আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
258 views
in সালাত(Prayer) by (32 points)
edited by
আসসালামু আলাইকুম।

(১) জামাতে নামাজে মুক্তাদির যে দোয়া গুলো পড়ে (তাশাহুদ,দুরুদ শরিফ,দোয়া মাসুরা) সেইখানে কোন উচ্চারণ/লাইন কিছু ভুল পড়লে কি নামাজ হবে? অর্থাৎ ইমাম যদি সেইসকল দোয়া সঠিকভাবে পড়ে কিন্তু মুক্তাদির যদি ভুল পড়ে তাহলে কি মুক্তাদির নামাজ হয়ে যাবে? (যেহেতু যতটুকু আমি জানি যে, ইমামের নামাজ সঠিক হলে মুক্তাদির নামাজ সঠিক হয়ে যায়।)

(২) আমি নামাজ পড়ার সময় যখন ছানা পড়ি,তখন "ছানা" শব্দটা উচ্চারণ করে তারপর ("সুবহানাকা আল্লাহুম্মা.....") এইভাবে পড়ি। অর্থাৎ ("ছানাঃ সুবহানাকা আল্লহুম্মা.....") এইভাবে পড়ি। "ছানা" কথাটা উচ্চারণ করি। এর কারনে কি সমস্যা হবে? এখন কি ("সুবহানাকা আল্লাহুম্মা.....") এইভাবেই কি শুরু করে পড়তে হবে? নাকি ("ছানাঃ সুবহানাকা আল্লাহুমা....") অর্থাৎ "ছানা" শব্দটা উচ্চারণ করে তারপর ("সুবহানাকা আল্লাহুম্মা.....") এইভাবে পড়লে সমস্যা হবে না?

(৩) নামাজে প্রথম যদি ভুল নিয়ত করি। অর্থাৎ মাগরিব নামাজ পড়ার সময় দাড়ানোর পড় যদি ১ম বার ভুলে উচ্চারণ করি যে, ("আমি কিবলামুখী হয়ে আসরের চার রাকাত ফরজ নামাজ পড়ছি") এরপরে আবার সাথে সাথেই নামাজ শুরু করার আগেই যদি আবার সঠিকটা উচ্চারণ করি যে ("আমি কিবলামুখী হয়ে মাগরিবের ৩ রাকাত ফরজ নামাজ পড়ছি")। তারপর ("আল্লাহু আকবর") বলে হাত তুলে নামাজ শুরু করি। তাহলে কি নামাজ হবে?

(৪) নামাজরত অবস্থায় যদি কোন দোয়া বা সুরা পড়ার সময় হঠাৎ সেই দোয়া বা সুরার কোন লাইনের মাঝখানে আটকে/ভুলে যাই, তাহলে কি আবার প্রথম থেকে সেই সুরা পড়া শুরু করতে পারবো? এবং যেই লাইন ভুলে গেছি সেই লাইন থেকে শুরু করলেই হবে নাকি সুরার প্রথম থেকে শুরু করতে হবে?

(৪.১) আর, সুরার লাইনের মাঝখানে যদি হঠাৎ আটকে যাই, তাহলে কি সেই লাইন অর্ধেক পড়ার কারনে সেই লাইনের অর্থ নষ্ট/অশুদ্ধ/ভুল হওয়ার সম্ভাবনা নাই? কারন সেখানে তো লাইনটা অর্ধেক পড়া হচ্ছে। আর সেই লাইনে প্যাঁচ লাগার কারনে/ আটকে যাওয়ার কারনে আবার প্রথম থেকে পড়া লাগছে।
কিন্তু আটকে যাওয়া লাইনটা তো অর্ধেক কিরাত অবস্থায়ই রয়ে গেছে।বাকিটা তো আটকে যাওয়ার কারনে পড়তে পারিনি। তাহলে কি সেই লাইনের অর্থ নষ্ট হয়ে যাবে না? তাহলে লাইনের মাঝখানে ভুলে গেলে করনীয় কি? কারন লাইনের বাকি অংশ তো অসম্পূর্ণ অবস্থায় থাকবে।

