বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ
কুয়েত সরকার কর্তৃক প্রকাশিত চার মাযহাব সম্বলীত সর্ব বৃহৎ ফেক্বাহী গ্রন্থ "আল-মাওসু'আতুল ফেক্বহিয়্যা " কিতাবের ২৪নং ভলিউম১৬৬নং পৃষ্টায় "ফী সাবিলিল্লাহ"র অত্যান্ত সুন্দর ব্যখ্যা করা হয়েছে।যার অনুবাদ আমি নিম্নে উল্লেখ করার চেষ্টা করছি.........
السبيل هو الطريق، يذكر ويؤنث. قال الله تعالى: {قل هذه سبيلي}وسبيل الله في أصل الوضع هو: الطريق الموصلة إليه تعالى، فيدخل فيه كل سعي في طاعة الله، وفي سبيل الخير.وفي الاصطلاح هو الجهاد
সাবিল অর্থ রাস্তা,যা পুঃলিঙ্গ ও স্ত্রীঃলিঙ্গ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।(আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ হে নবী আপনি বলে দিন,এটা আমার সাবিল বা রাস্তা)সাবিলুল্লাহ মূলত ঐ রাস্তাকে বলা হয় যা বান্দাকে আল্লাহ তা'আলার নিকট পৌঁছে দেয়।সুতরাং আল্লাহর অানুগত্যে সকল প্রকার চেষ্টা-প্রচেষ্টা ও উত্তম কাজ সাবিলুল্লাহ এর অন্তর্ভূক্ত।পরিভাষায় সাবিলুল্লাহ জিহাদকেই বলা হয়।
অতঃপর উল্লেখ করা হয়
قال جمهور الفقهاء وعامة المفسرين: سبيل الله وضعا هو الطريق الموصلة إلى الله، ويشمل جميع القرب إلى الله، إلا أنه عند الإطلاق ينصرف إلى الجهاد لكثرة استعماله فيه في القرآن،كقوله تعالى:{وقاتلوا في سبيل الله الذين يقاتلونكم} وقوله: {إن الله يحب الذين يقاتلون في سبيله صفا} وما في القرآن من ذكر " سبيل الله " إنما أريد به الجهاد إلا اليسير منه فيحمل عليه.ولأن الجهاد هو سبب الشهادة الموصلة إلى الله،
জামহুর উলামায়ে কেরাম ও মুফাসসিরগণ বলেনঃ সাবিলুল্লাহ মূলত ঐ রাস্তা যা বান্দাকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেয়।
আল্লাহ তা'আলার নৈকট্য অর্জনের সমস্ত পথকেই তা শামিল রাখবে।তবে সাধারণত "সাবিলুল্লাহ" দ্বারা জিহাদই উদ্দেশ্য হবে।কেননা কোরআনে কারীমে অধিকাংশ স্থানেই জিহাদ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।যেমন সূরাঃবাকারা ১১৯,নং আয়াত ও সূরাঃআছ-ছফ ০৪ নং আয়াতে সাবিলুল্লাহ দ্বারা জিহাদই উদ্দেশ্য।কোরআনে কারিমের যে জাগাতেই সাবিলুল্লাহ আসবে কিছুস্থান ব্যতীত সবখানে জিহাদই উদ্দেশ্য হবে।কেননা জিহাদই হল শাহাদতের মাধ্যম,যে শাহাদত বান্দাকে সরাসরি আল্লাহ পর্যন্ত পৌছিয়ে দেয়।
সূরা তাওবার নিম্নোক্ত আয়াতে জাকাতের আট প্রকার ব্যয় খাত বর্ণনা করা হয়েছে।প্রশ্ন হচ্ছে তথায় বর্ণিত সাবিলুল্লাহ দ্বারা উদ্দেশ্য কি? তা নির্ধারণ করতে মুজতাহিদ ইমামগণ বিরোধপূর্ণ বক্তব্য পেশ করেছেন।আল্লাহ তা'আলা বানীঃ
ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺍﻟﺼَّﺪَﻗَﺎﺕُ ﻟِﻠْﻔُﻘَﺮَﺍﺀ ﻭَﺍﻟْﻤَﺴَﺎﻛِﻴﻦِ ﻭَﺍﻟْﻌَﺎﻣِﻠِﻴﻦَ ﻋَﻠَﻴْﻬَﺎ ﻭَﺍﻟْﻤُﺆَﻟَّﻔَﺔِ ﻗُﻠُﻮﺑُﻬُﻢْ ﻭَﻓِﻲ ﺍﻟﺮِّﻗَﺎﺏِ ﻭَﺍﻟْﻐَﺎﺭِﻣِﻴﻦَ ﻭَﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠّﻪِ ﻭَﺍﺑْﻦِ ﺍﻟﺴَّﺒِﻴﻞِ ﻓَﺮِﻳﻀَﺔً ﻣِّﻦَ ﺍﻟﻠّﻪِ ﻭَﺍﻟﻠّﻪُ ﻋَﻠِﻴﻢٌ ﺣَﻜِﻴﻢٌ
