আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
162 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (3 points)
আস সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ,

দুই বছর আগে বিয়ে হয়। ছয় মাস পর থেকে শ্বশুরবাড়ির সবাই স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ে অথবা আমাদের তালাকের কথা বলে প্রায়ই (অবশ্য স্বামী তালাক অথবা দ্বিতীয় বিয়ে করতে চায় না)। তবে সমস্যা যেহেতু আমার তাই আমিও চাই উনি মাসনা করুক।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, তাকে কারো সাথে ভাগাভাগি করার মত মানসিক শক্তি আমার নেই। আবার সন্তানের জন্য দুয়া কবুল হওয়ার অপেক্ষা করার সময়ও মনে হচ্ছে শ্বশুরবাড়ির মানুষদের নেই। স্বামী এখন আমাকে সহানুভূতি দেখালেও শ্বশুর-শ্বাশুড়ীদের কথায় শীঘ্রি পরিবর্তিত হবার সম্ভাবনা আছে।

তাই এসব কারণের জন্য আমি তালাক নিতে চাচ্ছি। যাতে তারা দ্রুত নতুন বউ আনতে পারে এবং সন্তানের মুখ দেখতে পারে। এই ব্যপারে আপনার মতামত চাই (শ্বশুরবাড়ির কথা শোনায়, সন্তান এবং তালাকের চিন্তায় আমি প্রায় মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছি। খাওয়া, ঘুম, গোসল, নামাজ, যিকির সবকিছুর অনিয়ম হয়ে গিয়েছে। আল্লাহ থেকেও মনে হচ্ছে দূরে সরে যাচ্ছি)।

1 Answer

0 votes
by (58,830 points)
edited by


بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

স্বামী ও স্ত্রীর উপর শরয়ী যেসব বিধানাবলী মানা আবশ্যক। তা যদি উভয়ের পক্ষে একসাথে বসবাস করে মানা অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাহলে স্ত্রীর জন্য স্বামীর কাছ থেকে তালাক চাইতে পারে। যেমন-

.স্বামীর অধীনে থেকে শরয়ী পর্দা, নামায ইত্যাদি আবশ্যকীয় ইবাদত আদায় করা অসম্ভব হয়ে পড়া।

.স্বামী স্ত্রীর আবশ্যকীয় জরুরত তথা বাসস্থান, খানা, পোশাক ও শারিরীক প্রয়োজন পূরণে অক্ষম হয়ে যাওয়া।

.স্বামী কর্তৃক স্ত্রীর উপর জুলুম করা। প্রহার করা, গালাগাল করা, অপমান করা ইত্যাদি।

.স্ত্রী থেকে স্বামীর ছয় মাসের অধিক সফরে চলে যাওয়া। এতে স্ত্রীর ফেতনা পতিত হবার আশংকা হলে স্ত্রী তালাক চাইতে পারে।

.স্বামী শরীয়ত গর্হিত অশ্লীল কাজে নিমগ্ন হয়ে পড়লে।

.স্ত্রীকে তার পিতামাতার সাথে দেখা সাক্ষাতে বাঁধা প্রদান করলে।

.বনিবনা না হয়। রুচির ভিন্নতার কারণে সংসারে অশান্তি অমিল হলে। সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা কষ্টকর হলে।

ইত্যাদি কারণে স্ত্রী তার স্বামীর কাছে তালাক চাইতে পারে।

فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا فِيمَا افْتَدَتْ بِهِ ۗ تِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ فَلَا تَعْتَدُوهَا ۚ وَمَن يَتَعَدَّ حُدُودَ اللَّهِ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ [٢:٢٢٩

অতঃপর যদি তোমাদের ভয় হয় যে,তারা উভয়েই আল্লাহর নির্দেশ বজায় রাখতে পারবে না,তাহলে সেক্ষেত্রে স্ত্রী যদি বিনিময় দিয়ে অব্যাহতি নিয়ে নেয়,তবে উভয়ের মধ্যে কারোরই কোন পাপ নেই। এই হলো আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা। কাজেই একে অতিক্রম করো না। বস্তুতঃ যারা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘন করবে, তারাই জালেম। [সূরা বাকারা-২২৯]

عَنْ ثَوْبَانَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: أَيُّمَا امْرَأَةٍ سَأَلَتْ زَوْجَهَا طَلاَقًا مِنْ غَيْرِ بَأْسٍ فَحَرَامٌ عَلَيْهَا رَائِحَةُ الجَنَّةِ

হযরত সাওবান রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যদি কোন মহিলা তার উপর কোন কষ্ট না হবার পরও স্বামীর কাছে তালাক চায়, তাহলে তার জন্য জান্নাতের ঘ্রাণও হারাম। [সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১১৮৭]

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ امْرَأَةَ ثَابِتِ بْنِ قَيْسٍ أَتَتِ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، ثَابِتُ بْنُ قَيْسٍ، مَا أَعْتِبُ عَلَيْهِ فِي خُلُقٍ وَلاَ دِينٍ، وَلَكِنِّي أَكْرَهُ الكُفْرَ فِي الإِسْلاَمِ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَتَرُدِّينَ عَلَيْهِ حَدِيقَتَهُ؟» قَالَتْ: نَعَمْ، قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اقْبَلِ الحَدِيقَةَ وَطَلِّقْهَا تَطْلِيقَةً

 

ইবনু ‘আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, সাবিত ইবনু কায়স এর স্ত্রী নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! চরিত্রগত বা দ্বীনী বিষয়ে সাবিত ইবনু কায়সের উপর আমি দোষারোপ করছি না। তবে আমি ইসলামের ভিতরে থেকে কুফরী করা অর্থাৎ স্বামীর সঙ্গে অমিল) পছন্দ করছি না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি কি তার বাগানটি ফিরিয়ে দেবে? সে বললঃ হ্যাঁ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি বাগানটি গ্রহণ কর এবং মহিলাকে এক তালাক দিয়ে দাও। [বুখারী, হাদীস নং-৫২৭৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৮১]

প্রশ্নকারী প্রিয় বোন!

প্রশ্নেল্লিখিত ছুরতে আপনার জন্য তালাক চাওয়া বৈধ হলেও আমরা আপনাকে পরামর্শ দিব সেদিকে অগ্রসর না হওয়ার জন্য। বরং আপনি সবর করতে থাকুন ও দোয়া চালিয়ে যাবেন। একান্ত আপনার স্বামীর পরিবার যদি তাকে বিয়ে করাতে চায়, তাহলে সে তা করতে পারে। কারণ, আল্লাহ তায়ালা তাকে সেই অধিকার দিয়েছেন। নবী ও সাহাবায়ে কেরামেরও একাধিক স্ত্রী ছিল। আপনার স্বামীর দায়িত্ব হলো আপনার হক আদায় করা। অতপর সে চাইলে অন্যত্র বিয়ে করতে পারে। কিন্তু একাধিক স্ত্রীর হক আদায়ে সতর্ক থাকতে হবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...