রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেনঃ
عن أبي هريرة: أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «من أدرك من الصبح ركعة قبل أن تطلع الشمس، فقد أدرك الصبح، ومن أدرك ركعة من العصر قبل أن تغرب الشمس، فقد أدرك العصر»
তরজমাঃ-
যে ব্যক্তি সূর্যোদয়ের পূর্বে ফজরের এক রা'কাত নামাযের সময় পাবে সে যেন ফজরের নামাযকে পেয়ে গেল।যে ব্যক্তি সূর্যাস্তের পূর্বে আসরের এক রা'কাত নামাযের সময় পাবে সে যেন আসরের নামাযকে পেয়ে গেল।(সহীহ বুখারী-৫৭৯,সহীহ মুসলিম-৬০৮)
মাকরুহ তিন ওয়াক্ত যদি কেউ নামায পড়ে নেয়,তাহলে তার নামায কি বাতিল বলে গণ্য হবে?না তার নামায হয়ে যাবে?
চার মাযহাব সম্বলীত নির্ভর্যোগ্য ফেক্বাহী গ্রন্থ "আল-ফেকহু আলাল মাযাহিবিল আরবা'আহ"
ولكن اتفق ثلاثة من الأئمة على أن الصلاة تكون صحيحة متى وقعت بعد دخول وقتها، وخالف الحنفية في ثلاثة من الأئمة على أن الصلاة تكون صحيحة متى وقعت بعد دخول وقتها، وخالف الحنفية في ثلاثة أوقات، فقالوا: إن الصلاة المفروضة لا تنعقد فيها أصلاً،
ইমাম শাফেয়ী রাহ, ইমাম মালিক রাহ,আহমদ ইবনে হাম্বল রাহ এর মতে নামাযের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পর যখনই আদায় করা হোক না কেন?সেটা বিশুদ্ধ হয়ে যাবে।চায় তিন মাকরুহ ওয়াক্তের কোনো ওয়াক্তেই আদায় করা হোক না কেন?হানাফি উলামায়ে কেরাম ঐ মাকরুহ তিন ওয়াক্ত সম্পর্কে মতবিরোধ করেন।তারা বলেন,ঐ সময়ে মূলত নামাযই আদায় হবে না।(এই মতানৈক্য ফরয নামাযকে নিয়ে)
তবে কেউ যদি সূর্যাস্তের পূর্বে ঐ দিনের আসরের এক রা'কাত নামায পড়ার পরিমাণ সময় পায়,এবং সে নামাযে দাড়িয়ে যায় অতঃপর নামাযের মধ্যেই সূর্যাস্ত হয়ে যায়,তাহলে তার নামায ফাসিদ হবে না।এটা হানাফি মাযহাবের সিদ্ধান্ত।এবং অন্যান্য তিন মাযহাবে ফুকাহায়ে কেরামগণও এই অভিমত ব্যক্ত করেন।
বেনায়া শরহে হেদায়া কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,
فإذا غربت الشمس في أثناء الصلاة لم يفسد العصر؛ لأنه ما بعد الغروب كامل كما دل فيه لأن ما وجب ناقصا يتادى كاملا بطريق الأولى
যদি আছরের নামাযের সময় সূর্যাস্ত হয়ে যায়,তাহলে ঐ আছরের নামায ফাসিদ হবে না।কেননা সূর্যাস্তর পর সময়টা কামিল(ত্রুটিহীন)।যেহেতু নামায শুরু করার পূর্ব মূহুর্তটা নামায ফরয হওয়ার সবব বা কারণ।তাই বলা যায় তার উপর নাক্বিসভাবে তথা ত্রুটিপূর্ণ ওয়াক্তে বা অবস্থায় নামায ফরয হয়েছে।আর যে নামায ত্রুটিপূর্ণ অবস্থায় ফরয হয়েছিলো এবং শুরুও হয়েছিলো,সে নামায কামিল ওয়াক্ত তথা ত্রুটিহীন অবস্থায় উত্তমভাবে আদায় হবে।(বেনায়া শরহে হেদায়া-২/২৩-শামেলা)
- সূর্যাস্তের সময় ঐ দিনের আছরের নামায হবে।(ফাতাওয়ায়ে দারুল উলূম-২/৩৫)
মাবসুত গ্রন্থ প্রণেতা বিশিষ্ট হানাফি ফকিহ আল্লামা সারখাসী রাহ বলেনঃ
(إلا عصر يومه فإنه يؤديها عند غروب الشمس) لأن هذا الوقت سبب لوجوبها حتى لو أسلم الكافر أو بلغ الصبي في هذا الوقت يلزمه أداؤها فيستحيل أن يجب عليه الأداء في هذا الوقت ويكون ممنوعا من الأداء وعلى هذا لو غربت الشمس وهو في خلال العصر يتم الصلاة بالاتفاق، ولو طلعت الشمس وهو في خلال الفجر فسدت صلاته عندنا، وعند الشافعي لا تفسد اعتبارا بحالة الغروب واستدل بقوله - عليه الصلاة والسلام - «من أدرك ركعة من الفجر قبل طلوع الشمس فقد أدرك».
