জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
(০১) হিলফুল ফুযুল সংক্রান্ত বিস্তারিতঃ
আমাদের মহানবী সা. এমন একটি সময় আরব ভূমিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, যখন আরব সমাজে চরম বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা বিরাজ করছিল।
এ সমাজে ছিল না কোনো নিয়মনীতি ও আইনের শাসন। গোত্রীয় কলহ, রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, সামাজিক শ্রেণিভেদ, নারী নির্যাতন, ব্যভিচার, সুদ, ঘুষ, মদ, জুয়া প্রভৃতি সমাজকে মারাত্মকভাবে কলুষিত করেছিল। ঐতিহাসিকরা আরবের এই সময়কে ‘আইয়ামে জাহেলিয়া’ বা ‘অন্ধকার যুগ’ বলে অভিহিত করেছেন। জাহেলিয়া যুগের এই রক্তপাত, অন্যায় ও অনাচার বালক মুহাম্মদ সা.-এর মনে গভীর রেখাপাত করে। তিনি সমাজের সব অন্যায়, অবিচার ও নির্যাতন বন্ধের উপায় খুঁজে বের করার জন্য সর্বদা চিন্তায় মগ্ন থাকতেন। অবশেষে তাঁর মনে একটি অভিনব চিন্তার উদয় হলো। তিনি তাঁর সমবয়সী কতিপয় যুবককে নিয়ে ‘হিলফুল ফুজুল’ নামে একটি সংঘ গড়ে তুললেন। এ সংগঠন সমাজের সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াল। (আসলে নামটি হবে ‘হালফুল ফুজুল'( حلف الفضول )
আরবি حلف শব্দের অর্থ শপথ, চুক্তি বা অঙ্গীকার। الفضول শব্দটির অর্থ কল্যাণ, শান্তি, মর্যাদা- সম্মান ইত্যাদি। অর্থাৎ হালফুল ফুযুল অর্থ কল্যাণের অঙ্গীকার বা শান্তিসংঘ ।) আরব সমাজের সব অন্যায় প্রতিরোধের লক্ষ্যে হিলফুল ফুযুল গঠিত হলেও একটি বিশেষ যুদ্ধের ভয়াবহতার পরিপ্রেক্ষিতে মহানবী সা. এ সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন বলে মনে করা হয়। এ যুদ্ধের নাম ‘হরবুল ফুজ্জার’ বা অন্যায় সমর।
সম্ভবত ৫৮৫ খ্রিস্টাব্দে ওকাজ মেলার (মক্কার ওকাজ নামক স্থানে প্রতিবছর এই মেলা বসত) ঘোড়দৌড়, জুয়াখেলা ও কাব্য প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র করে পবিত্র জিলকদ মাসে মক্কার কোরাইশ ও হাওয়াজিন গোত্রের মধ্যে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শুরু হয়। আরবে পবিত্র জিলকদ মাস ছিল শান্তির মাস। এ মাসে আরব দেশে সব ধরনের যুদ্ধবিগ্রহ নিষিদ্ধ ছিল। তাই জিলকদ মাসে শুরু হওয়া এ যুদ্ধকে ‘হরবুল ফুজ্জার’ (মতান্তরে ‘ফিজার’) বা অন্যায় সমর বলা হয়। দীর্ঘ পাঁচ বছর স্থায়ী এ যুদ্ধের ভয়াবহতা বালক মুহাম্মদ সা.