আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
237 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (23 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লহি ওয়া বারকাতুহ
আমার দাদির বয়স ৯০+
তিনি পরিপূর্ণ পর্দা করেন না।মাহরাম,,গায়রে মাহরাম মানেন না

 কিন্তু

শালীনভাবে চলেন।

পরিপূর্ণ পর্দা না করাতে কি তার গুনাহ হবে?

তার উপর কি এখন পর্দা ফরজ?

1 Answer

0 votes
by (58,830 points)
edited by

 

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

 আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَالْقَوَاعِدُ مِنَ النِّسَاء اللَّاتِي لَا يَرْجُونَ نِكَاحًا فَلَيْسَ عَلَيْهِنَّ جُنَاحٌ أَن يَضَعْنَ ثِيَابَهُنَّ غَيْرَ مُتَبَرِّجَاتٍ بِزِينَةٍ وَأَن يَسْتَعْفِفْنَ خَيْرٌ لَّهُنَّ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ

‘বৃদ্ধা নারী, যারা বিবাহের আশা রাখে না, যদি তারা তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে তাদের চাদর খুলে রাখে। তাদের জন্যে দোষ নেই, তবে এ থেকে বিরত থাকাই তাদের জন্যে উত্তম। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’ (সূরা নূর ৬০)

উক্ত আয়াতের তাফসিরে আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাযি. ও মুজাহিদ রহ. বলেন,

لا خلاف في أن شعر العجوز عورة لا يجوز للأجنبي النظر إليه كشعر الشابة , وأنها إن صلت مكشوفة الرأس كانت كالشابة في فساد صلاتها , فغير جائز أن يكون المراد وضع الخمار بحضرة الأجنبي . إنما أباح للعجوز وضع ردائها بين يدي الرجال بعد أن تكون مغطاة الرأس , وأباح لها بذلك كشف وجهها ويدها ; لأنها لا تشتهى ; وقال تعالى : (وَأَنْ يَسْتَعْفِفْنَ خَيْرٌ لَهُنَّ)

‘এ ব্যাপারে কোনো মতবিরোধ নেই যে, বৃদ্ধার চুল যুবতীর চুলের মতই সতর, যা দেখা পরপুরুষের জন্য জায়েয নেই। আর মাথা খোলা রেখে নামায আদায় করার ব্যাপারে বৃদ্ধ মহিলা যুবতী নারীর মতইউভয়েরই নামায ফাসেদ হয়ে যায়। সুতরাং (আয়াতের তাফসিরে বৃদ্ধ মহিলা পরপুরুষের সামনে) ‘ওড়না খুলে রাখা’ উদ্দেশ্য নেয়া জায়েয হবে না। তবে যদি বৃদ্ধার মাথা ঢাকা থাকে তাহলে পরপুরুষের সামনে তার চাদর খুলে রাখা জায়েয হবে। আর জায়েয হবে তার চেহারা ও হাত খোলা রাখা। কেননা, এর দ্বারা কামনা সৃষ্টি হয় না। তবে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘এ থেকে বিরত থাকাই তাদের জন্যে উত্তম’।’ (আহকামুল কোরআন ৩/৪৮৫৪)

মুফতী শফী কাসেমী রহ. উক্ত আয়াতের তাফসিরে লিখেছেন,

‘এখানে একটি নারীর ব্যাক্তিগত অবস্থার দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি নীতি বর্ণনা করা হয়েছে। অর্থাৎ যে বৃদ্ধা নারীর প্রতি কেউ আকর্ষণ বোধ করে না এবং সে বিবাহেরও যোগ্য নয়, তার জন্য পর্দার বিধান শিথিল করা হয়েছে। অনাত্মীয় ব্যাক্তিও তার পক্ষে মাহরামের ন্যায় হয়ে যায়। মাহরামদের কাছে যেসব অঙ্গ আবৃত করা জরুরী নয়, এই বৃদ্ধা নারীর জন্য বেগানা পুরুষদের কাছেও সেগুলো আবৃত রাখা জরুরী নয়। এরূপ বৃদ্ধা নারীর জন্য বলা হয়েছে যেসব অঙ্গ মাহরামের সামনে খোলা যায়- যে মাহরাম নয় এরূপ ব্যাক্তির সামনেও সেগুলো খুলতে পারবে, কিন্তু শর্ত হচ্ছে যদি সাজসজ্জা না করে। পরিশেষে আরো বলা হয়েছে, وَاَنْ يَّسْتَعْفِفْنَ خَيْرٌلَّهُنَّ অর্থাৎ সে যদি মাহরাম নয় এরূপ ব্যাক্তিদের সামনে আসতে পুরোপুরি বিরত থাকে, তবে তা তার জন্য উত্তম।’

পর্দার বিধান সম্বলিত আয়াত সূরা নূর-এর ৩০, ৩১ নং আয়াতের তাফসিরে আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাযি. বলেন,

واستثنى من ذلك القواعد من النساء اللاتي لا يرجون نكاحاً

উক্ত বিধান (পর্দা) থেকে ব্যতিক্রম হবে ওই সকল বৃদ্ধা নারী, যারা বিবাহের আশা রাখে না। (আল মুগনী ৭/৪৬৩)

দুই: পরনারীর সঙ্গে মুসাফাহা হারাম; এটা ইসলামের মূল বিধান। কেননা, রাসূলুল্লাহ বলেছেন,