মাকরুহ ওয়াক্ত সমূহে নামায পড়া যাবে না।তবে ঐ দিনের আছরের নামায পড়া যাবে।তথা সূর্যাস্তের সময় ঐ দিনের আছরের নামায পড়া যাবে।কেননা ঐ সময়টাই মূলত সালাত ওয়াজিব হওয়ার মূল সবব বা কারণ।এমনকি যদি ঐ সসময় কোনো কাফির মুসলমান হয় বা কোনো বালক বালেগ হয়,তাহলে এমতাবস্থায় তার উপর উক্ত ওয়াক্তের নামায আদায় করা লাযেম।যদি বিষয়টা বাস্তবে এমনই হয়ে থাকে তাহলে উক্ত ওয়াক্তে নামায ওয়াজিব হওয়া এবং আদায় নিষিদ্ধ হওয়া উভয়টা একত্রিত হয়ে যা যা প্রায় অসম্ভব বললে অত্যুক্তি হবে না।এজন্য বলা যায় যে,আছরের নামায পড়া অবস্থায় যদি সূর্যাস্ত হয়ে যায়,তাহলে সর্বসম্মতিক্রমে নামায পড়া সেই সময়েও শুদ্ধ হবে। কিন্তু ফজরের সালাত পড়া অবস্থায় যদি সূর্যোদয় হয় তাহলে আমাদের হানাফি উলামায়ে কেরামদের মতে তা ফাসিদ হয়ে যাবে।এবং ইমাম শা'ফেয়ী রাহ এর মতে আছরের মত ফজরের সালাত ও ফাসিদ হবে না।শা'ফেয়ী হযরাতগণ এক্ষেত্রে ঐ হাদীস দ্বারা দলিল পেশ করেন যে হাদীসে বলা হয়েছে,
"যে ব্যক্তি সূর্যোদয়ের পূর্বে ফজরের এক রা'কাত নামায পেয়ে গেল সে যেন সমস্ত নামায পেয়ে গেল।
ফজরের নামাযে এক রা'কাত পড়ার পর সূর্যোদয় হয়ে গেলে ঐ দিনের ফজরের নামায কি হবে?
