আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
116 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (4 points)
আমরা দুই ভাই, দুজনই iom এ পড়ছি। বড় ভাই ২১৬ ব্যাচে, আমি ২২৮ ব্যাচে। আমি বিএসসি ফাইনাল ইয়ারে পড়ি। আমার সকল খরচ আমার পরিবার থেকেই দেয়া হয়। আমার বাবা শিক্ষকতা থেকে অবসর নেয়ার পর, আমার মা এখন আমার খরচ দিচ্ছেন। আমার মা উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান। এসব ক্ষেত্রে পর্দা কতটা মানা সম্ভব তা বলাই বাহুল্য। যদিও তিনি মাথায় হিজাব ব্যবহার করেন। তার বেতন কি হালাল হবে? মাকে বলা হয়েছিল যে, উনি উনার বেতনের টাকা থেকে খরচটা দিবেন, অন্য কোনো উপড়ি ইনকাম থেকে নয়। এখন মাস শেষে উনি টাকা পাঠান, কিন্ত তা শুধু বেতনের টাকা থেকে নাকি অন্য কিছুও আছে, তা তো যাচাই করা সম্ভব না আমার পক্ষে। আমি উনার কিছু কাজের নমুনা দেখেছি, তো সেখান থেকে আমার মনে হয় যে, বেতন ছাড়াও অন্য অর্থ আসে যেটা আসার কথা নয়। আমার বাবাও রাজনীতির সাথে জড়িত। তবে আমি আজ পর্যন্ত যা দেখে এসেছি, তারা দুজনই আমাদের ভালো চান, আমাদের সর্বোচ্চ ভালো রাখতে চান। তবে আমি মনে করি, এজন্য উনারা হালাল হারামের গণ্ডি ভুলে গেছেন। হালাল হারাম সব একাকার হয়ে গেছে।
মনে হয় এমন অবস্থা যে, আমার ছেলে দুটো ভালো থাক, আর কার কী হলো তা দেখার প্রয়োজন নাই।
আমরা দু ভাই অনেক বুঝানোর চেষ্টা করি, তবুও তারা বুঝতে নাড়াজ। আমার ভাই তাদেরকে এরকমও বলেছিল " আপনারা এসব ছেড়ে দিন, আমার যতটুকু সামর্থ্য ওইটা দিয়েই সংসার চলবে"। কিন্তু তারা নিম্নমানের জীবন কল্পনাও করতে পারে না। উচ্চমানের জীবন তারা নিজেরা প্রত্যাশা করেন, আমাদের জন্যও।  তাদের উচ্চাশা দিনদিন বেড়েই চলেছে, কখনো বলে যে এসব নির্বাচন ছেড়ে দিবে, আবার কর্মকাণ্ড এমন যে হয়তো তারা পরবর্তীতে আরো বড় পদে লড়বে। তাদের এসব ছাড়ার কোনো নমুনাই নেই। আমাদের মোটামুটি ঋণও আছে, তারা সে ঋণ দ্রুত পরিশোধ করাতে যে কতটা তৎপর এ সম্পর্কে আমার সমূহ সন্দেহ আছে। শয়তানের ধোকা থেকে তারা যেন বেরই হতে পারছে না।
আমি চেষ্টা করছি যাতে, তাদের থেকে টাকা নিতে না হয়। আমি টুকটাক ফ্রিল্যান্সিং (ওয়ালপেপার, ব্যাকগ্রাউন্ড তৈরি) করি, কোনো মাসে আয় হয়, আবার কখনো নেই, এরকম। যার কারণে পুরোপুরি নিজের খরচ চালানোর সুযোগ হচ্ছে না।
আশা রাখি, আল্লাহর রহমতে ভবিষ্যতে পারব। কোনো দীনি ভাইয়ের খোজ পেলে যিনি এসব কাজ করেন, তাহলে তার কাছে কাজ নিয়ে আমিও আমার খরচ চালাতে পারতাম। কিন্ত যতদিন তা না হচ্ছে, ততদিন আমি কি করতে পারি।
আগে থেকে টিউশন করালে নাহয় একটা ব্যবস্থা হয়ে যেত। কিন্তু ফাইনাল ইয়ারে একাডেমিক, ল্যাব, ট্রেনিং, প্রজেক্ট, মাদ্রাসার ক্লাস এগুলোর ব্যবস্ততায়, টিউশন খোঁজা / নিয়মিত কারো বাসায় যেয়ে টিউশন করাটা আমার জন্য কষ্টকর।
আমি চেষ্টা করছি যাতে মাদ্রাসার বেতন নিজের আয় থেকে দিতে পারি, তবে তা স্বল্প ও সবসময় থাকে না। যদি পরিবার থেকে নেয়া টাকা হারাম হয়, তাহলে আমি পোর ফান্ডে আবেদন করব, তখন ইনশাআল্লাহ নিজের স্বল্প টাকা থেকেই মাদ্রাসার বেতন দিতে পারব।