-এর কোমল মনকে মারাত্মকভাবে ব্যথিত করে তোলে। এ যুদ্ধে অনেক লোক প্রাণ হারিয়েছিল। এ যুদ্ধের সময় তাঁর বয়স ১৪ কিংবা ১৫ বছর (সিরাতে ইবনে হিশাম)। যদিও তিনি অস্ত্র হাতে শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেননি; কিন্তু এই যুদ্ধের বীভৎসলীলা দেখে বালক মুহাম্মদ সা. অত্যন্ত বিচলিত হয়ে পড়েন এবং আরববাসীদের এরূপ ধ্বংসযজ্ঞের হাত থেকে পরিত্রাণের উপায় নিয়ে ভাবতে থাকেন। আরবে শান্তি বজায় রাখার জন্য তিনি একটি শান্তিসংঘ গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
৫৯৫ খ্রিস্টাব্দে সমমনা নিঃস্বার্থ কিছু উৎসাহী যুবক ও পিতৃব্য জুবাইরকে নিয়ে তিনি এ শান্তিসংঘ গঠন করেন। এ সংঘের চারজন বিশিষ্ট সদস্য ফজল, ফাজেল, ফজায়েল ও মোফাজ্জেলের নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়েছিল ‘হিলফুল ফুজুল’। এ সংঘের কর্মসূচি ছিল নিম্নরূপ :
(১) দেশে শান্তিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা,
(২) বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে সদ্ভাব ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করা,
(৩) অত্যাচারিতকে অত্যাচারীর হাত থেকে রক্ষা করা, (৪) দুর্বল, অসহায় ও এতিমদের সাহায্য করা,
(৫) বিদেশি বণিকদের জান ও মালের নিরাপত্তা বিধান করা এবং
(৬) সর্বোপরি সব ধরনের অন্যায় ও অবিচার অবসানের চেষ্টা করা। এ শান্তিসংঘ প্রায় ৫০ বছর ধরে স্থায়ী হয়েছিল।
এভাবে মুহাম্মদ সা. মানুষের কল্যাণের জন্য আত্মনিয়োগ করেন এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত হিলফুল ফুজুলই বিশ্ব ইতিহাসে সর্বপ্রথম কল্যাণী সেবাসংঘের মর্যাদা লাভ করে। এভাবে হজরত মুহাম্মদ সা. নবুয়তপ্রাপ্তির আগেই শান্তির অগ্রদূত হিসেবে পৃথিবীর বুকে আত্মপ্রকাশ করেন। জাহেলি যুগে আরব সমাজের অন্যায়, অবিচার প্রতিরোধ করার জন্য হিলফুল ফুজুল গঠিত হলেও মহানবী সা.-এর নেতৃত্বে গঠিত এ সংগঠনটির শিক্ষা সর্বকালের, সর্বসমাজের যুবকদের জন্য একটি আদর্শ শিক্ষা ও পথনির্দেশক হয়ে রয়েছে
এই সংঘের তথ্য ও তত্বে ঐতিহাসিকদের বিভিন্ন বর্ণনা পাওয়া যায়। ফিকহুস সিরাহ গ্রন্থকারের মতে- ইসলামে বছরের চারটি মাস অতিশয় পবিত্র ও সম্মানিত। এগুলো হলো জিলকদ, জিলহজ, মহররম ও রজব। আরবদের কাছেও সুদীর্ঘ অতীত থেকে মাস চারটি সম্মানিত ও পবিত্র গণ্য হতো। এই চার মাসে যুদ্ধবিগ্রহ ও রক্তপাত হারাম। কিন্তু এই সম্মানীয় মাসের পবিত্রতা লঙ্ঘিত হয়েছিল পরপর চার বছরের যুদ্ধে। এজন্য আরবরা এই যুদ্ধের নাম দিয়েছিল হারবুল ফুজ্জার বা পাপবিদ্ধ লড়াই।
