بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
স্বামী ও
স্ত্রীর উপর শরয়ী যেসব বিধানাবলী মানা আবশ্যক। তা যদি উভয়ের পক্ষে একসাথে বসবাস করে
মানা অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাহলে স্ত্রীর জন্য স্বামীর কাছ থেকে তালাক চাইতে পারে। যেমন-
১.স্বামীর অধীনে
থেকে শরয়ী পর্দা, নামায ইত্যাদি আবশ্যকীয় ইবাদত
আদায় করা অসম্ভব হয়ে পড়া।
২.স্বামী স্ত্রীর
আবশ্যকীয় জরুরত তথা বাসস্থান, খানা, পোশাক ও শারিরীক প্রয়োজন পূরণে অক্ষম হয়ে যাওয়া।
৩.স্বামী কর্তৃক
স্ত্রীর উপর জুলুম করা। প্রহার করা, গালাগাল করা, অপমান করা ইত্যাদি।
৪.স্ত্রী থেকে স্বামীর
ছয় মাসের অধিক সফরে চলে যাওয়া। এতে স্ত্রীর ফেতনা পতিত হবার আশংকা হলে স্ত্রী তালাক
চাইতে পারে।
৫.স্বামী শরীয়ত গর্হিত অশ্লীল কাজে নিমগ্ন হয়ে
পড়লে।
৬.স্ত্রীকে তার পিতামাতার সাথে দেখা সাক্ষাতে
বাঁধা প্রদান করলে।
৭.বনিবনা না হয়।
রুচির ভিন্নতার কারণে সংসারে অশান্তি অমিল হলে। সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা কষ্টকর হলে।
ইত্যাদি কারণে
স্ত্রী তার স্বামীর কাছে তালাক চাইতে পারে।
فَإِنْ
خِفْتُمْ أَلَّا يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا فِيمَا
افْتَدَتْ بِهِ ۗ تِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ فَلَا تَعْتَدُوهَا ۚ وَمَن يَتَعَدَّ
حُدُودَ اللَّهِ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ [٢:٢٢٩
অতঃপর যদি
তোমাদের ভয় হয় যে,তারা উভয়েই আল্লাহর নির্দেশ বজায়
রাখতে পারবে না,তাহলে সেক্ষেত্রে স্ত্রী যদি বিনিময়
দিয়ে অব্যাহতি নিয়ে নেয়,তবে উভয়ের মধ্যে কারোরই কোন
পাপ নেই। এই হলো আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা। কাজেই একে অতিক্রম করো না। বস্তুতঃ
যারা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘন করবে, তারাই জালেম। [সূরা বাকারা-২২৯]
عَنْ
ثَوْبَانَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ:
أَيُّمَا امْرَأَةٍ سَأَلَتْ زَوْجَهَا طَلاَقًا مِنْ غَيْرِ بَأْسٍ فَحَرَامٌ
عَلَيْهَا رَائِحَةُ الجَنَّةِ
হযরত সাওবান
রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যদি কোন মহিলা তার উপর কোন কষ্ট না হবার পরও
স্বামীর কাছে তালাক চায়, তাহলে তার জন্য জান্নাতের ঘ্রাণও
হারাম। [সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১১৮৭]
عَنِ ابْنِ
عَبَّاسٍ، أَنَّ امْرَأَةَ ثَابِتِ بْنِ قَيْسٍ أَتَتِ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، ثَابِتُ بْنُ قَيْسٍ، مَا
أَعْتِبُ عَلَيْهِ فِي خُلُقٍ وَلاَ دِينٍ، وَلَكِنِّي أَكْرَهُ الكُفْرَ فِي
الإِسْلاَمِ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:
«أَتَرُدِّينَ عَلَيْهِ حَدِيقَتَهُ؟» قَالَتْ: نَعَمْ، قَالَ رَسُولُ اللَّهِ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اقْبَلِ الحَدِيقَةَ وَطَلِّقْهَا تَطْلِيقَةً
ইবনু ‘আববাস
(রাঃ) হতে বর্ণিত যে, সাবিত ইবনু কায়স এর স্ত্রী নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম!
চরিত্রগত বা দ্বীনী বিষয়ে সাবিত ইবনু কায়সের উপর আমি দোষারোপ করছি না। তবে আমি ইসলামের
ভিতরে থেকে কুফরী করা অর্থাৎ স্বামীর সঙ্গে অমিল) পছন্দ করছি না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি কি তার বাগানটি ফিরিয়ে দেবে? সে বললঃ হ্যাঁ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি বাগানটি গ্রহণ কর এবং মহিলাকে এক তালাক দিয়ে দাও। [বুখারী, হাদীস নং-৫২৭৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৮১]
প্রশ্নকারী প্রিয় বোন!
প্রশ্নেল্লিখিত ছুরতে আপনার জন্য তালাক চাওয়া বৈধ হলেও আমরা আপনাকে পরামর্শ দিব সেদিকে অগ্রসর না হওয়ার জন্য। বরং আপনি সবর করতে থাকুন ও দোয়া চালিয়ে যাবেন। একান্ত আপনার স্বামীর পরিবার যদি তাকে বিয়ে করাতে চায়, তাহলে সে তা করতে পারে। কারণ, আল্লাহ তায়ালা তাকে সেই অধিকার দিয়েছেন। নবী ও সাহাবায়ে কেরামেরও একাধিক স্ত্রী ছিল। আপনার স্বামীর দায়িত্ব হলো আপনার হক আদায় করা। অতপর সে চাইলে অন্যত্র বিয়ে করতে পারে। কিন্তু একাধিক স্ত্রীর হক আদায়ে সতর্ক থাকতে হবে।