তরজমাঃযাকাত হল কেবল ফকির, মিসকীন, যাকাত উসূলকারী ও যাদের চিত্ত আকর্ষণ প্রয়োজন তাদের হক এবং তা দাস-মুক্তির জন্যে,ঋণ গ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে জেহাদকারীদের জন্যে এবং মুসাফিরদের জন্যে, এই হল আল্লাহ তা'আলার নির্ধারিত বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।(সূরা আত-তাওবাহ-৬০)
ইমাম মালিক রাহ, ইমাম শা'ফী রাহ ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহ সহ আরো অনেকের মতে এখানে ঐ সমস্ত সেচ্ছাসেবী মুজাহিদগণ উদ্দেশ্য জিহাদে যেতে যাদের নাম আ'মিরুল মু'মিন বাধ্যতামূলকভাবে ঘোষণা করেননি।তাদেরকে অধিক মূল্যায়ন করতেই আল্লাহ তাদের জন্য জাকাত হালাল করে দিয়েছেন,যদিও তারা ধনী হয় না কেন।
ইমাম আবু হানিফা রাহ বলেনঃ
"সাবিলুল্লাহ" দ্বারা মালের মুখাপেক্ষী তথা গরীব মুজাহিদ উদ্দেশ্য।ধনী হলে জাকাত হালাল হবে না।
ইমাম মুহাম্মদ রাহ বলেনঃ
এখানে ঐ হাজ্বী সাহেব উদ্দেশ্য যিনি নিজ দল বা মাল হারিয়ে ফেলেছেন।
তাকে জাকাত দেওয়া জায়েয যদিও সে ধনী হয় না কেন,কেননা বর্তমানে সে মালের মুখাপেক্ষী।
এবং কিছুসংখ্যক হানাফী উলামায়ে কেরামগণ বলেনঃ
"সাবিলুল্লাহ"দ্বারা ইলম অন্বেষণকারী উদ্দেশ্য।
ইমাম ফখরুদ্দিন রাযি রাহ, উনার তাফসীর গ্রন্থে বিভিন্ন উদ্বৃতি সহকারে লিখেন,অত্র আয়াতে "সাবিলুল্লাহ" শুধুমাত্র মুজাহিদগণের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং সমস্ত উত্তম কাজই তার মধ্যে নিহিত রয়েছে।এজন্য কিছুসংখ্যক ফুকাহে কেরাম জাকাত বন্টনের আয়াত তথা সূরা আত-তাওবাহ-৬০ নং আয়াতে উল্লিখিত "সাবিলুল্লাহ" এর অধিনে মৃত মানুষের কাফন,সেবামূলক বিল্ডিং নির্মাণ,ও মসজিদ নির্মান সহ অনেক জনসেবা মূলক কাজে জাকাতের মাল খরছ করাকে বৈধ মনে করেন।{আল-মাওসু'আতুল ফেক্বহিয়্যাতুল কুয়েতিয়্যাহ-২৪/১৬৬}
সু-প্রিয় পাঠকবর্গ ও দ্বীনী ভাইয়েরা!
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা আমরা বুঝতে পারলাম যে,কোরআন-হাদীসের অধিকাংশ স্থানে ব্যবহৃত "সাবিলুল্লাহ"দ্বারা জিহাদ উদ্দেশ্য। তবে কিছু স্থানে অন্যান্য বিষয় যেমন হাজ্বী, ইলম অন্বেষণকারী ইত্যাদিও উদ্দেশ্য হয়ে থাকে।সুতরাং "সাবিলুল্লাহ" সম্বলিত কোরআনের প্রতিটা আয়াত ও হাদীস সম্পর্কে বিজ্ঞ উলামায়ে কেরামদের ব্যখ্যা-বিশ্লেষণ জানতে হবে তারপর সে অনুযায়ী সাবিলুল্লাহ র ব্যখ্যা করতে হবে।ঢালাওভাবে কোনো এক দ্বীন পক্ষে সাবিলুল্লাহর অপব্যখ্যা করা যাবে না।বরং আমাদেরকে গুরুত্বের সাথে দেখতে হবে উক্ত আয়াত বা হাদীসে বর্ণিত "সাবিলুল্লাহ"এর ব্যখ্যা আকাবির হযরাতগণ কি করেছেন।ব্যস সে অনুযায়ী আমাদেরকে জানতে হবে, মানতে হবে, আ'মল করতে হবে।