আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
87 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (10 points)
edited by
আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ

আমার কিছু জিজ্ঞাসা

প্রথম নাম্বার জিজ্ঞাসা হল

আযান কেন দেওয়া হয়?

দ্বিতীয় নাম্বার জিজ্ঞাসা হল

যদি আজানের অর্থ এটাই হয় যে কল্যাণের দিকে আসো নামাজের দিকে আসো তাহলে আমরা যে জুমার দিন দুইটা আজান দেই যদিও ওসমান রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুর জামানা থেকে।

এখন আমার জানার বিষয় হইল প্রথম আজান দিয়ে তো আমরা মানুষকে জানাইয়া দিলাম নামাজের দিকে আসো কল্যাণের দিকে আসো এখন খুৎবার পূর্ব মুহূর্তে যে আযানটা আমরা দেই ওইটা কেন দেব?

1 Answer

0 votes
by (62,960 points)
edited by

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

আমরা সবাই জানি জুমার দিন দুটো আযান দেয়া হয়। একটি অন্যান্য দিনের অাযানের মতো মাইকে দেয়া হয়, অন্যটি খতিব সাহেবের সম্মুখে দেয়া হয়। আচ্ছা! কখনো কি মনে মনে এই প্রশ্ন জেগেছিল যে, জুমার দিন দুটো আযান কেন দেয়া হয়?

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় হিজরতের পরপরই জুমার নামাজের বিধান নাযিল হয়। এর কিছুদিন পর আযানের বিধানও নাযিল হয়। তারপর থেকে মসজিদে নববীতে পাঁচ ওয়াক্তের জন্য দৈনিক পাঁচ বার আযান দেয়া হত। এবং জুমার দিনও আযান দেয়া হত।

কিন্তু তখন জুমার আযান দেয়া হত একটি এবং সেটি দেয়া হত অন্যান্য আযানের মতো মসজিদের বাইরে মিনারে (উঁচুস্থানে) চড়ে। বর্তমানে যে আযানটি খতিব সাহেবের সামনে দেয়া হয় সেটি নবীজির আমলে বাহিরে দেয়া হত। এটিই জুমার মূল আযান। পবিত্র কুরআনে সূরা জুমায় মহান আল্লাহ তায়ালা যে আযানের কথা বলেছেন এটি সেই আযান। এই আযানের পরে খুতবা শ্রবণ ব্যতিত অন্যকোন কাজে বিশেষ করে দুনিয়াবী কাজে লিপ্ত থাকা মাকরূহে তাহরীমী।

শুনে খুব অবাক লাগছে তাই না? সামনের কথাগুলো শুনলে আরো অবাক হবেন। তো নবীজির আমলও এভাবে এক আযানে গেল। হযরত আবু বকর রাযি. এর আমলও এভাবে গেল। হযরত উমর রাযি. এর আমলও এভাবে গেল। হযরত উসমান রাযি. এর আমলের বেশ কয়েকবছরও এভাবে গেল। অর্থাৎ আযানের বিধান নাযিল হওয়ার পর থেকে প্রায় ৩০টা বছর ধরে এক আযানে জুমা হতো।

হযরত উমর রাযি. এর আমলেই প্রায় অর্ধপৃথিবী মুসলমানদের শাসনতলে চলে এসেছিল। হযরত উসমান রাযি. এর আমলে তো "দিনবদিন" খেলাফতের সীমানা বেড়েই চলছে। খলিফা হযরত উসমানের দরবারে প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গায় থেকে সুখবর আসত আজ মুসলিম বাহিনী এ দেশ বিজয় করেছে কাল ওই দেশ বিজয় করেছে। মুসলমানদের যেমন চারিদিকে বিজয় হচ্ছিল তেমনি তাদের জনসংখ্যাও ক্রমাগত বাড়তে ছিল। খেলাফতের রাজধানী মদীনা হয়ে উঠল এক জমজমাট শহর। মানুষের ব্যস্ততা আগের চেয়েও বেড়ে গেল।

মসজিদে নববীর অদূরে এক বাজার ছিল। নাম যাওরা। জমজমাট বিশাল এক বাজার। জুমার দিন সেখানে লোকের ভীড় যেন আরো বেড়ে যেত। নবীজির জামাতা খলিফা হযরত উসমান রাযি. বিষয়টা লক্ষ করলেন। তিনি দেখলেন যে জুমার আযান যাওরার জমজমাট বাজার পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে না। ফলে মানুষজন বেচাকেনা লিপ্ত থাকায় সময়মতো জুমাতে উপস্থিত হতে সক্ষম হচ্ছে না।

