায় নাপাকের চিন্তায় ঘুরে ফিরে আসবে এবং তা থেকে বের হওয়া যায়না।
ইনশাআল্লাহ এ রোগ ৩/৪ মাস মেডিসিনে ও কাউন্সিলিং এ ভাল হয় এবং মেডিসিন কন্টিনিউ করতে হবে, সাথে আল্লাহর কাছেও এ রোগ মুক্তির জন্য দোয়া করতে হয়।

1 Answer

0 votes
by (63,560 points)
edited by

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ

https://ifatwa.info/54847/ নং ফাতাওয়াতে উল্লেখ রয়েছে-

পেশাব-পায়খানার পর; পবিত্রতা অর্জন করার তিনটি পদ্ধতি বর্ণিত হয়েছে।

প্রথম পদ্ধতি: শুধু ঢিলা/টিস্যু ব্যবহার করা: এক্ষেত্রে তিনটি টিলা/কুলুফ ইউজ করা সুন্নাহ। এ বিষয়ে বহু হাদীস ও আছার বর্ণিত হয়েছে।

 قَدْ عَلّمَكُمْ نَبِيكُمْ كُلّ شَيْءٍ حَتى الْخِرَاءَةَ قَالَ: فَقَالَ: أَجَلْ لَقَدْ نَهَانَا  أَنْ نَسْتَنْجِيَ بِأَقَلّ مِنْ ثَلَاثَةِ أَحْجَارٍ

সালমান ফারসী রা.-কে বলা হল, তোমাদের নবী তোমাদের সবকিছু শিক্ষা দিয়েছেন; এমনকি শৌচাগার ব্যবহারের পদ্ধতিও! আব্দুর রহমান বিন ইয়াযীদ রাহ. বলেন, সালমান রা. বললেন, ‘হাঁ, অবশ্যই! তিনি আমাদেরকে নিষেধ করেছেন, আমরা যেন ডান হাত দ্বারা ইস্তিঞ্জা না করি, ইস্তিঞ্জার সময় তিন পাথরের কম ব্যবহার না করি ’ সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৬২

 

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উক্ত আমল ও বাণী মুতাবেক অনেক সাহাবা ও তাবেয়ীনের আমল ছিল। তাঁরা পানি থাক বা না থাক শুধু ঢিলা দ্বারা ইস্তিঞ্জা করতেন।

 

এ অনুযায়ীই উম্মাহর ইমামগণের ফতোয়া। সকল ইমামের মত হল, পানি থাকুক বা নাই থাকুক সর্বাবস্থাই শুধু ঢিলা দ্বারা তাহারাত হাসিল করা জায়েয। আল ইসতিযকার ১/১৪৩

 

দ্বিতীয় পদ্ধতি: ঢিলা ও পানি উভয়টা দ্বারা ইস্তিঞ্জা করা। ঢিলা ব্যবহার করে পানি দ্বারা ধৌত করা কুরআন-সুন্নাহ ও সালাফে সালেহীনের আমল দ্বারা প্রমাণিত। কারণ, তাতে অধিক পরিচ্ছন্নতা অর্জিত হয়। তবে এ ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করা কখনোই ঠিক হবে না। যেমন, প্রস্রাবের পর ঢিলা হাতে নিয়ে শৌচাগারের বাইরে চল্লিশ কদম দেওয়া, লেফট-রাইট করা, বার বার উঠা-বসা করা, কেউ পানির পূর্বে ঢিলা ব্যবহার না করলে তাকে পশুর সাথে তুলনা ও ঘৃণা করা কিংবা কটু বাক্য বলে তাকে জর্জরিত করা ইত্যাদি ইত্যাদি।

 

তৃতীয় পদ্ধতি: পানি দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা। কাযায়ে হাজতের পর পানি দ্বারা ইস্তিঞ্জা করার বিষয়ে সাহাবা ও তাবেয়ীন-যুগে দু-একজনের ভিন্নমত থাকলেও পরবর্তীতে এ বিষয়ে কোনো ইমামের মতবিরোধ নেই যে, কাযায়ে হাজতের পর পানি দ্বারা ইস্তিঞ্জা করা যাবে; বরং উলামায়ে কেরাম বলেন, পানি দ্বারা ইস্তিঞ্জা করাই উত্তম।

 

শুধু পানি দিয়ে ইস্তিঞ্জা করার ব্যাপারে আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

كَانَ رَسُوْلُ اللهِ  صلى الله عليه وسلم يَدْخُلُ الْخَلاَءَ، فَأَحْمِلُ أَنَا وَغُلاَمٌ نَحْوِيْ إِدَاوَةً مِنْ مَاءٍ وَعَنَـزَةً، فَيَسْتَنْجِيْ بِالْمَاءِ

