بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
https://ifatwa.info/21883/ নং ফাতওয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, জিলহজ্ব মাসের
দশ, এগারো ও বারো তারিখ এ তিনদিনের প্রয়োজন অতিরিক্ত কারো কাছে
যদি সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা বা সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণের সমপরিমাণ মূল্য পরিমাণ সম্পদ
থাকে, তাহলে তার উপর
কুরবানী করা আবশ্যক।
প্রয়োজন অতিরিক্ত
বলতে বুঝানো হয়েছে, উক্ত তিন দিনের নিত্য প্রয়োজনীয় আসবাব এবং এখনি আদায় আবশ্যক এমন
ঋণমুক্ত হতে হবে। দীর্ঘমেয়াদী ঋণ কুরবানী আবশ্যক হবার জন্য বাঁধা হবে না।
হাদীস শরীফে
এসেছেঃ
عَنْ أَبِيْ
هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ مَنْ وَجَدَ سَعَةً فَلَمْ يُضَحِّ فَلَا
يَقْرَبَنَّ مُصَلَّانَا
আবূ হুরাইরা
(রাঃ) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে কুরবানী করে না, সে যেন অবশ্যই
আমাদের ঈদগাহের নিকটবর্তী না হয়। (মুসনাদ আহমাদ ৮২৭৩, ইবনে মাজাহ
৩১২৩, হাকেম ৭৫৬৫-৭৫৬৬)
ঋণ পরিশোধ
করার পর যদি হাতে ৫.৫ভড়ি রূপার সমমূল্য পরিমাণ সম্পত্তি হাতে না থাকে, তাহলে তার উপর
কুরবানি ওয়াজিব হবে না।কিতাবুল-ফাতাওয়া-৪/১৩৪)
বিস্তারিত
জানুনঃ https://ifatwa.info/15901/
ঋণের ক্ষেত্রে
লক্ষণীয় আরো একটি দিক রয়েছে।আর তা হলো যে, ঋণ দুই প্রকার।
(এক) সাধারণ
ঋণ।যা মানুষ ব্যক্তিগত প্রয়োজনে কিংবা অস্বাভাবিক অবস্থায় নিতে বাধ্য হয়।
(দুই) বিশাল
বিশাল শিল্পকারখানা গড়ে তোলার কিংবা যে কোনো বড় ধরণের ব্যবসায়িক প্রকল্প খোলার উদ্দেশ্যে
যে ঋণ নেয়া হয়ে থাকে।দৃষ্টান্ত স্বরূপ- ফ্যাক্টরী স্থাপন,মেশিনারিজ আমদানী
কিংবা ব্যবসায়িক পণ্য ইমপোর্ট করার উদ্দেশ্যে ঋণ নেয়া হয়।
ধরা যাক একজন
শিল্পপতির দু'টি ফ্যাক্টরী চালু রয়েছে। কিন্তু সে ব্যাংক ঋণ নিয়ে তৃতীয় আরো একটি
ফ্যাক্টরী চালু করল।
দ্বিতীয় প্রকারের
এই ঋণকে যদি সামগ্রিক সম্পদের হিসাব থেকে বাদ হয়, তাহলে এ জাতীয়
শিল্পপতিদের তো এক পয়সাও যাকাত ওয়াজিব হবে
না; বরং উল্টো তারাই যাকাত প্রাপকের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে
যায়।কেননা তাদের কাছে যাকাতযোগ্য যে পরিমাণ সম্পদ রয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশী ঋণ সে ব্যাংক
থেকে নিয়ে রেখেছে।দৃশ্যত: এখন সে দরিদ্র এবং মিসকিন মনে হচ্ছে।সুতরাং এ জাতীয় ঋণ বাদ
দেয়ার ক্ষেত্রে শরীয়ত পার্থক্য নির্ণয় করে দিয়েছে।
ব্যবসায়িক
ঋণ কখন বাদ দেয়া হবে
ঋণের প্রথমোক্ত
