ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ
https://ifatwa.info/54847/ নং ফাতাওয়াতে
উল্লেখ রয়েছে-
পেশাব-পায়খানার
পর; পবিত্রতা অর্জন করার তিনটি পদ্ধতি বর্ণিত
হয়েছে।
প্রথম পদ্ধতি:
শুধু ঢিলা/টিস্যু ব্যবহার করা: এক্ষেত্রে তিনটি টিলা/কুলুফ ইউজ করা সুন্নাহ। এ
বিষয়ে বহু হাদীস ও আছার বর্ণিত হয়েছে।
قَدْ عَلّمَكُمْ نَبِيكُمْ كُلّ شَيْءٍ
حَتى الْخِرَاءَةَ قَالَ: فَقَالَ: أَجَلْ لَقَدْ نَهَانَا أَنْ نَسْتَنْجِيَ بِأَقَلّ مِنْ ثَلَاثَةِ
أَحْجَارٍ
সালমান ফারসী
রা.-কে বলা হল, তোমাদের নবী তোমাদের সবকিছু শিক্ষা দিয়েছেন; এমনকি শৌচাগার
ব্যবহারের পদ্ধতিও! আব্দুর রহমান বিন ইয়াযীদ রাহ. বলেন, সালমান রা. বললেন, ‘হাঁ, অবশ্যই! তিনি
আমাদেরকে নিষেধ করেছেন, আমরা যেন ডান হাত দ্বারা ইস্তিঞ্জা না করি, ইস্তিঞ্জার সময়
তিন পাথরের কম ব্যবহার না করি ।’ সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৬২
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উক্ত আমল ও বাণী মুতাবেক অনেক সাহাবা ও
তাবেয়ীনের আমল ছিল। তাঁরা পানি থাক বা না থাক শুধু ঢিলা দ্বারা ইস্তিঞ্জা করতেন।
এ অনুযায়ীই
উম্মাহর ইমামগণের ফতোয়া। সকল ইমামের মত হল, পানি থাকুক বা
নাই থাকুক সর্বাবস্থাই শুধু ঢিলা দ্বারা তাহারাত হাসিল করা জায়েয। আল ইসতিযকার
১/১৪৩
দ্বিতীয় পদ্ধতি:
ঢিলা ও পানি উভয়টা দ্বারা ইস্তিঞ্জা করা। ঢিলা ব্যবহার করে পানি দ্বারা ধৌত করা
কুরআন-সুন্নাহ ও সালাফে সালেহীনের আমল দ্বারা প্রমাণিত। কারণ, তাতে অধিক
পরিচ্ছন্নতা অর্জিত হয়। তবে এ ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করা কখনোই ঠিক হবে না। যেমন, প্রস্রাবের পর
ঢিলা হাতে নিয়ে শৌচাগারের বাইরে চল্লিশ কদম দেওয়া, লেফট-রাইট করা, বার বার উঠা-বসা
করা, কেউ পানির পূর্বে ঢিলা ব্যবহার না করলে তাকে
পশুর সাথে তুলনা ও ঘৃণা করা কিংবা কটু বাক্য বলে তাকে জর্জরিত করা ইত্যাদি
ইত্যাদি।
তৃতীয় পদ্ধতি:
পানি দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা। কাযায়ে হাজতের পর পানি দ্বারা ইস্তিঞ্জা করার
বিষয়ে সাহাবা ও তাবেয়ীন-যুগে দু-একজনের ভিন্নমত থাকলেও পরবর্তীতে এ বিষয়ে কোনো
ইমামের মতবিরোধ নেই যে, কাযায়ে হাজতের পর পানি দ্বারা ইস্তিঞ্জা করা
যাবে; বরং উলামায়ে কেরাম বলেন, পানি দ্বারা
ইস্তিঞ্জা করাই উত্তম।
শুধু পানি দিয়ে
ইস্তিঞ্জা করার ব্যাপারে আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَدْخُلُ الْخَلاَءَ،
فَأَحْمِلُ أَنَا وَغُلاَمٌ نَحْوِيْ إِدَاوَةً مِنْ مَاءٍ وَعَنَـزَةً،
فَيَسْتَنْجِيْ بِالْمَاءِ
রাসূলুল্লাহ সা.