১. এই অবস্থায় আমি কি মার কাছে টাকা নিয়ে নিজের খরচ চালাতে পারব? তা কি হালাল হবে?
আমি ছোট। বড় ভাই বিবাহিত, দেড় বছরের বাচ্চা আছে। আলহামদুলিল্লাহ নিজের সংসার চালোনোর যোগ্যতা হয়েছে। তবে আর আয় এতটাও বেশি না যে, সে আমার খরচও চালাতে পারবে। আমার আত্মীয়রা যাদের কাছে এখনো আমার বাবা মার ঋণ আছে, তারা মনে করে আমাদের দুই ভাইকে বড় করতে গিয়েই উনারা সব ঋণ করেছেন, সে ঋণ এখনো শোধ হচ্ছে না। তাই তারা হয়তো মনে মনে আমাদের দুই ভাইয়ের প্রতি বিরক্ত। যে আমাদের জন্যই যেন সব ঋণ। পাওনাদার আত্মীয়রা যখন দেখে তাদের কাছে ঋণ থাকা অবস্থায় আমাদের জীবনমান কত উন্নত, অথচ তাদের সেই জীবনমান নেই। তখন হয়তো তারা ইর্ষান্বিত হয়, বা বদদোয়াও করে কি না। আমাদের সব চাহিদা পূরণ করা হচ্ছে, শোধও হচ্ছে, তবে ঋণ কোনো না কোনো ভাবে থেকেই যাচ্ছে। বাস্তবতা তো এটাও যে, শুধু আমাদের বড় করতেই নয়, বরং দু বার নির্বাচন, কাউন্সিল, বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রোগ্রাম, বাড়ি নির্মান - এসব কাজেও অনেক টাকা লেগেছিল। তারা যদি সামর্থ্য অনুযায়ী গ্রামেই পড়ালেখা করাত, তাহলে তো এত টাকা লাগত না, বাবা মা যেভাবে পড়াবেন আমরা তো সেভাবেই পড়তাম, তো এতে আমাদের দু ভাইয়ের দোষ কোথায়। বুঝলাম সব আমাদের ভালোর জন্য, তাই বলে ঋণ করে কেন! যা দিনের পর দিন থেকেই যাচ্ছে।
২. আমি ও আমার ভাই আর কি করতে পারি যাতে বাবা মা এসব থেকে বের হতে পারে?

1 Answer

0 votes
by (573,960 points)
edited by
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ-


আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " أَيُّهَا النَّاسُ، إِنَّ اللهَ طَيِّبٌ لَا يَقْبَلُ إِلَّا طَيِّبًا، وَإِنَّ اللهَ أَمَرَ الْمُؤْمِنِينَ بِمَا أَمَرَ بِهِ الْمُرْسَلِينَ، فَقَالَ: {يَا أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوا صَالِحًا، إِنِّي بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ} [المؤمنون: ٥١] وَقَالَ: {يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُلُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ} [البقرة: ١٧٢] ثُمَّ ذَكَرَ الرَّجُلَ يُطِيلُ السَّفَرَ أَشْعَثَ أَغْبَرَ، يَمُدُّ يَدَيْهِ إِلَى السَّمَاءِ، يَا رَبِّ، يَا رَبِّ، وَمَطْعَمُهُ حَرَامٌ، وَمَشْرَبُهُ حَرَامٌ، وَمَلْبَسُهُ حَرَامٌ، وَغُذِيَ بِالْحَرَامِ، فَأَنَّى يُسْتَجَابُ لِذَلِكَ؟ "

 তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “আল্লাহ তা'আলা পবিত্র, তিনি পবিত্র ও হালাল বস্তু ছাড়া গ্রহণ করেন না। আর আল্লাহ তা'আলা তার প্রেরিত রসূলদের যে হুকুম দিয়েছেন মুমিনদেরকেও সে হুকুম দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “হে রসূলগণ! তোমরা পবিত্র ও হালাল জিনিস আহার কর এবং ভাল কাজ কর। আমি তোমাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে জ্ঞাত।" (সূরা আল মু'মিনূন ২৩ঃ ৫১)তিনি (আল্লাহ) আরো বলেছেন, “তোমরা যারা ঈমান এনেছো শোনা আমি তোমাদের যে সব পবিত্র জিনিস রিযক হিসেবে দিয়েছি তা খাও”— (সূরা আল বাকারাহ ২ঃ ১৭২)। অতঃপর তিনি এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন, যে দূর-দূরান্ত পর্যন্ত দীর্ঘ সফর করে। ফলে সে ধুলি ধূসরিত রুক্ষ কেশধারী হয়ে পড়ে। অতঃপর সে আকাশের দিকে হাত তুলে বলে, “হে আমার প্রতিপালক! অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পরিধেয় বস্ত্র হারাম এবং আহার্যও হারাম। কাজেই এমন ব্যক্তির দু'আ তিনি কী করে কবুল করতে পারেন?”(সহীহ মুসলিম-১০১৫)

★★প্রশ্নকারী প্রিয় দ্বীনী ভাই!
শরীয়ত উপার্জন সক্ষম বালেগ পুরুষ এর উপর আরো অনেকের লালন পালনের দায়িত্ব দিয়েছে।যেমন, উপার্জন অক্ষম মাতা-পিতা, নাবালিগ ছেলে,মেয়ে,স্ত্রী সহ অনেকের ভরণপোষণের দায়িত্ব রয়েছে একজন পুরুষের উপর।
এখন অভিবাবকের সম্পদ হারাম হলে, সেই সম্পদ থেকে খরছ না করে নিজ মাল থেকে খরছ করাই উচিৎ,যদি নিজের সম্পদ থাকে।তবে বালেগ ছেলের উপর ওয়াজিব যে,তার সম্পদ না থাকলেও সে হালাল তরিক্বায় তার জীবিকা নির্বাহ করার চেষ্টা করবে।হ্যা উপার্জন অক্ষম ব্যক্তির জন্য অভিবাবকের  হারাম মাল থেকে তাওবাহ-ইস্তেগফারেরর সাথে প্রয়োজন পর্যন্ত খোরাকি গ্রহণ করা বৈধ রয়েছে।কেননা এই উপার্জন অক্ষম ব্যক্তিগণকে ভরণপোষণ করা তার একান্ত দায়িত্ব ছিলো।সুতরাং গোনাহ ঐ অভিবাবকের ই হবে।(বিস্তারিত জানতে দেখুন-ফাতাওয়ায়ে উসমানী-৩/১২৭)

আরো জানুনঃ

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই, 
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনার মা সরকারী ভাবে যেই বেতন অয়ান,তাহা হালাল।
অবৈধ পন্থায় তিনি কোনো টাকা গ্রহন করলে তাহা  সেই টাকা হারাম হবে।

প্রশ্নের বিবরণ মতে আপনার মায়ের সম্পদ যেহেতু হালাল হারাম মিশ্রিত, এক্ষেত্রে যদি হালালই বেশি হয়,তাহলে আপনার জন্য আপনার মায়ের উপার্জন ভোগ করতে সমস্যা নেই।  

আর যদি হারামই বেশি হয়,তাহলে আপনি আবারো বলে দিবেন যে আপনি কিন্তু আপনার বেতন (ও অন্যান্য হালাল অর্থ) হতেই আমার খরচ দিবেন।
অন্য ভাবে উপার্জিত টাকা আমাকে দিবেননা।

আপনার মা যদি এতে সম্মত হয়,এবং বলে যে আমি হালাল খাত হতেই টাকা তোমাকে টাকা দিচ্ছি, দিবো,তাহলে এক্ষেত্রে আপনি আপনার মায়ের কাছ হতে টাকা নিয়ে নিজের খরচ চালাতে পারবেন।

(০২)
তাদেরকে জান্নাত জাহান্নামের ভয়ের বয়ান শুনতে দিতে পারেন।
হারাম উপার্জনের পরকালীন শাস্তি সংক্রান্ত বই তাদেরকে পড়তে দিতে পারেন।
,
আপনার বাবাকে বুঝিয়ে তাবলীগে বা কোনো হক্কানী শায়েখের কাছে পাঠাতে পারেন।

ধারাবাহিক ভাবে সাধ্যমতো বুঝানো অব্যাহত রাখবেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...