আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
203 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (7 points)
আসসালামু আলাইকুম। আমার স্বামী ঢাকায় থাকেন আর আমি চাকরির করি রাজশাহীতে। রাজশাহীতে আমার বাবার বাড়ি, বাবার বাড়িতে আমি থাকি। স্বামী সংসার ফেলে এই চাকরি করা আমার ইচ্ছার বিরুধ্যে। আমার বাবা মা জোর করে বাধ্য করছে আমাকে চাকরি করতে এবং আমার
স্বামীও তাতে রাজি। আমার চাকরি ছারার ব্যপারে তার কোন সাহায্য নেই।  স্বামী ঢাকায় থাকার কারণে আমাকে ঢাকা রাজশাহী সফর করতে হয়। পরিবার মডারেট হওয়ায় সফরে মাহরআম লাগবে এই ব্যাপারে তারা উদাসিন। মাঝে মধ্যে মাহরাম যায়, মাঝে মদ্ধে যায় না। আর আমি না গেলে অনেক দিন স্বামীর সাথে দেখাও হবে না। এরকম দূরে দূরে অনেক দিন থাকায় আমি ফিতনার আশংকা করছি। অনেক সমস্যাও হয়, কারণ স্বামী চায় আমি ঢাকা যাই মাঝে মধ্যে। এরকম পরিস্থিতিতে আমি কি করব? সব সময় মাহরাম আমার সাথে যাবে না। ঢাকা রাজশাহী দুরত্ব সফরের দুরত্বের চেয়ে বেশি। স্বামী সংসার ঠিক রাখার কথা ভেবে একাই সফর কি যায়েয হবে যদি সফরের রাস্তা নিরাপদ হয়?

1 Answer

0 votes
by (59,970 points)
edited by

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ

সফর কমপক্ষে ৪৮ মাইলের ( যা প্রায়  ৭৮ কিলোমিটার মত)  চেয়ে কম হলে মহিলাগণ পর্দার সাথে একা একা সফর করতে পারবেন । আর ৪৮ মাইলের চেয়ে বেশি হলে স্বামী বা মাহরাম ছাড়া কারো সাথে বা একা সফর করা জায়েজ নয়।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى

আর তোমরা স্বগৃহে অবস্থান করবে এবং জাহিলিয়াতযুগের মত নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াবে না।’(সূরা আহযাব ৩৩)

 

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,

الْمَرْأَةُ عَوْرَةٌ ، وَإِنَّهَا إِذَا خَرَجَتِ اسْتَشْرَفَهَا الشَّيْطَانُ ، وَإِنَّهَا لا تَكُونُ أَقْرَبَ إِلَى اللَّهِ مِنْهَا فِي قَعْرِ بَيْتِهَا

নারী গোপন জিনিসযখন সে ঘর থেকে বের হয় শয়তান তাকে উঁকি মেরে দেখে। আর সে আল্লাহ তাআলার সবচে’ নিকটতম তখন হয় যখন সে নিজের ঘরের মাঝে লুকিয়ে থাকে।’ (তাবরানী ২৯৭৪)

 

বিশুদ্ধ মতানুযায়ী মাহরাম না থাকলে মহিলার উপর হজ্বও ফরয হবে না। হাদীস শরীফে এসেছে-

وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: لَا يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِاِمْرَأَةٍ وَلَا تُسَافِرَنَّ امْرَأَةٌ إِلَّا وَمَعَهَا مَحْرَمٌ. فَقَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُوْلَ اللّٰهِ اكْتُتِبْتُ فِىْ غَزْوَةِ كَذَا وَكَذَا وَخَرَجَتِ امْرَأَتِىْ حَاجَّةً قَالَ: اِذْهَبْ فَاحْجُجْ مَعَ اِمْرَأَتِكَ. (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

 