ইমাম শাফেয়ী রাহ, ইমাম মালিক রাহ,আহমদ ইবনে হাম্বল রাহ এর মতে নামায হয়ে যাবে।তবে হানাফি মাযহাব মতে তখন নামায ফাসিদ হয়ে যাবে।
ইমাম সারখাসী রাহ ফজর আর আসরের এই বৈপরীত্য সম্পর্কে বলেনঃ
والفرق بينهما عندنا أن بالغروب يدخل وقت الفرض فلا يكون منافيا للفرض وبالطلوع لا يدخل وقت الفرض فكان مفسدا للفرض كخروج وقت الجمعة في خلالها مفسد للجمعة؛ لأنه لا يدخل وقت مثلها، ،
বঙ্গানুবাদঃ-
ফজর আর আছরের মধ্যে পার্থক্য হল,
যে সূর্যাস্তের মাধ্যমে ভিন্ন এক ফরয নামাযের ওয়াক্ত প্রবেশ করছে,সুতরাং তা কোনো ফরয নামাযের খেলাফ বা বিরোধী হবে না।আর সূর্যোদয়ের মাধ্যমে ভিন্ন কোনো নামাযের ওয়াক্ত প্রবেশ করছে না।বিধায় সূর্যোদয়ের পর কোনো ফরয শুদ্ধ হবে না।বরং ফাসিদ হয়ে যাবে।যেমন জুমআর নামাযের সময় ওয়াক্ত চলে গেলে নামায ফাসিদ হয়ে যাবে।কেননা তখন কোনো ভিন্ন নামাযের ওয়াক্ত প্রবেশ করছে না।
ইমাম সারখাসী রাহ আরো বলেনঃ আমার কাছে ফজর আর আসরের এই পার্থক্যর বিশুদ্ধ কারণ মনে হচ্ছে এই যে,
قال والأصح عندي في الفرق أن الطلوع بظهور حاجب الشمس وبه لا تنتفي الكراهة بل تتحقق فكان مفسدا للفرض، والغروب بآخره وبه تنتفي الكراهة فلم يكن مفسدا للعصر لهذا
সূর্যোদয়ের সময় সূর্যের কিরণরাশি দ্বারা মাকরুহ দূরবিত হয়না।বরং মাকরুহ হওয়া আরো ভালভাবে প্রমাণিত হয়।সুতরাং এজন্য সূর্যোদয়ের সময় ফজরের নামায ফাসিদ বলে গণ্য হয়।আর সূর্যাস্তের মাধ্যমে সূর্যের রশ্মি খতম হয়ে যায়,যার কারণে মাকরুহ দূরবিত হয়ে যায়।সতরাং এজন্য সূর্যাস্তের সময় আছরের নামায ফাসিদ বলে গণ্য হবে না।(মাবসুত-সারখাসী-১/১৫২)
তবে সঠিক সময়ে নামায পড়াই প্রত্যেক মুসলমানের দায়িত্ব ও কর্তব্য।
যেমনঃ-আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
ﻓَﺈِﺫَﺍ ﻗَﻀَﻴْﺘُﻢُ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓَ ﻓَﺎﺫْﻛُﺮُﻭﺍْ ﺍﻟﻠّﻪَ ﻗِﻴَﺎﻣًﺎ ﻭَﻗُﻌُﻮﺩًﺍ ﻭَﻋَﻠَﻰ ﺟُﻨُﻮﺑِﻜُﻢْ ﻓَﺈِﺫَﺍ ﺍﻃْﻤَﺄْﻧَﻨﺘُﻢْ ﻓَﺄَﻗِﻴﻤُﻮﺍْ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓَ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓَ ﻛَﺎﻧَﺖْ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ ﻛِﺘَﺎﺑًﺎ ﻣَّﻮْﻗُﻮﺗًﺎ
অতঃপর যখন তোমরা নামায সম্পন্ন কর, তখন দন্ডায়মান, উপবিষ্ট ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ কর। অতঃপর যখন বিপদমুক্ত হয়ে যাও, তখন নামায ঠিক করে পড়। নিশ্চয় নামায মুসলমানদের উপর ফরয নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে।(সূরা আন-নিসা-১০৩)
