আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
200 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (3 points)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ

১: ফিতনা সম্পর্কে যয়ীফ হাদিস কি গ্রহণযোগ্য? ইমাম নুআইম ইবনু হাম্মাদ রঃ এর কিতাবুল ফিতানে বেশিরভাগ হাদিস দূর্বল।ফিতনার বিভিন্ন বিষয় প্রমাণ করার ক্ষেত্রে দূর্বল হাদিস গুলো দিয়ে প্রমানিত হবে?

২:দাজ্জাল এর সম্পর্কে অনেকেই এরকম আকিদা পোষণ করছে যে দাজ্জাল বের হয়ে গেছে এমনকি তাদের দাবি ইয়াজুজ মাজুজ ও বের হয়ে গেছে, একজনকে বলতে শুনলাম যে দাজ্জাল এখন আমাদের মাঝে অবস্থান করছে শয়তানের মত, আমরা যেরকম শয়তানকে দেখতে পাই না কিন্তু সে উপস্থিত থাকে সেই রকম নাকি দাজ্জাল আমাদের মাঝে উপস্থিত কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি না এবং কোন এক সময় সে তার আসল রূপে আত্মপ্রকাশ করবে এই ধরনের বিশ্বাসের বিষয়ে কিছু বলেন।

1 Answer

0 votes
by (61,230 points)
edited by

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

মুহাদ্দিছ নুআইম ইবনে হাম্মাদকে নিয়ে আমাদের অনেকের মধ্যে দ্বিমত আছে। বিশেষ করে ইমাম আবু হানীফার ব্যাপারে তাকে অনেকে বিদ্বেষবশত মিথ্যুক বা দুর্বল রাবী বলে থাকেন। তাই তার ব্যাপারে আমি কিছুটা বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হলো:

 ১. ইমাম বুখারী তার “ছহীহ” তে কয়েকটি স্থানে নুআইম ইবনে হাম্মাদকে উল্লেখ করেছেন। (হা/২৪৬, ৩৭৩৬, ৪৩৩৯, ৭১৩৯, ৭১৮৯)

 বরং দু’টি স্থানে মুতাবাআ’ত ছাড়াই উল্লেখ করেছেন। (হা/৩৯২, ৩৮৪৯)

 আর তিনি ইমাম বুখারীর শাইখ ছিলেন। আর ইমাম বুখারী ছিক্বাহ শাইখ থেকে হাদীছ বর্ণনা করবেন এটিই স্বাভাবিক।  এছাড়াও ইমাম বুখারী নুআইম ইবনে হাম্মাদকে (তারীখুল কাবীর, ৮/১০০, রাবী নং ২৩২৭) গ্রন্থে এনেছেন কিন্তু কোন সমালোচনা করেননি।

 যাফার আহমাদ থানভী হানাফী এর মতে, ইমাম বুখারী যেহেতু তার সমালোচনা করেননি, তাই নুআইম ইবনে হাম্মাদ ইমাম বুখারীর নিকট ছিক্বাহ। (যাফার আহমাদ থানভী, ক্বওয়ায়িদ ফী উলূমিল হাদীছ, পৃঃ ২২৩)

 ২. ইমাম মুসলিম তার “ছহীহ” তে নুআইম ইবনে হাম্মাদ এর বর্ণনা দ্বারা দলীল নিয়েছেন। (মুসলিম, মুক্বাদ্দামাহ, অধ্যায় - ৫, আছার নং ৬৬)

 ৩. ইমাম ইবনে খুযাইমাহ তার “ছহীহ” তে নুআইম ইবনে হাম্মাদ এর হাদীছ দ্বারা দলীল নিয়েছেন। (হা/২২৩৬)

 এছাড়াও আরো অনেক স্থানে তার হাদীছ উল্লেখ করেছেন। (হা/১৪১৫, ১৪৬২, ১৯৮১, ২৩২৩, ২৭১৩ ইত্যাদি)

 ইমাম ইবনে খুযাইমাহ তার কিতাবে যেই রাবী থেকে হাদীছ বর্ণনা করেন এবং জারাহ না করেন, সেই রাবী তার নিকট ছিক্বাহ হয়ে থাকেন এবং সেই হাদীছটিও তার নিকট ছহীহ হয়ে থাকে। ইমাম ইবনে খুযাইমাহ তার কিতাবের যে নাম রেখেছেন তাতেই এই বিষয়টি স্পষ্ট বুঝা যায়। (হা/১ এর পূর্বে)

