আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
111 views
in ঈমান ও বিশ্বাস (Faith and Belief) by (9 points)
আস্-সালামু আ'লাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি তাআ'লা ওয়া..
সম্মানিত মুহতারম মুফতি হাফিঃ,
আমি আমার তাকওয়া বাড়াতে চাই কি করণীয় গুলো মানতে পারি এবং কি করণীয় গুলো বর্জন করতে পারে??
তাকওয়াপূর্ণ হওয়ার সর্বোত্তম উপায় কি?

1 Answer

0 votes
by (678,800 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم


তাক্বওয়াশীলদেরকেই আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (ছাঃ) সবচেয়ে সম্মানিত বলেছেন। 

আল্লাহ তায়ালা বলেন,
يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِنْ ذَكَرٍ وَأُنْثَى وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوْبًا وَّقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوْا إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللهِ أَتْقَاكُمْ إِنَّ اللهَ عَلِيْمٌ خَبِيْرٌ-
‘হে মানুষ সকল! আমি তোমাদেরকে একজন পুরুষ ও একজন নারী হতে সৃষ্টি করেছি। তারপর আমি তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোষ্ঠীতে বিভক্ত করেছি যেন তোমরা পরস্পরকে চিনতে পার। নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক সম্মানি সে, যে তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী পরহেযগার। নিঃসন্দেহে আল্লাহ সবকিছু জানেন এবং সব বিষয়ে অবহিত’ (হুজুরাত ১৩)। 

অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

 يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا إِنْ تَتَّقُوا اللهَ يَجْعَلْ لَكُمْ فُرْقَانًا وَيُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ وَاللهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيْمِ- 

‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় করে চল, তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভাল-মন্দের মধ্যে পার্থক্য করার মানদন্ড দান করবেন। তোমাদের পাপ মিটিয়ে দিবেন। আর তোমাদের ক্ষমা করে দিবেন। কারণ আল্লাহ বড় অনুগ্রহশীল’ (আনফাল ২৯)।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ 
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন,
يَا أَيُّهَا النَّاسُ، إِنَّ رَبَّكُمْ وَاحِدٌ، وَإِنَّ أَبَاكُمْ وَاحِدٌ، أَلَا لَا فَضْلَ لِعَرَبِيٍّ عَلَى عَجَمِيٍّ، وَلَا لِعَجَمِيٍّ عَلَى عَرَبِيٍّ، وَلَا لِأَحْمَرَ عَلَى أَسْوَدَ، وَلَا أَسْوَدَ عَلَى أَحْمَرَ، إِلَّا بِالتَّقْوَى، إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللهِ أَتْقَاكُمْ، أَلَا هَلْ بَلَّغْتُ؟ قَالُوا: بَلَى يَا رَسُولَ اللهِ، قَالَ: فَلْيُبَلِّغِ الشَّاهِدُ الْغَائِبَ.

হে মানুষ! নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালক একজন এবং তোমাদের পিতা একজন। মনে রেখো, আরাবীদের কোন সম্মান নেই আজামীদের উপর এবং আজামীদের কোন সম্মান নেই আরাবীদের উপর। লাল রংয়ের লোকের কোন সম্মান নেই কালো রংয়ের লোকের উপর এবং কালো রংয়ের লোকের কোন সম্মান নেই লাল রংয়ের লোকের উপর। তবে তাক্বওয়াই হচ্ছে মর্যাদার মাধ্যম। নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে মর্যাদার অধিকারী সেই, যে আল্লাহর নিকট সবচেয়ে তাক্বওয়াশীল (সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৭০০)।

عَنْ أَبِيْ ذَرٍّ قَالَ قَالَ لِيْ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اتَّقِ اللهَ حَيْثُمَا كُنْتَ وَأَتْبِعْ السَّيِّئَةَ الْحَسَنَةَ تَمْحُهَا-

