জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
★ঘটনা ০১ এর আলোকে
শরীয়তের বিধান হলো এক বৈঠকে ৩ তালাক দেওয়া হোক,বা একাধিক বৈঠকে,
এক শব্দে ৩ তালাক দেওয়া হোক বা একাধিক শব্দে ৩ তালাক দেওয়া হোক,সব ছুরতেই ৩ তালাকই পতিত হয়ে যাবে।
সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে উক্ত স্ত্রীর উপর তিন তালাক পতিত হয়ে গিয়েছে।
তিন তালাক দেবার পর উক্ত মহিলা আর নিজের স্ত্রী থাকে না। পর মানুষ হয়ে যায়। এটিই অমোঘ বিধান।
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ
فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَهُ مِن بَعْدُ حَتَّىٰ تَنكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ ۗ فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَن يَتَرَاجَعَا إِن ظَنَّا أَن يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ ۗ وَتِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ يُبَيِّنُهَا لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ [٢:٢٣٠]
তারপর যদি সে স্ত্রীকে (তৃতীয়বার) তালাক দেয়া হয়, তবে সে স্ত্রী যে পর্যন্ত তাকে ছাড়া অপর কোন স্বামীর সাথে বিয়ে করে না নেবে,তার জন্য হালাল নয়। অতঃপর যদি দ্বিতীয় স্বামী তালাক দিয়ে দেয়,তাহলে তাদের উভয়ের জন্যই পরস্পরকে পুনরায় বিয়ে করাতে কোন পাপ নেই। যদি আল্লাহর হুকুম বজায় রাখার ইচ্ছা থাকে। আর এই হলো আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা;যারা উপলব্ধি করে তাদের জন্য এসব বর্ণনা করা হয়। [সূরা বাকারা-২৩০]
وقال الليث عن نافع كان ابن عمر إذا سئل عمن طلق ثلاثا قال لو طلقت مرة أو مرتين فأن النبي صلى الله عليه و سلم أمرني بهذا فإن طلقتها ثلاثا حرمت حتى تنكح زوجا غيرك
হযরত নাফে রহ. বলেন,যখন হযরত ইবনে উমর রাঃ এর কাছে ‘এক সাথে তিন তালাক দিলে তিন তালাক পতিত হওয়া না হওয়া’ (রুজু‘করা যাবে কিনা) বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলো,তখন তিনি বলেন-“যদি তুমি এক বা দুই তালাক দিয়ে থাকো তাহলে ‘রুজু’ [তথা স্ত্রীকে বিবাহ করা ছাড়াই ফিরিয়ে আনা] করতে পার। কারণ,রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এরকম অবস্থায় ‘রুজু’ করার আদেশ দিয়েছিলেন। যদি তিন তালাক দিয়ে দাও তাহলে স্ত্রী হারাম হয়ে যাবে, সে তোমাকে ছাড়া অন্য স্বামী গ্রহণ করা পর্যন্ত। {সহীহ বুখারী-২/৭৯২, ২/৮০৩}
আরো জানুনঃ
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
(০১)
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনার স্ত্রীর উপর তিন তালাক পতিত হয়েছে।
আপনার দেয়া তালাক শুদ্ধ হয়েছে।
(০২)
আমার স্ত্রীর পরের স্বামীর সাথে এমন সংসার জায়েয হয়নি।
এটি যেনার সংসার।
(০৩)
যতদিন আপনার কাছে ছিলো,ততদিনের মধ্যে কোনো সন্তান হয়ে থাকলে তার পিতা আপনি হবেন।
যতদিন সে ২য় বিবাহের নামে এহেন যেনা শুরু করেছে,তার পর হতে যত সন্তান হয়েছে,সবই যেনার সন্তান।
তাদের বংশ সাব্যস্ত হবেনা।
(০৪)
তাকে আর তালাক দিতে হবেনা।
আপনার তালাক প্রদানের পর তার তো ইদ্দত কাল শেষ হয়ে গিয়েছে,সুতরাং সে এখন ঐ স্বামীকে বা অন্য কাউকে বিবাহ করতে পারবে।
(০৫)