 ৪. ইমাম ইবনে হিব্বান তার ছিক্বাতে উল্লেখ করেছেন এবং বলেন, তিনি কখনো ভুল করতেন ও বিভ্রান্তিতে পড়তেন। (ইবনে হিব্বান, আছ-ছিক্বাত, ৯/২১৯, রাবী নং ১৬০৯৯)

 এছাড়াও তার “ছহীহ” তে নুআইম ইবনে হাম্মাদ এর হাদীছ বর্ণনা করেছেন। (হা/৩৪০)

 ৫. ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন বলেন, তিনি ছিক্বাহ। (সুওয়ালাতু ইবনুল জুনাইদ, রাবী নং ৫২৮)

 তিনি আরো বলেন, নুআইম ইবনে হাম্মাদ বাছরাহ তে আমার বন্ধু ছিল। (সুওয়ালাতু ইবনুল জুনাইদ, রাবী নং ৫২৯)

 ৬. ইমাম আবু হাতিম বলেন, তিনি সত্যবাদীদের প্রতিবেশী ছিলেন। (ইবনে আবু হাতিম, কিতাবুল জারহি ওয়াত তা’দীল, রাবী নং ২১২৫)

 ৭. ইমাম ইজলী বলেন, তিনি ছিক্বাহ। (ইজলী, আছ-ছিক্বাত, রাবী নং ১৮৫৮)

 ৮. ইমাম হাকিম তার মুস্তাদরাকে (হা/৭১০৪) নুআইম ইবনে হাম্মাদ এর হাদীছের সানাদকে ছহীহ বলেছেন এবং ইমাম যাহাবী তার সমর্থন করেছেন।

 এছাড়াও আরো অনেক স্থানে তার হাদীছ উল্লেখ করেছেন। (হা/২১০, ১৪৬৭, ৪২৮৪, ৭১৫৩, ৭২৩১ ইত্যাদি)

এছাড়াও আরো অনেকে তার তা’দীল করেছেন। আলহামদুলিল্লাহ

 যারা যারা তার জারাহ করেছেন তা সংক্ষেপে ও বিশ্লেষণাকারে উল্লেখ করলাম।

 ১. ইমাম নাসাঈ বলেন, তিনি দুর্বল। (নাসাঈ, কিতাবুয যু’আফা ওয়াল মাতরূকীন, রাবী নং ৫৮৯)

  قال ابْن حَمَّاد قَالَ غيره كَانَ يضع الحديث فِي تقوية السنة وحكايات عن العلماء فِي ثلب أبي حنيفة مزورة كذب 

 ২. মুহাদ্দিছ ইবনে হাম্মাদ দুলাবী বলেন, অন্যান্যরা বলেন, তিনি সুন্নাতকে শক্তিশালী করার জন্য জাল হাদীছ তৈরী করতেন এবং ইমাম আবু হানীফার নিন্দায় কাহিনী তৈরী করতেন যা সবই মিথ্যা। (ইবনে আদী, আল-কামিল, রাবী নং ১৯৫৯)

 এই অভিযোগের জবাবঃ

 ১মঃ ইবনে হাম্মাদ দুলাবী “অন্যান্যরা বলেন” থেকে এই বর্ণনা উল্লেখ করেছেন। এখানে তার শাইখরা মাজহূল। আর মাজহূল শাইখদের জারাহ কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়।

 ২য়ঃ ইবনে হাম্মাদ দুলাবী নিজেই সমালোচিত ব্যক্তি যদিও তিনি ছিক্বাহ। (যাহাবী, মীযানুল ই’তিদাল, রাবী নং ৭১৫১; ইবনে হাজার আসক্বালানী, লিসানুল মীযান, রাবী নং ১৪২)