পায়খানায় গেলে আমি এবং আমার সমবয়সী একটি ছেলে এক লোটা পানি ও একটি হাতের লাঠি নিয়ে
রাসুল সা. অপেক্ষায় থাকতাম। অতঃপর তিনি পানি দিয়ে ইস্তিঞ্জা করতেন।” সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৫০
ওয়াসওয়াসা থেকে
বাঁচার আমলঃ
ইবনে হাজার
আল-হাইছামি তাঁর ‘আল-ফাতাওয়া আল-ফিকহিয়্যা আল-কুবরা’ গ্রন্থে (১/১৪৯) এসেছে, তাঁকে এর
প্রতিকার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন,
له دواء نافع وهو الإعراض عنها جملة
كافية ، وإن كان في النفس من التردد ما كان – فإنه متى لم يلتفت لذلك لم يثبت بل
يذهب بعد زمن قليل كما جرب ذلك الموفقون , وأما من أصغى إليها وعمل بقضيتها فإنها
لا تزال تزداد به حتى تُخرجه إلى حيز المجانين بل وأقبح منهم
অর্থাৎ, এর ঔষধ একটাই
সেটা হচ্ছে– ওয়াসওয়াসাকে সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে যাওয়া; এমনকি মনের মধ্যে
কোন দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকা সত্ত্বেও। কেননা কেউ যদি সেটাকে ভ্রুক্ষেপ না করে তাহলে
সেটা স্থির হবে না। কিছু সময় পর চলে যাবে; যেমনটি
তাওফিকপ্রাপ্ত লোকেরা যাচাই করে পেয়েছেন। আর যে ব্যক্তি ওয়াসওয়াসাকে পাত্তা দিবে
এবং সে অনুযায়ী কাজ করবে সে ব্যক্তির ওয়াসওয়াসা বাড়তেই থাকবে; এক পর্যায়ে তাকে
পাগলের কাতারে নিয়ে পৌঁছাবে কিংবা পাগলের চেয়েও নিকৃষ্ট পর্যায়ে পৌঁছাবে।
এর সর্বোত্তম
প্রতিকার হচ্ছে– বেশি বেশি আল্লাহর যিকির করা, لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ اِلَّا
بِاللهِ পড়া, আউযুবিল্লাহ্ পড়া
তথা বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
اَلْحَمْدُ لِلهِ الَّذِىْ رَدَّ
اَمْرَهُ عَلَى الْوَسْوَسَة
সমস্ত প্রশংসা ওই
আল্লাহর যিনি শয়তানের বিষয়টি কুমন্ত্রণা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রেখেছেন।’ (নাসাঈ)
ইবনে হাজার
আল-হাইতামি রহ. বলেন,
له دواء نافع وهو الإعراض عنها جملة
كافية ، وإن كان في النفس من التردد ما كان
ওয়াসওয়াসার
কার্যকরী চিকিৎসা হল, একে সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে যাওয়া; এমনকি মনের মধ্যে
কোন দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকা সত্ত্বেও।’ (আল-ফাতাওয়া আল-ফিকহিয়্যা আল-কুবরা ১/১৪৯)
পাক-নাপাক
সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানুন- https://ifatwa.info/53602/
সুঁই মাথার মত
নাপাকির ছিটা মাফ- https://ifatwa.info/52485/
★ সু-প্রিয়
প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই!
উত্তরে উল্লেখিত
পদ্ধতিতে প্রস্রাব –পায়খানার পর পবিত্রতা অর্জন করবেন। আর শুধু শুধু সন্দেহের উপর
ভিত্তি করে এতো সময় ধরে পবিত্রতা অর্জনের প্রয়োজন নেই। এভাবে পবিত্রতা অর্জন করার পরও যদি মনের মধ্যে সন্দেহ থাকে তাহলে সেই সন্দেহকে
পাত্তা দিবেন না। মনের মধ্যে যদি সন্দেহ আসেও তবুও মনকে এভাবে বুঝ দিবেন যে, আজকে প্রয়োজনে নাপাকি নিয়েই নামাজ পড়বো। যদি এভাবে কিছু দিন করতে পারেন
তাহলে দেখবেন যে, কিছু দিনের মধ্যেই আর আপনার এই ওয়াসওয়াসা
জনিত সমস্যা থাকবে না ইনশাআল্লাহ। আর বেশী
বেশী আল্লাহ তায়ালার কাছে দুআ করতে থাকুন।
উল্লেখ্য যে, নাজাসতে গালিজাহ কাপড় বা শরীরে লাগলে, এক দিরহাম (তথা বর্তমান সময়ের পাঁচ টাকার সিকি)পরিমাণ বা তার চেয়ে কম হলে, উক্ত কাপড়ের সাথে নামায বিশুদ্ধ হবে। যদিও তা ধৌত করা উত্তম যদি সময়-সুযোগ
থাকে।