অতি সত্ত্বের দিয়ে দিতে হবে,তবে দেড়িতে দেয়ার ক্ষেত্রে আপনার আগের সেই স্ত্রী রাজি হলে দেড়িতেও দিতে পারবেন।
(০৬)
মোহরানার টাকা দেরীতে প্রদান করিলে তালাকের উপরে এর কোন প্রভাব পড়বেনা।
(০৭)
তারা এখন নতুন ভাবে বিবাহ পড়িয়ে নিবে।
ঘটনা ০২
শরীতেয়ের বিধান হলো দুই বোনকে একসাথে বিবাহে রাখা জায়েজ নেই,হারাম।
আল্লাহ তায়ালা বলেন-
حُرِّمَتْ عَلَيْكُمْ أُمَّهَاتُكُمْ وَبَنَاتُكُمْ وَأَخَوَاتُكُمْ وَعَمَّاتُكُمْ وَخَالَاتُكُمْ وَبَنَاتُ الْأَخِ وَبَنَاتُ الْأُخْتِ وَأُمَّهَاتُكُمُ اللَّاتِي أَرْضَعْنَكُمْ وَأَخَوَاتُكُم مِّنَ الرَّضَاعَةِ وَأُمَّهَاتُ نِسَائِكُمْ وَرَبَائِبُكُمُ اللَّاتِي فِي حُجُورِكُم مِّن نِّسَائِكُمُ اللَّاتِي دَخَلْتُم بِهِنَّ فَإِن لَّمْ تَكُونُوا دَخَلْتُم بِهِنَّ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ وَحَلَائِلُ أَبْنَائِكُمُ الَّذِينَ مِنْ أَصْلَابِكُمْ وَأَن تَجْمَعُوا بَيْنَ الْأُخْتَيْنِ إِلَّا مَا قَدْ سَلَفَ ۗ إِنَّ اللَّهَ كَانَ غَفُورًا رَّحِيمًا
তোমাদের জন্যে হারাম করা হয়েছে তোমাদের মাতা, তোমাদের কন্যা, তোমাদের বোন, তোমাদের ফুফু, তোমাদের খালা, ভ্রাতৃকণ্যা; ভগিনীকণ্যা তোমাদের সে মাতা, যারা তোমাদেরকে স্তন্যপান করিয়েছে, তোমাদের দুধ-বোন, তোমাদের স্ত্রীদের মাতা, তোমরা যাদের সাথে সহবাস করেছ সে স্ত্রীদের কন্যা যারা তোমাদের লালন-পালনে আছে। যদি তাদের সাথে সহবাস না করে থাক, তবে এ বিবাহে তোমাদের কোন গোনাহ নেই। তোমাদের ঔরসজাত পুত্রদের স্ত্রী এবং দুই বোনকে একত্রে বিবাহ করা; কিন্তু যা অতীত হয়ে গেছে। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাকরী, দয়ালু। (সূরা নিসা, ২৩)
(১-৫)
★আপনি যে ফোনে আপনার ১ম স্ত্রীর সাথে যোগাযোগ করে তাকে তিন তালাক দিয়েছিলেন,এই তালাক কবে দিয়েছিলেন?
যদি এই তালাক দেয়ার আগেই আপনি তার বোন মোছাঃ মিমু আক্তারকে বিবাহ করে থাকেন,তাহলে আপনার এই ২য় বিবাহ শুদ্ধ হয়নি।
★আপনার সন্তান যেনার সন্তান বলে বিবেচিত হবে,আপনি এ সন্তানের অভিভাবক বলে গন্য হবেননা।
,
★এই বিবাহ শুদ্ধ করিতে হইলে করনীয় হলো নতুন করে বিবাহ পড়িয়ে নিতে হবে।
★নতুন কর বিবাহ পড়িয়ে নেয়ার আগে দ্রুত পৃথক হয়ে যেতে হবে।
★এক্ষেত্রে সন্তানদের ও এই মহিলা (দ্বিতীয় স্ত্রীর) ভরণপোষণের দায়িত্ব আপনাকে নিতে হবেনা।
(০৬)
বিষয়টি উপরে উল্লেখ রয়েছে।
(০৭)
তাহলে তার ব্যভিচারের ফসল ঐ সন্তানদের দায়িত্ব আপনিও পাবেননা,২য় স্বামীও পাবেনা।
এটি যেনার সন্তান।
কোনো বংশ সাব্যস্ত হবেনা।
★তবে শরীয়তের একটি বিধান হলো, যেনার পর সন্তান হলে যেনাকারী যদি সেই সন্তানের বাবা হওয়ার দাবী করে,এবং যেনার আলোচনা না করে, তাহলে ঐ বাচ্চার বংশ তার থেকে সাব্যস্ত হবে।
★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে উক্ত ব্যাক্তি (২য় স্বামী) যদি এই সন্তানের বাবা বলে স্বীকার করে,তাহলে সে এর ভরনপোষণ এর দায়িত্ব নিবে।
বিস্তারিত জানুনঃ-
★উল্লেখ্য যে যদি আপনি আপনার ১ম স্ত্রীকে তালাক দেয়ার পর তার বোন মোছাঃ মিমু আক্তারকে বিবাহ করে থাকেন,তাহলে আপনার এই ২য় বিবাহ শুদ্ধ বলে গন্য হবে।
আপনাদের এই সংসার বৈধ সংসার বলে বিবেচিত হবে।
সেক্ষেত্রে এই ২য় স্ত্রীর সন্তান বৈধ সন্তান হবে,নতুন করে বিবাহ পড়িয়ে নিতে হবেনা।