সম্মানিত শায়েখ,
আমি গত সাড়ে তিন বছর যাবত বিবাহিত এবং এক সন্তানের জনক। স্নাতক শেষ করে বছর তিনেক বেকার থাকার পর আমি এখন স্বচ্ছল। মাসে কম-বেশি লাখ তিনেক মত আয় আমার গত বছর থেকে। আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর পেলে কৃতজ্ঞ হব।
১. আমাদের বিয়ের সময় কাবিনে উল্লেখ ছিল যে স্ত্রীর ভরনপোষণ আমি আদায় করব। বেকার থাকার কারণে আমি দিতাম না।স্ত্রীও তখন কোনো দাবী করে নি। কিছু দিন সংসার করার পর, পারিবারিক এক সমস্যার সূত্র ধরে আমার মা আমার স্ত্রীর বাবাকে ফোন করে আমার স্ত্রীকে আমার কাছ থেকে নিয়ে যেতে বলে। সেই পারিপার্শ্বিক ঘটনার জেরে মোটামুটি ১০ মাস আমার স্ত্রীর সাথে কোনো যোগাযোগ হয় নি। এ সময়ের এক পয়সা খরচ আমি তাকে দেয় নি। পরবর্তীতে তাকে বুঝিয়ে সংসারে আনার পর আমার ক্ষুদ্র স্বামর্থ অনুযায়ী এক সঙ্গে থেকেছি। সত্যি বলতে, আমি নিজে ফুটপাতের ৫০০ টাকার পায়জামা-পান্জাবি সেট পড়তাম। এখনও ৫০০-১০০০ এর মধ্যে প্যান্ট কেনার চেষ্টা করি। তবে শ্বশুরবাড়ি থেকে বিভিন্ন সময় অনেক আত্মীয় দামী জিনিস দিলে পড়ি।
আমি বিদেশে আসার সময় স্ত্রীকে তার বাবার বাড়ি রেখে আসি, যেহেতু সে সন্তান সম্ভবা ছিলেন। তখন থেকেই যেহেতু আমার আয়রোজগার শুরু হয়েছে, আমি তাকে হাজার পাচেক টাকা হাত খরচ দিতে শুরু করলাম।
আমার স্ত্রী একদিন আব্দুর রাজ্জাক হুজুরের ফতোয়া দেখালেন, সেখানে হুজুর বলেছেন যে স্ত্রীকে ৩ দিনের বেশি বাপেরবাড়ি রাখলে তার খাওয়ার খরচ দেয়া লাগবে যেহেতু ভরণপোষণের দায়িত্ব স্বামীর।
আমার সন্তান জন্ম লাভের পর থেকে আমি শ্বশুরকে হাজার দশেক টাকা পাঠাতে শুরু করলাম। আমার খাওয়ার খরচও কম বেশি এরকমই।
কিন্তু স্ত্রী এতে নারাজ।সে অনলাইনে বিভিন্ন পড়াশোনার জন্য তার খরচ হয় দাবী করায়, গত মাস থেকে তাকে হাত খরচও দিচ্ছি হাজার পাচেক। বলেছিলাম আরো লাগলে যেন জানায়।
কিন্তু অবাক ব্যাপার যে সে আরো দাবি করছে। আমার বিয়ে হয়েছে সাড়ে তিন বছর হলো, বিয়ের সময় একজন একটা জিলবাব দিয়েছিল আমার স্ত্রীকে; পাশাপাশি আমার স্ত্রী নিজের টাকায় আরো দু-একটি কিনেছে। আমি ৩-৪ টা গজ কাপড়ের জামা ছাড়া আর কিছু দিই নি। এক ভাইয়ের স্ত্রীর জন্য কয়েকদিন আগে বোরখা কিনে গিফট করার সময় আমার স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করেছিলাম লাগবে কি না, সে বলেছিল লাগবে না।
অথচ ইদানীং সে সাড়ে চার হাজার টাকার একটা জিলবাব কিনতে চাচ্ছে, সে বলতেছে যে এত কম দামে মিশরীয় জিলবাব আর পাওয়া যাবে না তাই কিনবে।
আরো দাবী করতেছে যে অনলাইনে রান্না কোর্স করতেছে তাই অনেক জিনিস কিনতে হবে। তবে সে একটু মিতব্যয়ীতা দেখায়ে ইলেক্ট্রিক ওভেন না কিনে সাশ্রয়ে গ্যাস ওভেন কিনতে চাচ্ছে।
হুজুর স্ত্রীর এত অহেতুক দাবি দাওয়া নাকচ করে এক টাকাও দেয় নি। এতে কি আমার পাপ হবে?
২. আমার স্ত্রী যেহেতু আমার দেয়া টাকায় সন্তুষ্ট না, সে একটা ল্যাপটপ চাচ্ছে যেন অনলাইনে দ্বীনি কিছু কাজ আর কিছু আয় রোজগার করতে পারে টুকটাক। আমি এটা দিতে ইচ্ছুক না, তাই সরাসরি না বলে অজুহাত দেখাচ্ছি। হুজুর, এতে কি গুনাহ হবে?
৩. যেই সময় আমার সামর্থ্যহীনতার জন্য ভরোনপোষন দিই নি, এখনকি সেটা আদায় করতে হবে?
৪. আমার স্ত্রীর ইচ্ছে ছিল মোহর হিসেবে সে হজ করার খরচ নিবে। অত টাকা আমার ছিল না। আমার মা তার গহনার কিছু অংশ দিয়েছিলেন মোহরে ফাতেমী আদায় করার জন্য।যেহেতু দ্রুততম সময়ের মধ্যে সব ঠিকঠাক করা হয়েছিল, তাই ঘটকের পিড়াপিড়িতে মোহরে ফাতেমীতে রাজি হন পাত্রীপক্ষ।আমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে ছেলের সামর্থ্য হলে ভবিষ্যতে অনেক হজ করা যাবে। কোনো কথা দেয়া হয় নি এই মর্মে। আমি আমার স্ত্রীকে পাসপোর্ট করে দিয়েছি এবং বলেছি যে উমরার টাকা রেডি। এখন কোনো কারণে যদি ডিভোর্স হয়ে যায় আমাদের তাহলে কি হজ-উমরার টাকা তাকে দিয়ে দিতে হবে?
৫. আল্লাহ আমাকে অনেক সামর্থ্য দিয়েছেন, সেই সুবাদে ভাই- খালাত ভাইরা কম্পিউটার, ক্যামেরা এসব দামী জিনিস গিফট চাইলেও দিয়ে দিয়। কিন্তু আমি নিজের খাওয়া-পরাতে কম খরচ করি। এখন আমার স্ত্রীকে কিভাবে নসিহত করব এ ব্যাপারে একটু পরামর্শ চাই।
৬. আমার স্ত্রী ভেবেছিলেন যে পাত্র দ্বীনদার, তাই বরযাত্রী অধিক হতে পারে এরকম ধারণাও করেনি। আমাদের বাসা থেকে ৭০ জন মত যেতে চাইলে আমার শ্বশুর তার সম্মান বাচাতে রাজি হয়েছিলেন। পরবর্তীতে আমি জানতে পারি যে আপ্যায়নের পুরো টাকায় একদিনের মধ্যে বিভিন্ন জায়গা থেকে ধার করে বহু কস্টে যোগাড় করেছিলেন শ্বশুর।
বিয়ের মাস ছয়েক পরে, আমার ফুপা শ্বশুরকে ফোন করে যৌতুকের কথা বলে।সেই জন্য আমার শ্বশুর বাড়ি থেকে ৩ লাখ টাকার ফার্নিচার বানানো হয়। ওগুলো আমার স্ত্রী আনতে রাজি না। আমি বা আমার মা বাবা এ ব্যাপারে কিছু বলিনি শ্বশুর বাড়িতে। কিন্তু উনাদের বাড়িতে ওগুলো শুধু শুধু নস্ট হওয়ার থেকে যদি আমাদের উপহার দেন, তাহলে তো গ্রহণ করা উচিৎ। আমার স্ত্রী দাবি করে যে বরযাত্রী আর যৌতুক চেয়ে তার বাবার ওপর জুলুম করা হয়েছে। সে কি ঠিক বলে?
জাযাকাল্লাহ