لَأَنْ يُطْعَنَ فِي رَأْسِ أَحَدِكُمْ بِمِخْيَطٍ مِنْ حَدِيدٍ خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَنْ يَمَسَّ امْرَأَةً لَا تَحِلُّ لَهُ

নিশ্চয় তোমাদের কারো মাথায় লোহার পেরেক ঠুকে দেয়া ওই মহিলাকে স্পর্শ করা থেকে অনেক ভাল, যে তার জন্য হালাল নয়। (তাবারানী, ছহীহুল জামে’ ৪৯২১)

তবে যে বৃদ্ধা নারীর প্রতি কেউ আকর্ষণ বোধ করে না এবং যার মাঝে ফেতনার আশঙ্কা নেই- যেমনটি প্রশ্নে বর্ণিত হয়েছে, তার সঙ্গে মুসাফাহা করা জায়েয আছে। যেমন, হানাফি ফিকাহর প্রসিদ্ধ কিতাব আল মাবসুত (১০/১৫২) -এ এসেছে,

فإذا كانت عجوزا لا تشتهي فلا بأس بمصافحتها ومس يدها

‘যে বৃদ্ধা নারীর প্রতি কেউ আকর্ষণ বোধ করে না, তার সঙ্গে মুসাফাহা ও তার হাত স্পর্শ করার মাঝে কোনো অসুবিধা নেই।’

উক্ত গ্রন্থে (১০/১৫৪) আরো বলা হয়েছে,

لأن الحرمة لخوف الفتنة فإذا كانت ممن لا تشتهى فخوف الفتنة معدوم وكذلك إن كان هو شيخا يأمن على نفسه وعليها فلا بأس بأن يصافحها

‘পরনারীর সঙ্গে মুসাফাহা হারাম ফেতনার আশঙ্কার কারণে। তবে নারী যদি আকর্ষণহীন (বৃদ্ধা বা শিশু) হয় তাহলে ফেতনার ভয় থাকে না। অনুরূপভাবে মুসাফাহাকারী যদি এমন বৃদ্ধ হয় যে, নিজের ব্যাপারে এবং মুসাফাহাকারী নারীর ব্যাপারে ভয়মুক্ত থাকে তাহলে কোনো অসুবিধা নেই।’

হাম্বলি মাযহাবের প্রসিদ্ধ কিতাব মাতালিব উলিন্নুহা (১/৯৪২)-এ এসেছে,

أما العجوز غير الحسناء فللرجل مصافحتها، لعدم المحظور

‘রূপ-লাবণ্যহীন বৃদ্ধার সঙ্গে পুরুষের মুসাফাহা জায়েয। কেননা, এ ব্যাপারে নিষিদ্ধততা নেই।’

মুহাম্মদ আলী থানবী রহ. বলেন,

مصافحةالمرأة الشابة الأجنبية حرام وأما العجوز غيرالمشتهاة فلابأس به

‘যুবতী পরনারীর সঙ্গে মুসাফাহা হারাম, তবে যে বৃদ্ধার প্রতি আকর্ষণ নেই,তার সঙ্গে (মুসাফাহা) কোনো অসুবিধা নেই।’ (কাশশাফু ইস্তিলাহাতিল ফুনূন ২/১৫৫৫)

এর দলিল হল,

১- আল্লাহ তাআলা এজাতীয় বৃদ্ধা সম্পর্কে বলেছেন,

وَالْقَوَاعِدُ مِنَ النِّسَاء اللَّاتِي لَا يَرْجُونَ نِكَاحًا فَلَيْسَ عَلَيْهِنَّ جُنَاحٌ أَن يَضَعْنَ ثِيَابَهُنَّ غَيْرَ مُتَبَرِّجَاتٍ بِزِينَةٍ وَأَن يَسْتَعْفِفْنَ خَيْرٌ لَّهُنَّ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ

‘বৃদ্ধা নারী, যারা বিবাহের আশা রাখে না, যদি তারা তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে তাদের চাদর খুলে রাখে। তাদের জন্যে দোষ নেই, তবে এ থেকে বিরত থাকাই তাদের জন্যে উত্তম। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’ (সূরা নূর ৬০)

২- ইমাম যাইলায়ী’ রহ. লিখেন,

وروي أن أبا بكر كان يصافح العجائز

‘বর্ণিত আছে যে, আবু বকর রাযি. বৃদ্ধা নারীর সঙ্গে মুসাফাহা করেছেন।’ (নাসবুর রায়া ৪/২৪০)

প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

যদি ফেতনার আশঙ্কা না থাকে তাহলে বৃদ্ধা মহিলার সঙ্গে দেখা দেওয়া জায়েয তবে উত্তম নয়। কারণ, যে বৃদ্ধা নারীর প্রতি কেউ আকর্ষণ বোধ করে না এবং সে বিবাহেরও যোগ্য নয়, তার জন্য পর্দার বিধান শিথিল করা হয়েছে। অনাত্মীয় ব্যাক্তিও তার পক্ষে মাহরামের ন্যায় হয়ে যায়। মাহরামদের কাছে যেসব অঙ্গ আবৃত করা জরুরী নয়, এই বৃদ্ধা নারীর জন্য বেগানা পুরুষদের কাছেও সেগুলো আবৃত রাখা জরুরী নয়। এরূপ বৃদ্ধা নারীর জন্য বলা হয়েছে যেসব অঙ্গ মাহরামের সামনে খোলা যায়- যে মাহরাম নয় এরূপ ব্যাক্তির সামনেও সেগুলো খুলতে পারবে, কিন্তু শর্ত হচ্ছে যদি সাজসজ্জা না করে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...