(৫) কেউ যদি ইচ্ছার বিরুদ্ধে আল্লাহর কসম কাটে। তাহলে সেটা মনে মনে করলেই কসম হয়ে যাবে? নাকি জোড়ে আল্লাহর কসম উচ্চারণ করে কসম কাটলে কসম হয়ে যাবে?
কারন, আমার একটা সমস্যা হচ্ছে। শয়তান হয়তো আমাকে ওয়াস ওয়াসা দিচ্ছে। কোন কিছু বলতে গেলেই মনে মনে কসম চলে আসছে। আমি নিজ থেকে বলতে না চাইলেও মনে মনে চলে আসছে। কিন্তু আমি জোড়ে সেটা উচ্চারণ করি না। শয়তান হয়তো ভাবাচ্ছে, তাই অনেকবার এইটা মাথায় আসে। যদি আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোড়ে কখনো বলে ফেলি তাহলে কি কসম কার্যকর হয়ে যাবে? যেহেতু, আমাকে হয়তো শয়তান বারবার এইটা মনে করাচ্ছে। এই অবস্থায় করনীয় কি?

(৬) এই প্রশ্নের বর্ণনাটা একটু বড়।বুঝানোর জন্য বড় করে লেখা। যদি সম্ভব হয় তাহলে এই প্রশ্নের উত্তরটা দিয়েন।

প্রশ্নঃ আমাদের এইখানে একটা মসজিদে জামাতে নামাজ পড়ার সময় এসি (AC) ছাড়া থাকে। AC ছাড়া থাকলে প্রায় সব ফ্যান অফ থাকে। তাই সেইসময় হাল্কা শব্দ করলেই অনেক আওয়াজ হয়। আমি যখন নামাজে ২য় ও ৪র্থ রাকাতে সিজদা করার পর বসে যে দোয়া পড়ি (তাশাহুদ,দুরুদ শরিফ,দোয়া মাসুরা) তখন আমি একদম মনে মনে বা শুধু ঠোঁট নাড়িয়ে পড়ি না। এতে করে সেই দোয়া গুলো পড়ার সময় কিছুটা আস্তে পড়লেও (AC) সেই কিরাতের সাউন্ড অনেক জোড়ে শুনা যায়। কারন আমি সবগুলো আয়াত ভালোভাবে পড়ার চেষ্টা করি।কিন্তু আমি খেয়াল করেছি যে, আমার ধারণা মতে সেই সময় সবচেয়ে বেশি সাউন্ড আমার মুখ থেকেই আসে। আমি চেষ্টা করি যেন শুধু আমার কানেই সেই শব্দ আসুক। কিন্তু তাহলে তো শুধু ঠোঁট নাড়িয়ে পড়তে হবে। বাকি মুক্তাদিরা কিভাবে দোয়া গুলো পড়ে, বুঝতেছি না। আমি অনেক খেয়াল করে দেখেছি, তাদের মুখ থেকে কয়েক টা শব্দ ছাড়া আমি প্রায় কোন শব্দই শুনি না। (যেইখানে শ/স উচ্চারণ হয়,সেইগুলা শুনা যায়,বাকিগুলো আমি প্রায় শুনিই না। যেমনঃ "ইন্না" এই শব্দটা তো শুধু ঠোঁট নাড়ালে শুনাই যাবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমি শব্দ করে পড়বো)। এখন আমি একেবারে শুধু ঠোঁট নাড়িয়ে পড়তে পাড়ি না,কারন আমি যতদুর জানি যে, তাহলে তো সেই নামাজ আবার পড়তে হবে।
এখন তাহলে কি আমি এমনভাবে দোয়াগুলো পড়বো যেন শুধু ঠোঁট নাড়ানো হয় এবং শুধু কয়েকটি শব্দ শুনা যায়। নাকি অতটুকু জোড়ে পড়বো যেন আমি কানে শুনতে পাই।
আমি খেয়াল করেছি, আমি অতটুকু জোড়ে পড়লে আমার পাশের দুইজন শুনতে পায়। কিন্তু তাদের দোয়া কিন্তু আমি শুনতে পাই না,কয়েকটা শব্দ ছাড়া।
নামাজ পড়ার সময় তখন খুব ইতস্তবোধ হয়। যখন প্রায় কারোর শব্দি আমি বেশি শুনি না। কিন্তু আমার নিজের দোয়া পড়ার শব্দ জোড়ে শুনা যায়।
এর সলিউশন কি? কি করবো বুঝতেছি না। সবসময় বাসায় নামাজ পড়াও তো ঠিক হবে না।