তখন তিনি জুমার মূল আযানের কিছুক্ষণ পূর্বে মদীনার সেই বাজারে আরেকটি আযান দেয়ার হুকুম জারি করলেন। যাতে মানুষজন জলদি বেচা কেনা শেষ করে জুমার জন্য প্রস্তুতি নিতে পারে। এখানে আরো একটি জানার বিষয় হল, বর্তমানে যেমন জুমার দ্বিতীয় আযানের পরপরই খতিব সাহেব খুতবা দিতে দাড়িয়ে যান, দেরি করেন না, তৎকালেও জুমার মূল আযানের পরপরই খুতবা আরম্ভ হয়ে যেত। ফলে যাওরার বাজারে বেচাকেনায় লিপ্ত মানুষজন সময়মতো জুমায় উপস্থিত হতে পারত না। হযরত উসমান রাযি. এর নতুন আযানের ফলে তারা জুমার মূল আযানের আগে আগেই জুমায় উপস্থিত হতে সক্ষম হয়। উম্মাহর কতই না দরদী ছিলেন হযরত উসমান রাযি. (বুখারী: ৯১২, জুমা অধ্যায়। তিরিমিযি: ৫১৬। মিশকাত হা/১৪০৪)

আশা করি এখন সবার কাছে স্পষ্ট জানা হয়ে গেছে, জুমার দিন দুটো আযান কেন দেয়া হয়। এবং মূল আযান কোনটি।

এবার আসি বাকি প্রশ্নগুলোর উত্তরে। প্রশ্ন হল,যাওরা বাজারের আযান মিনারে এল কিভাবে? এবং মিনারের জুমার মূল আযানটা মিম্বরের সামনে গেল কিভাবে?

এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেয়ার পূর্বে আরেকটি প্রাসঙ্গিক গুরুত্বপূর্ণ কথা বলে রাখি, জুমার প্রথম আযানের যেমন জবাব দেয়া জায়েয, তেমনি দ্বিতীয় আযান যেটা খতিবের সামনে দেয়া হয় সেটারও জবাব দেয়া জায়েয তবে অনুত্তম। এমনকি খতিব খুতবা শুরু করতে দেরি হলে আযানের দোয়াও পড়ে নিতে পারবে। অনেকে মনে করে জুমার দ্বিতীয় আযানের জবাব দেয়া নাজায়েয, এটি ভুল ধারণা। ( সহীহ বুখারী, হাদীস : ৯১৪]ফাতহুল বারী ২/৪৬০(আল কাউসার)

হযরত উসমান,হযরত আলী,হযরত মুয়াবিয়া রাযি. এর আমলেও জুমার আযান এভাবেই ছিল। কোন পরিবর্তন করা হয়নি। এরপর ধীরে ধীরে মক্কা, কুফা, বসরা ও অন্যান্য শহরগুলোতে দুই আযানের রেওয়াজ চালু হয়। পরবর্তীতে উমাইয়া শাসক হিশাম বিন আব্দুল মালিকের আমলে তিনি যাওরা বাজারের আযানকে মসজিদের মিনারে নিয়ে আসেন।আর মিনারের আযানকে মিম্বরের সামনে নিয়ে যান। তারপর তার দেখাদেখি অন্যান্য শহরগুলো ও এভাবে জুমার অাযানকে স্থানান্তরিত করে। সেই থেকে আজ অবধি এভাবে দুই আযানের নিয়ম চালু রয়েছে।

পরিশেষে একটা কথা বলে আজকের আলোচনার ইতি টানছি । আযানের এই সংযোজন-বৃদ্ধিকে বিদআত বলে আখ্যা দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। কেননা,হযরত উসমান রাযি. যে কারণে আরেকটি আযানের নির্দেশ জারি করেছিলেন তা ছিল সুন্নাহ সম্মত। এবং পরবর্তীতে এই নতুন আযানের উপর সমস্ত সাহাবাগণের ইজমা (ঐক্যমত) হয়ে যায়। কেউ এটার বিরোধিতা করেন নি। ফলে এখন কেউ এটাকে বিদআত বলে বিরোধিতা করলে সে যেন নবীজির জামাতা হযরত উসমান রাযি. এবং অন্যান্য সকল সাহাবাগণকে বিদআতী বলে অপবাদ দিল।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)
by (10 points)
হযরত আপনার কথা মেনে নিলাম যে আযানটা ওসমান রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু চালু করেছেন যেহেতু তিনি সাহাবী ঠিক আছে কিন্তু কথা হল মসজিদের মেম্বারে অর্থাৎ খতিব সাহেবের সামনে যে আজান টা দেওয়া হয় এটা তো আর সাহাবী থেকে আসে নাই তাহলে এটা কি আমাদের জন্য মানা জরুরি কিনা
by (10 points)
হযরত আপনার কথা মেনে নিলাম কিন্তু  কথা হল মসজিদের মেম্বারে অর্থাৎ খতিব সাহেবের সামনে যে আজান টা দেওয়া হয় এটা তো আর সাহাবী থেকে আসে নাই তাহলে এটা কি আমাদের জন্য মানা জরুরি কিনা

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...