 وكان من أهل صنعة الحديث حسن التصنيف وله بالحديث معرفة وكان يضعف

 ইমাম আবু সাঈদ ইবনে ইউনূস বলেন, তিনি সেই ব্যক্তিদের মধ্যে গণ্য ছিলেন, যাদের হাদীছে দক্ষতা ছিল। তার উত্তম গ্রন্থসমূহ ছিল। হাদীছের ব্যাপারে তার গভীর জ্ঞান ছিল। তাকে দুর্বল বলা হত। (তারীখু ইবনে ইউনূস, রাবী নং ৪৮৬)                                                                                                                             تكلموا فيه ما تبين من أمره إلا خيرا

ইমাম দারাক্বুত্বনী বলেন, তার ব্যাপারে সমালোচনা রয়েছে। কিন্তু তার ব্যাপারে কল্যাণ ব্যতীত কিছুই প্রকাশ পায়নি। (সুওয়ালাতু হামযাহ আস-সাহমি লিদ-দারাক্বুত্বনী, রাবী নং ৮২)

  أخبرنا أبو القاسم بن السمرقندي أنبأنا إسماعيل بن مسعدة أنبأنا حمزة بن يوسف قال وقال ابن عدي وابن حماد متهم فيما يقول يعني في نعيم لصلابته في أهل الرأي

 ৩য়ঃ ইমাম ইবনে আদী এই জারাহ সম্পর্কে বলেন, ইবনে হাম্মাদ যা কিছু বলেছেন নুআইম সম্পর্কে তা মুত্তাহাম বা অভিযুক্ত। কেননা তিনি আহলুর রায়দের মধ্যে কঠোর ছিলেন। (ইবনে আসাকির, তারীখু দিমাশক্ব, ৫১/৩১, রাবী নং ৫৮৮৮, সানাদ ছহীহ)

 তাই মুহাদ্দিছ ইবনে হাম্মাদ দুলাবীর উক্ত জারাহ বাতিল ও প্রত্যাখ্যাত। আলহামদুলিল্লাহ

  وقال أبو الفتح الأزدي قالوا كان يضع الحديث في تقوية السنة وحكايات مزورة في ثلب أبي حنيفة كلها كذب

 ৩. মুহাদ্দিছ আবু ফাতহ আযদী বলেন, তারা বলেন, তিনি সুন্নাতকে শক্তিশালী করার জন্য জাল হাদীছ তৈরী করতেন এবং ইমাম আবু হানীফার নিন্দায় কাহিনী তৈরী করতেন যা সবই মিথ্যা। (ইবনে হাজার আসক্বালানী, তাহযীবুত তাহযীব, ১০/৪৬৩, রাবী নং ৮৩১)

 সুতরাং, নুআইম ইবনে হাম্মাদ অধিকাংশ মুহাদ্দিছদের নিকট ছিক্বাহ বা হাসানুল হাদীছ। আলহামদুলিল্লাহতাই আমাদের সকলের উচিত সত্যকে গ্রহণ করা ও মিথ্যাকে প্রত্যাখ্যান করা। আল্লাহ আমাদের সকলকে হিদায়াত দান করুক।

 সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!

১. কিতাবুল ফিতান (কিয়ামতের পূর্বে সংঘটিত বিভিন্ন ফিতনা-ফ্যাসাদ সম্পর্কিত গ্রন্থ) সম্পর্কে:

নুয়াঈম বিন হাম্মাদ কর্তৃক রচিত প্রসিদ্ধি কিতাবুল ফিতান বইটি ব্যাপারে ইমাম যাহাবী বলেন:

قلت لا يجوز لأحد أن يحتج به، وقد صنف كتاب (الفتن) فأتى به بعجائب ومناكير

আমি বলি, তার কথা দিয়ে দলিল পেশ করা কারো জন্য বৈধ নয় তিনি আল ফিতান নামক গ্রন্থ রচনা করেছেন কিন্তু সেখানে তিনি অদ্ভুত অদ্ভুত এবং প্রতিবাদ যোগ্য বিভিন্ন বিষয় এনেছেন।” সিয়ারু আলামিন নুবালা: ১০/৬০৯)

কিতাবুল ফিতান সম্পর্কৃত আরো অনেক নির্ভরযোগ্য হাদীসগ্রন্থ রয়েছে আমরা সেগুলি অধ্যায়ন করতে পারি।

২. দাজ্জাল সম্পর্কে জানতে ভিজিট করুন:

https://www.ifatwa.info/49090/?show=49090#q49090


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...