মহানবী সা. এর বয়স যখন বিশের কোটায় তখন কোরাইশদের মধ্যে এ অন্যায় রক্তপাতের বিরুদ্ধে চেতনা তীব্রতর হয়। যুদ্ধে দুই পক্ষের নিহত লোকদের সংখ্যার তুলনায় প্রতিপক্ষে নিহতের অতিরিক্ত সংখ্যার জন্য রক্তপণ আদায় করে কোরাইশরা। এভাবে ফুজ্জারের যুদ্ধ সমাপ্ত হয় শাওয়াল মাসে। যুদ্ধবিধ্বস্ত সমাজে জননিরাপত্তা চরমভাবে ভেঙে পড়েছিল আগে থেকেই। বিশেষভাবে দুর্বল ও মজলুম মানুষের জীবন হয়ে উঠেছিল চরম দুর্বিষহ। বাইরে থেকে কাবাঘর জিয়ারতে যারা আসত, তাদের নিরাপত্তার বিষয়টিও ভাবিয়ে তোলে সবাইকে।
দীর্ঘ চার বছর স্থায়ী যুদ্ধও ছিল জননিরাপত্তা লঙ্ঘনের একটি ঘটনার ভয়াবহ পরিণাম। কাজেই কোরাইশ নেতারা চিন্তা করলেন আমাদের মজলুম মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসতে হবে। প্রথম যে ব্যক্তি প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন তিনি ছিলেন নবী করিম সা. এর চাচা জুবাইর ইবনে আবদুল মোত্তালিব। নবী করিম সা. এই চুক্তির স্মৃতিচারণ করে বলেন, আমি আমার চাচাদের সঙ্গে আবদুল্লাহ ইবনে জাদআনের ঘরে একটি অঙ্গীকারের সময় উপস্থিত ছিলাম। এই চুক্তির বিনিময়ে আমাকে লালবর্ণের উটনী দেয়া হলেও আমি তা পছন্দ করব না। যদি ইসলামের যুগে এই চুক্তির আওতায় আমাকে কোনো আIহবান জানানো হয়, আমি সে ডাকে সাড়া দেব। (ফিকহুস সিরাহ, পৃ. ৭২)।
আল্লামা নুবাইরির বর্ণনায় অঙ্গীকারটি সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানা যায়। জুবাইর ইবনে মুতএম বলেন, রাসূলে পাক সা. বলেন, আমাকে যদি লালবর্ণের উটও দেয়া হতো, তবুও ইবনে জুদআনের ঘরে যে চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল এবং তাতে আমি উপস্থিত ছিলাম, তা ভঙ্গ করা আমি পছন্দ করতাম না। সেই চুক্তিতে বনি হাশিম, বনি জুহরা ও বনি তিম গোত্রগুলো এ মর্মে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল যে, তারা সব সময় মজলুমের সাহায্য করবে।
মজলুমদের মধ্যে কেউ যদি সেই চুক্তির বরাতে এখনও আমার কাছে সাহায্য চায়, আমি তাকে অবশ্যই সাহায্য করব। চুক্তিটি ছিল হিলফুল ফুজুল। (নুুবাইরি : পৃ. ১/১০১)। ইবনে হিশাম বলেন, তারা এই মর্মে অঙ্গীকার ও চুক্তিবদ্ধ হয় যে, মক্কার অধিবাসী বা অন্য জায়গার কোনো মজলুম মানুষ যদি মক্কায় প্রবেশ করে, তাকে তারা সহায়তা দেবে এবং যে ব্যক্তি তার ওপর জুুলুম করবে, তার সঙ্গে তারা লড়াই করবে, যতক্ষণ না মজলুমের হক উদ্ধার হয়। (সিরাতে ইবনে হিশাম : ১/১৪১)।
