জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم
কুরআন হলো একটি আসমানি কিতাব।
স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে এবং ফেরেশতা জিবরাইল আমিনের মাধ্যমে নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা:-এর কাছে পর্যায়ক্রমে ওহিরূপে প্রেরিত সর্বশেষ কিতাব।
এটি সমগ্র মানবজাতির জীবনবিধান তথা জীবন পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় বিধিবিধান সংবলিত একটি অপরিবর্তনযোগ্য ও অনুপনোদনযোগ্য কিতাব।
এ কিতাবে কোনো প্রকার ভুল নেই, ত্রুটি নেই; সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। পরিবর্তন বা পরিবর্ধনের সুযোগবিহীন একটি পরিপূর্ণ ও স্বয়ংসম্পূর্ণ কিতাব। সমগ্র মানবজাতির হিদায়াত বা পথপ্রদর্শনের লক্ষ্যে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা কর্তৃক নাজিলকৃত একটি অলৌকিক কিতাব।
কুরআন আল্লাহ প্রদত্ত একটি পরিপূর্ণ জীবনবিধান। আর মানুষ হলো জমিনে আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টিকুলের মধ্যে সবচেয়ে সম্মানিত সৃষ্টি। (সূরা বনি ইসরাইল : ৭০)
জমিনে সৃষ্ট সব সৃষ্টিমালা মানুষের কল্যাণে নিবেদিত। এমনকি আকাশের চাঁদ-তারাও মানুষের কল্যাণেই নিয়োজিত। দিন-রাতের পরিবর্তনও মানুষেরই সুবিধার্থে উদ্ভাবিত। (সূরা নাবা : ১০ ও ১১)
সর্বোপরি এ জমিনকেও মানুষের বসবাস, রিজিক আহরণ ও গ্রহণ এবং চলাচলের উপযোগী করে সৃষ্টি করেছেন পরম দয়ালু ও পরম করুণাময় আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা। (সূরা মুলক : ১৫ ও জুখরুফ : ১০)
যেসব সৃষ্টিকে আপাতদৃষ্টিতে ক্ষতিকর মনে হয় সেগুলোও প্রকৃত-প্রস্তাবে কল্যাণকরই বটে। হয়তো বা আজ আমাদের বুঝে আসছে না; কিন্তু কাল ঠিকই বুঝে আসবে; প্রকৃত সত্যটা নিশ্চিত বেরিয়ে আসবে। (সূরা আল-ইমরান : ১৯১, আহকাফ : ০৩)
★★সুতরাং এমন একটি মহাগ্রন্থ তো মানুষের কাছে বুঝতে অনেক অনেক কঠিন হওয়ার কথা,,,,,
কিন্তু মহান রব্বুল আলামীন এই কিতাব কে বুঝা আমাদের জন্য সহজ করে দিয়েছেন।
এরশাদ হচ্ছে
ولقد يسرنا القرآن
আমি কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি।
,
সুতরাং ইহা ছাড়াও দুনিয়াতে অনেক সহজ বই/কিতাব রয়েছে,তবে কুরআনকে সহজ বলা হয়েছে,এটার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো এই কিতাব যেহেতু মহাগ্রন্থ একটি কিতাব,আল্লাহর বানী,তাই এটি তো অনেক কঠিন হওয়ার কথা ছিলো,কিন্তু আল্লাহ তায়ালা এটা আমাদের জন্য সহজ করে দিয়েছেন।
★★কুরআনের কিছু একক বৈশিষ্ট্য
কুরআনকে বারবার পাঠ করলে বা শুনলে মনে কোনোরূপ বিরক্তি আসে না; বরং যত বেশি তিলাওয়াত করা হয়, ততই তার প্রতি আগ্রহ-আকর্ষণ সৃষ্টি হয়। দুনিয়াতে যত চমৎকার আর আকর্ষণীয় বই আছে, দু-চারবার পড়ার পর তাতে একঘেয়েমি চলে আসে। তখন না সেটি পড়তে মনে চায়, না- শুনতে ইচ্ছে করে।
কিন্তু পবিত্র কুরআনের এটি একক বৈশিষ্ট্য যে, যত বেশি এ গ্রন্থ পাঠ করা হবে, ততই তার প্রতি ভালবাসার টান তৈরি হবে।
কুরআন ঘোষণা করেছে যে,
وانا له لحافظون
তার সংরক্ষণের ভার স্বয়ং আল্লাহ গ্রহণ করেছেন। কিয়ামত পর্যন্ত এ মহাগ্রন্থ চুল পরিমাণ বিকৃতি ও রদবদলের হাত থেকে পরিপূর্ণ সুরক্ষিত থাকবে। আল্লাহ তাআলা তার এ ওয়াদা পূরণ করেছেন।
যার ফলে কুরআন নাযিলের সময়কাল থেকে আজ প্রায় চৌদ্দশ বছর গত হতে চলেছে, এ সুদীর্ঘ সময়ের প্রত্যেক শতাব্দীর সকল যুগে লাখো বনী আদম এমন ছিলেন এবং ভবিষ্যতেও থাকবেন, যাদের বক্ষে সমগ্র কুরআন এমনভাবে সুরক্ষিত যে, তার একটি যবর-যেরেও ভুল থাকার কোনো অবকাশ নেই।
প্রত্যেক যুগেই নারী-পুরুষ, শিশু-প্রবীণ সব শ্রেণীর মাঝে কুরআনের হাফেজ বিদ্যমান ছিলেন।