রাসূলুল্লাহ সা. পায়খানায় গেলে আমি এবং আমার সমবয়সী একটি ছেলে এক লোটা পানি ও একটি হাতের লাঠি নিয়ে রাসুল সা. অপেক্ষায় থাকতাম। অতঃপর তিনি পানি দিয়ে ইস্তিঞ্জা করতেন।” সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৫০

 

ওয়াসওয়াসা থেকে বাঁচার আমলঃ

ইবনে হাজার আল-হাইছামি তাঁর ‘আল-ফাতাওয়া আল-ফিকহিয়্যা আল-কুবরা’ গ্রন্থে (১/১৪৯) এসেছে, তাঁকে এর প্রতিকার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন,

له دواء نافع وهو الإعراض عنها جملة كافية ، وإن كان في النفس من التردد ما كان – فإنه متى لم يلتفت لذلك لم يثبت بل يذهب بعد زمن قليل كما جرب ذلك الموفقون , وأما من أصغى إليها وعمل بقضيتها فإنها لا تزال تزداد به حتى تُخرجه إلى حيز المجانين بل وأقبح منهم

অর্থাৎ, এর ঔষধ একটাই সেটা হচ্ছে– ওয়াসওয়াসাকে সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে যাওয়া; এমনকি মনের মধ্যে কোন দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকা সত্ত্বেও। কেননা কেউ যদি সেটাকে ভ্রুক্ষেপ না করে তাহলে সেটা স্থির হবে না। কিছু সময় পর চলে যাবে; যেমনটি তাওফিকপ্রাপ্ত লোকেরা যাচাই করে পেয়েছেন। আর যে ব্যক্তি ওয়াসওয়াসাকে পাত্তা দিবে এবং সে অনুযায়ী কাজ করবে সে ব্যক্তির ওয়াসওয়াসা বাড়তেই থাকবে; এক পর্যায়ে তাকে পাগলের কাতারে নিয়ে পৌঁছাবে কিংবা পাগলের চেয়েও নিকৃষ্ট পর্যায়ে পৌঁছাবে।

 এর সর্বোত্তম প্রতিকার হচ্ছে– বেশি বেশি আল্লাহর যিকির করা, لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللهِ পড়া, আউযুবিল্লাহ্ পড়া তথা বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা।

 

রাসূলুল্লাহ বলেছেন,

اَلْحَمْدُ لِلهِ الَّذِىْ رَدَّ اَمْرَهُ عَلَى الْوَسْوَسَة

সমস্ত প্রশংসা ওই আল্লাহর যিনি শয়তানের বিষয়টি কুমন্ত্রণা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রেখেছেন।’ (নাসাঈ)

 

ইবনে হাজার আল-হাইতামি রহ. বলেন,

له دواء نافع وهو الإعراض عنها جملة كافية ، وإن كان في النفس من التردد ما كان

ওয়াসওয়াসার কার্যকরী চিকিৎসা হল, একে সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে যাওয়া; এমনকি মনের মধ্যে কোন দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকা সত্ত্বেও।’ (আল-ফাতাওয়া আল-ফিকহিয়্যা আল-কুবরা ১/১৪৯)

পাক-নাপাক সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানুন- https://ifatwa.info/53602/    

সুঁই মাথার মত নাপাকির ছিটা মাফ- https://ifatwa.info/52485/

 

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই!

 

উত্তরে উল্লেখিত পদ্ধতিতে প্রস্রাব –পায়খানার পর পবিত্রতা অর্জন করবেন। আর শুধু শুধু সন্দেহের উপর ভিত্তি করে এতো সময় ধরে পবিত্রতা অর্জনের প্রয়োজন নেই। এভাবে পবিত্রতা অর্জন করার পরও যদি মনের মধ্যে সন্দেহ থাকে তাহলে সেই সন্দেহকে পাত্তা দিবেন না মনের মধ্যে যদি সন্দেহ আসেও তবুও মনকে এভাবে বুঝ দিবেন যে, আজকে প্রয়োজনে নাপাকি নিয়েই নামাজ পড়বো যদি এভাবে কিছু দিন করতে পারেন তাহলে দেখবেন যে, কিছু দিনের মধ্যেই আর আপনার এই ওয়াসওয়াসা জনিত সমস্যা থাকবে না ইনশাআল্লাহ আর বেশী বেশী আল্লাহ তায়ালার কাছে দুআ করতে থাকুন

উল্লেখ্য যে, নাজাসতে গালিজাহ কাপড় বা শরীরে লাগলেএক দিরহাম (তথা বর্তমান সময়ের পাঁচ টাকার সিকি)পরিমাণ বা তার চেয়ে কম হলেউক্ত কাপড়ের সাথে নামায বিশুদ্ধ হবে। যদিও তা ধৌত করা উত্তম যদি সময়-সুযোগ থাকে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী আব্দুল ওয়াহিদ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...