 [‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেনরাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন পুরুষ যেন কক্ষনো কোন স্ত্রীলোকের সাথে এক জায়গায় নির্জনে একত্র না হয়আর কোন স্ত্রীলোক যেন কক্ষনো আপন কোন মাহরাম ব্যতীত একাকিনী সফর না করে। তখন এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলোহে আল্লাহর রসূল! অমুক অমুক যুদ্ধে আমার নাম লেখানো হয়েছে। আর আমার স্ত্রী একাকিনী হজের উদ্দেশে বের হয়েছে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনযাও তুমি তোমার স্ত্রীর সাথে হজ্জ/হজ করো।

সহীহ : বুখারী ৩০০৬মুসলিম ১৩৪১আহমাদ ১৯৩৪সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্ ২৫২৯সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১০১৩৪সহীহ ইবনু হিব্বান ৩৭৫৭।

ইমাম নববী রাহ বলেন,

"فَالْحَاصِل أَنَّ كُلّ مَا يُسَمَّى سَفَرًا تُنْهَى عَنْهُ الْمَرْأَة بِغَيْرِ زَوْج أَوْ مَحْرَم " انتهى

মোটকথাঃ স্বামী বা মাহরাম পুরুষ ব্যতীত যেকোনো প্রকার সফর থেকে মহিলাকে বাধা প্রদান করা হবে।

সফরের ধর্তব্য হল দূরত্ব। কত সময়ে উক্ত স্থানে পৌঁছতে পারছে সেটা ধর্তব্য নয়। উদাহরণতঃ ঢাকার থেকে চট্টগ্রামের দূরত্ব চারশত কিলোমিটার। কিন্তু বিমানে যেতে লাগে ৩০মিনিট। এক্ষেত্রে বিমানে সফর করলেও মহিলাদের জন্য স্বামী বা মাহরাম থাকা আবশ্যক। একা সফর করা জায়েজ নয়। মহিলাদের মাহরাম ঐ সকল ব্যক্তিদের বলা হয়যাদের সাথে আজীবন বিবাহ নিষিদ্ধযেমন- পিতাদাদাছেলেনাতিভাগিনামামাভাইভাতিজাশ্বশুরচাচামেয়ের জামাই প্রমূখ।

আরো জানুন- https://ifatwa.info/26113/?show=26113#q26113


সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন!

 

১. সফর কমপক্ষে ৪৮ মাইলের ( যা প্রায় ৭৮ কিলোমিটার মত)  চেয়ে কম হলে মহিলাগণ পর্দার সাথে একা একা সফর করতে পারবেন । আর ৪৮ মাইলের চেয়ে বেশি হলে স্বামী বা মাহরাম ছাড়া কারো সাথে বা একা সফর করা জায়েজ নয়। তাই আপনার স্বামী ও আপনার পরিবারকে বিষয়টা আরো বুঝানোর চেষ্টা করবেন এবং আল্লাহ তায়ালার কাছে দুআ করতে থাকবেন।

 

২. এরপরও যদি তারা না বুঝে এবং আপনি দীর্ঘদিন স্বামীর থেকে দূরে থাকার কারণে ফিতনারও আশংকা করেন তাই প্রথমে আপনার স্বামীকেই মাঝে মধ্যে ছুটি নিয়ে রাজশাহীতে যাওয়ার কথা বলবেন। বলবেন এটাও স্ত্রীর একটা হক। তারপরও যদি আপনার স্বামী না শুনেন তখন রাজশাহী থেকে ঢাকায় সফর করার সময় অন্য কোনো মাহরামকে আনার চেষ্টা করবেন। কেউ আসতে না চাইলে তখন পথে কোনো ধরণের ফিতনার আশংকা না থাকলে আপনি একা একাই আসবেন এবং একা একা সফরের গোনাহের কারণে  ইস্তিগফার করবেন এবং আল্লাহ তায়ালার কাছে মাফ চেয়ে নিবেন। আর সফরটা শুরু করবেন সকালে যাতে করে রাত হওয়ার পূর্বেই আপনি ঢাকায় পৌছাতে পারেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী আব্দুল ওয়াহিদ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...