ওয়াকেদি বলেন, জুরহুম সম্প্রদায়ের কয়েকজন লোক, যাদের নাম ছিল ফজল, ফুজালা, ফেজাল ও মুফাজজাল, তারা এ ধরনের চুক্তি সম্পাদন করেছিল। কাজেই কোরাইশরা এই চুক্তি সম্পাদনের সময় তাদের নামানুসারে এর নামকরণ করে। (আল আগানি : ১৬/৭০)।
(০২)
আলোচ্য ২টি মুজিযা পুরোপুরি সত্য।
২টি ঘটনাই তিরমিজি শরীফে باب ماجاء فی بدء نبوۃ النبی অধ্যায় ২/২০২ পৃষ্ঠায় এবং
মিশকাত শরীফ মু'জিযাত অধ্যায় ৫৩০ নং পৃষ্ঠা তে এসেছে।
ফাতাওয়ায়ে রহিমিয়্যাহ ১/১৬১
حَدَّثَنَا الْفَضْلُ بْنُ سَهْلٍ أَبُو الْعَبَّاسِ الأَعْرَجُ الْبَغْدَادِيُّ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ غَزْوَانَ أَبُو نُوحٍ، أَخْبَرَنَا يُونُسُ بْنُ أَبِي إِسْحَاقَ، عَنْ أَبِي بَكْرِ بْنِ أَبِي مُوسَى، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ خَرَجَ أَبُو طَالِبٍ إِلَى الشَّامِ وَخَرَجَ مَعَهُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فِي أَشْيَاخٍ مِنْ قُرَيْشٍ فَلَمَّا أَشْرَفُوا عَلَى الرَّاهِبِ هَبَطُوا فَحَلُّوا رِحَالَهُمْ فَخَرَجَ إِلَيْهِمُ الرَّاهِبُ وَكَانُوا قَبْلَ ذَلِكَ يَمُرُّونَ بِهِ فَلاَ يَخْرُجُ إِلَيْهِمْ وَلاَ يَلْتَفِتُ . قَالَ فَهُمْ يَحُلُّونَ رِحَالَهُمْ فَجَعَلَ يَتَخَلَّلُهُمُ الرَّاهِبُ حَتَّى جَاءَ فَأَخَذَ بِيَدِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ هَذَا سَيِّدُ الْعَالَمِينَ هَذَا رَسُولُ رَبِّ الْعَالَمِينَ يَبْعَثُهُ اللَّهُ رَحْمَةً لِلْعَالَمِينَ . فَقَالَ لَهُ أَشْيَاخٌ مِنْ قُرَيْشٍ مَا عِلْمُكَ فَقَالَ إِنَّكُمْ حِينَ أَشْرَفْتُمْ مِنَ الْعَقَبَةِ لَمْ يَبْقَ شَجَرٌ وَلاَ حَجَرٌ إِلاَّ خَرَّ سَاجِدًا وَلاَ يَسْجُدَانِ إِلاَّ لِنَبِيٍّ وَإِنِّي أَعْرِفُهُ بِخَاتَمِ النُّبُوَّةِ أَسْفَلَ مِنْ غُضْرُوفِ كَتِفِهِ مِثْلَ التُّفَّاحَةِ . ثُمَّ رَجَعَ فَصَنَعَ لَهُمْ طَعَامًا فَلَمَّا أَتَاهُمْ بِهِ وَكَانَ هُوَ فِي رِعْيَةِ الإِبِلِ قَالَ أَرْسِلُوا إِلَيْهِ فَأَقْبَلَ وَعَلَيْهِ غَمَامَةٌ تُظِلُّهُ فَلَمَّا دَنَا مِنَ الْقَوْمِ وَجَدَهُمْ قَدْ سَبَقُوهُ إِلَى فَىْءِ الشَّجَرَةِ فَلَمَّا جَلَسَ مَالَ فَىْءُ الشَّجَرَةِ عَلَيْهِ فَقَالَ انْظُرُوا إِلَى فَىْءِ الشَّجَرَةِ مَالَ عَلَيْهِ . قَالَ فَبَيْنَمَا هُوَ قَائِمٌ عَلَيْهِمْ وَهُوَ يُنَاشِدُهُمْ أَنْ لاَ يَذْهَبُوا بِهِ إِلَى الرُّومِ فَإِنَّ الرُّومَ إِذَا رَأَوْهُ عَرَفُوهُ بِالصِّفَةِ فَيَقْتُلُونَهُ فَالْتَفَتَ فَإِذَا بِسَبْعَةٍ قَدْ أَقْبَلُوا مِنَ الرُّومِ فَاسْتَقْبَلَهُمْ فَقَالَ مَا جَاءَ بِكُمْ قَالُوا جِئْنَا أَنَّ هَذَا النَّبِيَّ خَارِجٌ فِي هَذَا الشَّهْرِ فَلَمْ يَبْقَ طَرِيقٌ إِلاَّ بُعِثَ إِلَيْهِ بِأُنَاسٍ وَإِنَّا قَدْ أُخْبِرْنَا خَبَرَهُ بُعِثْنَا إِلَى طَرِيقِكَ هَذَا فَقَالَ هَلْ خَلْفَكُمْ أَحَدٌ هُوَ خَيْرٌ مِنْكُمْ قَالُوا إِنَّمَا أُخْبِرْنَا خَبَرَهُ بِطَرِيقِكَ هَذَا . قَالَ أَفَرَأَيْتُمْ أَمْرًا أَرَادَ اللَّهُ أَنْ يَقْضِيَهُ هَلْ يَسْتَطِيعُ أَحَدٌ مِنَ النَّاسِ رَدَّهُ قَالُوا لاَ . قَالَ فَبَايَعُوهُ وَأَقَامُوا مَعَهُ قَالَ أَنْشُدُكُمُ اللَّهَ أَيُّكُمْ وَلِيُّهُ قَالُوا أَبُو طَالِبٍ فَلَمْ يَزَلْ يُنَاشِدُهُ حَتَّى رَدَّهُ أَبُو طَالِبٍ وَبَعَثَ مَعَهُ أَبُو بَكْرٍ بِلاَلاً وَزَوَّدَهُ الرَّاهِبُ مِنَ الْكَعْكِ وَالزَّيْتِ .
আবূ মূসা আল-আশ'আরী (রাযিঃ) বলেনঃ কিছু প্রবীণ কুরাইশসহ আবূ তালিব (ব্যবসার উদ্দেশে) সিরিয়ার দিকে রওয়ানা হলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাথে রওয়ানা হন। তারা (বুহাইরাহ) পাদ্রীর নিকট পৌছে তাদের নিজেদের সওয়ারী থেকে মালপত্র নামাতে থাকে, তখন উক্ত পাদ্রী (গীর্জা থেকে বেরিয়ে) তাদের নিকটে এলেন। অথচ এ কাফিলা এর আগে অনেকবার এখান দিয়ে চলাচল করেছে কিন্তু তিনি কখনও তাদের নিকট (গীর্জা) বেরিয়ে আসেননি বা তাদের প্রতি ভ্রুক্ষেপও করেননি। রাবী বলেন, লোকেরা তাদের বাহন থেকে সামানপত্র নামাতে ব্যস্ত থাকাবস্থায় উক্ত পাদ্ৰী তাদের ভেতরে ঢোকেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর হাত ধরে বলেন, ইনি “সাইয়্যিদুল আলামীন” (বিশ্ববাসীর নেতা), ইনি রাসূল রাব্বিল আলামীন (বিশ্ববাসীর প্রতিপালকের রাসূল) এবং আল্লাহ তা'আলা তাকে রহমাতুল্লিল আলামীন করে (বিশ্ববাসীর জন্য করুণা স্বরূপ) পাঠাবেন।
তখন কুরাইশদের বৃদ্ধ লোকেরা তাকে প্রশ্ন করে, কে আপনাকে জানিয়েছে? তিনি বলেন, যখন তোমরা এ উপত্যকা হতে নামছিলে, (তখন আমি লক্ষ্য করেছি যে,) প্রতিটি গাছ ও পাথর সিজদায় লুটিয়ে পড়ছে। এই দুটি নাবী ব্যতীত অন্য কোন সৃষ্টিকে সাজদাহ করে না। এতদভিন্ন তার ঘারের নীচে আপেল সদৃশ গোলাকার মোহরে নবুওয়াতের সাহায্যে আমি তাকে চিনেছি। খাদ্যদ্রব্যসহ যখন তাদের নিকটে এলেন তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটের পাল চরাতে গিয়েছিলেন। পাদ্রী বলেন, তোমরা তাকে ডেকে আনার ব্যবস্থা কর। অতএব রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিরে এলেন, তখন একখণ্ড মেঘ তার উপর ছায়া বিস্তার করেছিল এবং কাফিলার লোকেরা যারা তার পূর্বেই এসেছিল তাদেরকে তিনি গাছের ছায়ায় বসা অবস্থায় পেলেন।