আবু যার (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাকে বলেছেন, ‘তুমি যেখানে যেভাবে থাকবে আল্লাহকে ভয় করবে বা তাক্বওয়া অবলম্বন করবে। কোন কারণ বশত পাপ কাজ হয়ে গেলে তারপর ভাল কাজ করবে। তা তোমার পাপকে মিটিয়ে দিবে’ (তিরমিযী, মিশকাত হা/৫০৮৩)।

عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ أَنْسَابَكُمْ هَذِهِ لَيْسَتْ بِمُسَّبَةٍٍ عَلَى أَحَدٍ كُلُّكُمْ بَنِيْ آدَمَ طَفُّ الصَّاعِ بِالصَّاعِ لَمْ تَمْلَئُوهُ لَيْسَ لِأَحَدٍ فَضْلٌ إِلَّا بِالدِّينِ وَالتَّقْوَى كَفَى بِالرَّجُلِ أَنْ يَكُونَ بَذِيًّا فَاحِشًا بَخِيلاً-

উক্ববা ইবনু আমের (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমাদের বংশ পরিচয় এমন কোন বস্ত্ত নয় যে, তার কারণে তোমরা অন্যকে গালমন্দ করবে। তোমরা সকলেই আদমের সন্তান। দাড়িপাল্লার উভয় দিক যেমন সমান থাকে, যখন তোমরা পূর্ণ করনি। দ্বীন ও তাক্বওয়া ছাড়া একজনের উপর আর একজনের কোন মর্যাদা নেই। তবে কোন ব্যক্তির মন্দ হওয়ার জন্য অশ্লীল বাকচারী ও কৃপণ হওয়াই যথেষ্ট’ (আহমাদ, মিশকাত হা/৪৬৯৩)। 

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أتَدْرُوْنَ مَا أَكْثَرُ مَا يُدْخِلُ النَّاسَ الْجَنَّةَ فَقَالَ تَقْوَى اللهِ وَحُسْنُ الْخُلُقِ، أتَدْرُوْنَ مَا أَكْثَرُ مَا يُدْخِلُ النَّاسَ النَّارَ فَقَالَ الْفَمُ وَالْفَرْجُ-

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন তোমরা কি জান কোন জিনিস মানুষকে সবচেয়ে বেশী জান্নাতে প্রবেশ করায়? তা হচ্ছে আল্লাহর ভয় বা তাক্বওয়া ও উত্তম চরিত্র। তোমরা কি জান মানুষকে সবচেয়ে বেশী জাহান্নামে প্রবেশ করায় কোন জিনিস? একটি মুখমন্ডল ও অপরটি লজ্জাস্থান’ (তিরমিযী, মিশকাত হা/৪৬২১,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ اللهَ لَا يَنْظُرُ إِلَى صُوَرِكُمْ وَأَمْوَالِكُمْ وَلَكِنْ يَنْظُرُ إِلَى قُلُوبِكُمْ وَأَعْمَالِكُمْ-

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের বাহ্যিক আকৃতি ও সম্পদ দেখেন না; বরং তিনি তোমাদের অন্তর ও আমলের প্রতি তাকান’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৫০৮৩)।


রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মু‘আয ইবনে জাবাল (রাঃ)-কে তাক্বওয়াশীল হওয়ার জন্য বলেন। হাদীস শরীফে এসেছে,
عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ قَالَ لَمَّا بَعَثَهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى الْيَمَنِ خَرَجَ مَعَهُ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُوْصِيْهِ وَمُعَاذٌ رَاكِبٌ وَرَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَمْشِيْ تَحْتَ رَاحِلَتِهِ فَلَمَّا فَرَغَ قَالَ يَا مُعَاذُ إِنَّكَ عَسَى أَنْ لاَ تَلْقَانِيْ بَعْدَ عَامِيْ هَذَا أَوْ لَعَلَّكَ أَنْ تَمُرَّ بِمَسْجِدِيْ أَوْ قَبْرِيْ فَبَكَى مُعَاذٌ جَشَعًا لِفِرَاقِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ الْتَفَتَ فَأَقْبَلَ بِوَجْهِهِ نَحْوَ الْمَدِيْنَةِ فَقَالَ إِنَّ أَوْلَى النَّاسِ بِي الْمُتَّقُوْنَ مَنْ كَانُوْا وَحَيْثُ كَانُوْا-

মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) বলেন, যখন রাসূল (ছাঃ) তাকে ইয়ামান পাঠান, তখন রাসূল (ছাঃ) তাকে উপদেশ দেয়ার জন্য তার সাথে বের হলেন। মু‘আয সওয়ারীর উপরে আরোহন করেছিলেন এবং নবী করীম (ছাঃ) সওয়ারীর নীচে চলতেছিলেন। তিনি উপদেশ শেষে বললেন, মু‘আয! সম্ভবত এ বছরের পর তোমার সাথে আমার আর সাক্ষাৎ হবে না। তুমি আমার মসজিদ ও কবরের পাশ দিয়ে পার হয়ে যাবে। মু‘আয (রাঃ) নবী করীম (ছাঃ)-এর বিচ্ছিন্নতায় চিৎকার করে কাঁদতে লাগলেন এবং মদীনার দিকে ফিরে দেখলেন। তারপর নবী করীম (ছাঃ) বললেন, তাক্বওয়াশীল ব্যক্তিরাই সবচেয়ে আমার নিকটে। তারা যেই হোক না কেন, যেখানেই হোক না কেন’? (ছহীহ ইবনে হিববান হা/৬৪৬)।

প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
তাকওয়া বাড়ানোর জন্য গুনাহের কাজ সম্পূর্ণ ভাবে ছেড়ে দিবেন।
★বেশি বেশি পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত করতে হবে। কোনো মানুষ যখন পবিত্র কুরআন নিয়ে অভিনিবেশসহ চিন্তা করে, তখন আল্লাহ তায়ালার মহত্ব, মর্যাদা, গুণাবলি তার সামনে প্রকাশ হয়।

★ইখলাসের সঙ্গে আল্লাহর ইবাদত করবেন।

আল্লাহতায়ালার ইবাদতের মাধ্যমে অন্তরে তাকওয়া সৃষ্টি হয়, চাই সেটা ফরজ ইবাদত হোক কিংবা নফল।

★নিয়মিত নফল রোযা রাখা রাখবেন।।
‘আল্লাহতায়ালা তাকওয়া অর্জনের উদ্দেশ্যে সিয়াম পালনের আদেশ করেছেন।’ 

★আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করবেন।

আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করার মাধ্যমে অন্তরে তাকওয়া সৃষ্টি হয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই রাত ও দিবসের বিবর্তন এবং আসমানসমূহ ও জমিনে যা আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন, তাতে বহু নিদর্শন রয়েছে এমন কওমের জন্য, যারা তাকওয়া অবলম্বন করে।’ (সুরা ইউনুস : ৬)।

★পরকাল ও তার ভয়াবহতা সম্পর্কৃত আয়াত ও হাদিস পাঠ করবেন।

কবর ও তার শাস্তি এবং পরকাল ও তার ভয়াবহতা সম্পর্কৃত কোরআনের আয়াত ও হাদিসগুলো বেশি বেশি অধ্যয়ন করার মাধ্যমে অন্তরে তাকওয়া সৃষ্টি হয়।

★দাওয়াত ও তাবলিগের মেহনতে সময় লাগাতে পারেন।
তাদের মজলিসে বসে ঈমান আমলের মেহনতের বয়ান শোনার চেষ্টা করবেন।

★হক্কানী শায়েখদের জান্নাত জাহান্নামের বয়ান শুনতে পারেন।

★তাকওয়া বৃদ্ধির জন্য নবী, ছাহাবায়ে কেরাম, বুযুর্গানে দ্বীনদের ঘটনা সম্বলিত বই পড়বেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 125 views
...