1 Answer

0 votes
by (573,420 points)
edited by
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم


(০১)
হাদীস শরীফে এসেছেঃ  

حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ الْحَسَنِ بْنِ هَارُونَ بْنِ رُسْتُمَ السَّقَطِيُّ ، ثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَعِيدٍ أَبُو يَحْيَى الْعَطَّارُ ، ثَنَا شَبَابَةُ ، ثَنَا خَارِجَةُ بْنُ مُصْعَبٍ عَنْ أَبِي الْحُسَيْنِ الْمَدِينِيِّ عَنْ سَالِمِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ عَنْ أَبِيهِ عَنْ عُمَرَ عَنِ النَّبِيِّ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - قَالَ : " لَيْسَ عَلَى مَنْ خَلْفَ الْإِمَامِ سَهْوٌ ، فَإِنْ سَهَا الْإِمَامُ فَعَلَيْهِ وَعَلَى مَنْ خَلْفَهُ السَّهْوُ ، وَإِنْ سَهَا مَنْ خَلْفَ الْإِمَامِ فَلَيْسَ عَلَيْهِ سَهْوٌ والْإِمَامُ كَافِيهِ 

আলী ইবনুল হাসান ইবনে হারূন ইবনে রুসতাম আস-সাকাতী (রহঃ) ... উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি ইমামের পিছনে নামায পড়ে তার উপর সাহু সিজদা নেই। ইমাম ভুল করলে ইমাম ও মোকতাদী উভয়কে সাহু সিজদা করতে হবে। মোকতাদী ভুল করলে তার জন্য সাহু সিজদা নেই, ইমামই তার জন্য যথেষ্ট।
(সুনানে দারা কুতনি ১৩৮৩,বাইহাকী ২/৩৫২)

বিখ্যাত তাবেয়ি ইবরাহিম নাখায়ি (রহ.) বলেন, ‘তুমি যদি ইমামের পেছনে ভুল কর, কিন্তু ইমাম কোনো ভুল না করে, তা হলে তোমার ওপর সাহু সিজদা নেই। আর ইমাম ভুল করলে তোমার ভুল না হলেও ইমামের সঙ্গে তোমাকে সাহু সিজদা করতে হবে।’ 
(কিতাবুল আসার, ইমাম আবু ইউসুফ, বর্ণনা : ১৮৭)
,
★শরীয়তের বিধান হলো মুক্তাদীর এমন ভুল যার দ্বারা নামায ভঙ্গ হয় না, এমন কোন কাজ ইমামের পিছনে মুক্তাদী করলে এতে মুক্তাদীর উপর কোন কিছু যথা সাহু সেজদা আবশ্যক হয় না। বরং তার নামায বিশুদ্ধ হয়ে যায়।
,
 