তিনি বসলে গাছের ছায়া তার দিকে ঝুকে পড়ে। পাদ্রি বলেন, তোমরা গাছের ছায়ার দিকে লক্ষ্য কর, ছায়াটি তার দিকে ঝুঁকে পড়েছে। রাবী বলেন, ইত্যবসরে পাদ্রী তাদের মাঝে দাঁড়িয়ে তাদেরকে শপথ দিয়ে বলেছিলেন, তোমরা তাকে নিয়ে রোম সাম্রাজ্যে যেও না। কেননা রূমীয়রা যদি তাকে দেখে তাহলে তাকে চিহ্নগুলোর দ্বারা সনাক্ত করে ফেলবে এবং তাকে মেরে ফেলবে। এমতাবস্থায় পাদ্রী লক্ষ্য করেন যে, রূমের সাতজন লোক তাদের দিকে আসছে। পাদ্রী তাদের দিকে অগ্রসর হয়ে প্রশ্ন করেন, তোমরা কেন এসেছ? তারা বলে, এ মাসে আখিরী যামানার নাবীর আগমন ঘটবে। তাই চলাচলের প্রতিটি রাস্তায় লোক পাঠানো হয়েছে, তাই আমাদেরকে আপনাদের পথে পাঠানো হয়েছে।
পাদ্রী রোমীয় নাগরিকদের প্রশ্ন করেন, তোমাদের পেছনে তোমাদের চেয়েও ভাল কোন ব্যক্তি আছে কি (কোন পাদ্রী তোমাদেরকে এই নাবীর সংবাদ দিয়েছ কি)? তারা বলল, আপনার এ রাস্তায়ই আমাদেরকে ঐ নাবীর আসার খরব দেয়া হয়েছে। পাদ্রী বলেন, তোমাদের কি মত, আল্লাহ তা'আলা যদি কোন কাজ কারার ইচ্ছা করেন তবে কোন মানুষের পক্ষে তা প্রতিহত করা কি সম্ভব? তারা বলল, না (অর্থাৎ শেষ যামানার নাবীর আগমন ঘটবেই, কোন মানুষ তা ঠেকাতে পারবে না)।
রাবী বলেন, তারপর তারা তার নিকট আনুগত্যের শপথ করে এবং তার সাহচর্য অবলম্বন করে। তারপর পাদ্রী (কুরাইশ কাফিলাকে) আল্লাহর নামে শপথ করে প্রশ্ন করেন, তোমাদের মধ্যে কে তার অভিভাবক? লোকেরা বলল, আবূ তালিব। পাদ্রী আবূ তালিবকে অবিরতভাবে আল্লাহ তা'আলার নামে শপথ করে তাকে স্বদেশে ফেরত পাঠাতে বলতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত আবূ তালিব নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে (মক্কায়) ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করেন এবং আবূ বাকর (রাযিঃ) বিলাল (রাযিঃ)-কে তার সাথে দেন। আর পাদ্রী তাকে পাথেয় হিসেবে কিছু রুটি ও যাইতুনের তৈল দেন।
(তিরমিজি ৩৬২০ সহীহ ফিকহুস সীরাহ, দিফা আনিল হাদীসিন নাবাবী (৬২-৭২), মিশকাত (৫৯১৮),
(ترمذی شریف ج ۲ ص ۲۰۲ باب ماجاء فی بدء نبوۃ النبی ا)
(مشکوٰۃ شریف ص ۵۴۰ باب فی المعجزات۔الفصل الثانی)