বিশেষকরে আছরের নামায সঠিক সময়ে পড়া বিশেষ গুরুত্ববহ। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
ﺣَﺎﻓِﻈُﻮﺍْ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﺼَّﻠَﻮَﺍﺕِ ﻭﺍﻟﺼَّﻼَﺓِ ﺍﻟْﻮُﺳْﻄَﻰ ﻭَﻗُﻮﻣُﻮﺍْ ﻟِﻠّﻪِ ﻗَﺎﻧِﺘِﻴﻦَ
সমস্ত নামাযের প্রতি যত্নবান হও, বিশেষ করে মধ্যবর্তী নামাযের ব্যাপারে। আর আল্লাহর সামনে একান্ত আদবের সাথে দাঁড়াও।(সূরা বাক্বারা-২৩৮ )
অন্তিম সময়ে আছরের নামাযকে হাদীসে মুনাফিকের নামাযের সাথে তুলনা করা হয়েছে।
ﺣﺪﺛﻨﺎ ﻋﻠﻲ ﺑﻦ ﺣﺠﺮ ﺣﺪﺛﻨﺎ ﺇﺳﻤﻌﻴﻞ ﺑﻦ ﺟﻌﻔﺮ ﻋﻦ ﺍﻟﻌﻼﺀ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺃﻧﻪ ﺩﺧﻞ ﻋﻠﻰ ﺃﻧﺲ ﺑﻦ ﻣﺎﻟﻚ ﻓﻲ ﺩﺍﺭﻩ ﺑﺎﻟﺒﺼﺮﺓ ﺣﻴﻦ ﺍﻧﺼﺮﻑ ﻣﻦ ﺍﻟﻈﻬﺮ ﻭﺩﺍﺭﻩ ﺑﺠﻨﺐ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﻓﻘﺎﻝ ﻗﻮﻣﻮﺍ ﻓﺼﻠﻮﺍ ﺍﻟﻌﺼﺮ ﻗﺎﻝ ﻓﻘﻤﻨﺎ ﻓﺼﻠﻴﻨﺎ ﻓﻠﻤﺎ ﺍﻧﺼﺮﻓﻨﺎ ﻗﺎﻝ ﺳﻤﻌﺖ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﻘﻮﻝ ﺗﻠﻚ ﺻﻼﺓ ﺍﻟﻤﻨﺎﻓﻖ ﻳﺠﻠﺲ ﻳﺮﻗﺐ ﺍﻟﺸﻤﺲ ﺣﺘﻰ ﺇﺫﺍ ﻛﺎﻧﺖ ﺑﻴﻦ ﻗﺮﻧﻲ ﺍﻟﺸﻴﻄﺎﻥ ﻗﺎﻡ ﻓﻨﻘﺮ ﺃﺭﺑﻌﺎ ﻻ ﻳﺬﻛﺮ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻴﻬﺎ ﺇﻻ ﻗﻠﻴﻼ
ﻗﺎﻝ ﺃﺑﻮ ﻋﻴﺴﻰ ﻫﺬﺍ ﺣﺪﻳﺚ ﺣﺴﻦ ﺻﺤﻴﺢ
ﺍﻟﻜﺘﺐ » ﺳﻨﻦ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ » ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺼﻼﺓ » ﺑﺎﺏ ﻣﺎ ﺟﺎﺀ ﻓﻲ ﻣﻮﺍﻗﻴﺖ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻋﻦ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ
ভাবার্থঃ-
হযরত আনস ইবনে মালিক রাযি তখন বসরাতে বসবাস করেন।
আ'লা ইবনে আব্দুর রহমান রাহ, হযরত আনস ইবনে মালিক রাযি এর ঘরে এমন সময় প্রবেশ করলেন যখন আনস ইবনে মালিক রাযি জোহরের নামায শেষ করে ঘরে ফিরছিলেন।এবং উনার ঘরও মসজিদের পাশে ছিলো।
আনাস ইবনে মালিক রাযি (আসরের ওয়াক্তে উপস্থিত ব্যক্তিবর্গকে লক্ষ্য করে)বললেনঃ
তোমরা নাযাযের প্রস্তুতি গ্রহণ করো এবং নামায পড়ো।আ'লা ইবনে আব্দুর রহমান রাহ বলেনঃ আমরা নামাযের জন্য দাড়িয়ে গেলাম।যখন আমরা নামায থেকে ফারেগ হলাম,তখন আনস ইবনে মালেক রাযি বললেনঃ এটা মুনাফিকের নামায যে,কেউ নামায না পড়ে অযথা বসে থাকবে,এমনকি যখন সূর্য শয়তানের দুই শিংয়ের মাঝখান দিয়ে অস্তে যাবে,তখন সে নামাযে দাড়াবে এবং চারটি টোকা দিবে।এমতাবস্থায় যে এতে আল্লাহর যিকির নিতান্তই কম হবে।(জামে তিরমিযি)
সম্মানিত প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই !
সূর্যাস্তের সময় ঐ দিনের আসরের নামায পড়া জায়েয।এবং পড়লে তা আদায় হবে তথা আদায় হিসেবেই গণ্য হবে। কাযা হিসেবে গণ্য হবে না।
তবে অবশ্যই আমাদের কর্তব্য সঠিক সময়ে সালাত আদায় করা।আল্লাহ সবাইকে তাওফিক দান করুক।আমীন।ছুম্মা আমীন।