فَأَمَّا الْمُقْتَدِي إذَا سَهَا فِي صَلَاتِهِ فَلَا سَهْوَ عَلَيْهِ؛ لِأَنَّهُ لَا يُمْكِنُهُ السُّجُودُ؛ لِأَنَّهُ إنْ سَجَدَ قَبْلَ السَّلَامِ كَانَ مُخَالِفًا لِلْإِمَامِ، وَإِنْ أَخَّرَهُ إلَى مَا بَعْدَ سَلَامِ الْإِمَامِ يَخْرُجُ مِنْ الصَّلَاةِ بِسَلَامِ الْإِمَامِ؛ لِأَنَّهُ سَلَامُ عَمْدٍ مِمَّنْ لَا سَهْوَ عَلَيْهِ، فَكَانَ سَهْوُهُ فِيمَا يَرْجِعُ إلَى السُّجُودِ مُلْحَقًا بِالْعَدَمِ لِتَعَذُّرِ السُّجُودِ عَلَيْهِ، فَسَقَطَ السُّجُودُ عَنْهُ أَصْلًا، (بدائع الصنائع، كتاب الصلاة، فصل وَأَمَّا بَيَانُ مَنْ يَجِبُ عَلَيْهِ سُجُودُ السَّهْوِ وَمَنْ لَا يَجِبُ عَلَيْهِ-1/175، الفتاوى الهندية-1/128، رد المحتار-2/82)
সারমর্মঃ
যদি মুক্তাদি নামাজের ভিতর কোনো ভুল করে,তাহলে তার উপর সেজদায়ে সাহু আবশ্যক হবেনা।
কেননা তার জন্য সেজদায়ে সাহু আদায় করার কোনো ইমকান, সুযোগ নেই।    
কেননা যদি সে ইমামের সালামের আগেই সালাম ফিরায়,তাহলে ইমের মুখালিফ তথা বিরোধিতা হলো।
যদি ইমামের সাথে সালাম ফিরানোর পর সেজদায়ে সাহু আদায় করে,তাহলে সে তো ইমামের সাথে নামাজ থেকে বের হয়ে গিয়েছে,,,,,  
,
আরো জানুনঃ- 

প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে মুক্তাদীর নামাজ বিশুদ্ধ হয়ে যাবে।
সমস্যা নেই।


(০২)
আপনি ভুল করছেন,এভাবে "ছানা" শব্দ বলার নিয়ম নেই।

এখন  ("সুবহানাকা আল্লাহুম্মা.....") এইভাবেই  শুরু করে পড়তে হবে।

তবে এর কারনে পূর্বের নামাজ গুলি পুনরায় আদায় করতে হবেনা।
সেগুলো শুদ্ধ হয়ে গিয়েছে।

(০৩)
প্রশ্নের বিবরণ মতে নামাজ হয়ে যাবে।
আপনি মুখে না বললেও ( যেহেতু মনে মনে মাগরিবের নামাজই উদ্দেশ্য ছিলো,এর জন্যই তো আপনি মসজিদে এসেছেন,) আপনার নামাজ হয়ে যেতো।

(০৪)
যেই লাইন ভুলে গিয়েছেন, সেই লাইন থেকে শুরু করলেই হবে। 

(৪.১)
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে নামাজ হয়ে যাবে,সমস্যা নেই।

(০৫)
মনে মনে বললে কসম হবেনা।
মুখ দিয়ে উচ্চারণ করে নিজ কানে আসার মতো আওয়াজ করে মহান আল্লাহর নামে কসম করলে তাহা কসম বলে বিবেচিত হবে।

যদি আপনি আপনার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোড়ে কখনো ভবিষ্যতে কোনো কাজ করা বা না করার কসম আল্লাহর নামে বলে ফেলেন, তাহলে কসম কার্যকর হয়ে যাবে।

(০৬)
আপনি নিজ কানে আসার মতো আওয়াজে উচ্চারণ করবেন।
যদি হালকা আওয়াজের চেষ্টার পরে দুই পাশের দুই জন শুনতেও পারে, তাতে সমস্যা নেই।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 160 views
...