প্রকারটি তো সামগ্রিক সম্পদের হিসাব থেকে বাদ দেয়া হবে।বাদ দেয়ার পরই অবশিষ্ট সম্পদের
যাকাত আদায় করতে হবে।ঋণের দ্বিতীয় প্রকারের ব্যাখ্যা হচ্ছে,যদি কোনো ব্যক্তি
ব্যবসার উদ্দেশ্যে ঋণ গ্রহণ করে থাকে।অতঃপর তা এমন সামগ্রী ক্রয়ে বিনিয়োগ করে,
যার উপর যাকাত ওয়াজিব হয়।যেমন ঋণের টাকায় কাঁচামাল ক্রয় করল কিংবা ব্যবসায়িক
পণ্য ক্রয় করল,তাহলে কেবলমাত্র ঋণের এই পরিমাণ অর্থকে সামগ্রিক
সম্পদের হিসাব থেকে বাদ হবে।কিন্তু যদি ঋণের এই অর্থ যাকাত অযোগ্য সামগ্রী ক্রয়ে ব্যবহার
করা হয়,তাহলে ঋণের এই অর্থকে সামগ্রিক সম্পদ থেকে বাদ দেয়া যাবে
না।
ঋণের দৃষ্টান্ত
ধরা যাক-
একব্যক্তি ব্যাংক থেকে এক কোটি টাকা ঋণ উত্তোলন করেছে। আন্তর্জাতিক বাজার (বর্হি:বিশ্ব)
থেকে এই টাকায় সে একটি প্লান্ট (মেশিনারি)ইম্পোর্ট (আমদানি) করল। যেহেতু ওই প্লান্টটি
যাকাত যোগ্য সম্পদ নয়,সেহেতু এই অবস্থায় এই ঋণ সামগ্রিক সম্পদ থেকে বাদ দেয়া হবে না।কিন্তু
যদি ঋণের এই অর্থে সে কাঁচামাল ক্রয় করে থাকে,তাহলে যেহেতু কাঁচামালের
উপর যাকাত ওয়াজিব হয়,তাই এই ঋণ সামগ্রিক সম্পদ থেকে বাদ দেয়া
হবে।কেননা ঋণের হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করে এটিকে সামগ্রিক সম্পদ থেকে বাদ দেয়া হলেও কাঁচামাল
তো সামগ্রিক সম্পদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে।
সারকথা হলো-
প্রয়োজনীয় ও অস্বাভাবিক ঋণের পুরোটাই সামগ্রিক সম্পদ থেকে বাদ দেয়া যাবে।আর যে ঋণ কেবলমাত্র
মুনাফা অর্জনের উদ্দশ্যে নেয়া হয়েছে, সে ক্ষেত্রে ব্যাখ্যা হলো যে,যদি ঋণের অর্থে
যাকাত অযোগ্য সম্পদ ক্রয় করা হয়,তাহলে ওই ঋণের অর্থ হিসাব থেকে
বাদ দেয়া যাবে না।আর যাকাতযোগ্য ক্রয়ে অর্থলগ্নি করলে তা সামগ্রিক সম্পদের হিসাব থেকে
বাদ দেয়া যাবে। এই ছিল যাকাত বের করার ক্ষেত্রে শরীয়তের আহকাম। (ব্যক্তি ও রাষ্ট্রীয়
পর্যায়ে যাকাতের বিধান-মুফতী তাক্বী উসমানি-৩৫)
আরো বিস্তারিত
জানতে ভিজিট করুন: https://ifatwa.info/1456/
https://ifatwa.info/22718/
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি
ভাই/বোন!
কুরবানী ওয়াজিব
হওয়ার জন্য এখনি আদায় আবশ্যক এমন ঋণমুক্ত হতে হবে। দীর্ঘমেয়াদী ঋণ কুরবানী
আবশ্যক হবার জন্য বাঁধা হবে না। সুতরাং প্রশ্নেল্লিখিত ছুরতে আপনার বাবার ঋণ যদি দীর্ঘমেয়াদী হয় এবং জিলহজ্ব
মাসের দশ, এগারো ও বারো তারিখ এ তিনদিনে আপনার বাবার
কাছে উপস্থিত নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে, তাহলে তার উপর কুরবানী করা আবশ্যক। অন্যথায় কুরবানি ওয়াজিব হবে না।