কখনো বড় কোনো আলেমেদ্বীনও যদি কুরআনের কোথাও ভুল করে বসেন, তবে ছোট ছোট বাচ্চারাও মুহূর্তে তার ভুল ধরিয়ে দিতে পারবে।
পৃথিবীর আর কোনো ধর্ম নিজেদের ধর্মগ্রন্থের ব্যাপারে এরূপ নজির দেখাতে পারবে না। বহু ধর্মগ্রন্থের অবস্থা তো এতটাই শোচনীয় যে, তার মূল কোন ভাষায় লিখিত, আর তাতে কয়টি অধ্যায় রয়েছে, এটুকু রহস্যভেদ করাও আজ মুশকিল হয়ে গেছে।
প্রতি শতাব্দীতে গ্রন্থ আকারেও এ কুরআনের যে বিপুল সংখ্যক নুসখা মুদ্রিত হয় দুনিয়ার আর কোনো গ্রন্থের ক্ষেত্রে হয়ত সেই সৌভাগ্য জোটেনি। অথচ ইতিহাস প্রমাণ করে, সকল যুগেই মুসলমানদের সংখ্যা কাফেরদের তুলনায় অনেক কম ছিল।
আর প্রকাশনা ও প্রচারমাধ্যমের যে প্রাচুর্য অমুসলিম জগতে ছিল, তার উল্লেখযোগ্য অংশও মুসলিমসমাজে ছিল না। এতদসত্ত্বেও জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে কারো কোনো গ্রন্থ পৃথিবীতে এতটা প্রকাশিত হয়নি, যতটা পবিত্র কুরআনের ক্ষেত্রে হয়েছে।
আর কুরআনের সুরক্ষাকে আল্লাহ তাআলা শুধু মলাটবদ্ধ গ্রন্থের উপর নির্ভরশীল করে রাখেননি যে, তাতে আগুন ধরে যাওয়া বা কোনোরূপ বিলুপ্তির আশংকা থেকে যাবে; বরং নিজ বান্দাদের অন্তরেও একে এমনভাবে গেঁথে দিয়েছেন যে, আল্লাহ না করুন, আজ যদি সারা পৃথিবীর কুরআনের সকল কপি বিলুপ্ত করে ফেলা হয়, তবুও এ কিতাব অবিকল সংরক্ষিত থেকে যাবে। কয়েকজন কুরআনের হাফেজ একত্রে বসলেই সমগ্র কুরআন পুনরায় লিখে নেওয়া সম্ভব।
এ নজিরবিহীন সুরক্ষাও একমাত্র কুরআনেরই বৈশিষ্ট্য
কুরআন সারা দুনিয়াকে তার নজির পেশ করার চ্যালেঞ্জ দিয়েছিল। কেউ তাতে সক্ষম হয়নি। আজও প্রতিটি মুসলিম পৃথিবীর বিদগ্ধ প-িত আর ঝানু রাজনীতিবিদদের চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারে যে, গোটা পৃথিবীর ইতিহাসে একটি ঘটনা এমন দেখাও যেখানে একজন তুখোড় প্রতিভাবান ও প্রাজ্ঞ দার্শনিক এগিয়ে এসে পৃথিবীর সকল মতাদর্শ ও রীতি-রেওয়াজের বিরুদ্ধে এক সম্পূর্ণ নতুন জীবনাদর্শ পেশ করেছেন। তার সম্প্রদায়ও ছিল মূর্খ আর বেদুঈন। তিনিও এরূপ অল্প সময়ে সেই শিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটিয়েছেন। আর তা বাস্তবায়নও করেছেন এমন সুদৃঢ় পন্থায়, আজকের পৃথিবীর সুপ্রতিষ্ঠিত ও সুসংহত কোনো ব্যবস্থা- পদ্ধতিতে যার নজির পাওয়া অসম্ভব। অতীতের পৃথিবীতেও এর নজির ছিল না। কিন্তু এখন তো সভ্যতার উৎকর্ষকাল। এখন তো মুক্তচিন্তা, আধুনিকতা আর অতি প্রগতির যুগ; এখন কেউ করে দেখাক।
কারো একার পক্ষে সম্ভব না হলে স্বজাতি বরং বিশে^র সকল জাতি-গোষ্ঠীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এর সমতুল্য রচনা করে ফেলুক না!
فَاِنْ لَّمْ تَفْعَلُوْا وَ لَنْ تَفْعَلُوْا فَاتَّقُوا النَّارَ الَّتِیْ وَ قُوْدُهَا النَّاسُ وَ الْحِجَارَةُ اُعِدَّتْ لِلْكٰفِرِیْنَ.
তারপরও যদি তোমরা এ কাজ করতে না পার, আর এ তো নিশ্চিত যে, তোমরা তা কখনো পারবে না, তাহলে ভয় কর সেই আগুনকে যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। যাকে কাফেরদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। -সূরা বাকারা (০২) : ২৪
পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-
قَالَ الَّذِیْنَ لَا یَرْجُوْنَ لِقَآءَنَا ائْتِ بِقُرْاٰنٍ غَیْرِ هٰذَاۤ اَوْ بَدِّلْهُ ؕ قُلْ مَا یَكُوْنُ لِیْۤ اَنْ اُبَدِّلَهٗ مِنْ تِلْقَآئِ نَفْسِیْ.
যারা (আখেরাতে) আমার সাথে মিলিত হওয়ার আশা রাখে না, তারা বলে, এটা নয়; অন্য কোনো কুরআন নিয়ে আস। অথবা এতে পরিবর্তন আন। ( হে নবী!) বলুন, আমার এ অধিকার নেই যে, নিজের পক্ষ থেকে এতে কোনো পরিবর্তন আনব। -সূরা ইউনুস (১০) : ১৫
.
★★যেই কুরআন আল্লাহ তায়ালার কালাম,যাহা লাওহে মাহফুজে সংরক্ষিত আছে,এটি যেহেতু গায়রে মাখলুক,তাই এটি আরশে আজিম থেকে শ্রেষ্ঠ।