আমরা দুই ভাই, দুজনই iom এ পড়ছি। বড় ভাই ২১৬ ব্যাচে, আমি ২২৮ ব্যাচে। আমি বিএসসি ফাইনাল ইয়ারে পড়ি। আমার সকল খরচ আমার পরিবার থেকেই দেয়া হয়। আমার বাবা শিক্ষকতা থেকে অবসর নেয়ার পর, আমার মা এখন আমার খরচ দিচ্ছেন। আমার মা উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান। এসব ক্ষেত্রে পর্দা কতটা মানা সম্ভব তা বলাই বাহুল্য। যদিও তিনি মাথায় হিজাব ব্যবহার করেন। তার বেতন কি হালাল হবে? মাকে বলা হয়েছিল যে, উনি উনার বেতনের টাকা থেকে খরচটা দিবেন, অন্য কোনো উপড়ি ইনকাম থেকে নয়। এখন মাস শেষে উনি টাকা পাঠান, কিন্ত তা শুধু বেতনের টাকা থেকে নাকি অন্য কিছুও আছে, তা তো যাচাই করা সম্ভব না আমার পক্ষে। আমি উনার কিছু কাজের নমুনা দেখেছি, তো সেখান থেকে আমার মনে হয় যে, বেতন ছাড়াও অন্য অর্থ আসে যেটা আসার কথা নয়। আমার বাবাও রাজনীতির সাথে জড়িত। তবে আমি আজ পর্যন্ত যা দেখে এসেছি, তারা দুজনই আমাদের ভালো চান, আমাদের সর্বোচ্চ ভালো রাখতে চান। তবে আমি মনে করি, এজন্য উনারা হালাল হারামের গণ্ডি ভুলে গেছেন। হালাল হারাম সব একাকার হয়ে গেছে।
মনে হয় এমন অবস্থা যে, আমার ছেলে দুটো ভালো থাক, আর কার কী হলো তা দেখার প্রয়োজন নাই।
আমরা দু ভাই অনেক বুঝানোর চেষ্টা করি, তবুও তারা বুঝতে নাড়াজ। আমার ভাই তাদেরকে এরকমও বলেছিল " আপনারা এসব ছেড়ে দিন, আমার যতটুকু সামর্থ্য ওইটা দিয়েই সংসার চলবে"। কিন্তু তারা নিম্নমানের জীবন কল্পনাও করতে পারে না। উচ্চমানের জীবন তারা নিজেরা প্রত্যাশা করেন, আমাদের জন্যও। তাদের উচ্চাশা দিনদিন বেড়েই চলেছে, কখনো বলে যে এসব নির্বাচন ছেড়ে দিবে, আবার কর্মকাণ্ড এমন যে হয়তো তারা পরবর্তীতে আরো বড় পদে লড়বে। তাদের এসব ছাড়ার কোনো নমুনাই নেই। আমাদের মোটামুটি ঋণও আছে, তারা সে ঋণ দ্রুত পরিশোধ করাতে যে কতটা তৎপর এ সম্পর্কে আমার সমূহ সন্দেহ আছে। শয়তানের ধোকা থেকে তারা যেন বেরই হতে পারছে না।
আমি চেষ্টা করছি যাতে, তাদের থেকে টাকা নিতে না হয়। আমি টুকটাক ফ্রিল্যান্সিং (ওয়ালপেপার, ব্যাকগ্রাউন্ড তৈরি) করি, কোনো মাসে আয় হয়, আবার কখনো নেই, এরকম। যার কারণে পুরোপুরি নিজের খরচ চালানোর সুযোগ হচ্ছে না।
আশা রাখি, আল্লাহর রহমতে ভবিষ্যতে পারব। কোনো দীনি ভাইয়ের খোজ পেলে যিনি এসব কাজ করেন, তাহলে তার কাছে কাজ নিয়ে আমিও আমার খরচ চালাতে পারতাম। কিন্ত যতদিন তা না হচ্ছে, ততদিন আমি কি করতে পারি।
আগে থেকে টিউশন করালে নাহয় একটা ব্যবস্থা হয়ে যেত। কিন্তু ফাইনাল ইয়ারে একাডেমিক, ল্যাব, ট্রেনিং, প্রজেক্ট, মাদ্রাসার ক্লাস এগুলোর ব্যবস্ততায়, টিউশন খোঁজা / নিয়মিত কারো বাসায় যেয়ে টিউশন করাটা আমার জন্য কষ্টকর।
আমি চেষ্টা করছি যাতে মাদ্রাসার বেতন নিজের আয় থেকে দিতে পারি, তবে তা স্বল্প ও সবসময় থাকে না। যদি পরিবার থেকে নেয়া টাকা হারাম হয়, তাহলে আমি পোর ফান্ডে আবেদন করব, তখন ইনশাআল্লাহ নিজের স্বল্প টাকা থেকেই মাদ্রাসার বেতন দিতে পারব।
১. এই অবস্থায় আমি কি মার কাছে টাকা নিয়ে নিজের খরচ চালাতে পারব? তা কি হালাল হবে?
আমি ছোট। বড় ভাই বিবাহিত, দেড় বছরের বাচ্চা আছে। আলহামদুলিল্লাহ নিজের সংসার চালোনোর যোগ্যতা হয়েছে। তবে আর আয় এতটাও বেশি না যে, সে আমার খরচও চালাতে পারবে। আমার আত্মীয়রা যাদের কাছে এখনো আমার বাবা মার ঋণ আছে, তারা মনে করে আমাদের দুই ভাইকে বড় করতে গিয়েই উনারা সব ঋণ করেছেন, সে ঋণ এখনো শোধ হচ্ছে না। তাই তারা হয়তো মনে মনে আমাদের দুই ভাইয়ের প্রতি বিরক্ত। যে আমাদের জন্যই যেন সব ঋণ। পাওনাদার আত্মীয়রা যখন দেখে তাদের কাছে ঋণ থাকা অবস্থায় আমাদের জীবনমান কত উন্নত, অথচ তাদের সেই জীবনমান নেই। তখন হয়তো তারা ইর্ষান্বিত হয়, বা বদদোয়াও করে কি না। আমাদের সব চাহিদা পূরণ করা হচ্ছে, শোধও হচ্ছে, তবে ঋণ কোনো না কোনো ভাবে থেকেই যাচ্ছে। বাস্তবতা তো এটাও যে, শুধু আমাদের বড় করতেই নয়, বরং দু বার নির্বাচন, কাউন্সিল, বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রোগ্রাম, বাড়ি নির্মান - এসব কাজেও অনেক টাকা লেগেছিল। তারা যদি সামর্থ্য অনুযায়ী গ্রামেই পড়ালেখা করাত, তাহলে তো এত টাকা লাগত না, বাবা মা যেভাবে পড়াবেন আমরা তো সেভাবেই পড়তাম, তো এতে আমাদের দু ভাইয়ের দোষ কোথায়। বুঝলাম সব আমাদের ভালোর জন্য, তাই বলে ঋণ করে কেন! যা দিনের পর দিন থেকেই যাচ্ছে।
২. আমি ও আমার ভাই আর কি করতে পারি যাতে বাবা মা এসব থেকে বের হতে পারে?